শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

ইংরেজিতে যাকে বলে ‘মাস মিডিয়া’, তাকেই আমরা বাংলায় বলে থাকি ‘গণমাধ্যম’। যে মাধ্যমের মধ্য দিয়ে আমরা সাধারণ মানুষ হিসেবে অবসর বিনোদন করি, আনন্দ পাই, জ্ঞানলাভ করি এবং দেশ-দেশান্তরের বহু খুঁটিনাটি খবর পেয়ে থাকি, তাকেই আমরা ‘গণমাধ্যম’ বলব। এই মাধ্যমের সঙ্গে জনসাধারণের সরাসরি যোগাযোগ। হাত বাড়ালেই এ মাধ্যমটিকে পাওয়া যায়। খবরের কাগজ, টেলিভিশন, রেডিয়ো, যাত্রা, থিয়েটার ইত্যাদিকে আমরা গণমাধ্যম হিসেবে চিহ্নিত করতে পারি। শিক্ষাবিস্তারে এদের ভূমিকা রয়েছে।
শিক্ষাবিস্তারে সংবাদপত্রের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সংবাদপত্রে সংবাদের পাশাপাশি নানা বিষয়ে প্রবন্ধ-নিবন্ধ-প্রতিবেদন, আলোচনা ইত্যাদি প্রকাশিত হয়। এইসব আলোচনা সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করে। শুধুমাত্র ছাত্রদের জন্যও সংবাদপত্রে বিশেষ বিভাগ থাকে। তা ছাড়া পাঠ্য বিষয়-বহির্ভূত জ্ঞানের রাজ্যে ছাত্রদের আমন্ত্রণ জানায় সংবাদপত্র। এদিক থেকে সংবাদপত্রের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
খবরের কাগজের পরেই গণমাধ্যম হিসেবে উল্লেখ করা যায় ‘রেডিয়ো’-র কথা। আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যাণে এই বেতারযন্ত্রটি আমাদের ঘরে ঘরে হাজির। বিভিন্ন ধরনের সংগীত, শ্রুতিনাটক, কৌতুক-নকশা ইত্যাদির মাধ্যমে যন্ত্রটি আমাদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করে থাকে। সে ঘণ্টায় ঘণ্টায় প্রচার করে দেশ-বিদেশের সংবাদ। এ ছাড়া এই মাধ্যমটি খেলাধুলার ঘটমান বিবরণ, কৃষিসংবাদ, কৃষিশিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞানের কথা, বৈজ্ঞানিক বার্তা, আবহাওয়ার খবর, প্রাসঙ্গিক ইতিহাস ও ভৌগোলিক বার্তা আমাদের কাছে পৌঁছে দেয়। জনসাধারণের কাছে রেডিয়ো কেবল বন্ধু নয়, সে একজন দক্ষ শিক্ষক।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের মধ্যে টেলিভিশন বা দূরদর্শন সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত। রেডিয়োকে আমরা উপভোগ করছি শুধু ‘কান’ দিয়ে। টিভি চক্ষু, কর্ণের বিবাদভঞ্জন করেছে। এই মাধ্যমটি বিনোদনের বাইরে নানা অনুষ্ঠান প্রচার করে। এতে নানা শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের উপযোগী প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলি শিক্ষাবিস্তারে ও সচেতনতা সৃষ্টিতে খুবই সহায়ক। অডিয়ো-ভিশুয়াল পদ্ধতিতে প্রদর্শনের ফলে সাধারণ জ্ঞানের বিষয়গুলি সম্বন্ধে সাধারণ শিক্ষিত, অল্পশিক্ষিত ও নিরক্ষর মানুষ সহজেই জ্ঞানলাভ করতে সক্ষম হয়।
গণমাধ্যম হিসেবে যাত্রাভিনয়, থিয়েটার, সিনেমা, কথকতা ইত্যাদি বিষয়গুলি একটি প্রধান ভূমিকা পালন করে। গ্রামগঞ্জে আজও নীতিশিক্ষার প্রধান মাধ্যম যাত্রা-কথকতা-পালাগান। সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে গ্রামের অল্পশিক্ষিত বা নিরক্ষর মানুষের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাপ্রচারে আজও এগুলির ভূমিকা অনস্বীকার্য।
স্কুলকলেজের প্রথাগত শিক্ষা এখনও পর্যন্ত সমস্ত মানুষের মধ্যে বিস্তারিত হয়নি। এখনও ভারতের বহু মানুষ নিরক্ষর, তাদের কাছে জীবনোপযোগী সংবাদ পরিবেশন, জ্ঞান, শিক্ষাদান, কৃষি-বাণিজ্য-শিল্প বিষয়ে জ্ঞাতব্য তথ্যাদি পৌঁছে দেওয়ার জন্য গণমাধ্যমগুলি অপরিহার্য মাধ্যম। প্রথাগত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে এই মাধ্যমগুলি বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে শিক্ষাবিস্তারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে। উচ্চ শিক্ষালয়, দৈনন্দিন জীবনের উপযোগী শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমগুলি প্রকৃতই এক-একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা নিতে পারে। এজন্য গণমাধ্যমগুলিকে আরও সক্রিয়, দক্ষ ও নিরপেক্ষ হতে হবে।
আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর