আধুনিক শিক্ষায় মনঃসমীক্ষণের অবদান লেখো

মনঃসমীক্ষণ মনের কতকগুলি অজানা বৈশিষ্ট্য ও বৈচিত্র্য উন্মোচন করেছে। এর ফলে শিশুকে গড়ে তোলার এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষা দেওয়া ব্যাপারে প্রচলিত ধারণাগুলি পরিবর্তিত হয়েছে। মনঃসমীক্ষণের অবদান নীচে উল্লেখ করা হল –

সূচিপত্র

(1) সমস্যামূলক আচরণের নতুন ব্যাখ্যা

পূর্বে শিক্ষার্থীদের অপরাধমূলক ও শৃঙ্খলার কর্মকান্ডে যে শাস্তিপ্রদান করে আচরণের প্রতিকার করা হত, মনঃসমীক্ষণ ওই সমস্যামূলক আচরণের এক অভিনব ব্যাখ্যা দিয়েছে। শিশু অপরাধ করার উদ্দেশ্যে অপরাধমূলক আচরণ করে না। মানসিক দ্বন্দ্ব বা অন্যদের কাছ থেকে স্বীকৃতি পাওয়ার অতৃপ্ত বাসনা তাকে অপরাধমূলক আচরণ করতে বাধ্য করে। মনঃসমীক্ষণ অনুসারে যখন শিশুর মানসিক দ্বন্দ্ব দূর করা হয় বা তার অতৃপ্ত কামনাকে স্বাভাবিক পথে তৃপ্তিলাভের সুযোগ দেওয়া হয়, তখন তার আচরণগত সমস্যা দূর করা হয়।

(2) অচেতন মনের শক্তিশালী প্রভাব

অবচেতনের অস্তিত্ব ও প্রভাব সম্পর্কে মনঃসমীক্ষণের যে তথ্য উদ্‌ঘাটিত হয়, তা শিক্ষার ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী অবদান রাখে। ব্যক্তির আচরণ শুধুমাত্র তার সচেতন মনের চিন্তা, অনুভূতি, ইচ্ছার দ্বারা পরিচালিত হয় না। তার অচেতন মনের শক্তিশালী প্রভাব এতে কাজ করে।

(3) শৈশবের গুরুত্ব

মনঃসমীক্ষণের মাধ্যমে শৈশবের গুরুত্ব উপলবিধ করা যায়। ব্যক্তির পরিণত জীবনে শৈশবের যে প্রভাব আছে, মনঃসমীক্ষণ তা প্রমাণ করেছে এবং এই স্তরে ব্যক্তিসত্তার অধিকাংশ সংগঠন তৈরি হয়। এই সময় শিশুর অধিকাংশ সংগঠন যাতে সঠিক পথে পরিচালিত হয়, তা নিশ্চিন্ত করা শিক্ষকের প্রধান কাজ।

(4) শৈশবকালীন যৌনতা

মনঃসমীক্ষণ প্রমাণ করে যে, শিশুর ব্যক্তিসত্তা নির্ণয়ে যৌনশক্তির প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ। মানব আচরণের সর্বস্তরে যৌনশক্তির প্রভাবকে ফ্রয়েড সংব্যাখ্যানে পরিচালিত করেছেন এবং বলেছেন, যৌনতা মানব আচরণের শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক। তাই আধুনিক শিক্ষা পরিকল্পনায় শিক্ষার্থীর যৌন চাহিদাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়।

(5) অবদমন

শিক্ষার ক্ষেত্রে মনঃসমীক্ষণের অবদমন তথ্যটির বিশেষ ভূমিকা আছে। পিতামাতার শাসন, সামাজিক অনুশাসন, শাস্তির ভয় ইত্যাদির জন্য শিশু তার অতৃপ্ত বাসনাকে অচেতন মনে অবদমিত করে। ফলে সে অন্তর্দ্বন্দ্বে ভোগে। ওই অন্তর্দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করলে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে, শিক্ষা বিঘ্নিত হয়।

(6) আবেগমূলক শক্তি

মনঃসমীক্ষণ অনুসারে, আচরণের ক্ষেত্রে ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ আবেগ শক্তি হিসেবে যুক্তিকে অবদমিত করে নিজেদের প্রাধান্য বিস্তার করে।

(7) অবাধ অনুষজ্ঞঙ্গ

মনঃসমীক্ষণ প্রমাণ করে, মানসিক বিকারের মূলে থাকে ব্যক্তির অচেতন মনে অবদমিত অতৃপ্ত কামনা-বাসনা। ব্যক্তির মনোবিকার-এর আসল চিকিৎসা হল তার অবদমিত অতৃপ্ত বাক্যশক্তিকে বাইরে প্রকাশ করা।

(৪) অচেতন প্রেষণা

ব্যক্তির অনেক আচরণ অচেতন প্রেষণা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। যথা- অভিক্ষেপণ, অপব্যাখ্যান ইত্যাদি। প্রতিরূপ কৌশলগুলোকে প্রেষণার অচেতন স্তরের কোনো বাসনার মধ্যে নিহিত করা হয়।

আরও পড়ুন –

১।শিখনের একটি কার্যকরী সংজ্ঞা দাও। শিখনের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো

২। শিখন কৌশল কী? বিভিন্ন শিখন কৌশলগুলি সংক্ষেপে লেখো

৩। সমস্যাসমাধান বলতে কী বোঝো? সমস্যাসমাধানমূলক শিখনের বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতি লেখো

৪। সমস্যাসমাধানের পর্যায়গুলি লেখো

৫। শিশুর শিখনে সমস্যাসমাধানমূলক শিখনের তাৎপর্য কী? থর্নডাইকের শিখনের তত্ত্বটি কোথায় প্রকাশিত হয়

৬। শিক্ষাগত মনোবিজ্ঞানে আচরণবাদ বলতে কী বোঝো ? অথবা, আচরণবাদ (Behaviourism) কী? শিক্ষায় আচরণবাদের গুরুত্ব আলোচনা করো

৭। আচরণবাদের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো

৮। থর্নডাইক (Thorndike)-এর প্রচেষ্টা ও ভুলের শিখন কৌশল কী? থর্নডাইকের শিখনতত্ত্বের প্রাথমিক সূত্রগুলি কী কী

৯। থর্নডাইকের ফললাভের সূত্রটি উল্লেখ করে শ্রেণিকক্ষে তার প্রয়োেগ আলোচনা করো

১০। থর্নডাইক (Thorndike)-এর শিখনতত্ত্বের গৌণ সূত্রগুলি লেখো

১১। প্রচেষ্টা ও ভুল তত্ত্ব সম্পর্কিত থর্নডাইকের পরীক্ষাটি লেখো