শিন্টো ধর্মের মূল দর্শন কী ছিল

শিন্টো ধর্মের মূল দর্শন কী ছিল

অথবা, শিন্টো ধর্মের মূল বিশ্বাসগুলি কী কী

শিন্টো ধর্মের মূল দর্শন কী ছিল
শিন্টো ধর্মের মূল দর্শন কী ছিল

শিন্টো ধর্মের মূল দর্শন/মূল বিশ্বাস

জাপানে আদিম ধর্মবিশ্বাসের অঙ্গ হিসেবে শিন্টো ধর্মের বিকাশ ঘটে। শিন্টো কথার অর্থ হল ঈশ্বরের পথ। এটি কোনও একজন ধর্মপ্রচারকের দ্বারা প্রবর্তিত ধর্মাদর্শ নয়, এটি গড়ে উঠেছে জাপানিদের প্রকৃতি ও পূর্বপুরুষদের শ্রদ্ধার উপর ভিত্তি করে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মুখেমুখে শিন্টো ধর্মের বিশ্বাস ও রীতিনীতিগুলি চলে আসছে। শিন্টো ধর্মের মূল বিশ্বাস বা মূল দর্শনগুলি হল-

(1) কামি ও প্রকৃতি: শিন্টো ধর্মানুসারে প্রকৃতির প্রত্যেকটি উপাদান, যেমন- পাহাড়, নদী, বাতাস, গাছপালা এসবের মধ্যেই কামি (দেবতা বা আত্মা) বসবাস করেন। এই কামির ধারণাই হল শিন্টো ধর্মের মূল বিশ্বাস। শিন্টো ধর্মের মূল দর্শনের অংশ হল কামিদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং তাদের সাথে মনের সংযোগস্থাপন।

(2) পবিত্রতা এবং পরিচ্ছন্নতা: শিন্টো ধর্মে পবিত্রতা এবং পরিচ্ছন্নতা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই পরিচ্ছন্নতা কেবলমাত্র শারীরিক নয়, মানসিক এবং আধ্যাত্মিকও। কামিদের সঙ্গে বিশুদ্ধ হৃদয় নিয়ে সম্পর্কস্থাপনের লক্ষ্যে শিন্টো ধর্মে নানান আচার-অনুষ্ঠানে পবিত্রতার রীতি অনুসৃত হয়।

(3) পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন: পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন শিন্টো ধর্ম ও দর্শনে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। পরিবারের মৃত সদস্যদের আত্মার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য শিন্টো ধর্মে বেশকিছু আচার-অনুষ্ঠান পালিত হয়।

(4) নৈতিক ক্ষেত্রে শিন্টো ধর্ম: শিন্টোবাদে জাপানের প্রাচীন ও আঞ্চলিক সংস্কৃতির প্রতিফলন পরিলক্ষিত হয়। এই ধর্মের যেহেতু কোনও তাত্ত্বিক নীতি নেই তাই বিভিন্ন গল্পকথা, নীতিকাহিনি, আচরণবিধি থেকেই এর নৈতিক ধারণা গড়ে ওঠে। এই ধর্মাদর্শে বর্ণিত নৈতিক গুণগুলি হল- কর্তব্যপরায়ণতা, ন্যায়নিষ্ঠতা, সততা, কঠোর পরিশ্রম প্রভৃতি। জাপানের মানুষের জীবনধারায় আত্মোপলব্ধি, সম্প্রদায়গত উৎসবের ঐতিহ্যরক্ষার সঙ্গে সমগ্র দেশবাসীর মঙ্গলসাধনের বিষয়টি জড়িত। শিন্টোবাদে কাননাগারা (Kannagara, কামি-র কাছে যাওয়ার পথ)-ই হল প্রাকৃতিক ব্যবস্থার আইন। বিবিধ আচরণবিধি ও ব্যবহারের মাধ্যমে শিন্টো ধর্ম মানুষের নৈতিক জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে। 

(5)  উৎসব: শিন্টো ধর্মে নানান প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিষয়কে সম্মান জানাতে উৎসব বা আচার-অনুষ্ঠান পালিত হয়। কামিকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য বা আশীর্বাদ লাভের জন্য অনুষ্ঠিত এইসব অনুষ্ঠানগুলিকে মাৎসুরি (Matsuri) বলা হয়। মাৎসুরির সময়ে নৃত্য, গীত পরিবেশন ও খাদ্য উৎসর্গ করা হয়।

(6) মৃত্যু ও পুনর্জন্ম: শিন্টোবাদে মৃত্যু বা মৃতদেহকে অপবিত্র হিসেবেই গণ্য করা হয়। শিন্টোবাদীরা বিশ্বাস করেন যে, মৃত্যুর পর আত্মা কামির সাথে লীন হয়ে যায়। এ ছাড়া পুনর্জন্মের ধারণাটিও শিন্টো ধর্মের আধ্যাত্মিক দর্শনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

(7) অশুদ্ধতা দূরীকরণ: শিন্টো ধর্মাবলম্বীরা মনে করতেন যে, অশুদ্ধতা কামির থেকে মানুষকে দূরে নিয়ে যেতে পারে। তাই তারা হারাই (Harae) বা অশুদ্ধতা দূরীকরণ নীতি পালন করেন।

মূল্যায়ন

শিন্টো ধর্মের আদর্শ হল সর্বদা জীবন ও প্রকৃতির মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখা এবং সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করা। আধ্যাত্মিক সত্তা বা কামির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করাকে ভিত্তি করে এই ধর্মদর্শন গড়ে উঠেছে।

আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment