প্রচেষ্টা ও ভুলের মাধ্যমে শিখনের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো
প্রচেষ্টা ও ভুলের মাধ্যমে শিখনের বৈশিষ্ট্য
(1)পুনরাবৃত্তি (Repeatation): থর্নডাইকের মতে, সমস্যামূলক পরিস্থিতিতে একটি উদ্দীপক ও তার সমাধান উপযোগী প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সংযোগসাধনের ফলে প্রাণীর শিখন হয়। এক্ষেত্রে উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে (S-R Connection / Bond) গড়ে ওঠে।
(2) উদ্দেশ্য সম্পার্ক সচেতন (Goal): প্রচেষ্টা ও ভুলের শিখন কৌশলে প্রাণী বা শিক্ষার্থী কেন আত্মসক্রিয়তার মাধ্যমে বারবার সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চালাবে, সে সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। যেমন বিড়ালটির উদ্দেশ্য ছিল পাজল বক্স থেকে বেরোতে পারলেই খাদ্যবস্তু হিসেবে মাছ খেতে পারবে। এক্ষেত্রে বিড়ালটি উদ্দেশ্য সম্পর্কে সচেতন ছিল।
(3) বহুমুখী প্রতিক্রিয়া (Multiple Response): থর্নডাইকের শিখন তত্ত্বে একটিমাত্র উদ্দীপক থাকলেও প্রাণী বা শিক্ষার্থীদের বহু প্রতিক্রিয়া করার সুযোগ থাকে। পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে ভুল প্রতিক্রিয়াগুলিকে তারা বর্জন করে এবং সঠিক প্রতিক্রিয়া নির্বাচন করে। যেমন বিড়ালটির সামনে একটিমাত্র উদ্দীপক হিসেবে রাখা ছিল মাছ, কিন্তু পাজল বক্স থেকে বেরোনোর জন্য বিড়ালটিকে বিভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া করতে হয়েছে।
(4)আংশিক প্রতিক্রিয়া (Law of Partial Activity): থর্নডাইকের মতে, প্রাণী যখন সমস্যামূলক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়, তখন অংশভিত্তিক প্রতিক্রিয়া করে, সামগ্রিকভাবে নয়। অংশগুলির প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে সর্ব অংশ শিক্ষার্থীর আয়ত্তে আসে ও সমস্যাটির সমাধান হয়। সুতরাং এই শিখনে আংশিক প্রতিক্রিয়া হল অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
(5) জৈব মানসিক প্রস্তুতি (Law of Physical-mental Readiness) : থর্নডাইক-এর মতে, শিক্ষার্থী যদি দৈহিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত না থাকে, তাহলে শিখন সম্ভব নয়। যদি দৈহিক ও মানসিক দিক থেকে প্রস্তুতি না থাকে, তাহলে উদ্দীপক থাকলেও শিক্ষার্থী কোনোভাবে তার প্রতি প্রতিক্রিয়া করবে না।
(6) ফললাভ (Effect): থর্নডাইকের মতে, যে শিখন আনন্দদায়ক অনুভূতি দেয়, সেই শিখন স্থায়ী হয় এবং যে শিখন বেদনাদায়ক অনুভূতি দেয়, সেই শিখন শিক্ষার্থী পরিত্যাগ করে। যেমন- পাজল বক্সের বাইরে যদি কোনো ফল থাকত, তাহলে বিড়ালটি সঠিক প্রতিক্রিয়াটি দ্বিতীয় বার করত না।
(7) আত্মসক্রিয়তা (Self-activity): শিক্ষার্থী নিজে থেকে সক্রিয় হয়ে সমস্যার সমাধানে উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সঠিক সংযোগসাধনের জন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টা চালাবে এবং ভুল প্রচেষ্টাগুলি ত্যাগ করবে। একসময় সঠিক প্রচেষ্টা করে সমস্যার সমাধান করবে। সুতরাং চাহিদার নিবৃত্তির জন্য শিক্ষার্থী নিজে থেকে সক্রিয় হলে শিখন কৌশল সংগঠিত হবে। থর্নডাইকের পরীক্ষায় বিড়ালটি নিজের খাদ্যের চাহিদার জন্য বাইরে আসতে সক্রিয় হয়েছিল।
(8) সাদৃশ্যভিত্তিক প্রতিক্রিয়া (Law of Analogy): এই বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী প্রাণী যখন সমস্যামূলক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়, তখন সে পূর্বের জ্ঞাত প্রতিক্রিয়ার দ্বারা সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করে। থর্নডাইক তাঁর তত্ত্বে ‘সাদৃশ্যের সূত্র’ -এ সাদৃশ্যভিত্তিক প্রতিক্রিয়ার বৈশিষ্ট্যটি তুলে ধরেছেন।
(9) প্রচেস্টার সংখ্যা ও সময়ের ক্রমহ্রাস (Number of Trial and Reduction of Time): প্রচেষ্টা ও ভুলের মাধ্যমে শিখনে প্রচেষ্টার সংখ্যা ও সময় পুনরাবৃত্তির সঙ্গে সঙ্গে ক্রমে হ্রাস পায়।
(10) সর্বজনীনতা (Universality) : সমস্যাসমাধানে মানুষ-সহ সমস্ত প্রাণী এই পদ্ধতির সাহায্য গ্রহণ করে।
আরও পড়ুন –
১।শিখনের একটি কার্যকরী সংজ্ঞা দাও। শিখনের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো
২। শিখন কৌশল কী? বিভিন্ন শিখন কৌশলগুলি সংক্ষেপে লেখো
৩। সমস্যাসমাধান বলতে কী বোঝো? সমস্যাসমাধানমূলক শিখনের বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতি লেখো
৪। সমস্যাসমাধানের পর্যায়গুলি লেখো
৫। শিশুর শিখনে সমস্যাসমাধানমূলক শিখনের তাৎপর্য কী? থর্নডাইকের শিখনের তত্ত্বটি কোথায় প্রকাশিত হয়
৭। আচরণবাদের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো
৯। থর্নডাইকের ফললাভের সূত্রটি উল্লেখ করে শ্রেণিকক্ষে তার প্রয়োেগ আলোচনা করো
১০। থর্নডাইক (Thorndike)-এর শিখনতত্ত্বের গৌণ সূত্রগুলি লেখো
১১। প্রচেষ্টা ও ভুল তত্ত্ব সম্পর্কিত থর্নডাইকের পরীক্ষাটি লেখো
১২। প্রচেষ্টা ও ভুলের মাধ্যমে শিখন পদ্ধতি বলতে কী বোঝায়? টাইম কার্ড কী