জনজীবনে সংবাদপত্রের ভূমিকা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

জনজীবনে সংবাদপত্রের ভূমিকা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

জনজীবনে সংবাদপত্রের ভূমিকা - মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা
জনজীবনে সংবাদপত্রের ভূমিকা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

সংবাদ পরিবেশক পত্রই হল ‘সংবাদপত্র’। সংবাদপত্র চলমান পৃথিবীর খবর আমাদের কাছে পৌঁছে দেয়। বিশাল পৃথিবীকে সে গৃহপ্রাঙ্গণে এনে হাজির  করে। দেহের পুষ্টির জন্য যেমন খাদ্যের ভূমিকা অপরিহার্য, ঠিক তেমনভাবেই মানসিক পুষ্টি, বিকাশ ও স্ফূর্তির জন্য সংবাদপত্রের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

সংবাদপত্র গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী এবং জনমত গঠনের অন্যতম মাধ্যম। মানুষের মৌলিক অধিকার বিঘ্নিত হলে, গণতন্ত্রের মর্যাদা ভুলুণ্ঠিত হলে সংবাদপত্রের নির্ভীক কণ্ঠে ধ্বনিত হয় প্রতিবাদের সুর। তাই সংবাদপত্র হল ‘জনগণের পবিত্র গণতান্ত্রিক অধিকার সংরক্ষণের দায়িত্বশীল অভিভাবক’।

আজকের দিনে সংবাদপত্র শুধু সংবাদ পরিবেশনেই শেষ হয় না; অর্থনীতি, রাজনীতি, দর্শন, বিজ্ঞান, শিল্প, সাহিত্য, ক্রীড়া, বিনোদন ইত্যাদি জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল বিষয় নিয়ে এই সংবাদপত্র আলোচনা করে। পৃথিবীর যেখানে ‘প্রতিকারহীন’ শক্তির অপরাধে ‘বিচারের বাণী নীরবে-নিভৃতে কাঁদে’, সেখানেই গণতন্ত্রের নির্ভীক প্রহরী সংবাদপত্রের ধিক্কার বাণী ধ্বনিত হয়, এর ফলে বিশ্ববিবেক হয় সচেতন। আবার পরস্পরের মধ্যে আদানপ্রদানের মাধ্যমে সংবাদপত্র মানুষকে একইসঙ্গে জনমুখী এবং বিশ্বমুখী করে তুলতে সাহায্য করে। সামাজিক জ্ঞান বিস্তার ও সাংস্কৃতিক জীবন গঠনের জন্য সংবাদপত্রের ভূমিকা অপরিসীম। তাই সংবাদপত্রকে ‘জনগণের শিক্ষক’ নামে অভিহিত করা হয়।

বাণিজ্য ও ব্যাবসার প্রসারে সংবাদপত্রের ভূমিকা কম নয়। আজকাল বিজ্ঞাপন বাণিজ্যক্ষেত্রে যে ভূমিকা পালন করছে, তার অন্যতম মাধ্যম হল সংবাদপত্র। সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় রচনা মানুষের রাজনৈতিক ও সামাজিক চেতনার দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়। প্রকৃতপক্ষে সংবাদপত্র হল ‘People’s Parliament’ ।

সংবাদপত্রহীন আধুনিক জীবন হল অনেকটা তেলহীন প্রদীপের মতো। ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে হিকি সাহেবের ‘বেঙ্গল গেজেট’ হল আমাদের দেশের প্রথম সংবাদপত্র। বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম সাময়িকপত্র হল ‘দিগ্দর্শন’, প্রকাশ ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে। ‘সংবাদ প্রভাকর’ বাংলার অন্যতম প্রধান ‘দৈনিক সংবাদপত্র’। একালের ‘আনন্দবাজার’, ‘বর্তমান’, ‘প্রতিদিন’, ‘আজকাল’, ‘এই সময়’ প্রভৃতি সংবাদপত্র দায়িত্বের সঙ্গে সংবাদ পরিবেশন করে চলেছে।

নিরপেক্ষতা সংবাদপত্রের প্রধান শর্ত। কিন্তু ব্যক্তিমালিকানাধীন, ব্যাবসায়িক, রাজনৈতিক স্বার্থে পরিচালিত সংবাদপত্র দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করে। বিশেষ বিশেষ সম্প্রদায় বা গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রিত পত্রিকাগুলি অনেক সময় জাতীয়তাবিরোধী ভূমিকাও গ্রহণ করে। আবার কিছু সংবাদপত্র অশ্লীল, কুরুচিপূর্ণ খবর পরিবেশন করে মুনাফা অর্জন করতে চায়। বলাবাহুল্য এরা সংবাদপত্র জগতের কলঙ্ক। কিছু কিছু সংবাদপত্র আবার সংকীর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসিদ্ধির জন্য খবর পরিবেশন করে। এরাও সংবাদপত্রের পবিত্র আদর্শকে বিনষ্ট করে।

দেশ, জাতি ও সমাজের কল্যাণাদর্শে দীক্ষিত সংবাদপত্র আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের মতোই কার্যকারী। তাই সংবাদপত্রকে নিরপেক্ষ, মার্জিত, রুচিসম্পন্ন এবং নির্ভীক হতে হবে, নইলে সে সুস্থ সংস্কৃতিবান নাগরিক তৈরি করতে ব্যর্থ হবে। গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠায়, দেশের দুর্যোগে-বিপর্যয়ে ও বিভিন্ন প্রতিকূল সময়ে বিভিন্ন দেশে আদর্শবান সংবাদপত্র প্রমাণ করেছে ‘অসির চেয়ে মসি বড়ো’। একটি বিরাট সৈন্যবাহিনীর পক্ষে যা কষ্টসাধ্য অসম্ভব; একটি ক্ষুদ্র সংবাদপত্রের পক্ষে তা অনায়াসে সম্ভব। এখানেই সংবাদপত্রের শক্তি।

আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment