সমাজজীবনে চলচ্চিত্রের প্রভাব – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

সমাজজীবনে চলচ্চিত্রের প্রভাব – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

সমাজজীবনে চলচ্চিত্রের প্রভাব - মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা
সমাজজীবনে চলচ্চিত্রের প্রভাব – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

মানুষের বিস্ময়কর সৃষ্টিগুলির অন্যতম চলচ্চিত্র। একইসঙ্গে দৃশ্যমান, চলমান, ভাষাময় এমন মাধ্যম দ্বিতীয় নেই। শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে সকলকে সহজে আকর্ষণ করতে পারে এই মাধ্যম। এজন্যই চলচ্চিত্র আজ এতখানি জনপ্রিয়।

সমাজের সার্বিক কল্যাণসাধনে চলচ্চিত্র এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। চলচ্চিত্র প্রধানত বিনোদন মাধ্যম হলেও এর নানা সামাজিক কল্যাণকর ভূমিকা আছে। চলচ্চিত্রের কাজ দু-ধরনের- (১) আনন্দদান ও (২) শিক্ষাদান। বস্তুত আনন্দের মাধ্যমে জীবন-শিক্ষার এমন মাধ্যম আর দ্বিতীয় নেই। তা ছাড়া চলচ্চিত্রে প্রত্যক্ষ জ্ঞানের সুযোগ থাকায় ‘যা দেখি তাই শিখি’। অর্থাৎ, চলচ্চিত্র চক্ষু, কর্ণ ও মস্তিষ্ককে একইসঙ্গে সচেতন করে। ফলে জ্ঞান সম্পূর্ণতা পায়।

শিক্ষার ক্ষেত্রে চলচ্চিত্রের প্রভাব সর্বাধিক। বই পড়ে যে জ্ঞান লাভ করি তা আংশিক, প্রত্যক্ষ দর্শনে সে জ্ঞান সম্পূর্ণতা লাভ করে। বিভিন্ন দেশের প্রাকৃতিক দৃশ্য, বিভিন্ন জাতির আচার-ব্যবহার, বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক ঘটনা, বিভিন্ন জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিষয়ের সঙ্গে সহজে পরিচিত হওয়া যায় চলচ্চিত্রের মাধ্যমে।

দৈহিক স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য যেমন সুষম খাদ্যের প্রয়োজন, তেমন মানসিক স্বাস্থ্য অটুট রাখার জন্যও প্রয়োজন নির্ভেজাল আনন্দ, যা চলচ্চিত্র দিতে পারে। চলচ্চিত্র আজ আনন্দ আহরণের প্রধান উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্মক্লান্ত মানুষ চলচ্চিত্রকে বিনোদনের উপায় হিসেবে গ্রহণ করেছে। দেশ-বিদেশের বহু সার্থক চিত্রপরিচালক চলচ্চিত্র মাধ্যমটিকে এক বিশেষ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

জনশিক্ষা প্রসারে তথ্যচিত্রের একটি বিশিষ্ট ভূমিকা রয়েছে। পৃথিবীর সবদেশেই জনকল্যাণে তথ্যচিত্রকে ব্যবহার করা হয়। কৃষির উন্নতি, সেচের বিভিন্ন পদ্ধতি, স্বাস্থ্যবিধি, সংক্রামক রোগনিবারণ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, খরা প্রতিরোধ, পরিবার কল্যাণ পরিকল্পনা, শারীরিক শিক্ষা প্রভৃতি জাতীয় জীবনের উন্নয়নমূলক শিক্ষা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্রচার করা সম্ভব। সাক্ষর-নিরক্ষর সব মানুষের মনে এসব চলচ্চিত্র গভীর ছাপ রেখে যায় এবং জনসাধারণকে সচেতন করে তোলে।

সুযোগসন্ধানী কিছু অর্থলোভী মানুষ ব্যাবসায়িক স্বার্থে বিনোদনের আধার হিসেবে চলচ্চিত্র শিল্পকে অপসংস্কৃতির ধারক করে তুলেছে। কুরুচিপূর্ণ ছবি পরিবেশন করে সমাজকে চরম দুর্গতির দিকে এরা ঠেলে দিচ্ছে। আর দু-হাত ভরে পয়সা লুঠছে। অশ্লীল চলচ্চিত্র কিশোর-কিশোরীদের বিপথগামী করে তুলছে। ছাত্রছাত্রীদের মনে চলচ্চিত্রের এই কুপ্রভাব যদি বাড়তে থাকে তাহলে জাতিকে সাংস্কৃতিক অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে না।

সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে নির্মিত চলচ্চিত্রকে যদি দেশের কল্যাণে ব্যবহার করা যায়, তাহলেই চলচ্চিত্র সমাজগঠনে প্রয়োজনীয় ভূমিকা গ্রহণে সক্ষম হবে। এই শিল্পটি যাতে আমাদের সমাজজীবনে সুস্থ ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে, সে-বিষয়ে আমাদের নজর দিতে হবে।

আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment