শিন্টো ধর্ম বলতে কী বোঝো
অথবা, শিন্টোবাদ কী? এর বিভিন্ন দিকগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো

শিন্টো ধর্ম
শিন্টো (Shinto) হল জাপানের প্রাচীন একটি ধর্ম। সেদেশের রাষ্ট্রীয় ও জাতিগত অধ্যাত্মচেতনার কেন্দ্রে শিন্টো ধর্মের অবস্থান। জাপানি ঐতিহ্য অনুসারে, খ্রিস্টের জন্মের সম্ভবত ছয়শো বছর (আনুমানিক ৬৬০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) আগে শিন্টো ধর্মের উৎপত্তি হয়েছে।
(1) অর্থ: শিন্টো শব্দের অর্থ হল দেবতার পথ (Kami No Michi)। চিনা শব্দ শেন্ডো (Shendao) থেকে জাপানি শিন্দো (Shindo) কথাটি এসেছে এবং সেখান থেকে উৎপত্তি ঘটেছে শিন্টো শব্দটির। শিন (Shin) অর্থাৎ, আধ্যাত্মিক শক্তি বা Spirit এবং টো (To) অর্থাৎ, পথ -এই দুটি শব্দের সমন্বয়ে শিন্টো কথাটি গড়ে উঠেছে। এর ইংরেজি অনুবাদ হল- The way of Kami বা কামির পথ।
(2) ধারণা: শিন্টো কথাটির সর্বজনসম্মত কোনও সংজ্ঞা বা ধারণা পাওয়া যায় না। অধ্যাপক জন ডগিল (John Dougill) এবং জোসেফ ক্যালি (Joseph Cali)-এর মতে, শিন্টো হল কামি (ঐশ্বরিক শক্তি)-র প্রতি এক বিশ্বাস। এই ধর্মের কেন্দ্রে রয়েছে এক অতিপ্রাকৃত সত্তা, যা জগৎ ও জীবনকে পরিচালিত করে।
(3) শিন্টো ধর্মের উত্থান: অনেক পণ্ডিতদের মতে, জাপানে কোফুন যুগে (Xofun Period) বৌদ্ধ ধর্ম প্রবেশের পর শিন্টো ধর্মের উদ্ভব হয়। তবে শোগুনতন্ত্রের শাসনামলে (১১৮৫-১৮৬৭/১৮৬৮ খ্রি.) জাপানে শিন্টোবাদের প্রভাব অন্তরালে চলে যায়। পরবর্তীতে আবার ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে (মতান্তরে ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দ) জাপানে সম্রাটতন্ত্রের (মিকাডো বা Mikado) পুনঃপ্রতিষ্ঠা ঘটলে শিন্টোবাদের পূর্বগৌরব ফিরে আসে। মেইজি (Meiji) আমলে এটি একটি স্বতন্ত্র ধর্ম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
(4) শিন্টো দেবদেবী: শিন্টো ধর্মে বহু দেবদেবীর অস্তিত্বে বিশ্বাস করা হয়। শিন্টোবাদ অনুসারে জাপানিরা সূর্যদেবী, অগ্নিদেব, বৃষ্টির দেবতা, ভূমিকম্পের দেবতা প্রমুখের আরাধনা করতেন। এ ছাড়াও জাপানে ভূত-প্রেত, আত্মা ইত্যাদি অলৌকিক শক্তির উপাসনা প্রচলিত ছিল। অলৌকিক দেবদেবীর পূজা জাপানে কামি (Kami)-র উপাসনা নামে অভিহিত হত।
- সম্রাটের দৈবসভা: কিংবদন্তি অনুসারে, জাপানের প্রথম সম্রাট ছিলেন সূর্যদেবীর বংশোদ্ভূত জিম্মু (Jimmu)। তাঁর পূর্ণ নাম হল জিম্মুটেন্নো (Jimmu-tenno)। টেন্নো (Tenno) শব্দের অর্থ দিব্য সম্রাট। অর্থাৎ, জিম্মু ছিলেন দেবতার অংশস্বরূপ এবং জাপানের শাসক। সম্রাটের দৈবসত্তের (Divine Origin) উপর বিশ্বাস জাপানে সম্রাটের নেতৃত্বে সমগ্র জাতিকে ধর্মীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ রাখতে সাহায্য করেছিল। বস্তুত, জাপানে শিন্টো ধর্মাচরণের ক্ষেত্রে কোনও প্রথাগত রীতিনীতি দেখা যায় না। কারণ মনে করা হয়, মানুষ যেহেতু দেবতার সন্তান, তাই তারা ভালোমন্দ, ঠিক-ভুল বিষয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। জাপানের জনজীবনে শিন্টো ধর্মের প্রভাব অনস্বীকার্য।
আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর