মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর 2nd Semester Class Eleven WBCHSE

মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর 2nd Semester Class Eleven WBCHSE

মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর
মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর

১। মধ্যযুগের ভারতে ইসলামিক শিক্ষার সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো

২। মুসলিম যুগের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে মক্তবের ভূমিকা আলোচনা করো

৩। মধ্যযুগের হিন্দু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো।

৪। মধ্যযুগে হিন্দু শিক্ষা কেমন ছিল-সে সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো

৫। মুসলিম যুগের শিক্ষার অসুবিধাগুলি কী কী ছিল?

৬। মধ্যযুগে ইসলামীয় শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের কীভাবে মূল্যায়ন করা হত? মধ্যযুগের শিক্ষাকে ‘অন্ধকার যুগ’-এর শিক্ষা বলার কারণ কী?

৭। মধ্যযুগে ভারতের নারীশিক্ষা কেমন ছিল সে সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো

৮। মাদ্রাসা কী? মাদ্রাসার পাঠক্রম ও শিক্ষাদান পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করো। মুসলিম যুগে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা বেশিমাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল কেন?

৯। ইসলামিক শিক্ষাব্যবস্থায় পরীক্ষা ব্যবস্থা ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করো

১০। ইসলামীয় শিক্ষায় প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম কী? মক্তবে পাঠক্রমে কী কী বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল? মক্তবে শিক্ষাদান পদ্ধতি এবং শিক্ষারম্ভ অনুষ্ঠান সম্পর্কে লেখো।

১১। মধ্যযুগে মাদ্রাসা শিক্ষা সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো

১২। মধ্যযুগীয় শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার পাঠক্রম এবং শিক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করো। ইসলামিক শিক্ষাব্যবস্থার পাঁচটি বৈশিষ্ট্য লেখো

১৩। ভারতীয় মধ্যযুগ বলতে কী বোঝো? মুসলিম শিক্ষাব্যবস্থার লক্ষ্যগুলি আলোচনা করো

১৪। শিক্ষার ক্ষেত্রে আকবরের অবদান লেখো

১৫। ভারতবর্ষে মধ্যযুগীয় শিক্ষাব্যবস্থায় বাদশাহি আমলের শিক্ষা সম্পর্কে আলোচনা করো

ভারতবর্ষে বাদশাহি আমলের শিক্ষাব্যবস্থা

 সুলতানি আমলের মতো মুঘল আমলেও শিক্ষা ও সাহিত্যের ব্যাপক উন্নতি পরিলক্ষিত হয়। শিক্ষাক্ষেত্রে কয়েকজন মুঘল সম্রাটের অবদান সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল-

(1)  বাবর (1526-1530 খ্রিস্টাব্দ): বাবর ছিলেন একজন দক্ষ ক্যালিগ্রাফার এবং পুঁথিকেন্দ্রিক শিক্ষা প্রসারের জন্য তিনি সরকারি বাস্তু বিভাগের হাতে মক্তব ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব অর্পণ করেন। আরবি, ফারসি ও তুর্কি ভাষায় তাঁর গভীর দক্ষতা ছিল। বাবরের বিখ্যাত আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থের নাম হল বাবরনামা।

(2) হুমায়ুন (1530-1540 খ্রিস্টাব্দ এবং 1555- 1556 খ্রিস্টাব্দ): মুঘল সম্রাট হুমায়ুন ছিলেন সুপণ্ডিত এবং শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি। হুমায়ুনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেক মক্তব ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি জ্ঞানীগুণী ও পণ্ডিত ব্যক্তিদের সমাদর করতেন।

(3) শেরশাহ (1540-1545 খ্রিস্টাব্দ): হুমায়ুনের পর স্বল্প সময়ের জন্য শেরশাহ দিল্লির সিংহাসনে আসীন হন। বিভিন্ন সংস্কারমূলক কার্যাবলির জন্য তাঁর  শাসনকাল ইতিহাসে বিশেষভাবে স্মরণীয়। জয়পুরের নিকটবর্তী নারনোল মাদ্রাসাটি শেরশাহের আমলে প্রতিষ্ঠিত হয়।

(4) আকবর (1556-1605 খ্রিস্টাব্দ): মধ্যযুগে ভারতের শিক্ষাক্ষেত্রে আকবরের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। সম্রাট আকবর ধর্ম, বিজ্ঞান, দর্শন প্রভৃতি আলোচনার জন্য ফতেপুর সিক্রির ইবাদৎখানায় বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনা করতেন। অনুবাদ সাহিত্য ও ঐতিহাসিক গ্রন্থ রচনার পৃষ্ঠপোষকতা করে তিনি শিক্ষা ও সাহিত্যকে মর্যাদামণ্ডিত করেন। তাঁর আদেশে মহাভারত ফারসি ভাষায় ‘রজমনামা’ নামে অনূদিত হয়। সংগীত, চিত্রকলা প্রভৃতি বিষয়ে তাঁর প্রচুর আগ্রহ ছিল। তিনি পাঠক্রমকে জীবনমুখী করে তোলেন এবং শিক্ষণ পদ্ধতির সংস্কারসাধন করেন। তাঁর সবচেয়ে বড়ো অবদান ছিল হিন্দু-মুসলিম সংস্কৃতির সমন্বয়সাধন।

(5)  জাহাঙ্গির (1605-1627 খ্রিস্টাব্দ): মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গির ছিলেন সুপণ্ডিত এবং বিদ্যানুরাগী ব্যক্তি। তাঁর আমলে দিল্লিতে বহু মক্তব ও মাদ্রাসার সংস্কারসাধনের ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়া বহু দুষ্প্রাপ্য পুঁথি ও গ্রন্থসংগ্রহের মাধ্যমে রাজকীয় গ্রন্থাগারের উন্নতিসাধনের ব্যবস্থাও তিনি করেন।

(6) শাহ জাহাन (1628-1658 খ্রিস্টাব্দ ) : জাহাঙ্গিরের পুত্র শাহ জাহান শিল্প ও সাহিত্যের একজন গভীর পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। যদিও শিক্ষার প্রতি তাঁর দৃষ্টি ছিল খুবই সামান্য। শাহ জাহানের সময় দিল্লিতে একটি মাদ্রাসা স্থাপিত হয়। তাঁর পুত্র দারা শিকোহ্ ছিলেন আরবি, ফারসি ও সংস্কৃতে পণ্ডিত। তিনি হিন্দু দর্শন অধ্যয়ন করেন এবং উপনিষদ ও গীতা-সহ বহু সংস্কৃত গ্রন্থ ফারসি ভাষায় অনুবাদের ব্যবস্থা করেন।

(7) ঔরঙ্গজেব (1658-1707 খ্রিস্টাব্দ): মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবও ছিলেন সুপণ্ডিত ও বিভিন্ন ভাষায় পারদর্শী। তাঁর শাসনকালে দিল্লিতে একাধিক মক্তব ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া বিদ্বান ও বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিদের জন্য তিনি উপযুক্ত ভাতা ও পেনশনের ব্যবস্থাও করেছিলেন। ঔরঙ্গজেবের আমলেই শিয়ালকোট বিদ্যাচর্চার বিখ্যাত কেন্দ্র হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মুঘল সাম্রাজ্য দ্রুত পতনের পথে এগোয়। মুসলিম শাসকরা মধ্যযুগে ভারতের শিক্ষাবিস্তারের ক্ষেত্রে যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন, কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও তার প্রভাব ভারতের শিক্ষার ইতিহাসে অনন্যসাধারণ।

১৬। মধ্যযুগীয় শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক, শিক্ষকদের ভূমিকা এবং শৃঙ্খলার ব্যাপারে যা জানো, লেখো

মধ্যযুগীয় শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক

মধ্যযুগে মুসলিম শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষকেরা ছিলেন সমাজের মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি। তাদের প্রতি শিক্ষার্থীদের ছিল অফুরন্ত ভক্তি ও শ্রদ্ধা। শিক্ষকেরাও শিক্ষার্থীদের সন্তানতুল্য জ্ঞানে শিক্ষাদান করতেন। প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মক্তবের ক্ষেত্রে শিক্ষালাভের সামগ্রিক সময়কাল জুড়ে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের স্নেহ ও সান্নিধ্য লাভ করত। অন্যদিকে মাদ্রাসার শিক্ষা ছিল যেহেতু আবাসিক, তাই শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একইসঙ্গে বসবাসের ফলে তাদের মধ্যে সুদৃঢ় আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। প্রকৃতপক্ষে শিক্ষকদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ছাত্রদের বৈষয়িক ও মানসিক উন্নয়নে সাহায্য করা এবং আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শকরূপে কাজ করা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধুর সম্পর্কের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী আদর্শপরায়ণ ও চরিত্রবান হয়ে উঠত।

শিক্ষকের ভূমিকা

মৌলবি এবং মিয়াজি যারা শিক্ষাদান কর্মে নিয়োজিত থাকতেন, তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল ছাত্রদের বৈষয়িক ও মানসিক উন্নয়ন ঘটানো। মুসলিম শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষক ছিলেন সমাজের অত্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি। ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষকরা ছিলেন উন্নত চরিত্রের অধিকারী। তাঁদের বিষয়জ্ঞান ছিল অনেক গভীর। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীকে সন্তানসম বিবেচনা করে নিজের সেবাপরায়ণতায় শিক্ষকতা বৃত্তি গ্রহণ করতেন এবং শিক্ষার্থীদের নিঃস্বার্থভাবে বিদ্যা দান করতেন। তাঁদের নির্দিষ্ট আচরণবিধি অনুসারে, দৈনিক জীবনযাপন করতে হত। শিক্ষর্থীরা শিক্ষকের এই মনোভাবের যথাযোগ্য মর্যাদা দান করত। ইসলামীয় শিক্ষাব্যবস্থায় সমাজ যেমন শিক্ষককে শ্রদ্ধার চোখে দেখত, তেমনই শিক্ষার্থীরাও তাঁকে পিতৃতুল্য মনে করত।

শৃঙ্খলা

মধ্যযুগের ইসলামিক শিক্ষাব্যবস্থায় নিয়মানুবর্তিতার বিষয়টি ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীকে বাস্তব জীবনের উপযোগী করে গড়ে তোলাই ছিল শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য। ইসলামিক শিক্ষায় নিয়মশৃঙ্খলার কঠোরতা ছিল খুবই প্রবল, শৃঙ্খলাভঙ্গের অপরাধে শিক্ষার্থীদের কঠোর দৈহিক শাস্তি দেওয়া হত। অন্যদিকে শৃঙ্খলাপরায়ণ, পাঠে মনোযোগী শিক্ষার্থীদের পুরস্কার প্রদান করা হত। অধ্যাপক জাফর তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘Education of Muslim India’-তে শিক্ষার্থীদের শাস্তির স্বরূপ উল্লেখ করে বলেছেন যে, পায়ের আঙুলের উপর ভর দিয়ে সামনে দেহটিকে হেলিয়ে উবুর তলা দিয়ে নিজের কান ধরা।

এ ছাড়া আরও গুরুতর অপরাধে তাদের হাত-পা বেঁধে উপরে পেরেকে ঝুলিয়ে রাখার মতো কঠোর শাস্তি দেওয়া হত। ইসলামের নির্দেশ অনুযায়ী, নির্দিষ্ট সময় ও নিয়মশৃঙ্খলা মেনে নামাজ পড়া, মনোযোগ সহকারে লেখাপড়া করা, ধর্মীয় ও সামাজিক কর্তব্যপালন প্রভৃতির উপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হত। এক্ষেত্রে কোনোরকম শৃঙ্খলাভঙ্গ ও অনৈতিক আচরণের জন্য কঠিন শাস্তি দেওয়া হত।

১৭। ভারতবর্ষে মধ্যযুগীয় শিক্ষাব্যবস্থায় সুলতানি আমলের শিক্ষা সম্পর্কে বর্ণনা দাও

ভারতবর্ষের মুসলিম শাসকগণ যুগে যুগে গুণীজনের সমাদর করেছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা, সেগুলি পরিচালনার ব্যয়ভার বহন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নানাভাবে আর্থিক সাহায্য ও সম্মান প্রদান ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতার অভাব হয়নি। মুসলিম সাম্রাজ্য পত্তনের প্রথম দিকে মহম্মদ বিন কাশিম আজমিরে হিন্দু মন্দির ধ্বংস করে সেখানে বহু মসজিদ ও শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করেন। তিনি তাঁর ক্রীতদাসদের জন্যও শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। সেই থেকে পরবর্তী মুসলিম শাসকগণ বিভিন্ন সময়ে শিক্ষাবিস্তারের চেষ্টা করে গেছেন। মধ্যযুগীয় ইসলামীয় শিক্ষাকে দুটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যায়, যথা- সুলতানি আমলের শিক্ষা ও বাদশাহি আমলের শিক্ষা।

ভারতবর্ষে সুলতানি আমলের শিক্ষাব্যবস্থা

মহম্মদ বিন কাশিমের সিধু বিজয়ের মাধ্যমে ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনের প্রচলন ঘটে। এরপর দরবারে বহু জ্ঞানীগুণী, বিদ্যানুরাগী ব্যক্তিদের আগমন ঘটে যা মধ্যযুগীয় শিক্ষাব্যবস্থাকে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছিল। যেমন-

(1) সুলতান মাসুদ-এর অবদান (1000-1026 খ্রিস্টাব্দ): ভারতবর্ষে আক্রমণকারী হিসেবে গজনির সুলতান মামুদের আগমন ঘটলেও মধ্যযুগে ভারতের শিক্ষা ও সাহিত্যের ইতিহাসে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতায় গজনিতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। সুলতান মামুদের দরবারে বহু জ্ঞানীগুণী পণ্ডিতদের আগমন ঘটেছিল। কবি ফিরদৌসি এবং অল বিরুনি তাঁর সভা অলংকৃত করেন।

(2) মহম্মদ ঘুরি-র অবদান (1174-1206 খ্রিস্টাব্দ): সুলতান মামুদের পরবর্তী অভিযানকারী শাসক ছিলেন ঘুরবংশীয় সুলতান মহম্মদ ঘুরি। ভারত অভিযানের প্রথমাবস্থায় তিনি শিক্ষাবিস্তারে বিশেষ মনোযোগ দিতে পারেননি। পরবর্তীকালে শাসনব্যবস্থা স্থিতিশীল হলে তিনি আমাসিক শিক্ষাবিস্তারে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।

(3) দাস বংশের অবদান (1206-1290 খ্রিস্টাব্দ): দাস বংশের সুলতানরা শিক্ষা ও সাহিত্যের প্রবল অনুরাগী ছিলেন। এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা কুতুবউদ্দিন আইবক বহু হিন্দু মন্দির ধ্বংস করে সেই স্থানে মক্তব, মাদ্রাসা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী সুলতান ইলতুৎমিসও ছিলেন শিক্ষা ও সাহিত্যের একজন উৎসাহী পৃষ্ঠপোষক। তিনি দিল্লিতে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর সুযোগ্য কন্যা রাজিয়া দিল্লিতে একটি উচ্চশিক্ষার কেন্দ্র স্থাপন করেন। পরবর্তী সুলতান নাসিরুদ্দিনও ছিলেন প্রবল বিদ্যানুরাগী। তাঁর উল্লেখযোগ্য কীর্তি হল তিনি নিজ হাতে কোরান নকল করতেন। গিয়াসউদ্দিন বলবন ছিলেন পারসিক সাহিত্যে সুপণ্ডিত। তাঁর শাসনকালে দিল্লি একটি বিদ্যাচর্চার কেন্দ্র রূপে সুনাম অর্জন করে।

(4)  খলজি বংশের অবদান (1290-1320 খ্রিস্টাব্দ) : খলজি বংশের প্রতিষ্ঠাতা জালালুদ্দিন খলজি শিক্ষা ও সাহিত্যের সক্রিয় পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি তাঁর রাজকীয় গ্রন্থাগারের অধ্যক্ষ হিসেবে আমীর খসরুকে নিযুক্ত করেন। তাঁর পুত্র আলাউদ্দিন খলজি জীবনের শেষ দিকে শিক্ষা ও সাহিত্যের সমাদর করতে শুরু করেছিলেন। কবি আমীর খসরু, দার্শনিক নিজামুদ্দিন আউলিয়া প্রমুখ পণ্ডিতদের আনুকূল্যে দিল্লি বিদ্যাচর্চার গুরুত্বপূর্ণ পীঠস্থানে পরিণত হয়।

(5) তুঘলক বংশের অবদান (1320-1413 খ্রিস্টাব্দ): তুঘলক বংশের প্রতিষ্ঠাতা গিয়াসুদ্দিন তুঘলকও ছিলেন শিক্ষা ও সাহিত্যানুরাগী শাসক। এর পাশাপাশি বিদ্বান ব্যক্তিদের উৎসাহদানের জন্য তিনি ভাতা প্রদানের ব্যবস্থাও করেন। পরবর্তী সুলতান মহম্মদ বিন তুঘলক ছিলেন সুপণ্ডিত। ফিরোজ শাহ তুঘলক ছিলেন সুলতানি আমলের সর্বাপেক্ষা শিক্ষানুরাগী ও বিদ্যোৎসাহী শাসক। তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় দিল্লিতে প্রায় 50টি মক্তব ও মাদ্রাসা স্থাপিত হয়। এ ছাড়া প্রায় 18 হাজার ক্রীতদাসের শিক্ষার ব্যয়ভারও তিনি বহন করতেন।

(6) সৈয়দ বংশের অবদান (1414-1451 খ্রিস্টাব্দ): সৈয়দ বংশীয় সুলতান আলাউদ্দিনের সময় দিল্লি থেকে প্রায় একশো মাইল দূরে অবস্থিত বদায়ুন নামক স্থানে একটি মুসলিম শিক্ষার কেন্দ্র গড়ে ওঠে। এ ছাড়া এই বংশের রাজত্বকালে উল্লেখযোগ্য প্রসার ঘটেনি।

(7) লোদি বংশের অবদান (1451-1526 খ্রিস্টাব্দ) : লোদি বংশের শাসনকালে শিক্ষার বিশেষ উন্নতি লক্ষ করা যায়। লোদি সুলতানরা আগ্রায় রাজধানী স্থাপন করেন এবং সেখানে একটি উচ্চশিক্ষার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষার প্রসার ঘটান। অনেকের মতে, এইসময় উর্দু ভাষার উদ্ভব হয়। লোদি বংশের সিকন্দর লোদিও প্রবল বিদ্যানুরাগী ছিলেন। দেশ-বিদেশের বহু পণ্ডিতদের তিনি সম্মানিত করেন এবং তাঁর সময়ে বহু সংস্কৃত গ্রন্থ আরবি ও ফারসিতে অনুবাদ করা হয়।

আরও পড়ুন – বিকাশের স্তরসমূহ প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment