ছাত্রজীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

"বর্ষে বর্ষে দলে দলে আসে বিদ্যামঠতলে চলে যায় তারা কলরবে কৈশোরের কিশলয় পর্ণে পরিণত হয়, যৌবনের শ্যামল গৌরবে।"
ছাত্ররাই ভবিষ্যতের কান্ডারি। তাই ছাত্রজীবনই হল একজন মানুষের জীবনের যথার্থ প্রস্তুতিপর্ব। পড়াশোনা, খেলাধুলা, নিয়মনিষ্ঠা, শৃঙ্খলার ভিত্তিতে গড়ে ওঠে ছাত্রজীবন। একটি চারাগাছ যেমন প্রকৃতির স্পর্শে বৃক্ষে পরিণত হয়, একজন ছাত্রও সেরকম চারপাশের পৃথিবী থেকে রসদ সংগ্রহ করে আগামীর পথে এগিয়ে চলে।
প্রাচীনকালে আমাদের তপোবন শিক্ষার সময় শোনা গিয়েছিল, ‘অধ্যয়নই হল ছাত্রদের তপস্যা।’ পাঠক্রমের শিক্ষার পাশাপাশি জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়াই ছাত্রজীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত। শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক নির্দেশিত পথে হেঁটে জ্ঞানের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করাই হওয়া উচিত ছাত্রদের তপস্যা।
একজন আদর্শ ছাত্রের কর্তব্য অধ্যয়নের পাশাপাশি নিয়মানুবর্তিতার পালন। শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনই হল যথার্থ বা আদর্শ মানুষ গড়ার চাবিকাঠি। ছাত্রজীবনই হল সময়ের মূল্য উপলব্ধি করার উপযুক্ত সময়। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ছাত্রদের ব্যক্তিগত জীবনেও নিয়মশৃঙ্খলার অনুসরণ করা আবশ্যক।
‘শিষ্টাচার’ হল উন্নত ও সভ্য মানুষের চরিত্রধর্ম। ছাত্রদের কাছে উন্নত জীবনে পৌঁছোনোর সোপান হল এই শিষ্টাচার। শিষ্টাচারের মাধ্যমেই ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তৈরি হয় সখ্যের বন্ধন। ‘সবে মিলি করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ’- এই মন্ত্রে দিক্ষিত হতে হবে ছাত্রছাত্রীদের। তাই ছাত্রজীবনে শিষ্টাচারের চর্চা করা খুবই জরুরি।
ছাত্রজীবনে খেলাধুলার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। আমরা জানি শিশু-কিশোরদের বেড়ে ওঠার পথে জ্ঞানচর্চা ও খেলা পরস্পরের পরিপূরক ভূমিকা পালন করলে মানবমন সুন্দরভাবে বিকশিত হবে। কারণ পরিপূর্ণ দৈহিক এবং মানসিক বিকাশের ফলেই কোনো মানুষের পূর্ণাঙ্গ চরিত্রগঠন সম্ভব হয়। খেলাধুলা একদিকে যেমন মানুষকে অফুরন্ত আনন্দের চাবিকাঠি দেয়, তেমনি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সহমর্মিতা, সংহতিবোধ গড়ে তুলতেও সাহায্য করে।
মানুষ সামাজিক জীব, ছাত্রছাত্রীরাও এই সমাজেরই অন্তর্ভুক্ত। যে সমাজে তারা লালিতপালিত, সেই সমাজের উন্নতি ও কল্যাণসাধনে নিঃস্বার্থ সেবায় অংশগ্রহণ করা তাদের পবিত্র কর্তব্য ও দায়িত্ব। তাই সেবা, ত্যাগ, দয়া, পরোপকার প্রভৃতি মানবিক গুণাবলির বিকাশসাধনের উপযুক্ত সময় হল ছাত্রজীবন। নিরক্ষরতা দূরীকরণ কর্মসূচি থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা- সর্বত্র ছাত্রসমাজ অংশগ্রহণ করতে পারে। সেইসঙ্গে আশপাশের মানুষের চেতনাগত ও সাংস্কৃতিক মানোন্নয়নেও ছাত্রসমাজ এগিয়ে আসতে পারে। সামাজিক কর্মযজ্ঞে শামিল হয়ে হাতেকলমে কর্মশিক্ষা ও জীবনের অভিজ্ঞতা অর্জনের পথে ছাত্রদের প্রকৃত মানুষ ও নাগরিক হয়ে ওঠার সুযোগ করে নিতে হবে।
ছাত্ররাই দেশের আশা, ভরসা ও ভবিষ্যৎ। তারাই দেশের শক্তি ও বল। তাদের আছে মহৎ আদর্শ, উৎসাহ ও আত্মত্যাগের মনোবৃত্তি। এই জরাজীর্ণ, মলিন পৃথিবীর বুকে স্বপ্নের বীজ বপন করবে ছাত্রসমাজ, তাদের কাছে দেশের এই প্রত্যাশা। তাই কবিগুরুর ভাষায় বলা যায়-
"ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা ওরে সবুজ, ওরে অবুঝ, আধ-মরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা।"
আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর