শিন্টো ধর্মের ত্রুটিগুলি কী কী

শিন্টো ধর্মের ত্রুটিগুলি কী কী

শিন্টো ধর্মের ত্রুটিগুলি কী কী
শিন্টো ধর্মের ত্রুটিগুলি কী কী

শিন্টো ধর্মের ত্রুটিসমূহ

জাপানের জনজীবনে শিন্টো ধর্মের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। কিন্তু এই ধর্মাদর্শও ত্রুটিমুক্ত নয়। এর কিছু সমালোচনার দিকও রয়েছে।

(1) আদিমতা ও বিজ্ঞান বিরোধিতা: শিন্টো ধর্মে প্রকৃতি পূজা, কামিদের প্রতি বিশ্বাস -এইসব দিকগুলি কিছু সমালোচকদের কাছে আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ লেগেছে। শিন্টোদের কিছু কিছু আদিম ধারণা, যেমন- প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা মহামারি কামির ক্রোধ থেকে উৎপন্ন – এসব কখনোই বাস্তবসম্মতভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না।

(2) অমার্জনীয় পাপের ধারণার অনুপস্থিতি: শিন্টো ধর্মদর্শন যে-কোনো অমার্জনীয় পাপ বা ঠিকভুলের ক্ষেত্রে বেশ নমনীয়। এ বিষয়ে শিন্টোবাদে স্পষ্ট দিকনির্দেশনার অভাব রয়েছে। পাশাপাশি এই মতে নৈতিকতার উপরও বিশেষ জোর দেওয়া হয়নি। এইসব লক্ষ করেই সমালোচকেরা বলেছেন যে, শিন্টো ধর্মে স্পষ্ট কোনও নীতিশাস্ত্র অনুপস্থিত।

(3) লিঙ্গবৈষম্য: শিন্টো ধর্ম ও পুরাণে দেবীদের উচ্চস্থানে অধিষ্ঠিত করা হলেও সমাজে, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে বা মন্দির ব্যবস্থাপনায় নারীরা রয়ে গিয়েছেন পিছনের সারিতেই। নারীদের অনেকক্ষেত্রে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে সম্পূর্ণ অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয় না। সঙ্গত কারণেই ইতিহাসবিদ ক্যারল গ্লাক (Carol Gluck) মনে করেছেন যে, ‘শিন্টো ধর্মে নারীদের ঐতিহাসিকভাবে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকরূপে দেখানো হয়েছে।’

(4) উগ্র জাতীয়তাবাদ: উনিশ শতকের শেষভাগে মেইজি পুনরুত্থানের যুগে শিন্টোকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হলে এই ধর্মের মাধ্যমে রাজার ঐশ্বরিকতার কথা প্রচারিত হতে থাকে। এর ফলশ্রুতিতে উত্থান ঘটে উগ্র জাতীয়তাবাদের। বিকাশলাভ করে সামরিকীকরণ ও সাম্রাজ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আগ্রাসী ভূমিকার পশ্চাৎপটে এরই পরোক্ষ প্রভাব দেখা গিয়েছিল।

(5) অপ্রাসঙ্গিক মতধারা: আধুনিক যুগে শিন্টো ধর্মের ঐতিহ্য ও রীতিনীতিগুলির প্রাসঙ্গিকতার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে যুবসমাজ এই ধর্মের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে। এর ফলে শিন্টো ধর্মের ভবিষ্যৎ ক্রমে হয়ে উঠেছে অনিশ্চিত। তাছাড়া এর আচার-অনুষ্ঠান এবং মতাদর্শ আজকের প্রজন্মের আধুনিক মূল্যবোধের কাছে ক্রমে পিছিয়ে পড়ছে।

মূল্যায়ন

যদিও শিন্টো ধর্মের এই সীমাবদ্ধতাগুলি বিশেষজ্ঞদের কাছে সমালোচনার বিষয়, তবে তা সত্ত্বেও এর ব্যাপক প্রভাবের বিষয়টিও অস্বীকার করা যায় না কোনোভাবেই। কারণ, এই ধর্ম অনুযায়ী সেদেশে যেমন প্রকৃতি ও ঋতুবৈচিত্র্যের আরাধনা করা হয়, তেমনই শিল্পের বিকাশেও শিন্টোর ভূমিকা অনস্বীকার্য। জাপানবাসীরা আজও মনে করেন যে, সমৃদ্ধিশালী জীবন ও আত্মিক শান্তির জন্য শিন্টোর কোনও বিকল্প হতে পারে না। তাদের কাছে এটি শুধুমাত্র কোনও আচার-অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক ধর্ম নয়, শিন্টো একপ্রকার চেতনা, মানুষের জীবনের পথপ্রদর্শক।

আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment