শিন্টো সাহিত্য ও পূরাণ সম্পর্কে লেখো

শিন্টো সাহিত্য ও পূরাণ সম্পর্কে লেখো

শিন্টো সাহিত্য ও পূরাণ সম্পর্কে লেখো
শিন্টো সাহিত্য ও পূরাণ সম্পর্কে লেখো

শিন্টো সাহিত্য

শিন্টো হল জাপানের স্থানীয় ধর্ম, যা মূলত প্রকৃতি পূজা, পূর্বপুরুষদের উপাসনা, বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। শিন্টো সাহিত্য বলতে গেলে শিন্টো ধর্মের সাথে সম্পর্কিত সাহিত্যকে বোঝানো হয়। শিন্টো সাহিত্যের মধ্যে প্রধানত পুরাণ, ধর্মীয় গ্রন্থ এবং ঐতিহাসিক দলিল-দস্তাবেজ স্থান পেয়েছে।

(1) সাহিত্য গ্রন্থ: শিন্টো সাহিত্যের দুটি অমূল্য গ্রন্থ হল- কোজিকি এবং নিহন শকি।

  • কোজিকি: কোজিকি (প্রাচীন বিষয়ের রেকর্ড বা Records of Ancient Matters) গ্রন্থটি হল জাপানের পুরাকাহিনি, কিংবদন্তি, কাব্য, বংশচরিত, মৌখিক ঐতিহ্য এবং আধা-ঐতিহাসিক বিষয়বস্তুর উপর লেখা প্রাচীন গ্রন্থ। সম্ভবত ৭১১/৭১২ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ গ্রন্থটি লেখা হয়েছিল। জানা যায়, প্রখ্যাত পণ্ডিত ও নো যসুমারো (O no Yasumaro) সম্রাজ্ঞী জেনমেই (Genmei)-এর অনুরোধক্রমে গ্রন্থটির মুখবন্ধ রচনা করেছিলেন। গ্রন্থটি থেকে সৃষ্টিতত্ত্ব এবং বিভিন্ন শিন্টো দেবদেবী সম্পর্কে জানা যায়।
  • নিঘন শকি: নিহন শকি (জাপানের ক্রনিক্যাল বা Chronicle of Japan) গ্রন্থটি ৭২০ খ্রিস্টাব্দে লেখা হয়। বইটির সম্পাদকীয় কাজ তদারকি করেছিলেন রাজকুমার টনেরি (Toneri)। এই গ্রন্থটি থেকেও জাপানের ইতিহাস আর সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কিত পৌরাণিক কাহিনি জানা যায়।

শিন্টো পুরাণ

শিন্টো পুরাণ হল জাপানের প্রাচীন ধর্মীয় বিশ্বাস এবং আচার-অনুষ্ঠানের ভিত্তিতে গঠিত দেবদেবীর কাহিনির সংকলন। শিন্টো পৌরাণিক কাহিনিগুলিতে সৃষ্টিতত্ত্ব, দেবতা এবং মানবজাতির উৎপত্তি সম্পর্কে নানান বিষয় জানা যায়।

(1) দেবদেবী: শিন্টো পুরাণের প্রথম দেবতা দম্পতি হলেন ইজানাগি (Izanagi) এবং ইজানামি (Izanami)। এঁরাই জাপানের দ্বীপসমূহের সৃষ্টি করেন। এঁদেরই কন্যা হলেন সূর্যদেবী আমাতেরাসু (Amaterasu)। এ ছাড়া শিন্টোদের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দেবদেবী হলেন ঝড়ের দেবতা সুসানোও (Susanoo), চাঁদের দেবতা তসুকিয়োমি (Tsukuyomi) প্রমুখ।

(2) পৌরাণিক কাহিনি: শিন্টো পুরাণ অনুসারে সৃষ্টির আদিতে কোনোকিছু ছিল না, সেখানে বিরাজ করত শুধু অন্ধকার। এই অন্ধকার থেকে আবির্ভূত হন কুনিনোতোকোতাচি (Kuninotokotachi)। তাঁর পর একে একে আসেন অন্যান্য দেবগণ। তবে শুধু এটিই নয়, আমাতেরাসু ও সুসানোও-র দ্বন্দ্ব, মৃতদের জগৎ সম্পর্কিত পৌরাণিক কাহিনিগুলি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। জাপানি ধ্রুপদি গ্রন্থগুলিতে প্রায় ৮০০ টি কামি সম্পর্কিত পৌরাণিক কাহিনি পাওয়া যায়। পরিশেষে বলা যায়, শিন্টো পৌরাণিক কাহিনিগুলি জাপানের বিভিন্ন ঐতিহ্য ও ধর্মীয় আচারসমূহের ভিত্তি প্রস্তুত করেছে। অবশ্য এই কাহিনির বর্ণনাশৈলীতে খানিকটা চিনা প্রভাবও অস্বীকার করা যায় না।

আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment