একাদশ শ্রেণির দ্বিতীয় সেমিস্টার দর্শন বিষয়ে মোট 40 নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হবে। এই 40 নম্বরের মধ্যে পাশ্চাত্য নীতিবিদ্যা অধ্যায় থেকে মোট 8 নম্বর আসবে। পাশ্চাত্য নীতিবিদ্যা অধ্যায়ের মধ্যে দুটি টপিক আছে। একটি হল নৈতিক প্রত্যয়সমূহ এবং আরেকটি নৈতিক তত্ত্বসমূহ। আজকের এই প্রশ্নোত্তর পর্বে একাদশ শ্রেণির দ্বিতীয় সেমিষ্টার দর্শন পরীক্ষার জন্য নৈতিক তত্ত্বসমূহ অধ্যায় থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উত্তরসহ তুলে ধরা হল।
নৈতিক তত্ত্বসমূহ প্রশ্ন ও উত্তর

নৈতিক মানদণ্ড বলতে কী বোঝো?
‘মানদণ্ড’ শব্দটির দ্বারা বোঝানো হয় যার দ্বারা কোনো কিছুর পরিমাপ করা হয়। নীতিবিদ্যার আলোচ্য বিষয় যেহেতু মানুষের স্বেচ্ছাকৃত কর্ম, তাই সেই কর্মগুলির মান পরিমাপ করতে হয় ভালো-মন্দের বিচারের জন্য। সুতরাং বলা যায়, যে মানদণ্ডের ভিত্তিতে স্বেচ্ছাকৃত কর্মগুলির নৈতিক মান নির্ধারণ করা হয়, তাকেই নৈতিক মানদণ্ড (Moral Standard) বলে।
Teleology’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ কী?
‘Teleology’ এই ইংরেজি শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ হল ফলমুখী বা উদ্দেশ্যমুখী। ‘Teleology’ শব্দটি গ্রিক শব্দ Telos থেকে এসেছে, যার অর্থ হল উদ্দেশ্য বা পরিণাম। সুতরাং ‘Teleology’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল উদ্দেশ্য বা পরিণাম সম্পর্কিত মতবাদ। অর্থাৎ যে মতবাদে কর্মের পরিণাম বা ফলাফলের ভালো-মন্দের পরিপ্রেক্ষিতে কর্মের নৈতিক বিচার করা হয় তাই হল ফলমুখী নৈতিক মতবাদ বা Teleology।
ফলমুখী বা উদ্দেশ্যমুখী নৈতিক মতবাদ কাকে বলে?
আধুনিক নীতিশাস্ত্রে দুটি উল্লেখযোগ্য নৈতিক মতবাদ হল ফলমুখী নৈতিক মতবাদ ও কর্তব্যমুখী নৈতিক মতবাদ। ফলমুখী বা উদ্দেশ্যমুখী নৈতিক মতবাদ বলতে সেই মতবাদকে বোঝায়, যে মতবাদ অনুসারে, মানুষের স্বেচ্ছাকৃত কর্ম বা কর্মনীতিগুলির দ্বারা যদি কর্মফল ভালো বা কল্যাণকর হয় তবে সেই কর্ম বা কর্মনীতিটি গ্রহণযোগ্য বা নৈতিক কর্ম হবে। অর্থাৎ উদ্দেশ্যবাদ অনুসারে কোনো কাজের মূল্য সেই কাজের ফলাফলের উপর নির্ভরশীল।
ফলাফলবাদী তত্ত্ব অনৈতিক গুণাগুণের ওপর নির্ভর করে কেন?
ফলাফলবাদী তত্ত্ব অনৈতিক গুণাগুণের ওপর নির্ভর করে কেন এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ফলাফলবাদীরা বলেন যে, নৈতিক বিচার যদি নৈতিক গুণাগুণের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে তাহলে সেই নৈতিক গুণাগুণের মূল্যায়নের জন্য আবার নৈতিক বিচার দরকার হয়ে পড়বে এবং তার ফলস্বরূপ চক্রক দোষের উদ্ভব হবে। সেই দোষ এড়ানোর উদ্দেশ্যেই ফলাফলবাদী তত্ত্ব নৈতিক গুণের উপর নির্ভর করে না, অনৈতিক গুণের ওপর নির্ভর করে।
কোনো কর্তব্য স্থির করার ব্যাপারে কেউ যদি ফলাফলবাদী দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করতে চায় তাহলে তাকে কোন্ কোন্ শর্ত পূরণ করতে হবে?
কেউ যদি তার কর্তব্য স্থির করার ব্যাপারে ফলাফলবাদী দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করতে চায় তাহলে তাকে অন্ততঃপক্ষে দুটি শর্ত পূরণ করতে হবে। সেগুলি হবে- ভালো-মন্দ বা শুভ-অশুভ সম্বন্ধে তার একটি নির্দিষ্ট ধারণা থাকতে হবে। কাজটির ন্যায্যতা নির্ণয়ের প্রশ্নে তাকে শুভাধিক্য-সূচক উপায়টি বেছে নিতে হবে। যদি কাজটির দ্বারা সর্বাধিক শুভ ফল উৎপন্ন হয় তাহলেই কাজটি ন্যায্য বলে গণ্য হবে।
সুখবাদ কী?
সুখবাদ হল নৈতিক আদর্শের একটি মতবাদ। সুখবাদ অনুসারে সুখ বা ইন্দ্রিয় পরিতৃপ্তি হল মানুষের নৈতিক আদর্শ বা পরমার্থ। মানুষ স্বাভাবিকভাবেই সুখ কামনা করে থাকে। ইন্দ্রিয়সুখ হল মানুষের কাম্যবস্তু। অতএব নৈতিক জীবনে মানুষের লক্ষ্য বা সর্বোচ্চ আদর্শ হল সুখ লাভ বা দুঃখ পরিহার করা।
সুখবাদের বিভিন্ন প্রকার কী কী?
সুখবাদ দুই প্রকার। যথা- মনোবিজ্ঞানসম্মত সুখবাদ, নীতিবিজ্ঞানসম্মত সুখবাদ। নীতিবিজ্ঞানসম্মত সুখবাদ দুই প্রকার আত্মসুখবাদ ও পরসুখবাদ। আত্মসুখবাদ আবার দুই প্রকার। যথা – অমার্জিত আত্মসুখবাদ, চা মার্জিত আত্মসুখবাদ। আর পরসুখবাদ দুই প্রকার। যথা- অমার্জিত পরসুখবাদ, চা মার্জিত পরসুখবাদ।
নৈতিক সুখবাদ কাকে বলে?
যে ফলমুখী নৈতিক মতবাদ অনুসারে, সুখকেই নৈতিক বিচারের মানদণ্ডৰূপে স্বীকার করা হয়, তাকে বলা হয় নৈতিক সুখবাদ (Ethical Hedonism)। এই মতবাদ অনুসারে মানুষ যে কর্ম করলে তার ফলরূপে অধিক সুখ লাভ করে, সেই কর্মই হল যথোচিত। অর্থাৎ তাদের মতে সুখভোগ করাই হল মানুষের একমাত্র নৈতিক কর্তব্য।
মনোবিজ্ঞানসম্মত সুখবাদের বক্তব্য কী?
মনোবিজ্ঞানসম্মত সুখবাদ অনুসারে সুখ কামনা করা মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। মানুষের সকল কর্মের মূল উদ্দেশ্য হল সুখ লাভ করা। এই সুখের উদ্দেশ্যে মানুষ যাবতীয় কাজ করে। এই মতবাদ অনুসারে মানুষের প্রকৃতিই এমন যে, সে সুখ ভিন্ন অন্য কিছুই কামনা করে না।
আত্মসুখবাদ কাকে বলে?
যে নৈতিক সুখবাদে দাবি করা হয় যে, প্রত্যেক মানুষের উচিত তার নিজের জন্য সর্বাধিক সুখ কামনা করা, তাকে আত্মসুখবাদ বলে। আত্মসুখবাদ অনুসারে, সুখের পরিমাণ নির্ধারিত হয় সুখের তীব্রতা ও স্থায়িত্ব-র দ্বারা। আর সুখের পরিমাণ বিচারের দ্বারাই কাজের নৈতিক বিচার করা যায়। প্রাচীন গ্রিসের- ‘সিরেনেইক’ ও ‘এপিকিউরান’ সম্প্রদায় এই মতের সমর্থক ছিলেন। আধুনিক নীতিবিদ হক্স-এই মতের সমর্থক।
আত্মসুখবাদ কত প্রকার ও কী কী?
সিজউইক নৈতিক আত্মসুখবাদের দুটি প্রকারভেদের উল্লেখ করেন- স্থূল বা অসংযত আত্মসুখবাদ (Gross Egoistic Hedonism), মার্জিত বা সংযত আত্মসুখবাদ (Refined Egoistic Headonism) I
স্থূল বা অসংযত আত্মসুখবাদের প্রচারক অ্যারিস্টিপাস (Aristipus)- এর মতে উত্তেজনাপূর্ণ দৈহিক সুখ মানসিক সুখের তুলনায় শ্রেষ্ঠ। অপরপক্ষে সংযত আত্মসুখবাদের প্রচারক এপিকিউরাস (Epicurus) মানসিক সুখকে দৈহিক সুখ অপেক্ষা অধিকতর কাম্য বলেছেন।
আত্মসুখবাদ অনুসারে মানুষের একমাত্র কাম্যবস্তু কী?
আত্মসুখবাদ অনুসারে, প্রত্যেক মানুষের একমাত্র কাম্যবস্তু হল নিজের জন্য সর্বাধিক সুখ লাভ। সুখের পরিমাণ তার তীব্রতা (Intensity) ও স্থায়িত্ব (Duration) -এর দ্বারা নির্ধারিত হয়। কোনো কাজের নৈতিক বিচার করা হয় সুখের পরিমাণ বিচার করেই। যে কাজ কর্মকর্তাকে তার নিজের জন্য সর্বাধিক সুখ দেয় তাই ভালো বলে গণ্য হবে।
স্থূল আত্মসুখবাদ কাকে বলে?
যে আত্মসুখবাদ অনুসারে বলা হয় দৈহিক সুখ ও মানসিক সুখের মধ্যে প্রত্যেক মানুষের উচিত উত্তেজনামূলক সর্বাধিক দৈহিকসুখ ভোগ করা, তাকেই বলা হয় স্থূল আত্মসুখবাদ। অ্যারিস্টিপাস হলেন এই মতের প্রচারক। তাঁর মতে, বিভিন্ন সুখের মধ্যে গুণগত কোনো পাথক্য নেই, কেবল পরিমাণগত পার্থক্য আছে।
মার্জিত বা সংযত আত্মসুখবাদ কাকে বলে?
যে আত্মসুখবাদ অনুসারে বলা হয় মানুষের নৈতিক জীবনে বুদ্ধিবৃত্তির এক বিশেষ ভূমিকা আছে, বুদ্ধি দ্বারাই প্রকৃত সুখ লাভ করা সম্ভব এবং মানসিক সুখ হল প্রকৃত সুখ, সেই মতবাদকেই বলা হয় মার্জিত বা সংযত আত্মসুখবাদ। এই মতবাদ অনুসারে, পরিণামদর্শিতা বা বিচক্ষণতা হল প্রকৃত সুখ অনুভবের ক্ষেত্র। প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক এপিকিউরাস এই মতের সমর্থক।
এপিকিউরিয়ানিজম্ কী?
গ্রিক দার্শনিক এপিকিউরাস প্রবর্তিত মতবাদটির নাম হল ‘এপিকিউরিয়ানিজম’। এই মতবাদ অনুসারে, যে আত্মসুখ মানুষ কামনা করে তা ইন্দ্রিয়সুখ নয়, তা মানসিক বা বৌদ্ধিক সুখ। দৈহিকসুখ নিম্নস্তরীয়, ক্ষণস্থায়ী এবং দুঃখ উৎপাদনকরী। অপরদিকে, মানসিক সুখ উচ্চস্তরীয়, দীর্ঘস্থায়ী, বিশুদ্ধ এবং সুখ উৎপাদনকারী। তাই তারা মানসিক সুখকেই অধিক গুরুত্ব দেয়।
সুখবাদের হেঁয়ালি বলতে কী বোঝো?
মনস্তাত্ত্বিক সুখবাদের সমালোচনা করতে গিয়ে, অধ্যাপক সিজউইক তাঁর ‘The Methods of Ethics’ গ্রন্থে ‘সুখবাদের হেয়ালি’-র কথা বলেছেন। তাঁর মতে, সুখলাভ করার একমাত্র উপায় হল সুখকে ভুলে থাকা। কেন-না যত সুখের কামনা করা হয়, সুখ ততই দূরে সরে যায়। সিজউইক-এর এই তত্ত্ব ‘সুখবাদের হেঁয়ালি’ (Paradox of Hedonism) নামে খ্যাত।
উপযোগবাদ কী?
জাফফ্র্যাঙ্কেনা-কে অনুসরণ করে বলা যায় যে, উপযোগবাদ হল এমন একটি মতবাদ যেখানে কোনো একটি কাজের নৈতিক মূল্য সর্বাধিক সংখ্যক ব্যক্তির সর্বাধিক পরিমাণে সুখ উৎপাদনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্ধারণ করা হয়। এই মতবাদ অনুসারে কাজের ভালো-মন্দ, যথোচিত-অনুচিত প্রভৃতি বিচারের মানদণ্ড হল উপযোগিতা।
পরসুখবাদ কাকে বলে?
জেরেমি ব্যোম ও জন স্টুয়ার্ট মিল প্রবর্তিত যে নৈতিক মতবাদ অনুসারে বলা হয় যে, মানুষ তার কর্মের দ্বারা সকল জীবের সর্বাধিক কল্যাণ সাধন করে এবং সেই পরসুখের বিচারেই মানুষের কাজের নৈতিক বিচার করা হয়, তাকেই পরসুখবাদ বলে। পরসুখবাদের মূল বক্তব্য ‘সর্বাধিক মানুষের সর্বাধিক সুখ’ কামনা করা।
পরসুখবাদে যেহেতু উপযোগিতা (Utility)-কে নৈতিক বিচারের মানদণ্ড রূপে গ্রহণ করা হয়েছে তাই এই মতবাদকে উপযোগবাদও (Utilitarianism) বলা হয়।
উপযোগবাদ কি এক ধরনের পরিণতিমূলক মতবাদ?
উপযোগবাদ এক ধরনের পরিণতিমূলক মতবাদ। কারণ এই মতবাদে কাজের পরিণতি বা ফলাফল দেখে কাজের মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে। যে কাজ পরিণামে সর্বাধিক সংখ্যক মানুষের সর্বাধিক সুখ উৎপন্ন করে তা হল ভালো কাজ এবং যে কাজের পরিণাম কম সুখজনক বা সুখজনক নয় তাকে বলা হয় মন্দ কাজ।
বেত্থামের পরসুখবাদকে অসংযত পরসুখবাদ বলা হয় কেন? অথবা, ব্যোমের পরসুখবাদ বা উপযোগবাদের মূল বক্তব্য কী?
ইংরেজ নীতিতাত্ত্বিক জেরেমি বেত্থামের উপযোগবাদের মূল বক্তব্য হল- মানুষ তার স্বভাবগুণে নিজ সুখ কামনা করলেও, মানুষের উচিত সর্বাধিক মানুষের সুখ কামনা করা। বেত্থামের পরসুখবাদ অনুসারে, বিভিন্ন সুখের মধ্যে কেবলমাত্র পরিমাণগত পার্থক্য আছে এবং পরিমাণগত দিক থেকে দৈহিকসুখ অধিকতর কাম্য। বেত্থাম যেহেতু বিভিন্ন সুখের গুণগত পার্থক্য স্বীকার করেননি তাই তার মতবাদকে স্থূল বা অসংযত পরসুখবাদ (Gross Altruistic Hedonism) বলে।
বেনথামের উপযোগবাদের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
জেরেমি বেথাম হলেন অসংযত পরসুখবাদ বা উপযোগবাদের প্রবর্তক। এই মতবাদের দুটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল- বেথাম বিভিন্ন সুখের মধ্যে কেবল পরিমাণগত প্রভেদ স্বীকার করেছেন। গুণগত প্রভেদ স্বীকার করেননি। বেথাম তাঁর সুখবাদে যদিও আত্মপ্রেম-কে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন তথাপি তিনি পরার্থপরতার কথাও উল্লেখ করেছেন।
বেনথামের পরসুখবাদের ভিত্তি কী? এই প্রসঙ্গে আলোচিত বাহ্য নিয়ন্ত্রণগুলির পরিচয় দাও। অথবা, বেনথাম আত্মসুখবাদ থেকে পরসুখবাদে উপনীত হওয়ার জন্য কী যুক্তি দিয়েছেন?
বেত্থামের পরসুখবাদের মূলভিত্তি: বেত্থামের মতে মানুষ সাধারণত নিজের সুখ কামনা করে। কিন্তু চার প্রকার বাহ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য পরের মঙ্গল কামনাকে আদর্শরূপে স্বীকার করে। এই নিয়ন্ত্রণগুলি হল- সামাজিক নিয়ন্ত্রণ, প্রাকৃতিক নিয়ন্ত্রণ, রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ ও ধর্মীয় নিয়ন্ত্রণ।
সামাজিক নিয়ন্ত্রণ: অপরের স্বার্থবিরোধী কাজ করলে সমাজ কর্তৃক শাস্তি ভোগ করতে হবে এই ভেবে সে অপরের সুখ কামনা করতে বাধ্য হয়।
প্রাকৃতিক নিয়ন্ত্রণ: প্রাকৃতিক নিয়ম লঙ্ঘন করলে শাস্তি পেতে হবে, সেজন্য ব্যক্তি নিজের সুখের সঙ্গে অন্যের সুখও কামনা করে।
রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ: রাষ্ট্র কর্তৃক শাস্তি পাওয়ার ভয়ে ব্যক্তি নিজের স্বার্থের সঙ্গে অপেরের স্বার্থের কথাও ভাবে।
ধর্মীয় নিয়ন্ত্রণ: ঈশ্বর নির্দেশিত স্বর্গ সুখলাভের জন্য ও নরকে শাস্তি থেকে দূরে থাকতে ব্যক্তি নিজে স্বার্থ ত্যাগ করে অপরের মঙ্গলের কথা ভাবে।
সামাজিক নিয়ন্ত্রণ কী?
বেত্থাম আত্মসুখবাদ থেকে পরসুখবাদে অগ্রসর হওয়ার জন্য চার প্রকার বাহ্য নিয়ন্ত্রণের কথা উল্লেখ করেছেন, যার একটি হল সামাজিক নিয়ন্ত্রণ (Social Sanction)। সামাজিক বিধিগুলি অমান্য করে অপর ব্যক্তির স্বার্থবিরোধী কাজ করলে সমাজ দ্বারা শাস্তিপ্রাপ্ত হয়। এই শাস্তির ভয়েই মানুষ পরোপকার করে। একেই সামাজিক নিয়ন্ত্রণ বলে।
রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ কী?
রাষ্ট্র ব্যক্তিকে পরার্থপর করে এবং স্বার্থত্যাগ করতে বাধ্য করে। শাস্তির ভয়ে রাষ্ট্রীয় আইন শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করে, পরের হিতসাধনে কর্ম করতে মানুষ বাধ্য হয়। একেই রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ (Political Sanction) বলে। রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ দ্বারা আত্মসুখ থেকে পরসুখে অগ্রসর হওয়া যায়। এটিও একটি বেত্থাম প্রদত্ত বাহ্য নিয়ন্ত্রণ।
প্রাকৃতিক নিয়ন্ত্রণ কী?
বেত্থামের মতে প্রাকৃতিক নিয়ন্ত্রণ (Physical Sanction) দ্বারা আত্মসুখ থেকে পরসুখের দিকে অগ্রসর হওয়া যায়। তিনি প্রাকৃতিক নিয়ন্ত্রণ বলতে প্রাকৃতিক নিয়ম পালন করাকে নির্দেশ করেছেন। প্রাকৃতিক নিয়ম লঙ্ঘন করলে শাস্তি পেতে হয়, এবং তা থেকে যে দুঃখভোগ হয় সেটা নিবৃত্তির জন্য মানুষ অপরের কল্যাণ কামনা করে।
ধর্মীয় নিয়ন্ত্রণ কী?
বেত্থাম প্রদত্ত চতুর্থ প্রকার বাহ্য নিয়ন্ত্রণটি হল ধর্মীয় নিয়ন্ত্রণ (Religious Sanction)। পাপের ভয়ে এবং পুণ্য লাভের লোভে মানুষ বিভিন্ন ধর্মীয় বিধি-নিষেধ ও অনুশাসনগুলি মেনে চলে এবং পরের উপকার করে- এটিই হল ধর্মীয় নিয়ন্ত্রণ।
বেত্থাম সুখের পরিমাণ কীভাবে নির্ণয় করেছেন? অথবা, বেথাম-এর গণনা প্রণালী কী?
বেত্থাম সুখের পরিমাণ নির্ণয় করার জন্য সপ্তমানের সাহায্য গ্রহণ করেছেন। এরূপ পদ্ধতিকে বলা হয় ‘গণনা প্রণালী’। এই সপ্তমান হল- নিশ্চয়তা, সান্নিধ্য বা নৈকট্য, উৎপাদন ক্ষমতা বা উর্বরতা, বিশুদ্ধতা, বিস্তৃতি, স্থিতিকাল বা স্থায়িত্ব, তীব্রতা। এই সাতটি উপাদানের মাধ্যমে সুখের পরিমাপ সম্ভব হয়।
সূক্ষ্মা বা সংযত সুখবাদ বলতে কী বোঝায়?
যে সুখবাদ অনুসারে বলা হয়, কোনো কাজ সর্বাধিক মানুষের সর্বাধিক কল্যাণ বা সুখ উৎপাদনে উপযোগী, সেই কাজ হল যথোচিত বা ভালো কাজ। এই সুখবাদে নিজের সুখের তুলনায় অন্যের সুখকে বেশি প্রধান্য দেওয়া হয়। সুখের পরিমাণগত দিকের থেকে গুণগত দিকের কথা সুক্ষ্ম বা সংযত সুখবাদে বেশি বলা হয়। মিল হলেন এই সুখবাদের সমর্থক।
মিলের উপযোগবাদের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
মিল প্রবর্তিত উপযোগবাদ সংযত পরসুখবাদ বা উপযোগবাদ নামে খ্যাত। মিলের উপযোগবাদের দুটি বৈশিষ্ট্য হল- মিল বিভিন্ন সুখের মধ্যে গুণগত ও পরিমাণগত প্রভেদ স্বীকার করেছেন। মিল কেবল ইন্দ্রিয়জ সুখের কথা নয়, বরং বৌদ্ধিক সুখের কথাও বলেছেন এবং বৌদ্ধিক সুখকে সর্বোৎকৃষ্ট বলেছেন।
মিলের মতে মানুষের জীবনের লক্ষ্য কী?
মিলের মতে মানুষের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য সুখী হওয়া। তবে মানুষের কেবল নিজের জন্যই সুখ কামনা করা উচিত নয়। পরের সুখের জন্যও কামনা করা উচিত। মিলের মতে, ‘মানুষ সুখ চায়’-এই বাক্য থেকেই ‘মানুষের সুখ চাওয়া উচিত’ এই প্রকার নৈতিক মতবাদের উৎপত্তি।
মিলের মতে ‘স্বার্থের স্থানান্তরকরণ’ বলতে কী বোঝো?
প্রতিটি মানুষের মনে যে স্বার্থপরতা থেকে পরার্থপরতার উদ্ভব হয়, সে যে আত্মসুখবাদী থেকে পরসুখবাদীতে পরিণত হয়, মিলের মতে তার কারণ স্বার্থের স্থানান্তরকরণ। স্বার্থের স্থানান্তরকরণ নীতি বলতে বোঝায়, মানুষ স্বভাববশত স্বার্থপর হলেও মানুষের মনে সহানুভূতির উৎপত্তি হয়। নিজের বিপদে অপরজন সাহায্য করবে এই আশায়, মানুষ প্রথমে সহানুভূতি দেখায় ও অন্যকে সাহায্য করে। বারবার নিজের স্বার্থে অপরের সাহায্যে এগিয়ে যায় এবং পরোপকার করা স্বভাব হয়ে যায়। এভাবেই স্বার্থের স্থানান্তরকরণ হয়।
সার্বিক সুখবাদ কী?
সার্বিক সুখবাদ অনুসারে সব মানুষের সুখ আমাদের লক্ষ্য বলে বিবেচিত হলেও তা বাস্তবে সম্ভব নয়। তাই এই মতানুসারে সবথেকে বেশি লোকের সবথেকে বেশি সুখকেই আমাদের নৈতিক জীবনের আদর্শ বলে গণ্য করতে হবে। এক কথায় সমাজের বেশি সংখ্যক মানুষের সুখ কামনা আমাদের জীবনের একমাত্র আদর্শ।
ফ্র্যাঙ্কেনা কর্তৃক আলোচিত বিভিন্ন প্রকার উপযোগবাদ কী কী?
ফ্র্যাঙ্কেনা প্রধানত তিন প্রকার উপযোগবাদ আলোচনা করেছেন- কর্মভিত্তিক উপযোগবাদ (Act Utilitarianism) I নিয়মভিত্তিক উপযোগবাদ (Rule Utilitarianism) | সাধারণ উপযোগবাদ (General Utilitrarianism) I
নিয়ম ভিত্তিক উপযোগবাদ আবার তিন প্রকার-
আদি নিয়মভিত্তিক উপযোগবাদ।
বাস্তব নিয়মভিত্তিক উপযোগবাদ, এবং
আদর্শ নিয়মভিত্তিক উপযোগবাদ।
সাধারণ উপযোগবাদ কাকে বলে?
যে উপযোগদ একটি পরিবেশে কোনো একজনের যদি একটি কাজ ভালো বলে গৃহীত হয়, তবে সেই একই পরিবেশে অপর সকল ব্যক্তির কাজটি ভালো বলে গ্রহণ করা যায়- এইরূপ মত প্রকাশ করে, তাকে সাধারণ উপযোগবাদ বলা হয়। এই মতের সমর্থক হলেন- এম জি সিঙ্গার (M G Singer) I
কর্ম উপযোগবাদের মূল বক্তব্য কী? কর্ম উপযোগবাদ বলতে কী বোঝো?
যে উপযোগবাদ অনুসারে বলা হয় যে, কোনো একটি বিশেষ কাজ উচিত নাকি অনুচিত, সেটি নির্ধারণ করতে হলে, ওই কাজটি বিশেষ পরিস্থিতিতে অন্যান্য কাজ অপেক্ষা সমাজের সর্বাধিক কল্যাণ সাধন করছে কিনা-তা বিচার করতে হয়, তাকেই কর্ম উপযোগবাদ (Act Utilitarianism) বলে। এই মতবাদ-এর সমর্থক হলেন জেরেমি বেথাম, জি ই ম্যুর, প্রমুখ দার্শনিকগণ।
আরও পড়ুন | Link |
নৈতিক প্রত্যয়সমূহ প্রশ্ন উত্তর | Click Here |
চার্বাক সুখবাদ প্রশ্ন উত্তর | Click Here |
পাশ্চাত্য নীতিবিদ্যা প্রশ্ন উত্তর | Click Here |