বই মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

বই মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

বই মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু - মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা
বই মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

“জ্ঞানভান্ডারের চাবিকাঠি সে তো বই।

সুখে-দুঃখে জীবনের সাথী আর আছে কই?”

এই মানবজীবনে সবচেয়ে বড়ো সম্পদ বই। বই পড়েই মানুষ অজানাকে জানতে পারে, অচেনাকে চিনতে পারে। বই অতীত ও বর্তমানের বহুমুখী জ্ঞান-সম্পদের বাহন ও ধারক। বিদ্যার্থীদের প্রতি দেবী সরস্বতীর দুটি প্রধান দান-বীণা ও পুস্তক। বীণা অর্থাৎ সুর ও গান, যা মানুষের অন্তর এবং বাইরের সঙ্গী আর বই তার চিন্তা, আবেগ, উপলব্ধি ও বোধের অপরিহার্য দিগ্দর্শন।

বই পড়া সর্বকালে সবদেশের মানুষের শখ। বিভিন্ন রুচির মানুষ তাদের বুচিমাফিক বইয়ের পাতায় চোখ রেখে শখ চরিতার্থ করে। বই বা সাহিত্যসমাজ মানবমনের দর্পণ-বিশেষ। মানুষের মনের প্রতিচ্ছবি হল সাহিত্য। তাই আমাদের বই পড়তেই হবে। মানুষ ও সমাজকে সম্পূর্ণরূপে জানবার জন্যই বই পড়া দরকার। বই পড়া ছাড়া সাহিত্যপাঠ ও সাহিত্যচর্চার অন্য কোনো উপায়ান্তর নেই।

দেহের খাদ্য ভাত, রুটি; তেমনই মনের খাদ্যের জোগান দেয় বই। মনের সুস্থতার ওপর অনেকাংশে দেহের সুস্থতা নির্ভরশীল। মনকে সুস্থ রাখার জন্য ভালো বইয়ের সঙ্গ প্রয়োজন। ভালো বই পাঠককে সচেতন মানুষ রূপে গড়ে তোলে। ভালো বই মানে ভালো বন্ধু এবং যোগ্য শিক্ষক। মানুষের জীবনের চলার পথে যেমন ভালো বন্ধুর প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন ভালো বই। কেন-না বইতে বাস্তবজীবনের কথাই লিপিবদ্ধ থাকে। গ্রন্থের দর্পণে নিজেকে পর্যালোচনা করে মানুষ তার চলার পথ ঠিক করতে পারে। বইকে যে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে, তার শত্রু অনেক কম। বই জ্ঞানের প্রতীক, বই আনন্দের প্রতীক। বইয়ের মাধ্যমে বিশ্বমানবের সঙ্গে যোগ ঘটে।

বই মানুষকে চেতনাসম্পন্ন নাগরিকে পরিণত করে। বই আসলে মানুষের চৈতন্য ও মনীষার সৃষ্টিকর্তা। লেখকের উপলব্ধিজাত অভিজ্ঞতা বইতে লিপিবদ্ধ হয়। সুতরাং তার সঙ্গে পাঠকের পরিচয় ঘটলে তা মানুষকে সচেতন করে তোলে। এইভাবে মানুষ সচেতন নাগরিক হয়ে ওঠে। জীবনকে বুঝতে হলে, অভ্যাসের সংস্কারের বেড়া ভাঙতে হলে, বইয়ের সঙ্গ অবশ্য প্রয়োজন। প্রমথ চৌধুরী বলেছেন, “বৈঠকখানার দেয়ালে হাজার টাকার একখানি নোট না ঝুলিয়ে, হাজার টাকা দামের একখানা ছবি ঝোলানোতে যে আর্থিক সুরুচির পরিচয় দেয়, তেমনি নানা আকারের নানা বর্ণের রাশি রাশি বই সাজিয়ে রাখাতে প্রমাণ হয় যে, গৃহকর্তা একাধারে ধনী ও গুণী।”

বই হল আয়নার মতো, যাতে আমাদের নিজেদের মনের প্রতিবিম্ব ধরা পড়ে। বইবিহীন জীবনকে আত্মাবিহীন দেহের সঙ্গে তুলনা করা চলে।

বাংলায় একটি প্রবাদ আছে ‘ধনবানে কেনে বই, গুণবানে পড়ে।’ এই প্রবাদটি আংশিক সত্য। যে প্রকৃত গুণবান, সে অনেক সময় নিজেকে নিঃস্ব করে বই কেনে। বই কেনা যেমন নেশা, তেমন বই পড়াও এক আনন্দময় নেশা।

আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment