ভারত সরকারের বিভাগসমূহ : ভারতের আইনসভা প্রশ্ন উত্তর | ক্লাস 12 চতুর্থ সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান

ভারত সরকারের বিভাগসমূহ : ভারতের আইনসভা প্রশ্ন উত্তর | ক্লাস 12 চতুর্থ সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান | Class 12 5th Semester Political Science forth chapter question answer

ভারত সরকারের বিভাগসমূহ : ভারতের আইনসভা প্রশ্ন উত্তর
ভারত সরকারের বিভাগসমূহ : ভারতের আইনসভা প্রশ্ন উত্তর

1. ভারতীয় পার্লামেন্টের ক্ষমতা, কার্যাবলি এবং মর্যাদা আলোচনা করো।
অথবা, পার্লামেন্টের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি আলোচনা করো।

ক্ষমতা ও কার্যাবলি (Powers and Functions)

ভারতে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হওয়ার ফলে তত্ত্বগতভাবে পার্লামেন্ট প্রভৃত ক্ষমতার অধিকারী। পার্লামেন্টের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা ও কার্যাবলি হল:

(১) আইন প্রণয়ন-সংক্রান্ত ক্ষমতা: আইন প্রণয়ন করাই হল পার্লামেন্টের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সংবিধানে আইন প্রণয়ন-সংক্রান্ত বিষয়গুলিকে তিনটি তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, যথা-[i] কেন্দ্রীয় তালিকা; [ii] রাজ্য-তালিকা এবং [iii] যুগ্ম তালিকা। সংবিধানের সপ্তম তপশিলে বর্ণিত এই তিনটি তালিকার মধ্যে বর্তমানে কেন্দ্রীয় তালিকাভুক্ত ১০০টি বিষয়ে পার্লামেন্ট এককভাবে আইন প্রণয়ন করার অধিকারী। প্রতিরক্ষা, মুদ্রাব্যবস্থা, যুদ্ধ ঘোষণা, সন্ধি স্থাপন প্রভৃতি বিষয় হল কেন্দ্রীয় তালিকার অন্তর্ভুক্ত। আবার, কৃষি, জনস্বাস্থ্য, জনশৃঙ্খলা, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন প্রভৃতি ৬১টি রাজ্য-তালিকাভুক্ত বিষয়ে রাজ্য-আইনসভাগুলি এককভাবে আইন প্রণয়ন করতে পারে। বিবাহ, শিক্ষা, সামাজিক বিমা, চুক্তি প্রভৃতি ৫২টি বিষয় বর্তমানে যুগ্ম-তালিকার অন্তর্ভুক্ত। এইসব বিষয়ে কেন্দ্রীয় আইনসভা এবং রাজ্য-আইনসভাগুলি পৃথক পৃথকভাবে আইন প্রণয়ন করতে পারে। তবে যুগ্ম-তালিকাভুক্ত কোনো বিষয়ে পার্লামেন্টের আইনের সঙ্গে রাজ্য-আইনসভা-প্রণীত আইনের বিরোধ বাধলে পার্লামেন্টের আইন কার্যকর হবে এবং রাজ্য-আইনসভা প্রণীত আইনের যে-অংশ অসামঞ্জস্যপূর্ণ হবে, তা বাতিল হয়ে যাবে। তাই বলা যায়, যুগ্ম-তালিকাভুক্ত বিষয়ে কার্যত পার্লামেন্টই আইন প্রণয়নের অধিকারী। তা ছাড়া, অবশিষ্ট বিষয়ে আইন প্রণয়নের ক্ষমতাও পার্লামেন্টের হাতে অর্পিত হয়েছে। আবার, [i] জরুরি অবস্থা বলবৎ থাকলে, [ii] কোনো রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থাজনিত জরুরি অবস্থা ঘোষিত হলে, [iii] আন্তর্জাতিক সন্ধি বা চুক্তির শর্তাদি পালনের জন্য, কিংবা [iv] দুই বা ততোধিক রাজ্য-আইনসভার অনুরোধক্রমে পার্লামেন্ট রাজ্য-তালিকাভুক্ত বিষয়েও আইন প্রণয়ন করতে পারে। অর্থ-সংক্রান্ত বিষয় ছাড়া অন্য সব বিষয়ে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে লোকসভা এবং রাজ্যসভা সমান ক্ষমতার অধিকারী। যে-কোনো সরকারি বিল পার্লামেন্টর যে-কোনো কক্ষে উত্থাপিত হতে পারে। একটি কক্ষে গৃহীত হওয়ার পর বিলটিকে অনুমোদনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা হয়। অর্থবিল ছাড়া অন্য বিলে রাষ্ট্রপতি সম্মতি জ্ঞাপন করতে পারেন কিংবা না-ও পারেন। ইচ্ছা করলে তিনি বিলটি পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠাতেও পারেন। তবে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষ পুনর্বিবেচনার পর সংশ্লিষ্ট বিলটিকে রাষ্ট্রপতির কাছে দ্বিতীয়বার প্রেরণ করলে তাতে তিনি সম্মতি জ্ঞাপন করতে বাধ্য থাকেন।

(২) মন্ত্রীসভার গঠন ও অপসারণ-সংক্রান্ত ক্ষমতা: তত্ত্বগতভাবে রাষ্ট্রপতি পার্লামেন্টের যে-কোনো কক্ষের সদস্যকে মন্ত্রীপদে নিয়োগ করতে পারেন। সাধারণত লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা মোর্চার নেতা বা নেত্রীকে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন। তাঁর পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি পার্লামেন্টের সদস্যদের মধ্য থেকে অন্যান্য মন্ত্রীকে নিয়োগ ক’রে থাকেন। অবশ্য প্রধানমন্ত্রীকে যে লোকসভার সদস্য হতেই হবে-এমন কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। আবার, পার্লামেন্টের সদস্য নন এমন কোনো ব্যক্তিকেও রাষ্ট্রপতি মন্ত্রীসভায় স্থান দিতে পারেন। কিন্তু মন্ত্রীসভায় স্থান পাওয়ার পর তাঁকে ৬ মাসের মধ্যে পার্লামেন্টের যে-কোনো কক্ষের সদস্য হতেই হবে। ‘পার্লামেন্টের আস্থা’ হারালেই মন্ত্রীসভাকে পদত্যাগ করতে হয়। ‘পার্লামেন্টের আস্থা’ বলতে কার্যত লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থনকেই বোঝায়। আবার, কোনো সরকারি বিল লোকসভায় প্রত্যাখ্যাত হলে মন্ত্রীসভা সংশ্লিষ্ট কক্ষের আস্থা হারিয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। এরূপ ক্ষেত্রে পদত্যাগ করা ছাড়া মন্ত্রীসভার সামনে কোনো বিকল্প থাকে না। সর্বোপরি, | নির্ধারিত ও সম্পাদিত কার্যাবলির জন্য মন্ত্রীসভাকে যৌথভাবে লোকসভার কাছে দায়িত্বশীল থাকতে হয়। এদিক থেকে বিচার ক’রে বলা যায় যে, মন্ত্রীসভাকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে রাজ্যসভা অপেক্ষা লোকসভার ভূমিকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

(৩) শাসন নিয়ন্ত্রণ-সংক্রান্ত বিভাগকে ক্ষমতা: তত্ত্বগতভাবে পার্লামেন্ট শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। [i] প্রশ্ন জিজ্ঞাসা, প্রস্তাব উত্থাপন, বিতর্ক, কোনো বিলের ওপর আলোচনা, নিন্দাসূচক প্রস্তাব গ্রহণ, অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যরা মন্ত্রীসভাকে নিয়ন্ত্রণ করেন। [ii] তা ছাড়া, সরকারি প্রতিশ্রুতি কমিটি (Committee on Government Assurances), সরকারি হিসাব-পরীক্ষা কমিটি (Public Accounts Committee), আনুমানিক ব্যয়-পরীক্ষা কমিটি (Estimates Committee) প্রভৃতির রিপোর্টের ওপর বিতর্ক অনুষ্ঠানের মাধ্যমেও পার্লামেন্ট মন্ত্রীসভাকে নিয়ন্ত্রণ করে।

(৪) অর্থ-সংক্রান্ত ক্ষমতা: অর্থ-সংক্রান্ত বিষয়ে লোকসভার একক প্রাধান্য সুপ্রতিষ্ঠিত। [i] যে-কোনো অর্থবিল কেবল লোকসভাতেই উত্থাপিত হতে পারে। [ii] কোনো বিল অর্থবিল কি না, তা নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন লোকসভার অধ্যক্ষ। [iii] বাজেট নিয়ে রাজ্যসভা আলোচনা করতে পারলেও ব্যয়মঞ্জুরি দাবি করা, বিনিয়োগ বিল (Appropriation Bill) পাস করা প্রভৃতি ব্যাপারে লোকসভার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়। [iv] লোকসভা কর্তৃক গৃহীত কোনো অর্থবিলকে সংশোধন বা বাতিল করার ক্ষমতা রাজ্যসভার নেই। লোকসভায় গৃহীত যে-কোনো অর্থবিল রাজ্যসভায় প্রেরিত হওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিলটি লোকসভার কাছে ফেরত না এলে উভয় কক্ষে তা গৃহীত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। [v] লোকসভার অনুমোদন ছাড়া সরকার কোনো অর্থ ব্যয় করতে পারে না। [vi] নতুন কর ধার্য, পুরোনো করের পুনর্বিন্যাস, কোনো করের বিলোপসাধন প্রভৃতি ব্যাপারে পার্লামেন্টের (কার্যত লোকসভার) অনুমোদন ছাড়া সরকার কোনো কাজ করতে অক্ষম। অবশ্য সরকারের সুপারিশ ছাড়া ব্যয়মঞ্জুরি দাবি বা কর ধার্যের কোনো প্রস্তাব পার্লামেন্টে উত্থাপন করা যায় না। [vii] আবার, মঞ্জুরিকৃত অর্থ নির্দিষ্ট খাতে ব্যয়িত হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে লোকসভাকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হয়। [viii] মন্ত্রীদের বেতন, ভাতা ইত্যাদি নির্ধারণের দায়িত্বও পার্লামেন্টের। রাষ্ট্রপতি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী (Union Finance Minister)-র মাধ্যমে বার্ষিক আয়ব্যয়ের প্রস্তাব (Budget) পার্লামেন্টে অনুমোদনের জন্য পেশ করেন।

(৫) নির্বাচন ও পদচ্যুত করার ক্ষমতা: [i] রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ‘নির্বাচক সংস্থা’র অংশ হিসেবে পার্লামেন্টের নির্বাচিত সদস্যরা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। [ii] উপরাষ্ট্রপতি পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের সদস্যবৃন্দ কর্তৃক নির্বাচিত হন। [iii] রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে সংবিধানভঙ্গের অভিযোগ উত্থাপন ক’রে পার্লামেন্ট তাঁকে পদচ্যুত করতে পারে। [iv] উপরাষ্ট্রপতির পদচ্যুতিও পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল। [v] তা ছাড়া, সুপ্রিমকোর্ট এবং হাইকোর্টের বিচারপতিরা, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার, মহাহিসাব নিয়ামক ও নিরীক্ষক (Comptroller and Auditor General) প্রমুখকে পদচ্যুত করার জন্য পার্লামেন্ট প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারে। এইসব ক্ষেত্রে লোকসভার মতোই রাজ্যসভারও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের মোট সদস্যের অধিকাংশ এবং উপস্থিত ও ভোটদানকারী সদস্যের দুই-তৃতীয়াংশ কর্তৃক বিচারপতিদের অপসারণ-সংক্রান্ত প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর সেই প্রস্তাবটিকে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে হয়। এর ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি সংশ্লিষ্ট বিচারপতিকে পদচ্যুত করতে পারেন।

(৬) বিচার-সংক্রান্ত ক্ষমতা: [i] পার্লামেন্টের উভয় কক্ষ আইনসভার অবমাননা কিংবা অধিকারভঙ্গের অভিযোগে পার্লামেন্টের সদস্য এবং সদস্য নন এমন যে-কোনো ব্যক্তিকে শাস্তিদানের ব্যবস্থা করতে পারে। [ii] তা ছাড়া, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পার্লামেন্ট হাইকোর্ট স্থাপন করতে কিংবা কোনো একটি অধস্তন আদালতকে হাইকোর্টের মর্যাদায় উন্নীত করতে সক্ষম। [iii] পার্লামেন্ট যে-কোনো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের হাইকোর্টের ক্ষমতার পরিধি সম্প্রসারণ করতে পারে [২৩০ (১) নং ধারা]।

(৭) সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা: সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে ভারতীয় পার্লামেন্ট এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। নির্দিষ্ট কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংবিধান সংশোধনের জন্য অঙ্গরাজ্যগুলির আইনসভাসমূহের সম্মতি প্রয়োজন। এই বিষয়গুলি হল-রাষ্ট্রপতির নির্বাচন, কেন্দ্র ও রাজ্যের নির্বাহী কর্তৃত্ব (executive authority)-এর পরিধি, সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্ট-সংক্রান্ত বিষয়, পার্লামেন্টে অঙ্গরাজ্যগুলির প্রতিনিধিত্ব এবং সংবিধান সংশোধন পদ্ধতির পরিবর্তন। অবশিষ্ট সব বিষয়ে পার্লামেন্ট এককভাবে সংবিধান সংশোধন করার অধিকারী।

2. লোকসভার অধ্যক্ষের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতাগুলি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

ক্ষমতা ও কার্যাবলি (Powers and Functions)

ভারতের সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় লোকসভার অধ্যক্ষের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যমণ্ডিত। তাঁকে নিম্নলিখিত কার্যাবলি সম্পাদন করতে হয়:

(১) প্রশাসনিক কার্য: লোকসভার অধ্যক্ষের প্রশাসনিক কার্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সভায় কোন্ কোন্ প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে, কী ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হবে, কোনো সংশোধনী প্রস্তাব বৈধ কি না, কোন্ কোন্ নোটিশ আলোচনার জন্য গৃহীত হবে ইত্যাদি বিষয়ে অধ্যক্ষের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়। লোকসভার কোনো সদস্য সভার কার্যপদ্ধতি সম্পর্কিত কোনো নিয়মকানুনের যথাযথ ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য অধ্যক্ষকে অনুরোধ করলে তিনি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিজের অভিমত জ্ঞাপন করেন। এইসব বিষয়ে তাঁর সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে নজির হিসেবে বিবেচিত হয়। তা ছাড়া, আলোচনা বন্ধের প্রস্তাব (closure motion) গ্রহণ করা বা না-করার বিষয়ে তাঁর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। অধ্যক্ষের কোনো সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ করা যেতে পারে। কিন্তু পূর্ব সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হবে কি না, তা সম্পূর্ণভাবেই অধ্যক্ষের ইচ্ছাধীন ব্যাপার। অধ্যক্ষের যে-কোনো সিদ্ধান্তকে আদালতের এক্তিয়ারের বাইরে রাখা হয়েছে। অর্থাৎ, অধ্যক্ষের কোনো সিদ্ধান্তকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না।

(২) সভার শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা: সভার সদস্যদের আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণ ক’রে সুষ্ঠুভাবে সভার কার্যাদি পরিচালনা করার দায়িত্ব অধ্যক্ষের। সভায় বক্তৃতা দিতে কিংবা কোনো বিষয়ে সভার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হলে প্রত্যেক সদস্যকেই অধ্যক্ষের অনুমতি গ্রহণ করতে হয়। একাধিক সদস্য একই সঙ্গে বক্তৃতা দিতে চাইলে কোন্ সদস্য আগে বলবেন, তা তিনি স্থির করে দেন। বক্তৃতা বা বিতর্কের সময় অপ্রাসঙ্গিক কথা বলা, একই বিষয়ের পুনরাবৃত্তি ঘটানো কিংবা অশালীন মন্তব্য ও আপত্তিকর আচরণের জন্য তিনি যে-কোনো সদস্যকে সংযত হওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন। সভায় তাঁর সিদ্ধান্তই যেহেতু চূড়ান্ত, সেহেতু সদস্যরা তাঁর যে-কোনো নির্দেশ মেনে চলতে বাধ্য। সভায় কোনোরকম গণ্ডগোলের সূত্রপাত হলে অধ্যক্ষ সদস্যদের সকলকে শান্ত হতে অনুরোধ জানান। প্রয়োজন মনে করলে তিনি সদস্যদের মৃদু তিরস্কার করতে পারেন। সভায় গণ্ডগোল চরম আকার ধারণ করলে অধ্যক্ষ নিজের আসন ছেড়ে দাঁড়িয়ে ওঠেন। সভার নিয়ম অনুযায়ী অধ্যক্ষ দাঁড়ালে অন্য সবাইকে নিজ নিজ আসন গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু কোনো সদস্য তখনও দাঁড়িয়ে থাকলে কিংবা সভার শৃঙ্খলাভঙ্গ করলে তিনি সংশ্লিষ্ট সদস্যকে কক্ষত্যাগের জন্য নির্দেশ দিতে পারেন। ওই সদস্য অধ্যক্ষের নির্দেশ অমান্য করলে তিনি সংশ্লিষ্ট সদস্যের ‘নাম’ চিহ্নিত করেন। এই ‘নাম’ চিহ্নিত করার অর্থ হল-অধ্যক্ষ ওই সদস্যকে সভা থেকে বহিষ্কারের নির্দেশদান করছেন। এই নির্দেশ উপেক্ষা করলে অধ্যক্ষের নির্দেশে মার্শাল বলপ্রয়োগের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সদস্যকে কক্ষের বাইরে নিয়ে যান। সদস্যদের আশালীন আচরণের জন্য সভার শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করা কিংবা সভার কার্য পরিচালনা করা অসম্ভব বলে মনে করলে তিনি সভার কার্য সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার কথা কিংবা সভার সমাপ্তি ঘোষণা করতে পারেন।

(৩) সদস্যদের অধিকার সংরক্ষণ-সংক্রান্ত কার্য: লোকসভার সদস্যদের বিশেষাধিকারসমূহ (privileges) রক্ষা করার দায়িত্ব অধ্যক্ষকেই পালন করতে হয়। সভার কোনো সদস্য কিংবা অন্য কোনো ব্যক্তি সদস্যদের অধিকারভঙ্গ কিংবা সভার অবমাননা করলে লোকসভার পক্ষে তিনি সংশ্লিষ্ট সদস্য বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে যথোচিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। সভার অবমাননার জন্য কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হলে সভার অধিবেশনের পরিসমাপ্তি ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মুক্তিলাভ করেন।

(৪) অর্থবিল-সংক্রান্ত ক্ষমতা: কোনো বিল অর্থবিল কি না, তা নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অধ্যক্ষের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়। তবে কোনো বিলকে তিনি অর্থবিল বলে চিহ্নিত করলে সেক্ষেত্রে তাঁকে সংশ্লিষ্ট বিল সম্পর্কে সার্টিফিকেট প্রদান করতে হয়।

(৫) যোগসূত্র হিসেবে ভূমিকা: পার্লামেন্ট এবং রাষ্ট্রপতির মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারীর ভূমিকা পালন করা অধ্যক্ষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কার্য বলে বিবেচিত হয়। রাষ্ট্রপতির বাণী, বার্তা, বক্তব্য প্রভৃতি অধ্যক্ষ পার্লামেন্টের সম্মুখে পেশ করেন। অনুরূপভাবে, লোকসভার যাবতীয় খবরাখবর তিনি রাষ্ট্রপতিকে জানান।

(৬) কোরাম-সম্পর্কিত ক্ষমতা: লোকসভার ‘কোরাম’ (‘quorum’) না-হলে, অর্থাৎ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য উপস্থিত না-থাকলে তিনি সভার কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে পারেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে যে, লোকসভার মোট সদস্যের এক-দশমাংশ উপস্থিত থাকলে ‘কোরাম’ হয়।

(৭) গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা: যে-কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে সভার সদস্যদের অবহিত করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট বিষয়টি নিয়ে সভায় আলোচনা করতে পারেন। তা ছাড়া, কোনো সদস্য যদি হিন্দি বা ইংরেজিতে বক্তৃতা দিতে না-পারেন, তাহলে অধ্যক্ষ তাঁকে তাঁর মাতৃভাষায় বক্তৃতা দেওয়ার অনুমতি দিতে পারেন।

(৮) সংসদীয় কমিটি-সংক্রান্ত ক্ষমতা: সংসদীয় কমিটিগুলি (Parliamentary Committees)-র প্রধান হিসেবে অধ্যক্ষ কাজ করেন। ‘বুলস্ কমিটি’, ‘বিজনেস অ্যাডভাইসরি কমিটি’র মতো গুরুত্বপূর্ণ কমিটিগুলি তাঁর সভাপতিত্বে কার্য সম্পাদন করে। লোকসভার বিভিন্ন কমিটির সভাপতিদের (Chairman) তিনিই নিয়োগ করেন এবং তাঁদের পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে পারেন।

(৯) যৌথ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করা: পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের যৌথ অধিবেশনে অধ্যক্ষকেই সভাপতিত্ব করতে হয়। তাঁর নির্দেশমতো যৌথ অধিবেশনের কার্য-পরিচালনা বিষয়ে নিয়মকানুন স্থিরীকৃত এবং প্রযুক্ত হয়।

(১০) ভোটদান-সংক্রান্ত ক্ষমতা: কোনো বিষয়ে ভোট গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে অধ্যক্ষ সংশ্লিষ্ট বিষয়টির ওপর ভোট গ্রহণের নির্দেশ দিতে পারেন। সাধারণভাবে ভোট গ্রহণের সময় ভোটদান থেকে বিরত থাকলেও কোনো প্রস্তাবের পক্ষে এবং বিপক্ষে সমান সংখ্যক ভোট পড়লে তিনি অচলাবস্থার অবসান ঘটানোর জন্য একটি ‘নির্ণায়ক ভোট’ (‘Casting Vote’) দিতে পারেন। এরূপ ক্ষেত্রে অধ্যক্ষের একটি ভোটই সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ভাগ্য নির্ধারণ ক’রে দেয়।

3. পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার ক্ষমতা ও কার্যাবলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।

ক্ষমতা ও কার্যাবলি (Powers and Functions)

যেসব রাজ্যের আইনসভা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সেইসব রাজ্যের আইনসভার হাতে যেসব ক্ষমতা অর্পিত হয়েছে, সেইসব ক্ষমতা প্রকৃতপক্ষে বিধানসভা ভোগ করে। পশ্চিমবঙ্গের মতো যেসব রাজ্যের আইনসভা এককক্ষবিশিষ্ট, সেখানে বিধানসভার ক্ষমতা ও কার্যাবলিকে নিম্নলিখিত কয়েকটি ভাগে ভাগ ক’রে আলোচনা করা যেতে পারে:

(১)প্রণয়ন-সংক্রান্ত ক্ষমতা: বিধানসভার আইন সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল আইন প্রণয়ন করা। সাধারণত রাজ্য-তালিকাভুক্ত বিষয়ে এককভাবে আইন প্রণয়ন করার অধিকারী হল বিধানসভা। আবার, যুগ্ম-তালিকাভুক্ত বিষয়ে পার্লামেন্ট এবং বিধানসভা যৌথভাবে আইন প্রণয়ন করতে পারে। বিধানসভায় গৃহীত প্রতিটি বিলে রাজ্যপালের সম্মতি অপরিহার্য বলে বিবেচিত হয়। তাঁর সম্মতি ছাড়া কোনো বিল আইনের মর্যাদা লাভ করতে পারে না। বিধানসভা কর্তৃক প্রেরিত কোনো অর্থবিলে অসম্মতি জানাতে না পারলেও যে-কোনো সাধারণ বিলে রাজ্যপাল সম্মতি কিংবা অসম্মতি জ্ঞাপন করতে সক্ষম। রাজ্যপালের অসম্মতি জ্ঞাপনের অর্থ বিলটির অপমৃত্যু ঘটা। তা ছাড়া, রাজ্যপাল পুনর্বিবেচনার জন্য সুপারিশ-সহ কিংবা সুপারিশ ছাড়াই যে-কোনো সাধারণ বিলকে বিধানসভার কাছে ফেরত পাঠাতে পারেন। তবে বিধানসভা কর্তৃক পুনর্বিবেচিত হওয়ার পর বিলটি দ্বিতীয়বার রাজ্যপালের কাছে প্রেরিত হলে তিনি তাতে অসম্মতি জ্ঞাপন করতে পারেন না। রাজ্যপাল আবার নিজে সিদ্ধান্ত গ্রহণ না-ক’রে রাষ্ট্রপতির বিচারবিবেচনার জন্য কোনো বিল প্রেরণ করতে পারেন।

(২) অর্থ-সংক্রান্ত ক্ষমতা: রাজ্য-সরকারের আয়-ব্যয় মঞ্জুর এবং নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ-সহ সব রাজ্যের বিধানসভার ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। নতুন কর প্রবর্তন, প্রচলিত কর-হারের পরিবর্তন, সরকারি কোষাগার থেকে অর্থব্যয় ইত্যাদির জন্য বিধানসভার সম্মতি ছাড়া শাসন বিভাগ এক কপর্দক পরিমাণ অর্থও ব্যয় করতে পারে না। কোনো অর্থবিল বিধানসভায় গৃহীত হওয়ার পর রাজ্যপালের অনুমোদনলাভের জন্য প্রেরিত হলে তাতে তিনি অসম্মতি জ্ঞাপন করতে পারেন না।

(৩) শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ: সংবিধানে বলা হয়েছে যে, সম্পাদিত কার্যাবলির জন্য রাজ্য-মন্ত্রীসভাকে বিধানসভার কাছে যৌথভাবে দায়িত্বশীল থাকতে হয়। এর অর্থ-যতদিন বিধানসভার আস্থাভাজন থাকে, ততদিন পর্যন্ত মন্ত্রীসভা ক্ষমতাসীন থাকতে পারে। কিন্তু বিধানসভার আস্থা হারালেই মন্ত্রীসভাকে পদত্যাগ করতে হয়। প্রশ্ন জিজ্ঞাসা, অতিরিক্ত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা, মুলতুবি প্রস্তাব উত্থাপন, ছাঁটাই প্রস্তাব পেশ, অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন ইত্যাদির মাধ্যমে বিধানসভা রাজ্য-মন্ত্রীসভাকে নিয়ন্ত্রণ করে। এ ছাড়া, সরকার বিধানসভার অনুমোদনের জন্য যে-বাজেট পেশ করে, সভা ইচ্ছা করলে তা ছাঁটাই কিংবা প্রত্যাখ্যান করতে পারে। এইভাবে বাজেট প্রত্যাখ্যাত হলে সরকার বিধানসভার আস্থা হারিয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয় এবং মন্ত্রীসভা পদত্যাগ করতে বাধ্য থাকে। সুতরাং বলা যায়, শাসন বিভাগের ওপর কেবল বিধানসভাই নানাভাবে নিয়ন্ত্রণ আরোপ ক’রে তাকে সংযত রাখে।

(৪) তথ্য ও সংবাদ সরবরাহ: সরকারি কার্যাবলি সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত রাখার জন্য বিধানসভাকে তথ্য ও সংবাদ সরবরাহকারী সংস্থা হিসেবে কার্য সম্পাদন করতে হয়। বিধানসভার অধিবেশন চলাকালে প্রতিদিন যেসব প্রশ্নোত্তর চলে, তার জন্য নির্দিষ্ট সময় ধার্য করা থাকে। মন্ত্রীরা নানাবিধ প্রশ্নের যেসব উত্তর প্রদান করেন, সেগুলি বিশেষ নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে সংগৃহীত হয়। এইসব তথ্য থেকে জনসাধারণ রাজ্য-সরকারের কার্যকলাপ এবং রাজ্যের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারে।

ভারত সরকারের বিভাগসমূহ : ভারতের আইনসভা প্রশ্ন উত্তর (Marks 2)

1. ভারতের সংসদে স্পিকার পদ কেন গুরুত্বপূর্ণ?

উত্তর: যুক্তরাজ্যের কমন্সসভার স্পিকারের অনুকরণে ভারতে লোকসভার সভাপতিকে অধ্যক্ষ বা স্পিকার বলে অভিহিত করা হলেও কমন্সসভার স্পিকারপদের উৎপত্তি ও বিকাশ যেরূপ প্রথাগতভাবে হয়েছে, ভারতের লোকসভার ক্ষেত্রে সেরূপ হয়নি। ভারতের লিখিত সংবিধানের বিভিন্ন ধারায় অধ্যক্ষের নিয়োগ, ক্ষমতা ও কার্যাবলি প্রভৃতি সুস্পষ্টভাবে আলোচিত হয়েছে।

যোগ্যতা ও নির্বাচন (Qualification and Election)

সংবিধানের নির্দেশ অনুযায়ী অধ্যক্ষকে লোকসভার সদস্য হতে হয়। সুতরাং, লোকসভার সদস্য হতে গেলে যেসব যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন, অধ্যক্ষকেও সেইসব যোগ্যতার অধিকারী হতে হয়। নবনির্বাচিত লোকসভার প্রথম অধিবেশনেই লোকসভার সদস্যরা নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে অধ্যক্ষ এবং অন্য একজনকে উপাধ্যক্ষ (Deputy Speaker) হিসেবে নির্বাচন করেন [৯৩ নং ধারা]। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, তত্ত্বগতভাবে লোকসভার সদস্যরা অধ্যক্ষকে নির্বাচন করতে পারলেও কার্যক্ষেত্রে লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা মোর্চার নেতা বা নেত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ক্যাবিনেটের সহকর্মীদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে কে অধ্যক্ষ হবেন, তা ঠিক করেন এবং লোকসভা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে আইনগতভাবে রূপদান করে মাত্র।

2. রাজ্যসভা কীভাবে গঠিত হয়?

উত্তর: পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ, অর্থাৎ রাজ্যসভা অনধিক ২৫০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে বলে সংবিধানে বলা হয়েছে। ২০০১ সালে ৮৪-তম সংবিধান সংশোধন আইন ২০২৬ সাল পর্যন্ত এই সংখ্যা অপরিবর্তিত রাখার ব্যবস্থা করেছে। রাজ্যসভার সদস্যদের মধ্যে ১২ জন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত হন। মনোনীত সদস্যদের সাহিত্য, বিজ্ঞান, সমাজসেবা, চারুকলা প্রভৃতি বিষয়ে পারদর্শী হতে হয়। অবশিষ্ট ২৩৮ জন সদস্য অঙ্গরাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি থেকে পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হন। বর্তমানে রাজ্যসভার মোট সদস্যসংখ্যা ২৪৫। প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের বিধানসভার নির্বাচিত প্রতিনিধিরা একক-হস্তান্তরযোগ্য ভোটের ভিত্তিতে সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের নিয়মানুযায়ী রাজ্যসভার প্রতিনিধিদের নির্বাচন করেন। প্রতিটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে রাজ্যসভার প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য একটি ক’রে নির্বাচক সংস্থা (Electoral College) গঠিত হয়। এই নির্বাচক সংস্থার সদস্যরা একক-হস্তান্তরযোগ্য ভোটের ভিত্তিতে সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের নিয়মানুযায়ী রাজ্যসভার প্রতিনিধিদের নির্বাচন করেন। রাজ্যসভার সদস্যরা ৬ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। প্রতি ২ বছর অন্তর এক-তৃতীয়াংশ সদস্যকে অবসর গ্রহণ করতে হয় এবং ওই একই সংখ্যক নতুন বা পুনর্নির্বাচিত সদস্য তাঁদের স্থলাভিষিক্ত হন।

3. লোকসভা কীভাবে গঠিত হয়?

উত্তর: লোকসভার গঠন [Composition of the House of People]

লোকসভা হল পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ। লোকসভা অনধিক ৫৫২ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হতে পারে। লোকসভার সদস্যদের তিন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়, যথা- [১] অঙ্গরাজ্যসমূহের নির্বাচিত প্রতিনিধিবৃন্দ, [২] কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির নির্বাচিত প্রতিনিধিবৃন্দ এবং [৩] রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত সদস্যবৃন্দ। অঙ্গরাজ্যসমূহের নির্বাচিত প্রতিনিধির সংখ্যা অনধিক ৫৩০ এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহের নির্বাচিত প্রতিনিধির সংখ্যা অনধিক ২০ হবে। তা ছাড়া, রাষ্ট্রপতি প্রয়োজন মনে করলে ২ জন ইঙ্গ-ভারতীয়কে লোকসভার সদস্য হিসেবে মনোনয়ন করতে পারেন। বর্তমানে লোকসভার মোট সদস্যসংখ্যা হল ৫৪৫। এঁদের মধ্যে ৫৩০ জন হলেন রাজ্যগুলির নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহের প্রতিনিধির সংখ্যা হল ১৩। ৮৪-তম সংবিধান সংশোধনের (২০০১) মাধ্যমে ২০২৬ সাল পর্যন্ত লোকসভার সদস্যসংখ্যা অপরিবর্তিত রাখার এবং ৯৫-তম সংবিধান সংশোধানের (২০০৯) মাধ্যমে ২০২০ সালের ২৫শে জানুয়ারি পর্যন্ত লোকসভা নির্বাচনে তপশিলভুক্ত জাতি ও উপজাতিগুলির জন্য আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তা ছাড়া রয়েছেন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত ২ জন ইঙ্গ-ভারতীয় সদস্য। লোকসভার সদস্যদের সাধারণ কার্যকালের মেয়াদ হল ৫ বছর। তবে এই মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বেই রাষ্ট্রপতি লোকসভা ভেঙে দিতে পারেন। আবার, জরুরি অবস্থার সময় তিনি লোকসভার কার্যকালের মেয়াদ প্রতিবার ১ বছর ক’রে বৃদ্ধি করতে সক্ষম। লোকসভার প্রথম অধিবেশনে সদস্যরা নিজেদের মধ্য থেকে একজন অধ্যক্ষ (Speaker) এবং একজন উপাধ্যক্ষ (Deputy Speaker) নির্বাচন করেন। অধ্যক্ষের অবর্তমানে উপাধ্যক্ষ অধ্যক্ষের যাবতীয় কার্য সম্পাদন করেন।

4. পার্লামেন্ট কোন্ কোন্ অবস্থায় রাজ্য তালিকাভুক্ত বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারে?

আন্তর্জাতিক সন্ধি বা চুক্তির শর্তাদি পালনের জন্য, কিংবা দুই বা ততোধিক রাজ্য-আইনসভার অনুরোধক্রমে পার্লামেন্ট রাজ্য-তালিকাভুক্ত বিষয়েও আইন প্রণয়ন করতে পারে।

5. অর্থবিল পাসের ক্ষেত্রে রাজ্যসভার ভূমিকা কী?

উত্তর: যে-কোনো অর্থবিল কেবল লোকসভাতেই উত্থাপিত হতে পারে। [i] কোনো বিল অর্থবিল কি না, তা নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন লোকসভার অধ্যক্ষ। [ii] বাজেট নিয়ে রাজ্যসভা আলোচনা করতে পারলেও ব্যয়মঞ্জুরি দাবি করা, বিনিয়োগ বিল (Appropriation Bill) পাস করা প্রভৃতি ব্যাপারে লোকসভার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়। [] লোকসভা কর্তৃক গৃহীত কোনো অর্থবিলকে সংশোধন বা বাতিল করার ক্ষমতা রাজ্যসভার নেই।

আরো পড়ুন : উচ্চমাধ্যমিক চতুর্থ সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment