স্বাধীনতার প্রকৃতি আলোচনা করো

স্বাধীনতার প্রকৃতি আলোচনা করো

স্বাধীনতার প্রকৃতি আলোচনা করো
স্বাধীনতার প্রকৃতি আলোচনা করো

স্বাধীনতার প্রকৃতি

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় স্বাধীনতার ধারণাকে বিশ্লেষণ করলে স্বাধীনতার প্রকৃতিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলি হল- নেতিবাচক দিক এবং ইতিবাচক দিক।

স্বাধীনতার নেতিবাচক ধারণা

উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও চিন্তার স্বাধীনতাকে দুটি মূল নীতিরূপে গ্রহণ করা হয়। স্বাধীনতার উপর সবরকম সরকারি বিধিনিষেধ ও নিয়ন্ত্রণ এখানে নিষিদ্ধ থাকে। উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণবিহীনতা স্বাধীনতার ধারণার একটি প্রধান উপাদানরূপে স্বীকৃত। এটা মনে করা হয় যে, রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের অনুপস্থিতির মধ্যেই স্বাধীনতার প্রকৃত অস্তিত্ব নিহিত থাকে। সরকারি নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা যত কম, স্বাধীনতার পরিমাণ তত বেশি হয়। শুধুমাত্র রাজনৈতিক এবং কিছু সামাজিক স্বাধীনতা উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় স্বীকৃতি লাভ করে। অর্থনৈতিক স্বাধীনতাকে এখানে পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়। স্বাধীনতার নেতিবাচক অর্থ হল সকল প্রকার নিয়ন্ত্রণহীনতা তথা বিধিনিষেধের অপসারণ। বেন্থাম, হারবার্ট স্পেনসার, হক্স, লক্, অ্যাডাম স্মিথ, জন স্টুয়ার্ট মিল প্রমুখ নেতিবাচক স্বাধীনতার ধারণার সমর্থক।

এজন্য উদারনৈতিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় স্বাধীনতার ধারণাকে নেতিবাচক বলে অভিহিত করা হয়। সাধারণত যেসব বিষয়ের স্বাধীনতা এখানে স্বীকৃতি পায়, সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, নির্বাচন করা ও নির্বাচিত হওয়ার স্বাধীনতা, যে-কোনো বৃত্তি অবলম্বনের স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সরকারের সমালোচনা করার স্বাধীনতা প্রভৃতি। উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় স্বাধীনতার ধারণা ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত। এই তত্ত্ব অনুসারে, ব্যক্তিকে নিজের ইচ্ছা ও উদ্যোগ অনুসারে চলতে দেওয়া হল স্বাধীনতা। জন স্টুয়ার্ট মিল স্বাধীনতা প্রসঙ্গে বলেছেন, ব্যক্তি তাঁর ব্যক্তিগত স্বার্থ সম্পর্কিত (Self-regarding) ক্রিয়াকলাপ সম্পাদনের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাধীন থাকবে। এবিষয়ে ব্যক্তির কার্যে রাষ্ট্র কোনোরূপ হস্তক্ষেপ করবে না। তিনি বলেন স্বাধীনতা হল, শাসকের স্বৈরাচারিতার বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার অধিকার।

কিন্তু এই সমস্ত স্বাধীনতা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এগুলি হল অবাস্তব স্বাধীনতা। কারণ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ছাড়া রাজনৈতিক ও সামাজিক স্বাধীনতা বাস্তবায়িত হওয়ার সুযোগ পায় না। উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ধনতন্ত্রকে স্বাভাবিক অবস্থা বলে মেনে নিয়ে মুষ্টিমেয় ধনী শ্রেণির শাসনকে স্বাধীনতার অঙ্গ হিসেবে স্বীকার করা হয়। এই ধনী শ্রেণি তাদের অবাধ শোষণ অব্যাহত রাখার জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দেয় না। এজন্য কার্যক্ষেত্রে এই রাজনৈতিক ব্যবস্থায় স্বাধীনতার ধারণা মূল্যহীন হয়ে পড়ে। মার্কসবাদীদের মতে, উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যে রাজনৈতিক স্বাধীনতা জনগণকে দেওয়া হয়, তা শেষপর্যন্ত মিথ্যায় পরিণত হয়। এই সমাজে স্বাধীনতা আসলে মুষ্টিমেয় মানুষের স্বাধীনতামাত্র।

স্বাধীনতার ইতিবাচক ধারণা

হেগেল, রুশো, টমাস হিল গ্রিন, ল্যাস্কি, বার্কার-এর মতো রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা আবার স্বাধীনতার ইতিবাচক ধারণার সমর্থক। এই তাত্ত্বিকদের মতে, প্রকৃত স্বাধীনতা কখনো অনিয়ন্ত্রিত হতে পারে না। বিনা নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তির নিজের খেয়ালখুশি মতো কাজ করার অধিকার স্বীকৃত হলে তা একদিকে যেমন ব্যক্তির উচ্ছৃঙ্খলতাকে প্রকাশ করবে, তেমনই সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। যার ফলস্বরূপ, স্বাধীনতা মুষ্টিমেয় ক্ষমতাশীল ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত হবে এবং দুর্বলরা স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত হবে। এজন্য তারা অনিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতাকে প্রকৃত স্বাধীনতা বলে স্বীকার করতে রাজি নয়।

এই ধারণার সমর্থকদের মতে, নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতাই হল প্রকৃত স্বাধীনতা। কারণ নিয়ন্ত্রণ ও আইনি বিধিনিষেধ আরোপিত হলে কোনো ব্যক্তি যথেচ্ছভাবে স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবে না। তখনই ক্ষমতাশালী ও দুর্বল নির্বিশেষে সকলে স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবে। ল্যাস্কিও বলেছিলেন, স্বাধীনতা বলতে সেই পরিবেশের সংরক্ষণকে বোঝায়, যে পরিবেশে মানুষ তার ব্যক্তিসত্তাকে বিকশিত করতে পারবে। স্বাধীনতার এই পরিবেশ সৃষ্টি হয় কয়েকটি বাহ্যিক অবস্থার সংরক্ষণ দ্বারা। এই বাহ্যিক অবস্থার সংরক্ষণ সম্ভব হয় অধিকার দ্বারা। তাই ল্যাস্কি-র মতে, “স্বাধীনতা হল অধিকারের ফল” (“Liberty is the product of rights.”) I

প্রকৃত স্বাধীনতা দ্বারা ব্যক্তি তার নিজইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করতে পারে। যদিও এক্ষেত্রে স্বার্থপর সংকীর্ণ ইচ্ছার বাস্তবায়নের কথা বলা হয় না বরং সামাজিক কল্যাণমূলক গোষ্ঠী ইচ্ছার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ইচ্ছার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এক্ষেত্রে ফরাসি দার্শনিক রুশোর সাধারণ ইচ্ছা (General will)-র কথা বলা যায়, যা সকল মানুষের প্রকৃত ইচ্ছা (Real will)-র যোগফল।

আবার, হেগেল-এর মতে, রাষ্ট্রীয় আইন তথা রাষ্ট্রের প্রতি অধ আনুগত্য প্রদর্শনের দ্বারাই ব্যক্তি তার স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে। যদিও অধ্যাপক ল্যাস্কি রাষ্ট্রের প্রতি দ্বিধাহীন আনুগত্যতাকে স্বাধীনতা ভোগের আবশ্যিক শর্ত হিসেবে মানেননি। তাঁর মতে, একদিকে অতিরিক্ত রাষ্ট্রীয় আইন যেমন ব্যক্তিস্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে তেমনই কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় আইন অমান্য করলে রাষ্ট্র তাকে শাস্তি প্রদানের মাধ্যমেও ব্যক্তিস্বাধীনতাকে খর্ব করতে পারে। তাই রাষ্ট্রীয় আইন সর্বদা স্বাধীনতার সহায়ক নয়। এ কারণেই স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের মধ্যে সামঞ্জস্য ও ভারসাম্যবিধান করা আবশ্যক।

মার্কসবাদী অভিমত

মার্কসবাদীরা স্বাধীনতার নেতিবাচক ধারণাকে গ্রহণ করতে চাননি। তাঁদের মতে, স্বাধীনতা নির্ভর করে সামাজিক পরিস্থিতির উপর। মার্কসবাদীরা রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতাকে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত বলে মনে করেন। তাঁদের মতে, অর্থনৈতিক স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি প্রদান না করলে বাকি দুই প্রকার স্বাধীনতাও ব্যর্থ হতে বাধ্য। যে সমাজে আর্থিক বৈষম্য থাকে, সেই সমাজে কেবল ধনী শ্রেণির মুষ্টিমেয় ব্যক্তিরাই স্বাধীনতা ভোগ করে। ফলে রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রেও তাদের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ, শোষিত শ্রমজীবীদের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করা যায় না।

এ কারণেই মার্কস ব্যক্তির অর্থনৈতিক স্বাধীনতার উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। তাঁর মতে, সমাজে আর্থিক বৈষম্যের অবসান ঘটানো গেলেই সাধারণ মানুষের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের পথ প্রশস্ত হবে। এ কারণে সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার কথা তিনি উল্লেখ করে বলেন, সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় যাবতীয় ব্যক্তিমালিকানার অবসান ঘটিয়ে উৎপাদন ব্যবস্থা ও উৎপাদনের উপকরণের উপর সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই সমাজে কোনো শ্রেণিবিভাজন থাকবে না। ফলে সমাজতান্ত্রিক সমাজেই ব্যক্তি যথার্থ স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবে।

 

সদর্থক ও নঞর্থক স্বাধীনতার পার্থক্য

নয়া উদারনীতিবাদী তাত্ত্বিক ইসাইয়া বার্লিন তাঁর ‘Two Concepts of Liberty’ গ্রন্থে স্বাধীনতার দুটি ধারণার কথা উল্লেখ করেন। এগুলি হল সদর্থক স্বাধীনতা ও নঞর্থক স্বাধীনতা। সদর্থক স্বাধীনতা হল সেই স্বাধীনতা, যেখানে স্বাধীনতা রক্ষায় রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ বা রাষ্ট্রীয় ভূমিকাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। রুশো, হেগেল, গ্রিন, হবহাউস, ল্যাস্কি, বার্কার প্রমুখ স্বাধীনতার সদর্থক ধারণা তুলে ধরেন। সদর্থক ধারণার প্রবক্তাদের মতে, কেবলমাত্র রাষ্ট্রের সহায়তাতেই ব্যক্তির পক্ষে স্বাধীনতা ভোগ করা সম্ভব হয়।

অন্যদিকে, নেতিবাচক স্বাধীনতা বলতে বোঝায়, সমস্তরকম রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ দূর করে ব্যক্তির স্বাধীন আচার-আচরণকে স্বীকৃতি দেওয়া। স্বাধীনতার নেতিবাচক ধারণার প্রবক্তারা হলেন জেরেমি বেথাম, অ্যাডাম স্মিথ, জন স্টুয়ার্ট মিল, হারবার্ট স্পেনসার, হক্স, লক্ প্রমুখ। তাঁদের মতে, স্বাধীনতা বলতে সকলপ্রকার বিধিনিষেধের অনুপস্থিতিকে বোঝানো হয়।

স্বাধীনতার এই দুই রূপের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্যগুলি হল-

(1) ধারণাগত পার্থক্য

রাষ্ট্রীয় সহায়তায় ব্যক্তির স্বাধীনতা ভোগ করার কথা স্বাধীনতার ইতিবাচক ধারণায় তুলে ধরা হয়। অধ্যাপক হ্যারল্ড ল্যাস্কি, ব্যক্তিস্বাধীনতার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের যথাযথ সমন্বয়সাধনের উপরে জোর দেন। গ্রিন-এর মতে, স্বাধীনতা বলতে শুধুমাত্র বিধিনিষেধের অনুপস্থিতিকে বোঝায় না, স্বাধীনতা হল মানুষের সদিচ্ছা ও নৈতিকতার পূর্ণ বিকাশের উপযোগী পরিবেশ। অন্যদিকে, নঞর্থক স্বাধীনতার প্রবক্তারা মনে করেন, ব্যক্তির স্বাধীনতাভোগের বিষয়টি রাষ্ট্রনির্ভর হতে পারে না। জন স্টুয়ার্ট মিল-এর মতে, ব্যক্তি তার নিজের উপরে, তার শরীর ও মনের উপরে সার্বভৌম (“Over himself, over his own body and mind every individual is sovereign.”)।

(2) রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত পার্থক্য

রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে, সদর্থক ও নঞর্থক স্বাধীনতার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পার্থক্য লক্ষ করা যায়। সদর্থক স্বাধীনতার ধারণায় রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সদর্থক স্বাধীনতার প্রবক্তারা মনে করেন, স্বাধীনতা ভোগ করার জন্য যে উপযুক্ত পরিবেশ দরকার তা একমাত্র রাষ্ট্রই গড়ে তুলতে পারে। হেগেল-এর মতে, রাষ্ট্র ছাড়া স্বাধীনতা কল্পনা করা যায় না। অন্যদিকে, নঞর্থক স্বাধীনতার প্রবক্তারা মনে করেন, স্বাধীনতার ক্ষেত্র থেকে সবরকম রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ দূর হওয়া দরকার। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী উদারনৈতিক রাষ্ট্রদর্শনের প্রবক্তারা রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণকে ন্যূনতম রাখার পক্ষে রায় দেন। তাঁদের মতে, রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি পেলে ব্যক্তির স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা দেখা যায়।

(3) আনুগত্য প্রদর্শনের প্রশ্নে পার্থক্য

সদর্থক ও নঞর্থক স্বাধীনতার মধ্যে রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনকে কেন্দ্র করে মৌলিক পার্থক্য দেখা যায়। সদর্থক স্বাধীনতার প্রবক্তারা বলেন, রাষ্ট্রের প্রতি দ্বিধাহীন আনুগত্য প্রদর্শন করে ব্যক্তি তার স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে। নঞর্থক স্বাধীনতার প্রবক্তারা এ ধরনের কোনো মনোভাব পোষণ করেন না। তাঁরা রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের বিনিময়ে স্বাধীনতা ভোগের প্রশ্নটিকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলে মনে করেন। তাঁদের মতে, ব্যক্তির স্বাধীনতার অধিকার একটি অলঙ্ঘনীয় অধিকার। এই অধিকার ভোগের সঙ্গে কোনো শর্ত আরোপিত হতে পারে না।

(4) সার্বভৌমিকতার প্রশ্নে পার্থক্য

সদর্থক স্বাধীনতার প্রবক্তা রুশো মনে করেন, যে সমাজে সার্বভৌমিকতার উৎস জনগণ নয়, সেই সমাজের জনগণ সদর্থক স্বাধীনতা পেতে পারে না। রুশো-র মতে, উন্নতমানের স্বাধীনতা অর্জনের ব্যবস্থা জনগণ নিজেই করবে। এই ব্যবস্থা হবে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক। প্রসঙ্গত বলা যায়, রুশো প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের মাধ্যমে সদর্থক স্বাধীনতা বাস্তবায়িত করার পরামর্শ দিয়েছেন। অন্যদিকে, নঞর্থক স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের ইতিবাচক ভূমিকা স্বীকৃত নয়।

(5) ব্যক্তির সচেতনতার ক্ষেত্রে পার্থক্য

সদর্থক স্বাধীনতার ক্ষেত্রে স্বাধীনতার প্রতি ব্যক্তির সচেতন অস্তিত্বের বিষয়টি দেখা যায় না। সদর্থক স্বাধীনতার প্রবক্তারা স্বাধীনতার প্রশ্নে, ব্যক্তির পাশে রাষ্ট্রের সহযোগী অস্তিত্বের কথা ঘোষণা করেন। অধ্যাপক হ্যারল্ড ল্যাস্কি-র মতে, রাষ্ট্রই ব্যক্তিকে নিজের মতো করে গড়ে ওঠার ও সবার সঙ্গে মিলিতভাবে চলার সামর্থ্য জোগাবে। তাঁর ভাষায়, “Liberty is never real unless the government can be called to account.”

অন্যদিকে, নঞর্থক স্বাধীনতার প্রবক্তারা মনে করেন যে, ব্যক্তি যেহেতু যুক্তিবাদী তাই সে নিজের স্বার্থ সম্বন্ধে সচেতন। নরম্যান ব্যারি (Norman P Barry) মনে করেন যে, নঞর্থক স্বাধীনতা তত্ত্বের প্রধান রাজনৈতিক সত্য হল যে, প্রত্যেক ব্যক্তি তার স্বার্থ সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। তাই রাষ্ট্র তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য স্থির করে দিতে পারে না (“The main political axiom of the negative liberty doctrine was that everyone knows his interests best and that the state should not decide his ends and purpose.”)

উপসংহার

সদর্থক ও নঞর্থক স্বাধীনতার ধারণা দুটি ভিন্ন ধরনের দৃষ্টিভঙ্গির প্রেক্ষিতে গড়ে উঠেছে বলা যায়। ইসাইয়া বার্লিন-এর মতে, সদর্থক স্বাধীনতার প্রশ্নে ব্যক্তি তার নিজের সচেতন লক্ষ্য ও যুক্তির দ্বারা চালিত হয়। অন্যদিকে, নেতিবাচক স্বাধীনতার বিষয়টি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। তিনি মনে করেন, নেতিবাচক স্বাধীনতার প্রশ্নটি বেশি মানবিক ও বেশি সত্য। এর ফলে কোনো শক্তির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে নয়, মানুষ তার স্বাধীন পছন্দ অনুসারে বাঁচার পথ খুঁজে নিতে পারে। বার্লিন-এর মতে, মানুষ যেমনভাবে বাঁচতে চায় ও চলতে চায়, তাকে তেমনভাবে বাঁচতে দেওয়া ও চলতে দেওয়ার নামই হল স্বাধীনতা।

আরও পড়ুন – ধর্মসংস্কার আন্দোলনে মার্টিন লুথারের ভূমিকা

Leave a Comment