তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের প্রশ্ন উত্তর Class 11। প্রেমেন্দ্র মিত্র। একাদশ শ্রেণী দ্বিতীয় সেমিস্টার। Class 11 Telenapota Abishkar Long Question Answer। WBCHSE

তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের প্রশ্ন উত্তর Class 11। প্রেমেন্দ্র মিত্র। একাদশ শ্রেণী দ্বিতীয় সেমিস্টার। Class 11 Telenapota Abishkar Long Question Answer। WBCHSE

তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের প্রশ্ন উত্তর
তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের প্রশ্ন উত্তর

১। তেলেনাপোতা যাওয়াকে লেখক ‘আবিষ্কার’ বলেছেন কেন?

উত্তর: বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে তেলেনাপোতা এমন একটি জায়গার নাম যে জায়গাটি জনস্রোতে ভরা রাজধানী অঞ্চল থেকে খুব একটা দূরে নয়। ঠাসাঠাসি বাসে চেপে শহরাঞ্চল থেকে মাত্র দু-ঘণ্টার যাত্রাপথে এমন একটি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল রয়েছে, যেখানে জীবন যেন থেমে গেছে বলে বোধ হয়, অবসর সময় কাটাতে এবং মৎস্য শিকারের ইচ্ছা চরিতার্থ করার জন্যই কথক তার দুই বন্ধুর সঙ্গে তেলেনাপোতায় পাড়ি দেন।

সূচিপত্র

লেখক এই তেলেনাপোতায় যাওয়ার ব্যাপারটিকে ‘আবিষ্কার’ বলে চিহ্নিত করেছেন। কারণ সভ্যজগতের এত কাছাকাছি দূরত্বের মধ্যে এমন একটি শান্ত জনবিরল পরিবেশের সন্ধান পাওয়া শহরাঞ্চলের ব্যস্ত মানুষের কাছে এক বিস্ময়কর আবিষ্কার। এখানকার বড়শি-অনভিজ্ঞ মাছেরা প্রথম বড়শি-বিদ্ধ হওয়ার অপেক্ষায় উদ্‌গ্রীব হয়ে আছে। একশো-দেড়শো বছর আগে ম্যালেরিয়ার প্রকোপে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া এই অঞ্চল প্রকৃতপক্ষে একটি শ্মশানের দেশ-যেখানে দশটা বাড়ি খুঁজলেও একটি পুরুষের দেখা মেলে না। এই তেলেনাপোতাতেই কথক মাছ ধরার ব্যর্থতার জন্য মাছরাঙার নীরু উপহাস পেয়েছিলেন। এই অঞ্চলটি বেশিরভাগ মানুষের কাছে অজ্ঞাত বলে তেলেনাপোতায় যাওয়াকে লেখক ‘আবিষ্কার’ বলে উল্লেখ করেছেন।

২। তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পের যামিনীর মায়ের চরিত্র সংক্ষেপে পর্যালোচনা করো।

উত্তর : ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে যামিনীর মায়ের উপস্থিতি স্বল্প সময়ের জন্য হলেও মূলত তাঁর জন্যই কাহিনির মোড় ঘুরে গেছে। সেক্ষেত্রে চরিত্রটি ছোটো হলেও তাকে ‘অপ্রধান’ বলাটা সংগত হবে না। যামিনীর বৃদ্ধা মায়ের চরিত্রের যে বৈশিষ্ট্যগুলি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, সেগুলি হল-

আশাবাদী: বৃদ্ধা মৃত্যুপথযাত্রী হয়েও দীর্ঘ চার বছর নিরঞ্জন আসবে-এই আশায় বুক বেঁধে দিন কাটিয়ে চলেছেন। অন্ধ, বিধবা, অসুস্থ এক বৃদ্ধা কয়েকটি স্তোক বাক্যকে আঁকড়ে ধরে নির্জন প্রেতপুরীতে যেভাবে দিন গুনেছেন তা তাঁর মধ্যে থাকা আশাবাদী সত্তারই প্রতিফলন ঘটায়।

সারল্য ও বাস্তববাদের অভাব: বৃদ্ধা সরল মনেই নিরঞ্জনকে বিশ্বাস করেছিলেন। সেকারণেই নিরঞ্জনের ছল-চাতুরি তিনি ধরতে পারেননি। সরল বিশ্বাসে ভর করে তিনি প্রতিটা দিন কাটিয়ে গেছেন। অবশ্য এক্ষেত্রে বৃদ্ধার মধ্যে সরলতার পাশাপাশি বাস্তববোধেরও খানিক অভাব দেখতে পাওয়া যায়।

ধৈর্যহীনতা এবং অসহিষ্ণুতা: দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকার ফলে বৃদ্ধা স্বাভাবিকভাবেই হয়ে উঠেছিলেন ধৈর্যহীন এবং অসহিষ্ণু। কারণে-অকারণে যামিনীকে তিরস্কার করা, কোনো বিষয়ে মেয়ের সঙ্গে মতের মিল না হলেই মাথা খুঁড়ে প্রাণসংশয় ঘটানো-সবই তাঁর ধৈর্যহীনতার পরিচয় দেয়। আসলে দীর্ঘদিন ধরে রোগযন্ত্রণা সহ্য করে একমাত্র মেয়ে যামিনীর বিয়ে ও ভবিষ্যতের বিষয়ে অন্তহীন দুশ্চিন্তা বৃদ্ধাকে অসহিষু করে তুলেছিল।

স্নেহময়তা: কথক যখন নিরঞ্জনের ভূমিকায় বৃদ্ধার সামনে উপস্থিত হন, তখন কিন্তু এই অসহিষু বৃদ্ধার মধ্যে থেকেই আমরা এক স্নেহময়ী জননীকে দেখতে পাই। তিনি অন্যদের কাছে যামিনীর কর্তব্যবোধ ও দায়িত্বজ্ঞানের প্রশংসার পাশাপাশি তার মধুর স্বভাবেরও উল্লেখ করেন। কথকের কাছে যামিনীকে গ্রহণ করার আবেদন জানানোর সময় তাঁর গলায় ঝরে পড়ে আকুল আর্তি। বৃদ্ধার সামনে দাঁড়িয়েই মুহূর্তের অসাবধানতায় কথক যামিনীকে বিবাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফেলেন। এই ঘটনার উপর ভিত্তি করেই গল্পটি এক অভাবিত মোড় নেয়। তাই বলা যায় যামিনীর মায়ের চরিত্রটি ছোটো হলেও এই গল্পে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৩। ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্প অবলম্বনে যামিনী চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পের নায়িকা চরিত্র যামিনী ছিল শয্যাশায়ী, অন্ধ, বিধবা মায়ের সহায়-সম্বলহীনা মেয়ে। পানাপুকুরে মাছ ধরতে গিয়ে জল-নিতে-আসা যামিনীর মুখের শান্ত, করুণ গাম্ভীর্য দেখে কথকের মনে হয়েছিল যে, জীবনের সুদীর্ঘ, নির্মম পথ সে পার হয়ে এসেছে। যামিনী চরিত্রের যে বৈশিষ্ট্যগুলি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য সেগুলি হল-

জড়তামুক্ত ব্যবহার: যামিনীর আচরণে গ্রাম্য যুবতির মতো কোনো দ্বিধা অথবা অহেতুক লজ্জা বা আড়ষ্টতা লক্ষ করা যায় না। তাই আমরা দেখি যে, ঠিক সময়ে বড়শিতে টান দিতে কথক যখন ভুলে যান, তখন যামিনী কলশি কাঁখে করে ফেরার সময় ‘চকিত মুহূর্তে একটু যেন দীপ্ত হাসির আভাস’ প্রকাশ করেছিল।

সেবাপরায়ণতা ও দায়িত্ববোধ: যামিনীর মা নিরঞ্জনকে উদ্দেশ করে কথককে যথার্থই বলেছিলেন যে, যামিনীর মতো মেয়ে হয় না। তেলেনাপোতার মতো প্রাণহীন, বিচ্ছিন্ন জায়গায় যামিনী একাধারে নারী ও পুরুষ হয়ে পরিবারের সব ঝক্কি-ঝামেলা অসীম ধৈর্যে নিজের কাঁধে বহন করে নিয়ে চলেছিল।

বিচারবোধ: যামিনীর মধ্যে বিচারবোধ ছিল বলেই, নিরঞ্জন সংক্রান্ত সত্যি কথা ও তার মনের যন্ত্রণা সে নিজের মধ্যেই চেপে রেখে দেয়। তার একমাত্র সঙ্গিনী মাকেও জানতে দেয় না বাস্তবটা, কেবল তাঁকে শান্তি দিতেই।

তবে গল্পকথকের রোমান্টিক দৃষ্টিতে যামিনী ছিল রূপকথার বন্দিনি রাজকন্যা। অতীতের রহস্যমাখা স্বপ্নলোক থেকে সে যেন কথকের জীবনে ক্ষণিকের জন্য ভেসে ওঠা এক ‘স্বপ্নের বুদবুদ’।

৪। ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্প অবলম্বনে এই গল্পের গল্পকথকের চরিত্র বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পের কথকই হলেন এই গল্পের নায়ক। গল্পটির মধ্যে তাঁর চরিত্রের যে বৈশিষ্ট্যগুলি লক্ষ করা যায়, সেগুলি হল-

রোমান্টিকতা: এই গল্পের কথক প্রাত্যহিক কাজকর্ম ও শহুরে কোলাহল থেকে মুক্তির জন্য কলকাতা ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন এক অখ্যাত গণ্ডগ্রাম তেলেনাপোতার উদ্দেশ্যে। যামিনীর প্রতি সাময়িক প্রেমের অনুভূতির কারণে ফেরার সময় গোরুর গাড়ির একঘেয়ে শব্দকেই উপেক্ষা করে নিজের হৃৎস্পন্দনে তিনি কেবল একটি কথাই শুনতে পান, “ফিরে আসব, ফিরে আসব।”

আবেগপ্রবণতা: গল্পকথক হলেন অত্যন্ত আবেগপ্রবণ এক ব্যক্তি। তাই অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করে, মণি এবং যামিনীকে স্তম্ভিত করে। দিয়ে তিনি মুহূর্তের মধ্যে যামিনীর মাকে যামিনীকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেন।

দায়িত্ববোধের অভাব: এই গল্পে গল্পকথককে প্রাথমিকভাবে দায়িত্বপরায়ণ এক যুবক বলে মনে হলেও শেষে দেখা যায় যে তেলেনাপোতা থেকে ফিরে আসার পর ম্যালেরিয়া জ্বরে বিপর্যন্ত হয়ে যামিনীর মাকে দেওয়া তাঁর সমস্ত প্রতিশ্রুতিই তিনি ভুলে যান।

বাকপটুতা: ফেরার সময় যামিনী গল্পকথকের কাছে গিয়ে যখন বলে যে, তাঁর বড়শি-টড়শি সব পড়ে রইল, তখন কথক হেসে বলেন যে, সেসব সেখানেই থাকুক। একবার পারেননি বলে জার তেলেনাপোতার মাছ কিন্তু মোটেও তাঁকে বারবার ধোঁকা দিতে পারবে না। বাকপটু ব্যক্তি ছাড়া এমন মন-ভোলানো কথা আ বলতে পারে?

৫। ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পের মধ্যে রোমান্টিকতার যে যে বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়, তা আলোচনা করে রোমান্টিক গল্প হিসেবে এর সার্থকতা বিচার করো।

উত্তর: প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পটির অন্যতম বিষয় হল তেলেনাপোতা নামক স্থানের প্রাকৃতিক পরিবেশের বিবরণ। এ গল্পের প্রকৃতিপ্রেমিক কথকের চোখ দিয়েই আমরা প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে পাই। যেমন-আকাশে কৃষ্ণপক্ষের ‘বিলম্বিত ক্ষয়িত চাঁদ’, মন্দির এবং অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষ, প্রাণহীন অতীত জগতের সাথে সাদৃশ্য প্রতি মূহুর্তে এক ভয়ংকর সুন্দরের উপস্থিতি আমাদের সামনে তুলে ধরে। এরপর মাছরাঙা পাখি, সাপও ফড়িংদের ক্রিয়াকলাপ এবং উদাস ঘুঘুর ডাক কথকের মতো পাঠকদেরও আনমনা করে দেয়।

এর সঙ্গে থাকে গল্পকথকের আন্তরিকতা। নিরঞ্জনের প্রতিশ্রুতি পালন-না-করা, যামিনীর জীবনের দুর্ভাগ্য এবং মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য যামিনীর অসুস্থ, অন্ধ, বৃদ্ধা মায়ের অসহায় চিন্তা কথককে সাময়িক হলেও আন্তরিকভাবেই আবেগাচ্ছন্ন করে দেয়। গল্পকথকের স্বতঃস্ফূর্ত আবেগের পরিচয় এ গল্পের প্রায় প্রতিটি অনুচ্ছেদেই লক্ষ করা যায়। যামিনীর কন্যাদায়গ্রস্ত মায়ের করুণ কথাগুলি শুনে তাই আমরা দেখি-‘আপনার নিজের চোখের জল বুঝি আর গোপন রাখা যাবে না’।

রোমান্টিকতার সবচেয়ে বড়ো যে বৈশিষ্ট্য কল্পনাপ্রবণতা, তা এ গল্পের প্রতিটি বাক্যে বর্তমান। যেমন, রাতের বেলায় ছাদে উঠে কথক কৃষ্ণপক্ষের ক্ষীণ চাঁদের আলোয় কল্পনা করেছেন “মৃত্যু সুসুপ্তিমগ্ন মায়াপুরীর কোনো গোপন প্রকোষ্ঠে বন্দিনী রাজকুমারী সোনার কাঠি রূপার কাঠি পাশে নিয়ে যুগান্তের গাঢ় তন্দ্রায় অচেতন।”

৬। ছোটোগল্প হিসেবে ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ রচনাটি কতখানি সার্থক, তা পর্যালোচনা করো।

উত্তর : ছোটোগল্পের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল স্বল্প পরিসরে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঘটনাকে প্রকাশ করা। ‘ঘটনার ঘনঘটা’, ‘অতিকথন’, তত্ত্ব, উপদেশ বা বহু চরিত্রের সমাবেশের কোনো সুযোগ ছোটোগল্পে নেই। প্রতিদিনের কাজকর্ম এবং কলকাতা শহরের ভিড়ভাট্টায় হাঁপিয়ে উঠে ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পের গল্পকথক দুই বন্ধু-সহ বেড়াতে যাবেন তাঁর অন্যতম বন্ধু মণির পূর্বপুরুষদের বাসভূমি তেলেনাপোতায়। সেখানে গিয়ে জীর্ণ প্রাসাদে গভীর রাতে রহস্যময়ী নারীমূর্তি দেখা, মাছ ধরতে গিয়ে বড়শিতে টান দিতে দেরি করা, যামিনীকে আবিষ্কার এবং যামিনীর মায়ের প্রত্যাশার মধ্য দিয়ে জীবনের এক অন্যরকম উপস্থাপনা গল্পে পাওয়া যায়। আর তার প্রেক্ষাপটে থেকে যায় রহস্যময়তার এক অসামান্য বিন্যাস।

উত্তম পুরুষের আশ্রয়ে এবং ভবিষ্যৎকালের ক্রিয়াপদ ব্যবহারের সাহায্যে কথক এই গল্পে অত্যন্ত সুকৌশলে পাঠককেই নায়কের মর্যাদা দিয়ে দেন। ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে এইভাবেই লেখক শহুরে, রোমান্টিক মধ্যবিত্ত শ্রেণির চরিত্রবৈশিষ্ট্য প্রকাশ করেছেন। তিনি আমাদের জানিয়েছেন যে, পরার্থপরতা এবং রোমান্টিকতাকে মধ্যবিত্ত শ্রেণি সাময়িকভাবে গ্রহণ করলেও তার চরিত্রে স্বার্থপরতা এবং বাস্তববাদিতাই শেষপর্যন্ত প্রাধান্য পায়। এইভাবে ক্ষুদ্রের মধ্যে বৃহতের, খণ্ডের মধ্যে সমগ্রের ইঙ্গিত দিতে দিতে গল্পটি একমুখী লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে গেছে। সুতরাং নিঃসন্দেহে ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ একটি শিল্পসার্থক ছোটোগল্প।

৭। “কে, নিরঞ্জন এলি?”-নিরঞ্জন কে? কোন্ পরিস্থিতিতে গল্পকথক নিরঞ্জনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন? ২+৩

উত্তর: প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে নিরঞ্জন হল যামিনীর মায়ের দূর সম্পর্কিত বোনপো, যে যামিনীর মায়ের কথায় যামিনীকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

যামিনীদের দূর সম্পর্কের আত্মীয় মণির বন্ধু হিসেবে কথকের তেলেনাপোতায় আগমন ঘটে। সেখানেই যামিনীর কাতর স্বর, মণির বিরক্তি ইত্যাদিতে কৌতূহলী হয়ে কথক জানতে পারেন নিরঞ্জনের কথা। নিজের দূর সম্পর্কের এই বোনপোর সঙ্গে যামিনীর মা যামিনীর ছেলেবেলাতেই সম্বন্ধ ঠিক করেছিলেন। বছর চারেক আগেও সে প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিল যে বিদেশের চাকরি থেকে ফিরে যামিনীকে বিয়ে করবে। সেই থেকে যামিনীর বৃদ্ধা মা-এর অপেক্ষার প্রহর গোনা চলছে। নিরঞ্জনের প্রতি অন্ধবিশ্বাস বৃদ্ধাকে অস্থির করে রেখেছে। এই করুণ পরিস্থিতি কথককে দুর্বল করে তোলে এবং যখন মণি আর যামিনীর সঙ্গে তিনি বৃদ্ধার ঘরে যান। অন্ধ বৃদ্ধা তাকেই নিরঞ্জন ভেবে আনন্দে অধীর হয়ে ওঠেন। তিনি নিশ্চিত হয়ে যান যে, নিজের প্রতিশ্রুতি রাখতে নিরঞ্জনই ফিরে এসেছে। আকুলভাবে বলেন-“তুই আসবি বলে প্রাণটা যে আমার কণ্ঠায় এসে আটকে আছে।… এবার তো আর এমন করে পালাবি না?” এই পরিস্থিতিতে কথক মৃত্যুপথযাত্রী বৃদ্ধাকে নতুন করে কষ্ট দিতে চান না বলেই নিরঞ্জনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।

৮। মনে হবে তেলেনাপোতা বলে কোথায় কিছু সত্যি নেই।”-এ কথা কার, কেন মনে হয়েছে? অথবা, “মনে হবে তেলেনাপোতা বলে কোথায় কিছু সত্যি নেই।”-বক্তার পরিচয় উল্লেখ-সহ, তাঁর এরূপ মনে হওয়ার কারণ আলোচনা করো।

উত্তর: প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্প থেকে সংকলিত এই উদ্ধৃতিটি এ গল্পের গল্পকথকের মনে হবে যে “তেলেনাপোতা বলে কোথায় কিছু সত্যি নেই।”

গল্পকথক দুই বন্ধু-সহ একরাতের জন্য তেলেনাপোতা নামক এক গ্রামে বেড়াতে গিয়ে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সে গ্রামের মেয়ে যামিনীকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কলকাতায় ফিরে আসেন। ফিরে এসে বেশ কয়েকদিন পর পারিপার্শ্বিক এবং মানসিক সব বাধা দূর করে আবার তেলেনাপোতা যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হন। কিন্তু সে-সময়েই তিনি তেলেনাপোতার মশাবাহিত ম্যালেরিয়ায় প্রচন্ডভাবে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। বহুদিন পর সেরে উঠে অতি দুর্বল দেহ নিয়ে কাঁপা পায়ে বাড়ির বাইরের আলো-বাতাসে যখন কথক এসে বসলেন, তখন তিনি বুঝতে পারলেন, ইতিমধ্যেই তাঁর দেহমনে নিজের অজান্তেই অনেক ধোয়া-মোছা হয়ে গেছে। কলকাতা-ফেরার দিনটিতে যে তেলেনাপোতা তাঁর কাছে ছিল ঘনিষ্ঠ এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, তাই বর্তমানে পরিণত হয়েছে নিভে আসা এক তারায়। সদ্য-ম্যালেরিয়া থেকে সেরে-ওঠা কথক উপলব্ধি করেন যে, তেলেনাপোতা এখন ঝাপসা এক স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। আর, যামিনী তাঁর কোনো এক দুর্বল মুহূর্তের অসম্ভব, কুয়াশাচ্ছন্ন এক কল্পনামাত্র। ভয়ংকর ম্যালেরিয়া কথককে ভেতরে-বাইরে নাড়িয়ে দিয়েছিল বলেই এমনটা মনে হয়েছিল তাঁর।

৯। “এই জনহীন ঘুমের দেশে সত্যি ওরকম মেয়ে কোথাও আছে আপনি বিশ্বাস করতে পারবেন না।”-মেয়েটির চরিত্র আলোচনা-প্রসঙ্গে সমাজের কোন্ বাস্তবতা ফুটে উঠেছে আলোচনা করো।

প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ ছোটোগল্পে উল্লিখিত মেয়েটি হল যামিনী।

তেলেনাপোতা পৌঁছানোর পরদিন সকালে নিস্তব্ধ পানাপুকুরে ছিপ ফেলে বসে থাকতে থাকতে একসময় ঘুঘুর উদাস করা ডাকে আনমনা হয়ে পড়েছিলেন গল্পকথক। ঠিক এমন সময়েই হঠাৎ জলের-শব্দ-শুনে চমক ভেঙে তিনি দেখেন যে, স্থির জলে ঢেউ উঠছে। ঘাড় ঘুরিয়ে তখনই কথক দেখতে পান যে, ঘাটে দাঁড়িয়ে পুকুরের পানা সরিয়ে পিতলের একটি চকচকে কলশিতে জল ভরছে একটি মেয়ে। মেয়েটির চোখ দুটিতে কৌতূহলী দৃষ্টি থাকলেও তার চালচলনে সলজ্জ আড়ষ্টতার কোনো চিহ্নমাত্র ছিল না। মেয়েটির মুখের শান্ত, করুণ, গম্ভীর ভাব দেখে কথকের মনে হয় যে, দীর্ঘকাল ধরে এক নিষ্ঠুর জীবনপথ বুঝি মেয়েটি পার হয়ে এসেছে। কলশি নিয়ে ফেরার সময় হঠাৎই পেছন ফিরে তাকিয়ে সে কথককে হাত গুটিয়ে বসে থাকার কারণ জিজ্ঞাসা করে তাঁকে বড়শিতে টান দিতে বলে। মেয়েটির গলার স্বর এমন অচঞ্চল, কমনীয় ও গম্ভীর ছিল যে, কথকের মনেই হচ্ছিল না সেই গ্রাম্য তরুণীটি অপরিচিত এক পুরুষের সঙ্গে কথা বলছে। সম্পূর্ণ অপরিচিত এক পুরুষের সঙ্গে মেয়েটির ব্যবহারের সাবলীলতায় বিস্মিত ও অভিভূত হয়ে গিয়ে বড়শি টানতে দেরি করে ফেলেন তিনি। পরে বড়শিতে টান দিয়ে মাছ, টোপ কিছু না পেয়ে যখন মেয়েটির দিকে তাকান, তখনই সে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ফিরতে থাকে। কিন্তু তার মুখে উজ্জ্বল হাসির একটা ইশারা নজরে পড়ে কথকের। দুঃখ-দরিদ্র্যের বাস্তবতা যে মানুষের স্বাভাবিক স্বভাব-বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটিয়ে দেয়, সেই সমাজ-বাস্তবতা যামিনীর আচার-আচরণের মধ্যে ফুটে উঠেছে। সেকারণেই অপরিচিত যুবক-কথকের সাথে কথা বলার ক্ষেত্রে তার মধ্যে কোনো লজ্জা বা জড়তার চিহ্ন আমরা দেখি না। এ কারণেই মেয়েটি চলে যাওয়ার পর কথক উদ্ধৃত কথাটি ভেবেছিলেন।

১০। “পুকুরের ঘাটের নির্জনতা আর ভঙ্গ হবে না তারপর।”-পুকুরের ঘাটের নির্জন প্রাকৃতিক পরিবেশের বর্ণনা দাও।

প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ নামক ছোটোগল্পে দুই বন্ধুকে সঙ্গে করে কলকাতাবাসী গল্পকথক তাঁর বন্ধু মণির প্ররোচনায় তাঁদের পিতৃপুরুষের বাসভূমি তেলেনাপোতায় বেড়াতে এসেছিলেন মাছ ধরার উদ্দেশ্যে। তেলেনাপোতা পৌঁছোনোর পরের দিন সকালেই তিনি বড়শি এবং মাছ-ধরার অন্যান্য উপকরণ নিয়ে চলে যান পাশের পানাপুকুরে। ছিপ ফেলে সেখানে তিনি মাছের অপেক্ষা করছিলেন।

বেলা বাড়লে, সেই জনহীন পুকুরঘাটে কথক দেখেন যে, পুকুরটির অন্য পাড়ে, নুয়ে-পড়া একটি বাঁশের ডগায় বসে থাকা একটি মাছরাঙা পাখি তার রঙিন দেহ নিয়ে মাঝেমাঝেই পুকুরের জলে ঝাঁপিয়ে পড়ছে এবং ঠোঁটে মাছ নিয়ে শিকারের সার্থকতার আনন্দে, কথককে যেন বিদ্রুপ করতে করতে, আবার বাঁশের মাথায় ফিরে যাচ্ছে। একটা মোটা লম্বা সাপ তাঁকে সন্ত্রস্ত করে দিয়ে ভাঙা ঘাটটির কোনো ফাটল থেকে বেরিয়ে ধীরেসুস্থে সাঁতরে পুকুরের ওপারে গিয়ে ওঠে। দুটো ফড়িং যেন তাদের পাতলা-কাচের মতো পাখা নেড়ে গল্পকথকের বড়শির ফাতনার ওপর বসার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। সেই সঙ্গে ঘুঘু পাখি মাঝে মাঝেই তার উদাস করে দেওয়া সুরে ডাক দিয়ে গল্পকথককে আনমনা করে দিতে থাকে। যামিনীর আগমনের আগে গল্পকথক পুকুরঘাটে এমন নির্জনতারই সম্মুখীন হয়েছিলেন।

১১। আপনাকে কৌতূহলী হ’য়ে যামিনীর পরিচয় জিজ্ঞাসা করতেই হবে”-প্রসঙ্গ উল্লেখ করে উদ্দিষ্ট ব্যক্তির এমনটা করার কারণ লেখো।

উত্তর: প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পের গল্পকথক তেলেনাপোতার পানাপুকুরে বড়শি ফেলে দীর্ঘক্ষণ বসে থেকেও মাছ ধরতে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে ফিরে আসেন তাঁদের আস্তানায়। সেখানে ফিরে গিয়ে তিনি দেখেন যে, তাঁর মাছ ধরার ব্যর্থতার কথা এরই মধ্যে রাষ্ট্র হয়ে গেছে। বন্ধুরা ইতিমধ্যেই জেনে গেছে যে, পুকুরে ছিপ ফেলে কথক দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার পর ডুবে যাওয়া ফাতনা ভেসে উঠলে যখন টান দেন, তখন দেখা যায় বড়শিতে মাছ তো নয়ই, এমনকি টোপও নেই। এই বিষয়টি নিয়ে কথকের ঘুমকাতুরে বন্ধুটি এবং মণি তাঁর সঙ্গে রসিকতা করলে গল্পকথক ব্যথিত হয়ে তাঁদের এই খবর কে দিল তা জিজ্ঞাসা করেন। তখন বন্ধু মণি তাঁকে জানান যে, আর কেউ নয়, স্বয়ং যামিনীই তার নিজের চোখে সব কিছু দেখে তাঁদেরকে বিষয়টি জানিয়ে গেছে।

গল্পকথকের কাছে তখন জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যায় যে, পুকুরঘাটে যে মেয়েটি কলশিতে জল ভরতে গিয়েছিল এবং যে মেয়েটির সহজ-সরল-স্বাভাবিক আচরণ সেই সময় তাঁকে বিস্মিত ও অভিভূত করে দিয়েছিল-সেই মেয়েটিই যামিনী। সে-ই কথকের মাছ ধরতে না পারার কথা কৌতুকের সঙ্গে তাঁর বন্ধুদের কাছে প্রচার করেছে। এই কারণেই কথক যামিনীর বিস্তৃত পরিচয় জানার জন্য কৌতূহল প্রকাশ করেছিলেন।

১২। আপনার আসল উদ্দেশ্য আপনি নিশ্চয় বিস্মৃত হবেন না।”-আসল উদ্দেশ্য কোন্টি? সেই উদ্দেশ্য সাধনে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কী করলেন? ১+৪

উত্তর : প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ ছোটোগল্প থেকে সংকলিত এই উদ্ধৃতিটিতে গল্পকথকের ‘আসল উদ্দেশ্য’-এর কথাই বলা হয়েছে। গল্পকথকের তেলেনাপোতায় বেড়াতে আসার আসল উদ্দেশ্য ছিল মৎস্যশিকার।

সেই উদ্দেশ্যসাধনে গল্পকথক তেলেনাপোতায় পৌঁছানোর পরদিন সকালে বড়শি-সহ মাছ ধরার সমস্ত উপকরণ নিয়ে হাজির হন পানাপুকুরটিতে। সেখানে বড়শি ফেলে ভাঙা ঘাটে তিনি একাকী বসে থাকেন মাছের অপেক্ষায়। ক্রমে বেলা বাড়তে থাকলেও মাছের দেখা পাওয়া যায় না। একটি মাছরাঙার ক্রমাগত মাছ শিকার, একটি সাপের সাঁতার এবং দুটি ফড়িং-এর ফাতনাটিতে বসার প্রতিযোগিতামূলক চেষ্টা নীরবে দেখে চলেন কথক। ঘুঘুপাখির উদাস-করা ডাকে তন্দ্রাচ্ছন্ন কথক একসময় হঠাৎ জলের শব্দে চমকে গিয়ে দেখেন, পুকুরের স্থির সবুজ জলে ঢেউ উঠেছে এবং তাঁর ফাতনা ধীরে ধীরে দুলছে। ঘাড় ঘুরিয়ে একটি মেয়েকে কলশিতে জল ভরতে দেখে অবাক হয়ে যান তিনি। কলশিতে জল ভরে ফিরে যাওয়ার সময় মেয়েটি কথককে বড়শিতে টান দিতে বললে ভ্যাবাচাকা খাওয়া কথক বড়শিতে টান দিয়ে দেখেন, তাতে মাছ তো নেই-ই, টোপও নেই। মৃদু হেসে মেয়েটি চলে গেলে, তার কথা ভাবতে ভাবতে আবার জলে টোপ-সহ বড়শি ফেলে বসে থাকেন তিনি। দ্বিতীয়বার মাছ আর তাঁর টোপ না খাওয়ায় একসময় হতাশ কথক সবকিছু গুটিয়ে উঠে পড়েন। সুতরাং, মৎস্যশিকারে ব্যর্থ হলেও কথক মাছ ধরার সূত্রে তেলেনাপোতায় এক আশ্চর্যজনক অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন।

১৩। তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্প অবলম্বনে গল্পকথকের রাত্রিকালীন ছাদ-ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।

উত্তর: প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে তেলেনাপোতায় রাতে কথক মশার কামড় এবং গুমোট গরম থেকে রক্ষা পেতে ঘুমন্ত বন্ধু-দুজনকে রেখে টর্চ হাতে, ভাঙা সিঁড়ি দিয়ে বাড়ির ছাদে উঠে যান। ছাদে উঠে গল্পকথক দেখেন, ভাঙা আলসে এবং ছাদের মাঝখানের ফাটলগুলিতে এমনভাবে গাছ গজিয়ে উঠেছে যে, তাদের শিকড় ভেতরে ভেতরে জীর্ণ প্রাসাদটিকে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে নিয়ে চলেছে। এসব সত্ত্বেও কৃষ্ণপক্ষের ম্লান আলোয় চারিদিকটা কেমন যেন অপূর্ব মোহময় হয়ে উঠেছে। কথকের মনে হয়, মরণ-নিদ্রায়-আচ্ছন্ন সেই ছলনাপুরীর কোনো গোপন ঘরে যেন কারারুদ্ধ রাজকুমারী সোনার কাঠি ও রুপোর কাঠি পাশে নিয়ে যুগ-যুগান্তরের গভীর ঘুমে অচৈতন্য হয়ে আছে। সেই প্রাসাদেরই পাশের সবু রাস্তার ওপারের জীর্ণ বাড়ির একটি জানলায় একটি আলোকরেখা দেখতে পান কথক। তারপর তিনি দেখেন আলোর সেই রেখা আড়াল করে একটি রহস্যময় অশরীরী মূর্তি সেখানে এসে দাঁড়িয়েছে। গভীর রাতে, জানলার পাশে দাঁড়ানো ছায়ামূর্তিটি কার, কেন-ই বা সেই নারীর চোখে ঘুম নেই-কথকের মনে এসব প্রশ্ন জাগে। কিছুক্ষণ পরই অবশ্য তাঁর অনুভব হয়, ইতিপূর্বে দেখা দৃশ্যটা হয়তো বা তাঁর দৃষ্টিভ্রম। কেন-না, ততক্ষণে একটু পরেই জানলার পাশে দাঁড়ানো ছায়ামূর্তিটি সরে গেছে এবং আলোর ক্ষীণ রেখাটিও মুছে গেছে। এর কিছু পরে ছাদ থেকে কথক নেমে আসেন।

১৪। মনে হবে বোবা জঙ্গল থেকে কে যেন অমানুষিক এক কান্না নিংড়ে নিংড়ে বার করছে।”- কখন বক্তার এই উপলব্ধি হয়? ‘অমানুষিক’ কান্নাটি আসলে কী ছিল? ৩+২

অথবা, “মনে হবে বোবা জঙ্গল থেকে কে যেন অমানুষিক এক কান্না নিংড়ে নিংড়ে বার করছে।”-মন্তব্যটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: প্রশ্নে উদ্ধৃত বাক্যটি প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ নামের ছোটোগল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। গল্পকথক, তাঁর এক ঘুমকাতুরে বন্ধু এবং অপর এক বন্ধু মণি-কোনো একদিন যাত্রা করেছিলেন কলকাতা থেকে তিরিশ মাইল দূরবর্তী এক অনামা গ্রাম তেলেনাপোতার উদ্দেশে। কলকাতা থেকে ভিড়ে-ঠাসা এক বাসে প্রায় দু-ঘণ্টা চলার পর তাঁরা নামেন তেলেনাপোতার কাছাকাছি বাসস্টপে। একটা জল-জমা, নীচু জায়গার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে তাঁরা অপেক্ষা করতে থাকেন তাঁদের নিতে আসা গোরুর গাড়ির জন্য। কিন্তু মশাদের অত্যাচারে তাঁরা সেই সময় অস্থির হয়ে পড়েন। অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত গল্পকথক যখন চরম অধৈর্য হয়ে ফিরতি বাসে কলকাতায় ফেরার কথা ভাবতে শুরু করেন, ঠিক তখনই সেই জঙ্গলের ভেতরকার সরু রাস্তার শেষপ্রান্ত থেকে অদ্ভুত এবং শ্রুতিবিস্ময়কর একটি শব্দ তিনি শুনতে পান। সেই শব্দ শুনেই কল্পনাপ্রবণ গল্পকথকের মনে হয় “বোবা জঙ্গল থেকে কে যেন অমানুষিক এক কান্না নিংড়ে নিংড়ে বার করছে।”

সেই অদ্ভুত শব্দটি যে তাঁদের নিতে আসা গোরুর গাড়ির শব্দ, সে-কথা বুঝতে পেরেছিলেন কথকরা। তাই সেই শব্দ শুনে ‘প্রতীক্ষায় চঞ্চল হয়ে’ উঠেছিলেন তাঁরা। তাঁদের সেই প্রতীক্ষা সার্থক হল যখন একটি গোরুর গাড়ি এসে তাঁদের তেলেনাপোতায় নিয়ে চলল।

১৫। তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পের গল্পকথকদের গোবুর গাড়িতে করে তেলেনাপোতা যাওয়ার বর্ণনা দাও। অথবা, ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে তেলেনাপোতা গ্রামে যাওয়ার যাত্রাপথের বর্ণনা দাও।

উত্তর: প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে কথক এবং তাঁর দুই বন্ধু কলকাতা থেকে ঘণ্টা-দুই বাসযাত্রা করে একটি নির্দিষ্ট বাসস্টপে নামেন। নালার পাশে দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেন তাঁরা। তারপর তাঁরা দেখেন, ধীর গতিতে দুলে দুলে একটি গোরুর গাড়ি তাঁদেরই উদ্দেশ্যে এগিয়ে আসছে।

গোরুর গাড়িটি সামনে এলে গল্পকথকরা তিনজন সেই ছোটো গোরুর গাড়ির ভিতর কোনোক্রমে গাদাগাদি করে বসলেন। তারপর যে পথে গাড়িটি এসেছিল, সেই জঙ্গলে ঘেরা পথেই সেটি ফিরে চলতে শুরু করলে গল্পকথকরা অবাক হয়ে দেখেন যে, গাড়িটি সেই ঘন অন্ধকার জঙ্গলে সুড়ঙ্গের মতো অপরিসর পথ একটু একটু করে বের করে ধীরগতিতে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। গাড়ির ঝাঁকুনিতে গল্পকথকের সঙ্গে তাঁর বন্ধুদের অনিচ্ছাকৃত সংঘর্ষও ঘটতে লাগল মাঝে-মধ্যেই। এরপর কথক ক্রমশ অনুভব করলেন যে, চারপাশের জমাট অন্ধকারে তাঁর স্বাভাবিক চেতনাও বুঝি লোপ পাচ্ছে। শেষে ক্যানেস্তারা পেটানোর শব্দে চেতনা ফিরে পেলে কথক ছইয়ের ভেতর থেকেই আকাশের তারা দেখতে পেলেন। তিনি গাড়োয়ানের কাছ থেকে জানতে পারলেন যে, ক্যানেস্তারা বাজিয়ে সে আসলে চিতাবাঘ তাড়াচ্ছে।

ছইয়ের মধ্যে বসেই কৃষ্ণপক্ষের চাঁদের আলোয় গল্পকথক দেখতে পেলেন যে, চলমান গোরুর গাড়ির দু-পাশ দিয়ে ক্রমশ সরে যাচ্ছে।

আরো পড়ুন : একাদশ শ্রেণি দ্বিতীয় সেমিস্টার বাংলা প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment