স্বাধীনতার রক্ষাকবচ গুলি আলোচনা করো

স্বাধীনতার রক্ষাকবচ গুলি আলোচনা করো

স্বাধীনতার রক্ষাকবচ গুলি আলোচনা করো
স্বাধীনতার রক্ষাকবচ গুলি আলোচনা করো

স্বাধীনতার রক্ষাকবচ

সমাজবদ্ধ মানুষের জীবনে স্বাধীনতা বলতে কখনোই অবাধ বা অনিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতাকে বোঝায় না। কারণ, সীমাহীন স্বাধীনতা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। এজন্য রাষ্ট্র আইন তৈরি করে এবং মানুষের অবাধ স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণ করে সমাজকল্যাণের উপযোগী করে তোলে। আইন হল স্বাধীনতার প্রথম রক্ষাকবচ। আইনি বিধিনিষেধকে কখনোই ব্যক্তিস্বাধীনতার বিরোধী হিসেবে ব্যাখ্যা করা উচিত নয়, বরং আইনকে স্বাধীনতার সংরক্ষক হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। এককথায় বলা যায়, আইন হল স্বাধীনতার পরিপূরক।

আইন-ই হল স্বাধীনতা ভোগ করার শর্ত। একজনের স্বাধীনতা অন্যজনের সহযোগিতার উপর নির্ভরশীল। তাই ব্যক্তিস্বাধীনতার যথাযথ সংরক্ষণে স্বাধীনতার রক্ষাকবচের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। বস্তুত সব ধরনের রাজনৈতিক ব্যবস্থাতেই স্বাধীনতার সংরক্ষণ আবশ্যক, নতুবা অধিকাংশ মানুষের স্বাধীনতা ভোগ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। অনেকসময় দেখা যায়, আদর্শভ্রষ্ট সরকার জনগণের স্বাধীনতা রক্ষার বদলে সংকীর্ণ স্বার্থসিদ্ধির জন্য রাষ্ট্রীয় আইনকে কাজে লাগায়। এই কারণে ব্যক্তিস্বাধীনতার সংরক্ষণে কয়েকটি রক্ষাকবচ থাকা প্রয়োজন। ল্যাস্কি-র মতে, সমাজে মুষ্টিমেয় শ্রেণির জন্য বিশেষ সুযোগসুবিধার ব্যবস্থা থাকলে, তা গরিষ্ঠ অংশের স্বাধীনতার পরিপন্থী হয়ে ওঠে। তার অভিমত হল, সমাজে সকলের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হলে স্বাধীনতার রক্ষাকবচের প্রয়োজন। তাই আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্বাধীনতার সংরক্ষণে নিম্নলিখিত রক্ষাকবচগুলির উপর প্রাধান্য দেওয়া হয়। এগুলি হল নিম্নরূপ-

(1) লিপিবদ্ধ মৌলিক অধিকার

সংবিধান লিপিবদ্ধ মৌলিক অধিকারগুলিকে স্বাধীনতার প্রধান রক্ষাকবচ বলে গণ্য করা হয়। সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে মৌলিক অধিকার লিপিবদ্ধ থাকলে, জনগণ সেগুলি সম্বন্ধে অবহিত হওয়ার সুযোগ পায়। এর ফলে, অধিকারগুলি লঙ্ঘন করা হলে  জনগণ সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে পারে। সরকার যদি মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে, তাহলে জনগণ সাংবিধানিক পদ্ধতিতে নিজেদের অধিকার রক্ষার জন্য আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন। ভারতের সংবিধানের মৌলিক অধিকারগুলির সম্ভাব্য লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে শাসনতান্ত্রিক প্রতিবিধানের অধিকারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভারত ছাড়াও যেসব দেশের সংবিধানে নাগরিকদের জন্য লিপিবদ্ধ মৌলিক অধিকারের ব্যবস্থা রয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গণপ্রজাতন্ত্রী চিন, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশ।

সংবিধানে মৌলিক অধিকারগুলি সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত থাকলেই যে নাগরিকগণের অধিকার সুনিশ্চিত হবে, এ কথা সঠিক নয়। বহু সময়ই জনগণের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে রাষ্ট্র তথা সরকার নাগরিকদের অধিকার খর্ব করে। ফলে সংবিধান অপেক্ষা জনসচেতনতাই হল ব্যক্তির স্বাধীনতার প্রকৃত রক্ষাকবচ। জনগণ তার স্বাধীনতা সম্পর্কে সচেতন হলে তবেই স্বাধীনতা খর্ব হওয়ার বিরুদ্ধে সাংবিধানিক পদ্ধতি মেনে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবে। আবার, কিছু দেশে সংবিধান অলিখিত হলেও সেখানকার নাগরিকগণ পর্যাপ্ত পরিমাণ স্বাধীনতা ভোগ করে।

এর পশ্চাতে রয়েছে স্বাধীনতা সম্পর্কে নাগরিকদের সচেতনতা। উদাহরণস্বরূপ গ্রেট ব্রিটেনের কথা বলা যায়। মার্কসবাদীরা আবার মনে করেন যে, পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলি কেবলমাত্র পৌর-রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি প্রদান করে এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতাকে উপেক্ষা করে। কিন্তু তাঁদের মতে, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ছাড়া বাকি স্বাধীনতা অর্থহীন। শ্রেণি বৈষম্যমূলক সমাজে যেহেতু অর্থনৈতিক স্বাধীনতা প্রদান করা হয় না, তাই বাকি স্বাধীনতাগুলি ব্যক্তিরা যথাযথভাবে ভোগ করতে পারে না বলেই মার্কসবাদীরা মনে করেন।

(2) ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মন্তেস্কু, ম্যাডিসন, ব্ল্যাকস্টোন প্রমুখ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণকে স্বাধীনতার অন্যতম রক্ষাকবচ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাঁদের মতে, সরকারের সমস্ত ক্ষমতা একই ব্যক্তি বা বিভাগের হাতে ন্যস্ত হলে স্বৈরাচারের সম্ভাবনা দেখা দেয়। এর ফলে ব্যক্তিস্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হয়। সেজন্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ প্রয়োজন। সরকারের কাজকর্ম পরিচালিত হয় আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ এবং বিচার বিভাগের দ্বারা। এই তিনটি বিভাগের মধ্যে সুস্পষ্টভাবে ক্ষমতা পৃথক্করণ করা থাকলে প্রত্যেকটি বিভাগ স্বাধীনভাবে বিভাগীয় দায়িত্ব সম্পাদন করতে সক্ষম হয়। এতে ব্যক্তিস্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হওয়ার কোনো আশঙ্কা থাকে না।  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটি গ্রহণ করা হয়েছে।

তবে সেখানেও রাষ্ট্রক্ষমতার সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রীকরণ করা যায়নি। স্যাবাইন, গিলক্রিস্ট প্রমুখ মনে করেন, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ কখনও স্বাধীনতার প্রকৃত রক্ষাকবচ হতে পারে না। ইংরেজরা মার্কিনিদের থেকে কোনো অংশে কম স্বাধীনতা ভোগ করে না। তবে পূর্ণ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ কাম্য না হলেও বিচার বিভাগের স্বতন্ত্রীকরণ একান্ত আবশ্যক। স্বতন্ত্র, স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ না থাকলে জনগণের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। রাষ্ট্র, নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করলে আদালত কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। এর ফলে ব্যক্তিস্বাধীনতা উপেক্ষিত হয়।

(3) আইনের অনুশাসন

অধ্যাপক ডাইসি ‘আইনের অনুশাসন’ বা ‘Rule of Law’-কে স্বাধীনতার একটি গুরুত্বপূর্ণ রক্ষাকবচ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ডাইসি-র মতে, আইনের অনুশাসন বলতে বোঝায় সাধারণ আইনের সর্বাত্মক প্রাধান্য, আইনের চোখে সমতার নীতি অনুসরণ এবং সাধারণ আইন দ্বারা নাগরিক অধিকারসমূহের সংরক্ষণ। আইনের প্রাধান্য স্বীকৃত হলে সরকারের স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার সুযোগ থাকে না, ফলে ব্যক্তিস্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ থাকে এবং রাষ্ট্র ব্যক্তিস্বাধীনতায় কোনোরূপ হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তাছাড়া সবার জন্য একই আইনের অস্তিত্ব থাকায় প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত কেউই বাড়তি সুবিধা ভোগ করতে পারে না। ধনী-গরিব, ক্ষমতাশালী-ক্ষমতাহীন, স্ত্রী-পুরুষ সবকিছু নির্বিশেষে সকলে সমানভাবে স্বাধীনতা ভোগ করে। অলিখিত শাসনতন্ত্রের দেশ গ্রেট ব্রিটেন আইনের অনুশাসনের নীতিটিকে পুরোপুরি গ্রহণ করেছে। আইনের অনুশাসনের মাধ্যমে গ্রেট ব্রিটেনে নাগরিকদের ব্যক্তিস্বাধীনতা সংরক্ষিত হয়।

অবশ্য শ্রেণিবৈষম্য থাকলে আইনের দৃষ্টিতে সমতা কতখানি উপভোগ্য, সে বিষয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলেন। কারণ, এরূপ সমাজব্যবস্থায় সমাজের যাবতীয় উপকরণ থাকে পুঁজিপতি, ধনী, মালিক শ্রেণির হাতে। ফলে আইনকেও তারা নিজের প্রয়োজনমতো প্রণয়ন ও পরিচালন করে অর্থাৎ আইন কেবল পুঁজিপতিদের অনুকূলে কাজ করে। এমতাবস্থায় সমাজের দরিদ্র শ্রেণি আইনের সুযোগ গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হয়। ল্যাস্কি-র মতে, “শ্রেণিহীন সমাজ ছাড়া আইনের দৃষ্টিতে সাম্য প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না’ (There cannot be equality before law unless there is a classless society)।

(4) দায়িত্বশীল সরকার

দায়িত্বশীল সরকার (Responsible Government) হল স্বাধীনতার এক অন্যতম রক্ষাকবচ। দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থায় সরকারকে আইনসভায় জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হয়। তাছাড়া গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় বহুদলীয় ব্যবস্থা স্বীকৃত থাকে, ফলে আইনসভার ভিতরে ও বাইরে বিরোধীপক্ষের সমালোচনার ভয়ে সরকার জনগণের স্বাধীনতার পরিপন্থী কোনো কাজ করতে সাহস পায় না এবং স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারে না। সুসংবদ্ধ বিরোধী দল জনমতকে সজাগ রাখতে সাহায্য করে। তবে শক্তিশালী বিরোধী দল ছাড়া দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা সফল হতে পারে না।

(5) প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক পদ্ধতি

গণভোেট (Referendum), গণউদ্যোগ (Initiative), প্রত্যাহার (Recall) প্রভৃতি প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিগুলিকে (Direct Democratic Process) স্বাধীনতার অন্যতম রক্ষাকবচ বলে গণ্য করা হয়। কারণ প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র বলতে, আইন প্রণয়ন ও প্রশাসনিক কার্যে জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণকে বোঝায়। ফলে সরকার নাগরিক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করলে, জনগণ প্রত্যক্ষ পদ্ধতি প্রয়োগ করে সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এমনকি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুতও করতে পারে। অবশ্য বর্তমানে বৃহদায়তন জনবহুল দেশগুলিতে এই সকল পদ্ধতি অনুসরণ অসম্ভব হয়ে পড়ে।

এজন্য বর্তমানে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে পরোক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, যেখানে জনগণের পরিবর্তে জনগণ নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ শাসনকার্য পরিচালনা করে। অর্থাৎ, জনগণ প্রত্যক্ষভাবে শাসনকার্যে অংশগ্রহণ করে না, পরোক্ষভাবে শাসনকার্যে অংশগ্রহণ করে থাকে। কিন্তু পরোক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকার নিজেদের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যপূরণের স্বার্থে দ্বিধাহীনভাবে জনগণের অধিকার লঙ্ঘন করে। এমতাবস্থায় প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাগুলিই ব্যক্তির অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এখানে উল্লেখ করা যায় যে, সুইটজারল্যান্ড-এ বর্তমানে প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিগুলি চালু রয়েছে।

(6) ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ

মন্তেস্কু, ব্ল্যাকস্টোন, ম্যাসিডন প্রমুখ রাষ্ট্রতাত্ত্বিকরা ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণকে ব্যক্তিস্বাধীনতার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ রক্ষাকর্তা বলে মনে করেন। ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ (Decentralization of Power) স্বাধীনতার রক্ষকবচ হিসেবে স্বীকৃত। এটা বলা হয় যে, প্রশাসনিক ক্ষমতা অতিমাত্রায় কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়লে শাসন বিভাগের স্বৈরাচারী হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়, যার ফলে ব্যক্তিস্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হয়। অধ্যাপক ল্যাস্কি-র মতে, যে রাষ্ট্রে কেন্দ্রের হাতে অতিমাত্রায় ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত, সেখানে স্বাধীনতা থাকতে পারে না। তাই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির পাশাপাশি স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলির মধ্যে ক্ষমতার বণ্টন করা প্রয়োজন। এর ফলে নাগরিকরা পূর্ণমাত্রায় ব্যক্তিস্বাধীনতাভোগের সুযোগ পায় এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে বা ক্ষমতার অপব্যবহার করে শাসকগোষ্ঠী স্বেচ্ছাচারী হতে পারে না।

(7) সদাজাগ্রত জনমত

স্বাধীনতার সর্বশ্রেষ্ঠ রক্ষাকবচ হিসেবে সদাজাগ্রত জনমতের কথা উল্লেখ করা হয়। স্বাধীনতার জন্য নাগরিকদের অদম্য আকাঙ্ক্ষা এবং সর্বপ্রকার ত্যাগ স্বীকারের ইচ্ছা ছাড়া স্বাধীনতা রক্ষা করা যায় না। স্বাধীনতার উপর যে-কোনো ধরনের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে নাগরিকদের সদাজাগ্রত থাকতে হবে। সরকার যদি ব্যক্তিস্বাধীনতা খর্ব বা লঙ্ঘন করতে উদ্যত হয়, তাহলে জনগণকে তা প্রতিরোধ করার জন্য আন্দোলন করতে হবে। প্রয়োজন হলে সংগ্রাম ও চরম আত্মত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। গ্রিক দার্শনিক পেরিক্লিস বলেছিলেন, চিরন্তন সতর্কতা হল স্বাধীনতার মূল্য এবং সাহসিকতা হল স্বাধীনতার মূলমন্ত্র। অধ্যাপক ল্যাস্কি-র মতে, একদিকে যেমন সদাজাগ্রত জনমতের প্রয়োজন, অন্যদিকে তেমনই মৌলিক অধিকার, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা ইত্যাদিও পাশাপাশি থাকা প্রয়োজন।

(8) সামাজিক-রাজনৈতিক ন্যায় স্থাপন

রলস-সহ প্রমুখ তাত্ত্বিকরা মনে করেন, সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই প্রত্যেক মানুষ ব্যক্তিস্বাধীনতা ভোগ করতে পারবে। মার্কসবাদীরা ন্যায়ের ধারণাকে আরও সম্প্রসারিত করে অর্থনৈতিক ন্যায় স্থাপনের উপর গুরুত্ব দেয়। তাঁদের মতে, অর্থনৈতিক ন্যায় প্রতিষ্ঠিত বা বাস্তবায়িত না হলে সামাজিক বা রাজনৈতিক ন্যায় স্থাপন করা অধরা থেকে যাবে। শ্রেণি বৈষম্যমূলক সমাজে ধনী মালিক শ্রেণি কখনোই অর্থনৈতিক ন্যায় স্থাপন করতে দেয় না। পরিবর্তে আর্থিক শোষণ কায়েম করে। ফলে, এইরূপ সমাজব্যবস্থায় স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করা অলীক কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়। তাঁরা বলেন, কেবলমাত্র শ্রেণিহীন সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থাতেই ব্যক্তিস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

পরিশেষে বলা যায়, স্বাধীনতা কখনো খণ্ডিতভাবে উপলব্ধি করা যায় না। সমাজের কোনো অংশের স্বাধীনতা অস্বীকার করে প্রকৃত স্বাধীনতার পরিবেশ গড়ে তোলা যায় না। তাই নিছক আনুষ্ঠানিক পদ্ধতির মাধ্যমে স্বাধীনতা সংরক্ষণ সম্ভব নয়। এমনকি কোনো একটি একক রক্ষাকবচ দ্বারা সামগ্রিক ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষা করাও অসম্ভব। ফলে প্রত্যেক সমাজে জনসচেতনতার পাশাপাশি স্বাধীনতার অন্যান্য রক্ষাকবচগুলির উপস্থিতিও একান্ত কাম্য বলে অধ্যাপক ল্যাস্কি মনে করেন।

আরও পড়ুন – ধর্মসংস্কার আন্দোলনে মার্টিন লুথারের ভূমিকা

Leave a Comment