পারস্যের স্যাট্রাপ / স্যাট্রাপি ব্যবস্থার বর্ণনা দাও

পারস্যের স্যাট্রাপ / স্যাট্রাপি ব্যবস্থা
উৎপত্তি
বর্তমান যুগের ইরান প্রাচীনকালে পারস্য দেশ নামে পরিচিত ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে এখানে গড়ে উঠেছিল অতি ক্ষমতাধর সুবিস্তৃত পারসিক সাম্রাজ্য। পূর্বে এই অঞ্চলে অ্যাসিরীয়, মেডীয়, চ্যালডিয়ান, ব্যাবিলন প্রভৃতি সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল। এই সকল সাম্রাজ্যের ভাঙনের যুগে সাইরাস দ্য গ্রেট (Cyrus The Great) এখানে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। সাইরাস (Cyrus) দ্বারা প্রতিষ্ঠিত রাজবংশ অ্যাকামিনিড বংশ (Achaemenid Dynasty) নামেও পরিচিত।
৫৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মহান পারস্য সম্রাট সাইরাস এক সুবিশাল সাম্রাজ্যের অধীশ্বর হওয়ার পর নিজ সামরিক প্রতিভাবলে অন্যান্য অঞ্চল জয় করতে উদ্যত হন। এসময় থেকেই এবং বিশেষত সাইরাসের মিডিয়া বিজয়ের সময় পর্যন্ত অ্যাকামিনীয় সাম্রাজ্যে প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের দ্বারা শাসনের ব্যবস্থা চালু ছিল। বস্তুতপক্ষে সুবৃহৎ সাম্রাজ্যের শাসন পরিচালনার জন্য তিনি তাঁর সাম্রাজ্যকে ক্ষুদ্র-বৃহৎ কয়েকটি প্রশাসনিক এককে বিভক্ত করেন। এই এককগুলিই স্যাট্রাপি (Satrapy) নামে পরিচিত ছিল। আর প্রতিটি স্যাট্রাপিতে নিযুক্ত প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের স্যাট্রাপ (Satrap) নামে অভিহিত করা হত। মহামতি সাইরাস স্যাট্রাপি ব্যবস্থার ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করলেও পরবর্তী সম্রাট দরায়ুস (Darius) বা দারয়বৌষ-এর আমলে এই ব্যবস্থা সম্পূর্ণতা লাভ করে। সম্রাট দরায়ুস তাঁর সুবিশাল সাম্রাজ্য পরিচালনার জন্য এক চমৎকার শাসনব্যবস্থা গঠন করেছিলেন-যা বিশ্বের বহু দেশই অনুসরণ করেছিল। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অ্যাসিরীয়দের শাসনব্যবস্থা সম্রাটকে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করেছিল।
পারস্যের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় সম্রাটই ছিলেন সকল ক্ষমতার অধিকারী-সামরিক, বেসামরিক ও বিচার বিভাগের প্রধান ছিলেন স্বয়ং সম্রাট। তিনি উপলব্ধি করেন যে, বিশাল সাম্রাজ্য পরিচালনার জন্য প্রশাসন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা বিশেষ প্রয়োজন। এই উদ্দেশ্যে এসময় সাম্রাজ্যের চার গুরুত্বপূর্ণ অংশে স্থাপন করা হয় চারটি রাজধানী, যথা- সুসা, ব্যাবিলন, একবাটানা ও পার্সেপলিস। তাছাড়া বিশাল সাম্রাজ্যকে শাসন ও নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনে ২০টি স্যাট্রাপি বা প্রদেশে বিভক্ত করেন। প্রত্যেক প্রদেশে একজন করে প্রাদেশিক শাসক বা স্যাট্রাপ নিযুক্ত করা হয়। বলা যেতে পারে, সম্রাট দরায়ুস সম্পূর্ণ স্যাট্রাপি ব্যবস্থাকে এক সুনির্দিষ্ট সাংগঠনিক বৈশিষ্ট্য প্রদান করেছিলেন।
স্যাট্রাপ শব্দের উৎস ও অর্থ
স্যাট্রাপি ও স্যাট্রাপ-এই দুই শব্দের উৎপত্তি হয়েছে প্রাচীন গ্রিক শব্দ স্যাট্রাপিয়া (Satrapeia) থেকে। ভারতীয় ইতিহাসে স্যাট্রাপকে ক্ষত্রপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। প্রাচীন পারসিক ব্যাখ্যা অনুসারে স্যাট্রাপ শব্দের অর্থ হল সাম্রাজ্যের রক্ষাকর্তা। অপর এক মত অনুযায়ী, স্যাট্রাপ বা ক্ষত্রপ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ ক্ষত্রিয় থেকে। পরবর্তীকালে স্যাট্রাপ শব্দের আভিধানিক অর্থ হয় পারসিক সাম্রাজ্যের প্রাদেশিক শাসনকর্তা।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি
(1) উপাদান
পারস্য সাম্রাজ্যের প্রদেশ বা স্যাট্রাপি এবং প্রদেশের শাসনকর্তা বা স্যাট্রাপ সম্পর্কে জানতে যে উপাদানসমূহের গুরুত্ব অপরিসীম, সেগুলি হল- গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাসের বিবরণ, আলেকজান্ডারের সমকালীন কয়েকজন ঐতিহাসিকের বিবরণী, অ্যাকামিনীয় সাম্রাজ্যের শিলালেখ ইত্যাদি।
(2) স্যাট্রাপদের নিয়োগ ও মর্যাদা
পারসিক সম্রাটগণই বিভিন্ন প্রদেশের শাসনকর্তা বা স্যাট্রাপদের নিয়োগ করতেন। মূলত পারসিক রাজপরিবার বা অভিজাত পরিবারের সদস্যদের স্যাট্রাপ পদে নিযুক্ত করা হত। অধিকাংশ সময়েই স্যাট্রাপদের পুত্র উত্তরাধিকারসূত্রে নতুন স্যাট্রাপ হতেন। আর মর্যাদার দিক থেকে প্রদেশের শাসনকর্তা স্যাট্রাপরা ছিলেন প্রদেশের গভর্নরের সমতুল্য।
(3) কার্যকাল
স্যাট্রাপিগুলির আয়তন নির্দিষ্ট না হওয়ার দরুন স্যাট্রাপদের কার্যকালের নির্দিষ্ট কোনও মেয়াদ ছিল না। সম্রাটদের ইচ্ছার উপরেই স্যাট্রাপদের শাসনকাল নির্ভর করত। সাধারণভাবে স্যাট্রাপগণ আজীবন নিজপদে বহাল থাকতেন। অপরদিকে সম্রাটের বিরাগভাজন হলে তাদের পদচ্যুতও করা হত।
(4) স্যাট্রাপির গঠনকাঠামো
পারস্যের অ্যাকামিনীয় সাম্রাজ্য ছিল একটি সুবিশাল সাম্রাজ্য। প্রশাসনিক একক হিসেবে স্যাট্রাপিগুলি ছিল সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অ্যাকামিনীয় সম্রাটগণ পরাজিত জাতির ধর্ম বা সংস্কৃতিতে হস্তক্ষেপ করতেন না। এই কারণে বিভিন্ন জাতি (যথা- ব্যাকট্রীয়, মেডীয়, আইওনীয়) অধ্যুষিত অঞ্চলে ছোটো-বড়ো বিভিন্ন স্যাট্রাপি গড়ে ওঠে।
পারস্য সাম্রাজ্যে কয়েকটি বৃহৎ ও ক্ষুদ্র স্যাট্রাপি দেখা যায়, যেমন-
- কেন্দ্রীয় বৃহৎ স্যাট্রাপি: আয়তনের দিক থেকে পারস্য সাম্রাজ্যের বৃহৎ স্যাট্রাপিগুলির মধ্যে অন্যতম হল- পারসিস, লিডিয়া, মিডিয়া, মিশর, ব্যাবিলনিয়া, আরাকোসিয়া, ব্যাকট্রিয়া প্রভৃতি। এই স্যাট্রাপিগুলি ছোটো ছোটো জেলায় বিভক্ত ছিল। নদ-নদী, পাহাড়, সমুদ্র প্রভৃতি প্রাকৃতিক সীমানাই স্যাট্রাপির সীমানা ছিল।
- কেন্দ্রীয় ক্ষুদ্র স্যাট্রাপি: পারস্য সাম্রাজ্যের কয়েকটি কেন্দ্রীয় ক্ষুদ্র স্যাট্রাপি ছিল- পার্থিয়া, আর্মেনিয়া, অ্যাসিরিয়া, কাপাডোসিয়া, হারভাসিয়া প্রভৃতি।
- অন্যান্য ক্ষুদ্র স্যাট্রাপি: এ ছাড়া পারস্য সাম্রাজ্যের অন্যান্য ক্ষুদ্র স্যাট্রাপিগুলি ছিল- সিরিয়া, কারিয়া, ফিজিয়া, হিরকানিয়া, সিটাসিল, কোলচিস প্রভৃতি।
কার্যাবলি
সম্রাটের নির্দেশমতো স্যাট্রাপগণ প্রদেশের নানাবিধ দায়দায়িত্ব পালন করতেন। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, একটি পরিষদ বা কাউন্সিল স্যাট্রাপদের প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা পরিচালনার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সাহায্য করত। এই পরিষদের সভায় উপস্থিত থাকতেন বিভিন্ন বিভাগীয় সচিব ও রাজার প্রতিনিধিগণ।
(1) সামরিক দায়িত্ব পালন
সৈনিক নিয়োগ করা, দুর্গের রক্ষণাবেক্ষণ সৈন্য চলাচলের জন্য পথঘাট নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা প্রভৃতি সামরিক দায়দায়িত্ব স্যাট্রাপদের পালন করতে হত।
(2) অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ দমন
প্রদেশগুলিতে বিভিন্ন কারণে বিশৃঙ্খলা ও বিদ্রোহ দেখা দিলে তা দমন করার দায়িত্ব ছিল স্যাট্রাপদের উপর। স্যাট্রাপগণ সামরিক সাহায্য নিয়ে বিদ্রোহ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন।
(3) বৈদেশিক আক্রমণ প্রতিরোধ
বিশেষত সীমান্তবর্তী প্রদেশগুলির একটি সমস্যা ছিল বৈদেশিক আক্রমণ। স্যাট্রাপরা সেদিকে নজর রাখার পাশাপাশি কোনও বিদেশি শত্রুর আক্রমণ ঘটলে প্রাথমিকভাবে সেই আক্রমণের মোকাবিলা এবং তার কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা ইত্যাদি বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করতেন।
(4) কর আদায়
স্যাট্রাপদের অন্যতম কাজ ছিল প্রদেশগুলি থেকে কর বা রাজস্ব আদায় করা এবং আদায়ীকৃত রাজস্ব নির্দিষ্ট সময়ে কেন্দ্রীয় কোশাগারে জমা দেওয়া। দরায়ুসের আমলে কী পরিমাণ কর আদায় করা হবে, তা জমির উৎপাদনের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হত। এসময় মূলত অর্থ, শস্য বা পশুর মাধ্যমে কর আদায় করা হত।
(5) বিচার সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন
স্যাট্রাপগণ প্রদেশের বিচারবিভাগীয় দায়িত্ব পালন করতেন। বস্তুতপক্ষে তারা ছিলেন প্রদেশগুলির সর্বোচ্চ বিচারক। বিভিন্ন দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার বিচার করতেন স্যাট্রাপরা।
(6) আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তার দায়িত্বপালন
স্যাট্রাপগণ প্রদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করতেন। তাছাড়া প্রদেশের প্রজাদের সুশাসন ও নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বও ছিল তাদের উপর। বিভিন্ন প্রদেশগুলিতে সাধারণ মানুষ যাতে রাস্তাঘাটে নিরাপদে যাতায়াত করতে পারে, তার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থাও স্যাট্রাপরা করতেন। শুধু তাই নয়, প্রতিটি প্রদেশের যাবতীয় সমস্যার সমাধান করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করতেন স্যাট্রাপগণ।
(7) কর্মচারী নিয়োগ
স্যাট্রাপগণ ছিলেন প্রদেশের বিভিন্ন কর্মচারীর নিয়োগকর্তা, যাদের সাহায্যে তারা প্রদেশগুলির শাসনকাজ পরিচালনা করতেন। বলাবাহুল্য, এই সকল স্থানীয় কর্মচারী বা আমলাগণ তাদের যাবতীয় কাজের জন্য স্যাট্রাপদের কাছে দায়বদ্ধ থাকত।
(8) বাৎসরিক বিবরণ বা হিসাব পেশ
প্রদেশের শাসনকর্তা হিসেবে স্যাট্রাপদের অন্যতম দায়িত্ব বা কাজ ছিল নির্দিষ্ট সময়ে সম্রাটের কাছে বার্ষিক বিবরণ পেশ করা।
সম্রাটের সঙ্গে স্যাট্রাপদের সম্পর্ক
(1) স্যাট্রাপদের সম্রাটের কাছে দায়বদ্ধতা
পারসিক সম্রাট তাঁর সাম্রাজ্যের বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসক বা স্যাট্রাপদের নিযুক্ত করতেন। বস্তুতপক্ষে বলা যায়, তারা ছিলেন বিভিন্ন প্রদেশে সম্রাটের প্রতিনিধি। তবে স্যাট্রাপগণ প্রদেশগুলির শাসনক্ষমতা ভোগ করলেও তারা যাবতীয় কাজের জন্য সম্রাটের কাছে দায়বদ্ধ থাকতেন। সম্রাটের সঙ্গে স্যাট্রাপদের সম্পর্ক নির্ভর করত তাদের রাজকীয় কর্তব্য ও দায়িত্বপালনের উপর। এ ছাড়া একজন সচিব, একজন সম্রাটের প্রতিনিধি স্যাট্রাপির শাসন পরিষদকে নিয়ন্ত্রণ করতেন।
(2) স্যাট্রাপদের উপর নজরদারি
পারস্যের প্রদেশগুলির শাসনকর্তা বা স্যাট্রাপগণ যাতে সম্রাটের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী না হতে পারেন এবং নিজেদের কাজ স্যাট্রাপরা যথাযথভাবে পালন করছেন কিনা-এসব বিষয়গুলি দেখাশোনার জন্য সম্রাট প্রদেশগুলিতে একজন পরিদর্শক বা পর্যবেক্ষক নিয়োগ করতেন। এই পর্যবেক্ষকগণ ছিলেন প্রকৃতপক্ষে রাজার চোখ ও কান (Eyes and Ears of the King)। এই পরিদর্শকদের প্রধান কাজ ছিল স্যাট্রাপদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য দ্রুত সম্রাটের কাছে পাঠানো। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পারস্য সম্রাট দরায়ুস স্যাট্রাপদের স্বেচ্ছাচার নিয়ন্ত্রণের জন্য এই ধরনের পর্যবেক্ষক নিয়োগের পাশাপাশি প্রদেশগুলিতে সামরিক ও বেসামরিক ক্ষমতার বিভাজনও করেছিলেন। স্যাট্রাপদের হাতে কেবলমাত্র বেসামরিক ক্ষমতা দেওয়া হত এবং প্রতি প্রদেশের সামরিক ক্ষমতা থাকত একজন সামরিক কর্মকর্তার হাতে।
(3) স্যাট্রাপদের সতর্ক করা
যেসকল স্যাট্রাপ নিজেদের দায়িত্ব- কর্তব্যপালনে অবহেলা করতেন, পর্যবেক্ষকগণ যাদের সম্পর্কে কর্তব্যে অবহেলার রিপোর্ট সম্রাটদের প্রদান করতেন- সেই সকল স্যাট্রাপদের সম্রাট প্রথমবার সতর্ক করে দিতেন। অনেক স্যাট্রাপ আবার তাদের বার্ষিক বিবরণ ইত্যাদি নির্দিষ্ট সময়ে সম্রাটের কাছে পেশ করতেও ব্যর্থ হতেন। এক্ষেত্রেও তাদের সতর্ক করে দেওয়া হত।
(4) পদচ্যুত করা
সম্রাটের সতর্কীকরণের পরেও স্যাট্রাপরা যদি যথাযথভাবে নিজ দায়িত্ব পালন না করতেন কিংবা নিজেদের কর্তব্য পালনে অবহেলা করতেন, তাহলে সম্রাট তাকে স্যাট্রাপ পদ থেকে সরিয়ে দিতেন।
স্যাট্রাপদের স্বাধীনতা ভোগ, বিদ্রোহ এবং বিলোপসাধন
(1) স্বাধীনতা ভোগ
স্যাট্রাপগণ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে প্রদেশের শাসন পরিচালনা করতেন। মূলত সম্রাটের ক্ষমতা ও দক্ষতার উপরই স্যাট্রাপদের নিয়ন্ত্রণ নির্ভর করত। তবে পারসিক সম্রাটদের শাসন অর্থাৎ কেন্দ্রীয় শাসন দুর্বল হয়ে পড়লে বিভিন্ন স্যাট্রাপির স্যাট্রাপগণ যথেচ্ছ স্বাধীনতা ভোগ করতে থাকেন।
(2) স্যাট্রাপদের বিদ্রোহ
পারস্যের স্যাট্রাপগণ বিভিন্ন সময়েই কেন্দ্রীয় শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করতেন। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে স্যাট্রাপদের বিদ্রোহ এক সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছিল। প্রথম দরায়ুসের আমলে ও পরে সম্রাট জারেক্সস (Xerxes)-এর আমলে বিভিন্ন স্যাট্রাপিতে বিদ্রোহ দেখা দেয়। সম্রাট প্রথম দরায়ুস পারস্যের স্যাট্রাপদের বিদ্রোহ দমন করেছিলেন। পরবর্তীকালে গ্রিকরা পারস্য দখল করে। এই গ্রিক শাসকদের আমলেও স্যাট্রাপরা বিদ্রোহে শামিল হয়েছিল। তাছাড়া সম্রাট তৃতীয় আলেকজান্ডার (Alexander III)-এর সময়কালে স্যাট্রাপদের যে বিদ্রোহ হয়, তা ছিল প্রকৃতপক্ষে পারস্যে স্যাট্রাপদের শেষ উল্লেখযোগ্য বড়ো আকারের বিদ্রোহ।
(3) বিলোপ
স্যাট্রাপগণ দীর্ঘকাল দক্ষতার সঙ্গে পারস্যের শাসন পরিচালনা করেছিলেন। কিন্তু কালক্রমে স্যাট্রাপ পদটি বংশানুক্রমিক হয়ে পড়ে এবং তাদের উপর সম্রাটের নিয়ন্ত্রণও শিথিল হয়ে যায়। ৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ স্যাট্রাপিগুলি ভেঙে যায় এবং ছোটো ছোটো শাসনতান্ত্রিক একক গঠিত হয়। পরবর্তীকালে স্ট্যাটেগো নামক কর্মচারীরা শাসনক্ষমতা লাভ করলে স্যাট্রাপদের বিলোপসাধন ঘটে। সামগ্রিক আলোচনার শেষে স্যাট্রাপগণ বা স্যাট্রাপি ব্যবস্থার কতকগুলি সীমাবদ্ধতা তথা ত্রুটি-বিচ্যুতির কথা না উল্লেখ করলেই নয়। প্রথমত, স্যাট্রাপ বা ক্ষত্রপ পদগুলি বংশানুক্রমিক হওয়ায় প্রশাসনে অযোগ্য ব্যক্তির অনুপ্রবেশ ঘটে। দ্বিতীয়ত, স্যাট্রাপদের বারংবার বিদ্রোহ ঘোষণার ফলে সাম্রাজ্যের ভিত্তিও দুর্বল হয়ে পড়ে। তবে এসকল নানান সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বলা যায় যে, পারসিক শাসনব্যবস্থায় স্যাট্রাপগণ ছিলেন স্তম্ভস্বরূপ। সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নতি ও শাসনতান্ত্রিক বিভিন্ন বিষয়ে তাদের অবদান ছিল অনস্বীকার্য।
আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর