প্রাকৃতিক আইনের অর্থ, ক্রমবিবর্তন ও গুরুত্ব আলোচনা করো

প্রাকৃতিক আইনের অর্থ, ক্রমবিবর্তন ও গুরুত্ব আলোচনা করো

প্রাকৃতিক আইনের অর্থ, ক্রমবিবর্তন ও গুরুত্ব আলোচনা করো
প্রাকৃতিক আইনের অর্থ, ক্রমবিবর্তন ও গুরুত্ব আলোচনা করো

প্রকৃতির আইন

জাতীয় আইন ও আন্তর্জাতিক আইন আলোচনার পূর্বে সংক্ষেপে প্রাকৃতিক বা প্রকৃতির আইন সম্পর্কে আলোচনা করা দরকার।

প্রকৃতির আইনের অর্থ

প্রকৃতির আইন বলতে সেই সকল আইনকে বোঝায়, যে আইনগুলি মানব সৃষ্ট নয় বা সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ দ্বারা সমর্থিত নয়, তা সত্ত্বেও সকলেই মান্য করে চলে। একেবারে আদিম তথা প্রাচীন যুগ থেকেই প্রকৃতির আইনের অস্তিত্ব ছিল। এই রূপ আইনের উৎস হল প্রকৃতি। আবার অনেকের মতে, সমাজের স্বাভাবিক ন্যায়-নৈতিকতাবোধ ও বিচারবুদ্ধির ভিত্তিতে যেসকল সবর্জনীন নিয়মকানুন গড়ে ওঠে, সেগুলিকেই সাধারণত প্রাকৃতিক আইন বলে। সমাজের সকল মানুষ এই নিয়মগুলি মেনে চলতে বাধ্য থাকে এবং এই আইনগুলিকে কার্যকর করার জন্য কোনো সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের প্রয়োজন হয় না। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই প্রাকৃতিক আইন মেনে চলে, কারণ এরূপ আইনের প্রধান ভিত্তি হল মূল্যবোধ (Values) |

প্রাকৃতিক আইনের ক্রমবিবর্তন

(1) সফিস্ট দর্শান প্রাকৃতিক আইন

খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে সফিস্ট দার্শনিকদের রচনায় সর্বপ্রথম প্রাকৃতিক আইন সম্পর্কে উল্লেখ পাওয়া যায়। সফিস্ট দার্শনিক হিপিয়াস-এর মতে, প্রাকৃতিক আইন ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত ফলত, এই আইন মানুষ প্রণীত আইনের সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত। তাঁর কাছে প্রকৃতির আইন হল ব্যক্তির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের ভিত্তিস্বরূপ। অপর আরেকজন সফিস্ট দার্শনিক অ্যান্টিফন ‘নগররাষ্ট্রের আইন’ এবং ‘প্রাকৃতিক আইন’-এর মধ্যে পার্থক্য বিধান করে প্রাকৃতিক আইনকে অধিক গুরুত্ব প্রদান করেছিলেন।

(2) গ্রিক দর্শনে প্রাকৃতিক আইন

গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিসের আলোচনায় প্রাকৃতিক আইন সম্পর্কে আলোচনা পাওয়া যায়। সক্রেটিস প্রাকৃতিক আইন এবং মানবিক আইনের মধ্যে পার্থক্য বিধান করেছিলেন, যদিও তিনি এই দুই প্রকার আইনকে পরস্পর বিরোধী বলে মনে করতেন না। কারণ তাঁর মতে, যে-কোনো আইনের উৎসই হল ন্যায়। ফলে সকল আইনই সমান। যদিও তাঁর কাছে ন্যায়-এর অর্থ হল, আইনকে মান্য করা। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক অ্যারিস্টট্ল প্রাকৃতিক আইনকে ‘সর্বজনীন বা বিশ্বজনীন আইন’ (Universal Law) বলে চিহ্নিত করেছিলেন। তাঁর মতে, বিশেষ আইন (Particular Law) সমাজের সদস্যদের জন্য রচিত নিয়মকানুন। অপরদিকে, ন্যায়-অন্যায় সম্পর্কিত সাধারণ আইনসমূহ যা সমগ্র মানবসমাজের উপর প্রযুক্ত হয় তাই হল সর্বজনীন আইন। ব্যক্তির যুক্তিবোধ, ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়বোধ ইত্যাদি হল সর্বজনীন আইনের উৎস।

(3) স্টোয়িক দর্শনে প্রাকৃতিক আইন

খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দের কিছু আগে স্টোয়িক দর্শন বা নির্বিকারবাদ (Stoicism)-এর সূত্রপাত হয়েছিল। স্টোয়িক দার্শনিক ক্রিসিপ্পাস (Chrysippus) হলেন প্রাকৃতিক আইনের অন্যতম প্রবক্তা। তাঁর মতে, ঈশ্বর ও মানুষ উভয়েই যুক্তিবোধের দ্বারা পরিচালিত হয়। ঈশ্বরের সন্তান হওয়ার দরুণ প্রত্যেক ব্যক্তিই একে অপরের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। যাই হোক, ঈশ্বর ও ব্যক্তি মানুষ যেই বিশ্বরাষ্ট্রের অংশ, সেই রাষ্ট্র ন্যায়বোধ ও যুক্তিবোধ দ্বারা পরিচালিত হয়, এই ন্যায় ও যুক্তিবোধই হল প্রাকৃতিক আইন। প্রাকৃতির রাজ্য হল ন্যায়ের রাজ্য এবং প্রাকৃতিক আইন এই রাজ্যের শৃঙ্খলা রক্ষাকারী নিয়ামক। এই আইন ন্যায়-অন্যায়ের মানদণ্ড। এভাবেই ক্রিসিপ্লাস প্রকৃতির আইনকে বিশ্ব আঙিনায় তুলে ধরেছিলেন।

(4) রোমান দর্শনে প্রাকৃতিক আইন

স্টোয়িক দার্শনিকদের বিশ্বজনীন ধারণার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে রোমানরা প্রাকৃতিক আইন-সংক্রান্ত ধারণার বিকাশ ঘটায়। রোমান আইন ব্যবস্থায় তিন প্রকার আইনের অস্তিত্ব ছিল যথা- পৌর আইন (Jus Civile), বিশ্বজনীন আইন (Jus Gentium)  এবং প্রাকৃতিক আইন (Jus Natural)। রোমান দার্শনিক সিসেরো-র মতে, সমগ্র প্রকৃতির রাজ্যে তথা সমগ্র জগৎ একটি অপরিবর্তনীয়, অভ্রান্ত ও শাশ্বত আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। এই আইনই হল প্রাকৃতিক আইন। কোনো ব্যক্তি এই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। তাঁর কাছে, প্রাকৃতিক আইন হল যুক্তিবোধের সর্বোত্তম বহিঃপ্রকাশ। এইরূপ আইন ব্যক্তিকে সঠিক কর্তব্য পালনের পাশাপাশি সাম্য, স্বাধীনতা, মানসিকতাবোধ ও ভ্রাতৃত্ববোধের আদর্শ স্থাপনে অনুপ্রেরণা-উৎসাহ জোগায়। তিনি আরও বলেন, মানবিক আইন যদি প্রকৃতির আইনকে লঙ্ঘন করে তবে তা অবৈধ বলে বিবেচিত হবে। এভাবেই প্রাকৃতিক আইনের আধিপত্য স্থাপনে তিনি উদ্যোগী হয়েছিলেন।

(5) মধ্যযুগে প্রাকৃতিক আইন

মধ্যযুগেও প্রাকৃতিক আইনের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিল। যদিও চার্চ ও ধর্মযাজকরা নিজেদের স্বার্থে প্রাকৃতিক আইনের ব্যাখ্যা প্রদান করতেন। চার্চ প্রাকৃতির আইনকে ঐশ্বরিক আইন বলে মনে করতেন। মধ্যযুগের অন্যতম তাত্ত্বিক টমাস অ্যাকুইনাস- এর আইনতত্ত্বে প্রাকৃতিক আইনের উল্লেখ পাওয়া যায়। তাঁর মতে, প্রাকৃতিক আইন হল মানুষের উপর ঐশ্বরিক যুক্তির প্রতিফলন, যার দ্বারা পরিচালিত হয়ে ব্যক্তি ভালো-মন্দের বিবেচনা করতে পারে।

(6) চুক্তিবাদী দার্শনিকদের মতে প্রাকৃতিক আইন

প্রাকৃতিক আইন সম্পর্কে পূর্ববর্তী দার্শনিকদের তুলনায় চুক্তিবাদী দার্শনিক হক্সের মত ছিল ভিন্ন। তাঁর মতে, প্রাকৃতিক আইন হল বিবেচনামূলক পরামর্শ। তাঁর কাছে, প্রাকৃতিক আইন হল যুক্তির নির্দেশ এবং তা আত্মসংরক্ষণের নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত নিয়মের সমষ্টি। অর্থাৎ প্রকৃতির আইন যুক্তির দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এমন নীতিসমূহ যেগুলি ব্যক্তিকে আত্মসংরক্ষণে সহায়তা করে। হক্স-এর মতে প্রকৃতির রাজ্যে ব্যক্তির জীবন স্বতঃসিদ্ধ প্রকৃতির আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতো, যার ভিত্তিতে হক্সের যুক্তিভিত্তিক সমাজ গড়ে উঠেছিল। তবে প্রাকৃতিক আইন কোনো সার্বভৌমের নির্দেশ ছিল না। প্রাকৃতিক আইনের প্রধান উদ্দেশ্যই হল জনগণের কল্যাণসাধন করা। ব্যক্তি এই আইন অমান্য করার অর্থ হল সে নির্বোধ। অর্থাৎ হক্স উপযোগিতার ভিত্তিতে প্রকৃতির আইনের তত্ত্বকে ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন।

এ ছাড়া লক্ ও রুশোর আলোচনাতেও প্রাকৃতিক আইনের উল্লেখ পাওয়া যায়। তাঁরা প্রাকৃতিক আইনকে নৈতিক আইন হিসেবে দেখেছিলেন। বোঁদা-র আলোচনাতেও প্রাকৃতিক আইনের অস্তিত্ব দেখতে পাওয়া যায়।

(7) অন্যান্য চিন্তাবিদদের মড

আন্তর্জাতিক আইনবিদ হুগো গ্রোটিয়াস প্রাকৃতিক আইনকে আন্তর্জাতিক আইনের উৎস বলে চিহ্নিত করেছিলেন। তাঁর মতে প্রাকৃতিক আইন হল যথার্থ যুক্তির নির্দেশ, যা অপরিবর্তনীয় প্রকৃতির। হেনরি মেইন-ও মনে করেন আন্তর্জাতিক আইনের অন্যতম উৎস হল প্রকৃতিক আইন।

  • সমালোচনা: বহু তাত্ত্বিকদের আলোচনায় প্রাকৃতিক আইনের উল্লেখ থাকলেও এর বিবিধ সমালোচনা রয়েছে। যথা-

(1) অস্পষ্ট

প্রাকৃতিক আইন রাষ্ট্রীয় আইনের মতো সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট নয়। কারণ এই আইন প্রকৃতি সৃষ্ট ফলে বিধিবদ্ধভাবে লিপিবদ্ধ থাকে না একারণে ব্যক্তিভেদে ও সমাজভেদে যথাক্রমে এর ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ ভিন্ন হয়।

(2) পরিবর্তনশীলতা

প্রাকৃতিক আইন যেহেতু নৈতিকতার উপর ভিত্তিশীল, সেহেতু সমালোচকদের মতে ন্যায়নীতিবোধ সমাজভেদে এমনকি ব্যক্তিভেদেও পরিবর্তনশীল। ফলে এই আইন সমাজভেদে পরিবর্তিত হয়। তাই এই আইনের সর্বজনীনতার ধারণাও সম্পূর্ণ ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়। কারণ কোনো আইনই শাশ্বত নয়। সমাজ পরিবর্তনের সঙ্গে যে-কোনো আইন পরিবর্তিত হওয়া কাম্য নতুবা তা সমাজে অচলাবস্থা সৃষ্টি করবে।

(3) অবাস্তব 

প্রাকৃতিক আইন, আদর্শ সমাজ ইত্যাদি নৈতিক দিক থেকে গ্রহণীয় হলেও বাস্তবে প্রয়োগ অসম্ভব। বলা যায় এগুলি কাল্পনিক ভাবনা ছাড়া আর কিছুই নয়।

(4) অবলবৎযোগ্য

লিপিবদ্ধ রাষ্ট্রীয় আইনকে সহজে বাস্তবে প্রয়োগ করা যায় কিন্তু, প্রাকৃতিক আইন অস্পষ্ট ও অলিখিত হওয়ায় সেগুলিকে বাস্তবে প্রয়োগ করা অসম্ভব। বার্কার প্রাকৃতিক আইনের গুরুত্বহীনতার জন্য এগুলিকে আইনি মর্যাদা প্রদান করতে চাননি।

(5) অনৈতিহাসিক

যেসকল সমাজতাত্ত্বিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সমাজের ক্রমবিকাশ নিয়ে গবেষণা করেছিলেন তাঁদের তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায়, সমাজ বিকাশের কোনো স্তরেই মানুষ প্রাকৃতিক আইন দ্বারা পরিচালিত হয়নি। বরং রাষ্ট্রীয় আইনের সঙ্গে কখনো প্রকৃতির আইনের বিরোধ বাঁধলে প্রাকৃতিক আইন বাতিল হয়ে রাষ্ট্রীয় আইন বলবৎ হয়েছে। ফলে প্রাকৃতিক আইন অনৈতিহাসিক বলে সমালোচিত হয়েছে।

(6) সংকীর্ণ স্বার্থে ব্যবহার

কোকার-সহ বহু সমালোচকের বক্তব্য হল, শাসকগণ নিজেদের স্বার্থরক্ষার জন্য প্রাকৃতিক আইনকে ব্যবহার করতেন। যেমন-প্রাচীন ও মধ্যযুগে স্বৈরচারী রাজারা নিজেদের স্বার্থে এই আইনকে ব্যাখ্যা করেছিলেন, অনুরূপভাবে চার্চও মধ্যযুগে প্রকৃতির আইনকে নিজেদের স্বার্থের অনুকূলে ব্যাখ্যা করেছিল।

(7) গুরুত্ব বা তাৎপর্য

প্রাকৃতিক আইনের বিবিধ সমালোচনা থাকলেও এই আইনের গুরুত্বকে উপেক্ষা করা যায় না। কারণ-

  • সংগ্রামে অনুপ্রেরণা প্রদান: সমাজে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অন্যায়, অসাম্য ইত্যাদির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য ব্যক্তিকে উৎসাহিত করেছিল। যেমন-জমিদার শ্রেণির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের সংগ্রামের কথা বলা যায়।
  • আদালতের সমর্থন: বহুসময় বিচারকরা প্রাকৃতিক আইনের মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে বিবিধ রায় প্রদান করেছেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়-ব্রিটেনে বিচারপতি লর্ড পোপ এবং পরবর্তীকালে বিচারপতি হোবার্ট প্রাকৃতিক আইন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অধিকারহীন জনগণকে অধিকার প্রদানের ব্যবস্থা করেছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পঞ্চম ও চতুর্দশ সংবিধান-সংশোধনীর দ্বারা ‘যথাবিহিত আইন পদ্ধতি’ (Due Process of Law) অনুযায়ী বিচার বিভাগ আইনের যৌক্তিকতা বিচারের ক্ষমতা লাভ করেছিল ইত্যাদি।
  • আন্তর্জাতিক আইনের উৎস হিসেবে গুরুত্ব: আন্তর্জাতিক আইনের বিকাশে প্রাকৃতিক আইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আন্তর্জাতিক আইন বলবৎ করার জন্য যেহেতু কোনো কর্তৃপক্ষ থাকে না, সেহেতু আন্তর্জাতিক আইন বাস্তবায়নে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষগুলির নৈতিক বিচারবোধ কাম্য। যার উৎস প্রাকৃতিক আইন। আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ হল, লরেন্স, ওপেনহাইম, কেলসন এই ধারণার সমর্থক ছিলেন।

আন্তর্জাতিক ক্ষেতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন: রাষ্ট্রীয় আইন সর্বদা জনকল্যাণকর হবে একথা ভাবা অমূলক কারণ, নাৎসী জার্মানি-তে হিটলার বা ইতালির মুসোলিনির আইন জনকল্যাণমূলক ছিল না। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক আইনের ভিত্তিতে প্রণীত আইনের ভিত্তিতে রাষ্ট্রগুলির মধ্যে বিরোধ-বিবাদ প্রতিরোধ করে পারস্পরিক সহযোগিতা স্থাপনকে সুনিশ্চিত করা গেছে। ফলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শান্তি স্থাপনে প্রাকৃতিক আইন ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে।

আরও পড়ুন – ধর্মসংস্কার আন্দোলনে মার্টিন লুথারের ভূমিকা

Leave a Comment