প্রধান আঞ্চলিক সংগঠনসমূহ প্রশ্ন উত্তর (দ্বিতীয় অধ্যায়) | ক্লাস 12 চতুর্থ সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান | HS 4th Semester Political Science 2nd Chapter Short Question Answer

1. ইউরোপীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা পরিষদ কী?
উঃ ইউরোপীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা পরিষদ: ইউরোপের সংহতিসাধন বা একীকরণ-এর প্রাথমিক প্রচেষ্টা লক্ষ করা গিয়েছিল ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে। মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মার্শাল পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইউরোপের অর্থনৈতিক সহযোগিতা পরিষদ অর্থাৎ Organisation for European Economic Cooperation (OEEC) গঠন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে মার্শাল পরিকল্পনার অধীনে যুদ্ধবিদ্ধস্ত ইউরোপের অর্থনৈতিক পুনর্গঠন কার্য সফল করে তোলার লক্ষ্য গৃহীত হয়। OEEC প্রথম ইউরোপে আর্থিক সহযোগিতার ভিত্তিপ্রস্তর রচনা করে। পশ্চিম ইউরোপের বেশিরভাগ দেশই এর সদস্য হয়।
২. ইউরোপীয় কোল অ্যান্ড স্টিল কমিউনিটি কী?
উঃ ইউরোপীয় কোল অ্যান্ড স্টিল কমিউনিটি: ১৯৫০-এর দশকে ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যে দ্বন্দ্ব ইউরোপের শাস্তি ও সহযোগিতা স্থাপনের পথে প্রধান বাধা ছিল। তাই এই বাধা দূর করে ইউরোপে সংহতি স্থাপন করতে এবং শিল্প, বাণিজ্য, শক্তি, পরিবহন ইত্যাদি বিষয়ে আন্তঃসহযোগিতার জন্য একটি প্রতিষ্ঠান গঠনের প্রয়োজন অনুভূত হয়। যদিও ইতিমধ্যে শুম্যান পরিকল্পনাতে ফ্রান্স ও জার্মানিকে তাদের কয়লা ও ইস্পাত উৎপাদন সংক্রান্ত উচ্চ কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয় এবং অন্যান্য ইচ্ছুক দেশের যোগদানকে সাদরে আমন্ত্রণ জানানো হয়। যাইহোক, এই প্রস্তাবের ভিত্তিতে ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দের ১৮ এপ্রিল প্যারিস চুক্তি-র পরিণতিস্বরূপ ইউরোপীয় কোল অ্যান্ড স্টিল কমিউনিটি অর্থাৎ ECSC সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
3. ম্যাসট্রিক্ট চুক্তি কবে স্বাক্ষরিত হয়? এই চুক্তি কবে থেকে কার্যকর হয়?
উঃ ম্যাসট্রিক্ট চুক্তি: নেদারল্যান্ডের ম্যাসট্রিক্ট শহরে ইউরোপীয় রাষ্ট্রসমূহের প্রতিনিধিগণ মিলিত হয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের ৭ফেব্রুয়ারি একটি চুক্তি সম্পাদন করে যা ম্যাসট্রিক্ট চুক্তি বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন চুক্তি নামে পরিচিত। এই চুক্তি ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দের ১ নভেম্বর কার্যকর হয়। এই চুক্তির মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নামক আঞ্চলিক সংগঠনটি স্থাপিত হয়।
4. ম্যাসট্রিক্ট চুক্তির শর্ত কী ছিল?
উঃ ম্যাসট্রিক্ট চুক্তির শর্ত: ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত ম্যাসট্রিক্ট চুক্তির শর্তগুলি ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের এর সদস্যগণ একটি অভিন্ন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করবে। স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা সংরক্ষণ এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার গ্রহণ করবে। মুক্ত বাজারের পাশাপাশি সামাজিক বৈষম্য দূর করা, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
আর্থিক, সামাজিক, কূটনৈতিক বিষয়টি-সহ সকলক্ষেত্রে ঐক্যমত ও যৌথ প্রয়াসের উপর গুরুত্ব দেওয়া।
5. ইউরোপীয় ইউনিয়ন কী? বর্তমানে এর – সদস্যসংখ্যা কত?
উঃ ইউরোপীয় ইউনিয়ন: ইউরোপীয় ইউনিয়ন হল ইউরোপ মহাদেশের অধিকাংশ দেশের একটি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আঞ্চলিক জোট। এর অধীনে অভিন্ন মুদ্রা, ইউরোপীয় সংসদ ইত্যাদি অনেক বিষয় রয়েছে। বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরাষ্ট্রসংখ্যা হল ২৭।
6. ইউরোপীয় ইউনিয়ন কীভাবে গঠিত হয়?
উঃ ইউরোপীয় ইউনিয়নের গঠন: ইউরোপীয় ইউনিয়ন হল ইউরোপের দেশগুলির সমন্বয়ে গঠিত একটি আঞ্চলিক সংস্থা। ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারী মাসে ম্যাসট্রিক্ট সম্মেলনে দীর্ঘ আলোচনার প্রেক্ষিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন চুক্তি বা ম্যাসট্রিক্ট চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিটির ফলস্বরূপ ইউরোপীয় ইউনিয়ন গঠিত হয়। ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে সংস্থাটি আত্মপ্রকাশ করে।
7. ইউরোপীয় ইউনিয়ন গড়ে ওঠার পিছনে কী কী মূল্যবোধ কাজ করেছিল?
উঃ ইউরোপীয় ইউনিয়নের মূল্যবোধসমূহ: লিসবন চুক্তির ২নং ধারা অনুযায়ী ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে মূল্যবোধগুলির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেগুলি হল- মানব মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সমতা, আইনের শাসন ও মানবাধিকার সম্প্রসারণ ও সুনিশ্চিতকরণ।
৪. ইউরোপীয় ইউনিয়নের লক্ষ্য কী ছিল?
উঃ ইউরোপীয় ইউনিয়নের লক্ষ্যসমূহ : লিসবন চুক্তির ৩নং ধারায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের লক্ষ্যসমূহ বর্ণিত রয়েছে। যথা-
- সংগঠনের মূল্যবোধ ও স্বার্থকে তুলে ধরা ও প্রচার করা।
- বিশ্বে শান্তি, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীল উন্নয়নে অবদান রাখা।
- জনগণের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সংহতি স্থাপন করা, অবাধ ও ন্যায়সংগত বাণিজ্য, দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং মানবাধিকার রক্ষা করা।
- আন্তর্জাতিক আইন কঠোরভাবে পালন করা।
9. ভারত কি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে?
উঃ ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে ভারতের সঙ্গে ইউরোপীয় অর্থনৈতিক সম্প্রদায়ের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দের যৌথ রাজনৈতিক বিবৃতি এবং ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দের সহযোগিতা চুক্তি ছিল দ্বিপাক্ষিক ও অংশীদারিত্বের ভিত্তি চুক্তি। ২০০৪ সালে ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন কৌশলগত অংশীদার হয়ে উঠে।
10. ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান সংস্থাগুলি কী কী?
উঃ ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান সংস্থা : ইউরোপীয় ইউনিয়ন তার আদর্শ ও লক্ষ্য রূপায়ণে কতকগুলি সংস্থা গঠন করেছে। সেগুলি হল- ইউরোপীয় কাউন্সিল, কাউন্সিল অফ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউরোপীয় আদালত, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট, ইউরোপীয় আদালত, হিসাব পরীক্ষকমণ্ডলী, ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংক।
এ ছাড়াও ইউরোপীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাজগুলির বাস্তব রূপায়ণে প্রভৃত সহায়তা করে থাকে।
11. ইউরোপীয় কাউন্সিল কী?
উঃ ইউরোপীয় কাউন্সিল: ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাংগঠনিক কাজকর্ম পরিচালনার জন্য যেসব নিয়মকানুন, নীতি ও কর্মসূচির প্রয়োজন হয়, তা তৈরি করে ইউরোপীয় কাউন্সিল। ইউরোপীয় কাউন্সিল হল ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান নীতি নির্ধারণকারী সংস্থা। এই সংস্থা সদস্যরাষ্ট্রগুলির রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধানদের নিয়ে গঠিত হয়। ২০০৯ সালে লিসবন চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর ইউরোপীয় কাউন্সিল প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি লাভকরে।
12. ইউরোপীয় কমিশন কিভাবে গঠিত হয়?
উঃ ইউরোপীয় কমিশন: ইউরোপীয় কমিশন হল ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান কার্যনির্বাহী সংস্থা। এই সংস্থা ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতি ও ‘ কর্মসূচিগুলিকে বাস্তবে রূপায়িত করার কাজ করে। পাশাপাশি সদস্যরাষ্ট্রগুলির সঙ্গে সংযোগ বজায় রাখে।
13. ইউরোপীয় পার্লামেন্ট কী? এর সদর দফতর কোথায় অবস্থিত?
উঃ ইউরোপীয় পার্লামেন্ট : ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে একটি নির্বাচিত সংস্থা হল ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যগণ সদস্য রাষ্ট্রগুলির জনগণের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হন। বর্তমানে এই পার্লামেন্টের সদস্যসংখ্যা ৭২০ জন যারা প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হন।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদর দফতর ফ্রান্সের স্টারস্বার্গে অবস্থিত।
14. ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুটি গুরুত্ব লেখো।
উঃ ইউরোপীয় ইউনিয়নের গুরুত্ব: এই সংগঠনটি ঐক্যবদ্ধ ইউরোপ গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে। বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিশ্বের বৃহত্তম মুক্ত বাণিজ্য সংগঠনে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া
15. ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুটি দুর্বলতা উল্লেখ করো।
উঃ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুর্বলতা:
- EU-এর সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল এবং সময়সাপেক্ষ।
- একটি আঞ্চলিক সংগঠনকে আদর্শ সংগঠনে পরিণত হতে গেলে সদস্যরাষ্ট্রগুলির যেরূপ সহনশীলতা ও উদারতা দরকার ইউরোপীয় ইউনিয়নের গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে বর্তমানে তা দেখা যায় না।
16. কেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি সফল আঞ্চলিক সংস্থা? দুটি কারণ উল্লেখ করো।
উঃ ইউরোপীয় ইউনিয়নে সাফল্য: ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাফল্য নিম্নরূপ-
- ইউরোপীয় ইউনিয়ন সদস্যরাষ্ট্রগুলির মধ্যে বাণিজ্য বিনিয়োগ, শিক্ষা-সহ বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা সাংস্কৃতিক বিনিময় ও সামাজিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে।
- ইউরোপীয় ইউনিয়নের অধীনে একটি একক বাজার রয়েছে। এই বাজারে সদস্যদেশগুলির মধ্যে পণ্যের অবাধ কেনাবেচা, খনিজ আদানপ্রদান সুনিশ্চিত হয়েছে।
17. সার্কের প্রতিষ্ঠা কবে হয়? প্রথম কে সার্ক গঠনের প্রস্তাব দেন?
উঃ ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দের ৮ ডিসেম্বর সার্কা প্রতিষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সর্বপ্রথম সার্ক গঠনের প্রস্তাব দেন। যদিও এরসাদ-এর হাত ধরে সার্ক প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল।
18. সার্ক (SAARC) এর পূর্ণরূপ কী? কে কবে সার্ক প্রতিষ্ঠা করেন?
উঃ ‘সার্ক’ (SAARC)-এর পূর্ণরূপ হল South Asian Association for Regional Cooperation সার্ক দক্ষিণ এশিয়ার ৮টি দেশ নিয়ে গঠিত একটি আঞ্চলিক সংস্থা।
সার্ক প্রতিষ্ঠা: সার্ক গঠনের প্রথম প্রস্তাব দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দের ৮ ডিসেম্বর দক্ষিণ এশিয়ার ৭টি দেশ নিয়ে সার্ক হয়। পরবর্তীকালে আফগানিস্তান অষ্টম সদস্য হিসেবে সার্কে যোগ দেন (২০০৭ সাল)।
19. সার্কের পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র কটি? এগুলি কী কী?
উঃ সার্কের পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রসমূহ: বর্তমানে সার্কের ৯টি পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র রয়েছে। এগুলি হল-অস্ট্রেলিয়া, চিন, জার্মান, ইরান, মরিশাস, দক্ষিণ কোরিয়া, মায়ানমার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
20. সার্কের বর্তমান সদস্যরাষ্ট্রের সংখ্যা কয়টি? সার্কের সদস্যরাষ্ট্রগুলির নাম লেখো।
উঃ সার্কের বর্তমান সদস্যরাষ্ট্রের সংখ্যা ৮টি।
সার্কের সদস্যরাষ্ট্রগুলির নাম হল-ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তান।
21. সার্কের উদ্দেশ্যাবলি সম্পর্কে সার্কের কোন্ ধারায় বর্ণিত হয়েছে? এর উদ্দেশ্যগুলি লেখো।
উঃ সার্কের নিজস্ব সংবিধানের ১নং ধারায় এর উদ্দেশ্যগুলি লিপিবদ্ধ হয়েছে।
সার্কের উদ্দেশ্য: সার্কের উদ্দেশ্যগুলি হল-
- অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দ্বারা দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের জীবনের সার্বিক মানোন্নয়ন ঘটানো।
- অর্থনৈতিক অগ্রগতির হাত ধরে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশসাধন।
- সদস্যদেশগুলির যৌথ সহযোগিতা ও সমষ্টিগত স্বনির্ভরতা ইত্যাদি।
22. সার্কের সচিবালয়ের প্রধান কে? তিনি কত বছরের জন্য মনোনীত হন?
উঃ সার্কের সচিবালয়ের প্রধান হলেন একজন মহাসচিব। তিনি ৩ বছরের জন্য নির্বাচিত হন।
23. সার্কের সচিবালয় গঠনের সিদ্ধান্ত কে নেয়? সার্কের মন্ত্রীসভা কাদের নিয়ে গঠিত হয়?
উঃ সার্কের মন্ত্রীসভা সচিবালয় গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়।
সার্কের মন্ত্রীসভা সার্কের অন্তর্ভুক্ত সদস্যরাষ্ট্রগুলির পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের নিয়ে গঠিত হয়।
24. সার্কের দ্বিতীয় সম্মেলন কোন্ দেশে অনুষ্ঠিত হয়? সার্কের দ্বিতীয় সম্মেলনের একটি গুরুত্ব লেখো।
উঃ ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে সার্কের দ্বিতীয় সম্মেলন ভারতের ব্যাঙ্গালোরে অনুষ্ঠিত হয়।
সার্কের দ্বিতীয় সম্মেলনের স্মারকপত্রে আঞ্চলিক বাণিজ্য প্রসার ও সন্ত্রাসবাদ রোধের সংকল্প ব্যক্ত করা হয়।
25. সার্কের নীতিসমূহ সার্কের সনদের কোন্ ধারায় বর্ণিত হয়েছে? সার্কের দুটি নীতি লেখো।
উঃ সার্কের নীতি সংবিধানের ২নং ধারায় সার্কের কয়েকটি নীতি ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে সার্কের দুটি নীতি হল-
- সার্বভৌমিকতা, সমতা, ভৌগোলিক অখণ্ডতা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা এবং পারস্পরিক সহযোগিতার নীতি কার্যকর করা।
- দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতার নীতি গ্রহণ করা।
26. সার্কের কোন্ সম্মেলনে দারিদ্র্য দূরীকরণের সংকল্প গৃহীত হয়েছিল?
উঃ সার্কের অষ্টম শীর্ষ সম্মেলনে দারিদ্র্য দূরীকরণের সংকল্প গৃহীত হয়েছিল। এই কারণে ১৯৯৫ বছরটিকে দারিদ্র্য দূরীকরণ বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করা হয় ও মানব উন্নয়নের উপর বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হয়।
31. সার্কের কোন্ সম্মেলনে সার্ক ২০০০’ নামে একটি ভবিষ্যৎমুখী প্রকল্প রচিত হয়? কত খ্রিস্টাব্দের মধ্যে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলকে একটি মুক্ত বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে?
উঃ ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দের ২৯-৩১ ডিসেম্বর সার্কের চতুর্থ তথা ইসলামাবাদ শীর্ষ সম্মেলনে ‘সার্ক ২০০০’ নামে ভবিষ্যৎমুখী প্রকল্প রচিত হয়।
২০২৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলকে একটি মুক্ত বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
32. সার্কের দুটি সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করো।
উঃ সার্ক-এর একাধিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি হল- সার্কের সদস্যরাষ্ট্রগুলির মধ্যেকার অভ্যন্তরীণ বিবাদ থাকার কারণে সংহতি রক্ষার ক্ষেত্রে কোনো সুদৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। সার্কের সদস্যরাষ্ট্রগুলির অতিরিক্ত জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির দরুন পারস্পরিক সহযোগিতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
33. SAPTA-র পূর্ণরূপ কী? সাপটা গঠনের প্রস্তাব কত খ্রিস্টাব্দে বাস্তবায়িত হয়?
উঃ SAPTA-র পূর্ণরূপ হল-South Asian Preferential Tradeing Arrangement
১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে সাপটা বাস্তবায়িত হয়।
34. SAFTA বলতে কী বোঝো? SAFTA-র পুরো কথাটি কী?
উঃ SAFTA হল সার্কের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলির জন্য একটি মুক্ত বাণিজ্যিক অঞ্চল।
SAFTA-র পুরো কথাটি হল-South Asian Free Trade Area অর্থাৎ দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল।
35. সার্কের কোন্ সম্মেলনে, কার উদ্যোগে সাফ্টা (SAFTA) গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়? SAFTA গঠনের উদ্দেশ্য কী?
উঃ ২০০৪ সালে ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত সার্কের দ্বাদশ সম্মেলনে ভারতের উদ্যোগে সাফা গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
SAFTA গঠনের উদ্দেশ্য: SAFTA গঠনের উদ্দেশ্য হল-ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো দক্ষিণ এশিয়ায় একটি আঞ্চলিক সংগঠন গড়ে তোলা, যেখানে সংশ্লিষ্ট দেশগুলির মধ্যে মুক্ত বাণিজ্যিক আদানপ্রদান সুনিশ্চিত করা যাবে।
36. ASEAN-এর পূর্ণরূপ লেখো। ASEAN করে প্রতিষ্ঠিত হয়?
ASEAN-এর পূর্ণরূপ হল “অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথইস্ট এশিয়া নেশনস্” (Association of Southeast Asian Nations)। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির একটি সংস্থা।
১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দের ৮ আগস্ট থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে ASEAN প্রতিষ্ঠিত হয়।
37. আসিয়ানের মূল উদ্দেশ্য কী?
উঃ আসিয়ানের উদ্দেশ্য আসিয়ানের সদস্যদেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলির অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটানো, সামাজিক অনগ্রসরতার অবসান ঘটানো এবং বিশ্ব বাজারে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে শামিল হওয়া।
38. আসিয়ানের বর্তমান সদস্যসংখ্যা কত? আসিয়ানের প্রথম শীর্ষ সম্মেলন কবে কোথায় অনুষ্ঠিত হয়?
উঃ বর্তমানে আসিয়ানের সদস্যসংখ্যা ১০। এগুলি হল-ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইনস্, কম্বোডিয়া, ব্রুনেই, মায়ানমার, সিঙ্গাপুর, লাওস, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম।
আসিয়ানের প্রথম শীর্ষ সম্মেলন: ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে আসিয়ানের সদস্যরাষ্ট্রগুলি প্রথম সম্মেলনে মিলিত হয় এবং একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে যা বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা চুক্তি নামে পরিচিত।
39. আসিয়ানের সর্বশেষ সদস্যদেশ কোন্টি? আসিয়ানের সদর দফতর কোথায়?
উঃ কম্বোডিয়া আসিয়ানের সর্বশেষ সদস্যদেশ। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে কম্বোডিয়া আসিয়ানের সদস্য হিসেবে যুক্ত হয়।
আসিয়ানের সদর দফতর ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় অবস্থিত।
40. আসিয়ানের পর্যবেক্ষক সদস্যদেশ কোনটি?
উঃ আসিয়ান পূর্ব তিমুরকে পর্যবেক্ষক সদস্যদেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এটি দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সর্বকনিষ্ঠ দেশ, দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে লড়াই করার পর ২০০২ সালে ইন্দোনেশিয়া থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে এবং আসিয়ানের সদস্যদেশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
41. আসিয়ান সনদ কী?
উঃ আসিয়ান সনদ: ২০০৭ সালে ফিলিপাইনস্-এর সেবুতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সম্মেলনে আসিয়ান সনদ-এর পরিকল্পনা গৃহীত হয়। তবে বাস্তবে আসিয়ান সনদ ২০০৮ সালে ১৫ ডিসেম্বর কার্যকর হয়। এটি আসিয়ানের জন্য আইনি মর্যাদা এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রদানের মাধ্যমে আসিয়ান সম্প্রদায় অর্জনে একটি দৃঢ় ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
42. আসিয়ানের যে-কোনো দুটি উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য লেখো।
উঃ আসিয়ানের দুটি লক্ষ্য হল-
- দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রগতি, সমাজ, অগ্রগতি, সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা।
- দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা দীর্ঘায়িত করা।
43. ‘AFTA’ কী?
উঃ আসিয়ানের কার্যক্রমের একটি উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব হল ‘AFTA’ গঠন। AFTA হল Asian Free Trade Area অর্থাৎ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল বা এলাকা। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য আসিয়ানের সদস্যবৃন্দ শিল্পক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করে। তাঁরা বলেন যে, শুল্কনীতি এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যাতে পিছিয়ে পড়া দেশগুলি বাণিজ্যের শ্রীবৃদ্ধি করতে সমর্থ হয়।
44. আসিয়ান রিজিওনাল ফোরাম কী?
উঃ আসিয়ানের রিজিওনাল ফোরাম: আসিয়ান রিজিওনাল ফোরাম দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও নিরাপত্তা সুদৃঢ় করার প্রয়াসে ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে আসিয়ান একটি ফোরাম গঠন করে। এর নাম আসিয়ান ৪ রিজিওনাল ফোরাম। এই ফোরাম দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করে যে, আসিয়ান অঞ্চলে কোনোরকম সামরিক শক্তি প্রয়োগ বা হুমকি বরদাস্ত করা হবে না। এই ফোরাম আঞ্চলিক সংঘাত প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৪৫. RCEP-র পূর্ণরূপ কী? ভারত কি RCEP-র সদস্য?
উঃ RCEP-র পূর্ণরূপ হল Regional Comprehensive Economic Partnership অর্থাৎ ব্যাপক আঞ্চলিক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব।
ভারত এখনও RCEP-র সদস্য হয়নি।
46. ASEAN + 3′ কবে প্রতিষ্ঠিত হয়? এখানে তিনটি দেশ কী কী?
উঃ ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে আসিয়ান প্লাস থ্রি (APT)-র মাধ্যমে আসিয়ানের ১০টি সদস্যরাষ্ট্রের সঙ্গে গণপ্রজাতন্ত্রী চিন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সহযোগিতা সম্প্রসারিত হয়। চা চাইলোজি
47. আসিয়ান +6′-এর সদস্যরাষ্ট্রগুলি কী কী?
উঃ ‘আসিয়ান+6’-এ আসিয়ানের ১০টি সদস্যসহ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ৬টি রাষ্ট্র যথা- চিন, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং নিউজিল্যান্ডকে নিয়ে গড়ে উঠেছে।
48. আসিয়ানের তিনটি স্তম্ভের নাম লেখো।
উঃ আসিয়ানের তিনটি প্রধান স্তম্ভ হল যথাক্রমে-
আসিয়ান রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্প্রদায় (ASEAN Political-Security Community-APSC), আসিয়ান অর্থনৈতিক সম্প্রদায় (ASEAN Eco-nomic Community – AEC) এবং আসিয়ান সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সম্প্রদায়। (ASEAN Socio-cultural Community – ASCC) ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত বালি সম্মেলনে এগুলি স্থাপনের উদ্যোগ গৃহীত হয়।
49. ASEAN-এর দুটি ব্যর্থতা উল্লেখ করো।
উঃ ASEAN-এর দুটি ব্যর্থতা হল-
- আর্থিক বৈষম্য দূরীকরণে ব্যর্থতায় আসিয়ানের দেশগুলির মধ্যে একটি অসম বিকাশ লক্ষ করা যায়। এই আর্থিক বৈষম্য দূর করার ব্যাপারে আসিয়ান তেমন সফলতা অর্জন করতে পারেনি।
- বৈরিতা হ্রাসে ব্যর্থ জলসীমা স্থলসীমান্তকে কেন্দ্র করে সদস্যরাষ্ট্রগুলির বৈরিতা আসিয়ানের অগ্রগতির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
50. ‘আসিয়ান’ (ASEAN) কী? আসিয়ান সংগঠন কী?
উঃ ASEAN হল দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার একটি অ-সামরিক আঞ্চলিক সংগঠন।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ৫টি রাষ্ট্র ১৯৬৭খ্রিস্টাব্দের ৮ আগস্ট ব্যাংককে মিলিত হয়ে একটি আঞ্চলিক সংগঠন তৈরী করে যা আসিয়ান নামে অভিহিত করা হয়। তবে বর্তমানে আসিয়ানের সদস্যসংখ্যা ১০।
আরো পড়ুন : উচ্চমাধ্যমিক চতুর্থ সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর