বৃদ্ধির সংজ্ঞা দাও। বৃদ্ধি প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো

বৃদ্ধির সংজ্ঞা দাও। বৃদ্ধি প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো

আমরা যখন নিজের ছোটোবেলার ছবি দেখি বা অন্যদের কাছে নিজের ছোটো বয়সের গল্প শুনি তখন ভাবি সত্যিই কি আমি ওইরকম ছিলাম। সেই ছোটো বয়স থেকে আমাদের জীবনে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন আসে এবং আস্তে আস্তে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষে পরিণত হই। এই পরিবর্তন হঠাৎ করে আসে না, বিভিন্ন ধাপ বা পর্যায়ের মধ্য দিয়ে এই পরিবর্তন সংগঠিত হয়। সব পরিবর্তন আবার একইরকম স্থায়ী হয় না, কিছু কিছু আজীবন পরিবর্তিত হয়। মানুষের জীবনের এই পরিবর্তনের আবার বিভিন্ন দিক রয়েছে। যেমন- দৈহিক, বৌদ্ধিক, সামাজিক বা প্রাক্ষোভিক। দৈহিক পরিবর্তনের ফলে আমাদের দেহের আকার ও আয়তনগত পরিবর্তন আসে। এর ফলে মানুষের অঙ্গসঞ্চালনমূলক ক্ষমতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়।

বৃদ্ধি

সাধারণভাবে বৃদ্ধি বলতে আমরা বুঝি কেবলমাত্র আকার এবং আয়তনগত পরিবর্তনকে। কিন্তু বৃদ্ধির ফলে ব্যক্তির দৈহিক ও মানসিক নানা পরিবর্তন ঘটে। বৃদ্ধি এমন একটি নির্দিষ্ট সময়ভিত্তিক পরিবর্তনের প্রক্রিয়া যার পরিসমাপ্তি ঘটে পরিণমনে। বৃদ্ধির পরিবর্তন প্রাণীর স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের দ্বারা পরিচালিত হয়। বৃদ্ধির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে আমেরিকান মনোবিদ Arnold Gessel বলেছেন – “Growth is the Function of the organism rather than that of the environment as such”, অর্থাৎ, পরিবেশ অপেক্ষা অভ্যন্তরীণ অঙ্গের কাজই হল বৃদ্ধি। বৃদ্ধি হল আকার আয়তনগত এমন এক জৈবিক পরিণমন যা মাতৃগর্ভে থাকাকালীন অবস্থা থেকে শুরু হয় এবং উন্নয়নশীল নিরবিচ্ছিন্ন ধারায় প্রবাহিত হয়ে একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ে থেমে যায়।

বৈশিষ্ট্য

বৃদ্ধির বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নে বর্ণনা করা হল।

(1) পরিমাণগত পরিবর্তন: বৃদ্ধি হল দৈহিক পরিমাণগত পরিবর্তনের প্রক্রিয়া। যার মাধ্যমে ব্যক্তির দেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ওজন, উচ্চতা, আয়তন ইত্যাদির পরিমাণগত পরিবর্তন ঘটে।

(2) পরিমাপযোগ্য: বৃদ্ধি সর্বদা পরিমাপযোগ্য। আধুনিক বিভিন্ন যন্ত্রপাতির দ্বারা বৃদ্ধি পরিমাপ করা যায়।

(3) নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ: মাতৃজঠরে ভূণ সঞ্চালনের পর থেকে বৃদ্ধি প্রক্রিয়া শুরু হয়। চলতে থাকে জীবনের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত, অর্থাৎ বৃদ্ধি আমৃত্যু প্রক্রিয়া নয়।

(4) ব্যধ্যি বৈষম্যভিত্তিক : বৃদ্ধির হার যেমন সকল সময়ে একইরকম হয় না। তেমনই বিভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার বিভিন্ন হয়।

(5) বংশগতি ও পরিবেশের ফল: বৃদ্ধি হল বংশগতি ও পরিবেশের মিথস্ক্রিয়ার ফল। বৃদ্ধির উপর বংশগতির যেমন প্রভাব আছে, তেমনই বৃদ্ধিতে পরিবেশেরও কিছু প্রভাব লক্ষ করা যায়।

(6) সামঞ্জস্যপূর্ণ পর্যায়ভিত্তিক প্রক্রিয়া: বৃদ্ধি হল একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ পর্যায়ভিত্তিক প্রক্রিয়া। দেহ সঞ্চালনের ক্ষেত্রে একটি শিশু প্রথমে বসতে পারে, তারপর হামাগুড়ি দেয়। তারপর সে দাঁড়াতে শেখে, তারপর হাঁটতে পারে এবং সবশেষে দৌড়াতে এবং লাফাতে পারে।

(7)  বিকাশের প্রাথমিক শর্ত: বৃদ্ধি ছাড়া বিকাশ সম্ভব নয়। বৃদ্ধির ফলেই ব্যক্তিজীবনে বিকাশ সংঘটিত হয়ে থাকে। তাই বৃদ্ধি হল বিকাশের প্রাথমিক শর্ত।

(৪) ধারাবাহিক প্রক্রিয়া: একটি নির্দিষ্ট স্তর পর্যন্ত বৃদ্ধি নিরবিচ্ছিন্ন এবং ধারাবাহিকভাবে ঘটে থাকে। বয়সভেদে বৃদ্ধির হারের পরিবর্তন ঘটলেও কোনো নির্দিষ্ট বয়সে বৃদ্ধি থেমে গিয়ে আবার শুরু হয় না।

(9) ক্রমউন্নয়নমূলক : বৃদ্ধি হল এক প্রকার ক্রমবিকাশমূলক বা ক্রমউন্নয়নমূলক প্রক্রিয়া। অর্থাৎ বৃদ্ধির ফলে শিশুর বিভিন্ন দিকের ক্রমবিকাশ ঘটে।

(10) সহজাত প্রক্রিয়া: বৃদ্ধি হল একটি সহজাত, জটিল এবং সংবেদনশীল প্রক্রিয়া।

(11) পরিণমান সমাপ্তি: একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে। নির্দিষ্ট সময়ের পর শিশুর পরিণমন ঘটে, গেলে বৃদ্ধির সমাপ্তি ঘটে। অর্থাৎ পরিণমনেই বৃদ্ধির পরিসমাপ্তি।

(12)  সাদয়িক প্রক্রিয়া: বৃদ্ধি একটি সাময়িক প্রক্রিয়া। পরিণমনে এর সমাপ্তি ঘটে।

(13) দৈহিক পরিবর্তন: বৃদ্ধি সাধারণত দৈহিক পরিবর্তনকে বলা হয়।

(14)  অনুশীলনের প্রভাব: বৃদ্ধির উপর অনুশীলনের ধনাত্মক প্রভাব রয়েছে। যেমন- ব্যায়াম অনুশীলনের মাধ্যমে দেহের বৃদ্ধি কিছুটা দ্রুত হয়।

(15) বয়সভেদে ভিন্ন : বয়সভেদে শিশুর বৃদ্ধির হার ভিন্ন হয়।

(16) খাদ্য ও পুষ্টি নির্ভর: বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত খাদ্য ও পুষ্টির প্রয়োজন।

(17) স্বতঃস্ফূর্ত প্রক্রিয়া: শিশুর জন্মের পর তার জীবনে প্রথম স্বতঃস্ফূর্তভাবে পরিবর্তন আসে বৃদ্ধির মাধ্যমে।

(18) একক প্রক্রিয়া: শিশুর বৃদ্ধি এককভাবেই ঘটে অর্থাৎ অঙ্গ প্রত্যঙ্গের যে উন্নয়ন বৃদ্ধির মাধ্যমে ঘটে তা পৃথক পৃথকভাবে ঘটে না।

আরও পড়ুন – মনোবিজ্ঞানে অনুসন্ধানের পদ্ধতিসমূহ প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment