বিকাশের স্তরসমূহ প্রশ্ন উত্তর Class 11 Education Second Semester WBCHSE

বিকাশের স্তরসমূহ প্রশ্ন উত্তর Class 11 Education Second Semester WBCHSE

বিকাশের স্তরসমূহ প্রশ্ন উত্তর
বিকাশের স্তরসমূহ প্রশ্ন উত্তর

১। মানবশিশুর জীবনবিকাশের পর্যায় বা স্তর বলতে কী বোঝো? এই পর্যায়ের গুরুত্ব বা তাৎপর্য লেখো

সূচিপত্র

২। মনোবিদ পিকুনাস-এর মতে জীবনবিকাশের বৈশিষ্ট্যের নীতিসমূহ উল্লেখ করো।

৩। শৈশবকাল কাকে বলে? শৈশবকালকে কয় ভাগে ভাগ করা ‘যায়? শৈশবকালের দৈহিক বিকাশগত বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।

৪। শৈশবকালের মানসিক এবং ভাষাগত বিকাশগত বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো।

৫। শৈশবকালের সামাজিক ও প্রাক্ষোভিক বিকাশগত বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো

৬। শৈশবকালের বিভিন্ন চাহিদাগুলি আলোচনা করো।

৭। বঞ্চনা প্রতিরোধে পিতা-মাতা ও বিদ্যালয়ের ভূমিকা আলোচনা করো।

৮। বাল্যকাল কাকে বলে? বাল্যকালের বিভিন্ন প্রকার চাহিদাগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো।

৯। বাল্যকালের বিকাশমূলক বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।

১০। প্রারম্ভিক বাল্য বলতে কী বোঝায়? প্রারম্ভিক বাল্যের বৈশিষ্ট্যগুলি ‘কী? প্রারম্ভিক বাল্যের চাহিদাগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করো

১১। প্রান্তীয় বাল্যের সময়কাল উল্লেখ করো। প্রান্তীয় বাল্যের বিকাশগত বৈশিষ্ট্য ও চাহিদাগুলি সম্পর্কে যা জানা লেখো।

১২। কৈশোরকাল বলতে কী বোঝো? কৈশোরের দৈহিক ও মানসিক বিকাশের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো

১৩। কৈশোরকালের প্রাক্ষোভিক ও সামাজিক বিকাশ সম্পর্কে লেখো

১৪। কৈশোর বা বয়ঃসন্ধিকালের চাহিদাগুলি কী কী?

১৫। কৈশোরকালকে ঝড়-ঝঞ্ঝা ও দুঃখকষ্টের কাল বলা হয় কেন?

১৬। কৈশোরকালীন বিকাশ জীবনবিকাশের অন্য স্তরগুলি থেকে পৃথক কেন? বয়ঃসন্ধিকালকে দুঃখকষ্টের কাল বলা হয়- এই সমস্যার। মনোবিজ্ঞানসম্মত সমাধান নির্দেশ করো।

১৭। কৈশোরের ছেলেমেয়েদের চাহিদাপূরণের জন্য বিদ্যালয় তথা শিক্ষক-শিক্ষিকা ও বাবা-মায়ের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত, লেখো।

১৮। বিজ্ঞানীরা কেন যৌবনাগম কালকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলেছেন? বয়সসীমা-সহ জীবনবিকাশের স্তরগুলি ও তাদের প্রাসঙ্গিক প্রথাগত। শিক্ষান্তরগুলির নাম তালিকাবদ্ধ করো

১৯। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কী? প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্যগুলি কী কী?

২০। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্যগুলি কীভাবে পূরণ করা যায়?

২১। প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব লেখো। ভারতে প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার প্রতিষ্ঠান বা শিক্ষালয় সম্পর্কে আলোচনা করো

২২। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার সমস্যা ও তার সমাধানগুলি আলোচনা করো

২৩। কিন্ডারগার্টেন বলতে কী বোঝায়? কিন্ডারগার্টেন বিদ্যালয়ের পাঠক্রম কীরূপ তা লেখো

২৪। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রম ও শিক্ষাপদ্ধতি আলোচনা করো। ডাইড্যাক্টিক অ্যাপারেটাস কী?

২৫। বাল্যকালে শিশুদের শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলি বর্ণনা করো।

২৬। প্রাথমিক শিক্ষার সমস্যাগুলি কী কী?

২৭। প্রাথমিক শিক্ষার সমস্যা দূরীকরণের উপায়গুলি লেখো

২৮। প্রাথমিক শিক্ষার সমস্যার সমাধানে গৃহীত কর্মসূচিগুলি কী কী? প্রাথমিক শিক্ষায় অঙ্গনওয়াড়ির অবদান লেখো।

২৯। শিশুর সুষম বিকাশে প্রাথমিক শিক্ষার ভূমিকা কী?

৩০। প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রমের রূপরেখা দাও

৩১। মাধ্যমিক শিক্ষা কাকে বলে? মাধ্যমিক শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো।

৩২। মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রম সম্পর্কে আলোচনা করো

৩৩। মাধ্যমিক শিক্ষার সমস্যাসমাধানের উপায়গুলি লেখো

৩৪। মাধ্যমিক শিক্ষার গুরুত্ব লেখো।

৩৫। উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার সমস্যাগুলি আলোচনা করো

উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার সমস্যা

উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। যেমন-

(1) বিদ্যালয় সমস্যা : বিভিন্ন মাধ্যমিক স্তরের বিদ্যালয়গুলিকে এখনও পরিকাঠামোর অভাবে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে উন্নীত করা সম্ভব হয়নি। ফলে উপযুক্ত বিদ্যালয়ের অভাব রয়েছে।

(2) বিজ্ঞান ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় শিক্ষকের অভাব: বিজ্ঞান শাখায় শিক্ষকের অভাব রয়েছে। সব বিদ্যালয়ে পরিকাঠামোর অভাবে বৃত্তিমূলক বিষয় নেই। বৃত্তিমূলক বিষয়ের শিক্ষকেরও অভাব রয়েছে।

(3) পরীক্ষাগারের অভাব : অনেক বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়, ভূগোল ইত্যাদির মতো বিষয় পঠনপাঠনের জন্য উপযুক্ত পরীক্ষাগার নেই।

(4) লাইব্রেরির অভাব: অধিকাংশ বিদ্যালয়ে উপযুক্ত লাইব্রেরি নেই। অর্থের অভাবে লাইব্রেরির পরিকাঠামো বা উপযুক্ত সংখ্যক বইয়ের অভাব রয়েছে। অধিকাংশ বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে লাইব্রেরিয়ান নেই। রেফারেন্স বই-এরও অভাব রয়েছে। লাইব্রেরিতে অধিকাংশ বিদ্যালয়ে কম্পিউটার থাকা উচিত, যা বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে নেই।

(5) জুটিপূর্ণ পাঠক্রম: মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাঠক্রমের মধ্যে সংগতির অভাব রয়েছে। পাঠক্রম অনেক বেশি তাত্ত্বিক। ব্যাবহারিক পাঠক্রমের গুরুত্ব কম। বিভিন্ন বিষয়ের পাঠ্যসূচি সময় উপযোগী নয়।

(6) বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রসারের অপ্রতুলতা : পরিকাঠামো ও শিক্ষকের অভাবে সব উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে বৃত্তিমূলক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা যায়নি। যেসব বিদ্যালয়ে এই ব্যবস্থা রয়েছে, সেই বৃত্তিমূলক শাখাগুলি শিক্ষার্থীদের চাহিদাপূরণ করতে পারছে না।

(7) সময়ের অভাব: একাদশ ও দ্বাদশ 2 বছরের হলেও সব বিষয়ের = পাঠ্যসূচি শেষ করতে সময়ের অভাব দেখা যায়।

(৪) শিক্ষার্থীদের আগ্রন্থের অভাব: শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়গুলিতে হাজিরা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এর কারণ অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা সচেতন নয়।

(9) মূল্যায়নগত সমস্যা: একাদশ শ্রেণির মূল্যায়ন সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে বহির্মূল্যায়ন ব্যবস্থা রয়েছে, তবে কিছুটা অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নও রয়েছে। অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন ব্যবস্থা অত্যন্ত মনোবৈজ্ঞানিক ও বৈজ্ঞানিক, তবে বিভিন্ন কারণে এই মূল্যায়ন ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যথাযথ মূল্যায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।

(10) অন্যান্য সমস্যা: উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাক্ষেত্রে প্রশাসনিক সমস্যা, প্রাইভেট কোচিং নামক সমান্তরাল শিক্ষাব্যবস্থা উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করছে।

(11) বেসরকারি বিদ্যালয়: বেসরকারি বিদ্যালয়ের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এই বিদ্যালয়গুলিতে সরকারি বিদ্যালয়ের তুলনায় অনেক সুযোগসুবিধা থাকায় বেশি পরিমাণে ফিস (Fees) নিয়েও রমরমিয়ে চলছে, সেখানে সরকারি বিদ্যালয়গুলিতে অনেক কম খরচে পড়াশোনার ব্যবস্থা থাকলেও দিন দিন ছাত্রসংখ্যা কমে যাচ্ছে।

৩৬। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠানসমূহ সম্পর্কে লেখো

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠানসমূহ

(1) শিক্ষার্থীদের দায়িত্বগ্রহণভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ:

  •  আবাসিক বিদ্যালয়: আবাসিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের থেকে পড়াশোনা করতে হয়। যা সম্পূর্ণভাবে আবাসিক কর্তৃপক্ষ তত্ত্বাবধান করেন।
  •  দিবা বিদ্যালয়: এই বিদ্যালয়গুলি দিনের বেলাতেই নির্দিষ্ট সময়ে শুরু ও শেষ হয়।

(2)  লিঙ্গভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ:

  • পুরুষ শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়: এই সমস্ত বিদ্যালয়ে কেবলমাত্র পুরুষ শিক্ষার্থীরা শিক্ষা গ্রহণ করে।
  • ছাত্রীদের জন্য বিদ্যালয়: এখানে কেবলমাত্র ছাত্রীরাই শিক্ষা গ্রহণ করে।
  • সহশিক্ষামূলক বিদ্যালয়: তবে এইসমস্ত বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী উভয়ই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।

(3) সময়কালভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ:

  •  নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়: পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
  • মাধ্যমিক বিদ্যালয় : মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠন হয়ে থাকে। এই বিদ্যালয়গুলিতে সাধারণত 15 বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে।
  • উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়: এটি হল মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের সর্বশেষ স্তর। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠন হয়। মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সাধারণ পাঠক্রমে পড়াশোনা করে। এরপর এই উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে শিক্ষার্থীরা দু-বছর ধরে সাধারণধর্মী পাঠক্রম ও বৃত্তিমূলক পাঠক্রম অনুসারে পড়াশোনা করে থাকে।

(4) অন্যান্য বিভাগ:

  • সরকার পরিচালিত বিদ্যালয়: এইসমস্ত বিদ্যালয়গুলির সমস্ত দায়িত্ব সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়। অর্থাৎ বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজ, শিক্ষা সম্পর্কীয় কাজ ইত্যাদি বিষয়গুলি সরকারই দেখে থাকেন, বিদ্যালয়ের আর্থিক দায়দায়িত্বও পুরোটাই সরকারের হাতে থাকে।
  • সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়: এই ধরনের বিদ্যালয়গুলিতে সরকার আর্থিক সাহায্য দিয়ে থাকে। কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্ব থাকে বিদ্যালয়ের দ্বারা নির্বাচিত পরিচালন সমিতির হাতে।
  • পাবলিক স্কুল: এখানে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানমূলক বিকাশ ছাড়াও অন্যান্য গুণেরও বিকাশ ঘটানো হয়। এই ধরনের বিদ্যালয়গুলি ব্যয়সাপেক্ষ হয়।
  • বেসরকারি বিদ্যালয়: এই ধরনের বিদ্যালয়গুলিতে সরকার আর্থিক সাহায্য করে না। বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্ব, নিয়মকানুন সমস্তটাই বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
  • ধর্মীয় সংস্থা পরিচালিত বিদ্যালয়: বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দ্বারা কিছু কিছু বিদ্যালয় পরিচালিত হয়।
  • মাধ্যমভিত্তিক : বাংলা মাধ্যম, বিদ্যালয়ে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম, ইংরেজি মাধ্যম, একই হিন্দি মাধ্যম ইত্যাদি।

৩৭। মাধ্যমিক শিক্ষার বয়সসীমা কত? কোঠারি কমিশন বা ভারতীয় শিক্ষা কমিশনের (1964-66 সাল) মতে, মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী

(1) মাধ্যমিক শিক্ষার বয়সসীমা

ভারতে মাধ্যমিক শিক্ষার বয়সকাল সর্বত্র এক নয়। কোঠারি কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী প্রথম 7 বা ৪ বছর পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত। পরবর্তী 4 বছর হল মাধ্যমিক শিক্ষা। প্রথম 2 বছর (নবম ও দশম) হল নিম্নমাধ্যমিক 14 বা 15 বছর বয়সে এবং শেষের 2 বছর (একাদশ ও দ্বাদশ) হল উচ্চমাধ্যমিক, বয়সসীমা 17-18 বছর। বাসটি ছাতাশা।

(2) কোঠারি কমিশনের মতে, মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য

1964-66 সালে গঠিত হয় কোঠারি কমিশন। এই কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিভিন্ন সুপারিশ করে, যা আলোচনা করা হল। কোঠারি কমিশনের মতে-

(1) গণতান্ত্রিক নাগরিক : গণতান্ত্রিক নাগরিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করা মাধ্যমিক শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ দিক।

(2) উৎপাদনশীলতা: কমিশন কর্ম-অভিজ্ঞতা প্রকাশের কথা বলে মাধ্যমিক শিক্ষাকে বৃত্তিমুখী করার চেষ্টা করেছে।

(3) আধুনিকীকরণ: মাধ্যমিক শিক্ষাকে সামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষার্থী যাতে নতুন জ্ঞান অর্জন করতে পারে, সেদিকে লক্ষ রাখা।

(4) সামাজিক ও জাতীয় সংহতি : মাতৃভাষার মাধ্যমে সকলে শিক্ষা গ্রহণ করবে। সামাজিক ও জাতীয় সংহতি বজায় রাখবে।

মাধ্যমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য

(1) সর্বাঙ্গীণ বিকাশে সহায়তা: ভাষা, সাহিত্য, বিজ্ঞান, ইতিহাস প্রভৃতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশের কথা বলা হয়েছে।

(2) স্বাস্থ্যাভ্যাস গঠন: বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা, সমাজ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সুস্বাস্থ্যাভ্যাস গঠনের কথা বলা হয়েছে।

(3) সৃজনক্ষমতার বিকাশ : বিভিন্ন ধরনের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে সৃজনক্ষমতার বিকাশসাধন করা হয়।

(4) সৌন্দর্যবোধের বিকাশ : ছবি আঁকা, ক্লাসরুম সাজানো, পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদির মাধ্যমে সৌন্দর্যবোধের বিকাশ ঘটানো যায়।

(5) নৈতিক ও আধ্যাত্মিক বিকাশ: কোঠারি কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক বিকাশের কথা বলেছে। কী করা উচিত ও কী করা উচিত নয়, এই দুয়ের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করার জ্ঞান হল নৈতিক জ্ঞান। আবার ঈশ্বর সম্পর্কে চিন্তা বা উপলব্ধি হল আধ্যাত্মিক জ্ঞান-এর বিকাশ। এগুলি মাধ্যমিক শিক্ষার মাধ্যমে সম্ভব।

৩৮। মাধ্যমিক শিক্ষার সমস্যাগুলি আলোচনা করো। পশ্চিমবঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে গৃহীত কর্মসূচিগুলি লেখো

মাধ্যমিক শিক্ষার সমস্যা

মাধ্যমিক শিক্ষার সমস্যাগুলি হল-

(1) বিদ্যালয় পরিকাঠামোর অভাব: প্রতিটি বিদ্যালয়ে যে ধরনের পরিকাঠামো থাকা প্রয়োজন, যেমন- উপযুক্ত সংখ্যক ক্লাসরুম, শিক্ষাসহায়ক উপকরণ, ল্যাবরেটরি, লাইব্রেরি ইত্যাদি পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে অনেক বিদ্যালয়ে। অধিকাংশ বিদ্যালয়ে লাইব্রেরি নেই বললেই চলে। এ ছাড়াও প্রয়োজনীয় সংখ্যক কম্পিউটার নেই।

(2) শিক্ষক ও শিক্ষিকার অভাব: বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে প্রতিটি বিষয় পড়ানোর জন্য উপযুক্ত সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাব রয়েছে। বিশেষত গ্রামাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলিতে এই সমস্যা অধিক।

(3) উপযুক্ত পাঠক্রমের অভাব: এখনও পাঠক্রমে বাস্তবকেন্দ্রিকতা, শিক্ষার্থীদের চাহিদাকেন্দ্রিকতা, জীবনকেন্দ্রিকতার অভাব রয়েছে। পাঠক্রমে তত্ত্বগত দিকের উপরই অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

(4) আর্থিক সমস্যা: মাধ্যমিক শিক্ষার সঙ্গে অন্যান্য স্তরগুলির সঠিকভাবে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে।

(5) মূল্যায়ন ব্যবস্থায় সমস্যা: মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ত্রুটি লক্ষ করা যায়। নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের উপর গুরুত্ব দেওয়ার ফলে হল ম্যানেজের অধিক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

(6) অবৈজ্ঞানিক শিক্ষাব্যবস্থা: শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি তেমনভাবে গড়ে উঠছে না। এই শিক্ষার সঙ্গে বৃত্তিশিক্ষার তেমন যোগাযোগ করা হয় না ফলে শিক্ষা তেমন আকর্ষণীয় হচ্ছে না।

পশ্চিমবঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে গৃহীত কর্মসূচি 

সরকারি বিদ্যালয়গুলিতে মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য পশ্চিমবঙ্গে যেসব প্রকল্পগুলি গ্রহণ করা হয়েছে, সেগুলি হল-

  1. মাধ্যমিক স্তরে বাংলা ও ইংরেজি বই বিনামূল্যে দেওয়া হয়, তবে অন্যান্য বইগুলি কিনতে হয়।
  2. মাধ্যমিক স্তরে মেয়েদের পড়াশোনার জন্য রয়েছে কন্যাশ্রী প্রকল্প, সমস্ত শিক্ষার্থীদের সবুজসাথী প্রকল্পের মাধ্যমে সাইকেল দেওয়া হয়।
  3. মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে মেধার ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের বৃত্তির ব্যবস্থা।
  4. মূল্যায়নের ক্ষেত্রে প্রশ্নের ধরনের পরিবর্তন এসেছে।
  5.  প্রতিটি বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত (BEd) শিক্ষক রয়েছেন।
  6. ব্যাবহারিক মূল্যায়নের জন্য প্রতিটি বিষয়ে প্রোজেক্ট রয়েছে।
  7. অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের উপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
  8. বর্তমানে ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষার ব্যবস্থা শুরু হয়েছে। তবে বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বেতনসহকারে পড়তে হয়। তাদেরকে উচ্চ ফি (Fees) দিতে হয়। কোনো ধরনের প্রকল্প বেসরকারি বিদ্যালয়ে কার্যকরী নয়।

৩৯। উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাস্তর বলতে কী বোঝো? এই শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলি লেখো

উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাস্তর (+2 স্তর)

মাধ্যমিক শিক্ষার শেষভাগ হল উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাস্তর। কোঠারি কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী এই স্তরে রয়েছে দুটি শ্রেণি-একাদশ ও দ্বাদশ। এই স্তরের শিক্ষার্থীদের বয়স থাকে 16 থেকে 18 বছর।

উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

এই স্তরের শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল নিম্নরূপ-

(1) নিম্নমাধ্যমিক শিক্ষার দৃঢ়ীকরণ: নিম্নমাধ্যমিক শিক্ষাকে দৃঢ়তর করা, প্রসারিত করা।

(2) বিষয় নির্বাচনে বিশেষীকরণ: বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিশেষীকরণ করা প্রয়োজন, কিন্তু চরম বিশেষীকরণ নয়।

(3) ভবিষ্যৎ জীবনের শিক্ষা: দশ বছর বিদ্যালয় শিক্ষার পর প্রথম বিদ্যালয় বহির্ভূত পরীক্ষা দিয়ে শিক্ষার্থী স্থির করবে তার ভবিষ্যৎ জীবনে সে কী ধরনের শিক্ষা গ্রহণ করবে।

(4) পরিচালনা ও নির্দেশদানের ব্যবস্থা: শিক্ষার্থীর আগ্রহ, উৎসাহ, যোগ্যতা ইত্যাদি বিচার করে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ বিষয় গ্রহণের ক্ষেত্রে পরিচালনা ও নির্দেশদানের ব্যবস্থা থাকবে।

(5) বৃত্তিশিক্ষা: এই স্তরে 50% শিক্ষার্থীদের জন্য পূর্ণ বা আংশিক সময়ের বৃত্তিশিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। বাকি 50% শিক্ষা হবে সাধারণ শিক্ষা। বাণিজ্য, কৃষি ও কারিগরি বিদ্যা বৃত্তিশিক্ষার আওতায় পড়বে।

(6) প্রস্তুতি পর্ব: এই শিক্ষা হবে উচ্চশিক্ষা বা ভবিষ্যতে কী বৃত্তি গ্রহণ করবে তার প্রস্তুতি।

(7) ভিত গঠন: উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা (+2) স্তর মাধ্যমিক শিক্ষার ভিতকে দৃঢ় করে।

(৪) উচ্চশিক্ষার সঙ্গে সমন্বয়ন: পরবর্তী স্তরের উচ্চশিক্ষার সঙ্গে সমন্বয় ঘটানো উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য।

(9) সঠিক নির্দেশনা ও পরামর্শদান: যেহেতু এই স্তরটি ব্যক্তির ঝড়-ঝঞ্ঝার কাল হিসেবে পরিচিত, কৈশোরকালের অন্তর্ভুক্ত, তাই এই শিক্ষার উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীকে সঠিক নির্দেশনা ও পরামর্শ দান করা।

৪০। উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পাঠক্রম সম্পর্কে কোঠারি কমিশনের সুপারিশগুলি লেখো

উচ্চমাধ্যমিকের পাঠক্রম সম্পর্কে কোঠারি কমিশনের সুপারিশ

(1) সাধারণ ধারার পাঠক্রম: উচ্চমাধ্যমিক (+2) স্তরের পাঠক্রম সম্পর্কিত কোঠারি কমিশনের সুপারিশগুলি হল-

  • ভাষা: মাতৃভাষা বা আঞ্চলিক ভাষা, ইংরেজি, যে-কোনো আধুনিক ভারতীয় ভাষা, যে-কোনো আধুনিক বিদেশি ভাষা, যে-কোনো প্রাচীন ভাষা এগুলির মধ্য থেকে যে-কোনো দুটি ভাষা নিতে হবে।
  • ঐচ্ছিক বিষয়: নিম্নলিখিতগুলির মধ্য থেকে যে-কোনো তিনটি বিষয়কে ঐচ্ছিক হিসেবে বেছে নিতে হবে- একটি অতিরিক্ত ভাষা, ইতিহাস, ভূগোল, অর্থনীতি, তর্কবিদ্যা, মনোবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, চারুকলা, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত, জীববিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব, গার্হস্থ্য-বিজ্ঞান ইত্যাদি।
  • কর্মশিক্ষা ও সমাজসেবা,
  • শারীরশিক্ষা,
  • চারুকলা ও হস্তশিল্প,
  • নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা।

উচ্চমাধ্যমিক স্তরে কর্মশিক্ষার বিষয়গুলির মধ্যে কলকারখানা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, কৃষি-খামারের কাজের প্রতি বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা নিম্নমাধ্যমিক স্তরের কর্মশিক্ষা যেমন – কাঠের কাজ, ঠাকুরের কাজ, চামড়ার কাজ, সাবান তৈরি, সেলাই, মডেল তৈরি, বই বাঁধানো ইত্যাদি বিষয়গুলির মধ্য থেকেও গ্রহণ করতে পারবে। শারীরশিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে পাঠক্রম তৈরি হবে। এগুলি কমিশনের সুপারিশমাত্র। পাঠক্রম স্থির করবে বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাথমিক সরকারের স্কুলশিক্ষাবোর্ডগুলি, প্রাদেশিক সরকারের শিক্ষা ডিপার্টমেন্টের প্রতিনিধিদের তৈরি একটি এক্সপার্ট বডি।

(2) বৃত্তিমূলক পাঠক্রম : বৃত্তিমূলক শিক্ষার পাঠক্রমকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-

  • ভাষা: সাধারণ পাঠক্রমের মতো দুটি ভাষা বাধ্যতামূলক।
  •  আবশ্যিক ঐচ্ছিক বিষয়: এখানে পরীক্ষাগারভিত্তিক পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জীববিদ্যা, ভূগোল, পুষ্টিবিদ্যা, মনোবিদ্যা ইত্যাদি, আবার পরীক্ষাগারবিহীন সাধারণ পাঠক্রমের বিষয়সমূহ-এই দুই ধরনের বিষয় থেকে যে-কোনো তিনটি বিষয় নির্বাচন করতে হবে।
  • বৃত্তিমূলক বিষয়সমূহ : কৃষিবিজ্ঞান, বয়ন শিল্প, কারিগরি বিদ্যা, ব্যাবসাবাণিজ্য এবং প্যারামেডিক্যাল-এই বিষয়গুলির মধ্য থেকে একটি বিষয় নির্বাচন করতে হবে।
  • কর্মভিত্তিক বিষয়: সাধারণ পাঠক্রমের মতো একই থাকবে।

৪১। উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার সমস্যাসমাধানের উপায়গুলি লেখো। এই শিক্ষার উন্নয়নের জন্য গৃহীত কর্মসূচিগুলি আলোচনা করো

উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার সমস্যার সমাধানের উপায়

উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার সমস্যাসমাধানের জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলি গ্রহণ করা যায়-

(1) পরিকাঠামোর উন্নয়ন: বিদ্যালয়ের পরিকাঠামোগুলির উন্নয়নের জন্য শ্রেণিকক্ষ বৃদ্ধি, লাইব্রেরির গুণগত মান উন্নয়ন, ল্যাবরেটরিগুলির আধুনিকীকরণের প্রয়োজন।

(2) বিদ্যালয়ের মান উন্নয়ন: যেহেতু অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী ইংরেজি মাধ্যমে পড়ার প্রতি আগ্রহী, তাই সব সরকারি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে ইংরেজি মাধ্যমে পাঠনপাঠনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

(3) পাঠক্রমের আধুনিকীকরণ: পাঠক্রম পরিবর্তন একটি গতিশীল প্রক্রিয়া। তাই কিছুদিন অন্তর অন্তর পাঠক্রমের আধুনিকীকরণ প্রয়োজন। শিক্ষার্থী ও জাতীয় চাহিদার উপর ভিত্তি করে নতুন নতুন পাঠক্রমের প্রয়োজন রয়েছে।

(4) সমন্বয়সাধন : উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাস্তরকে এমনভাবে তৈরি করা দরকার, যাতে মাধ্যমিক শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষার মধ্যে সমন্বয়সাধন করা যায়।

(5) মূল্যায়নের সংস্কার: মূল্যায়ন ব্যবস্থাকে ত্রুটিমুক্ত করা দরকার।

(6) প্রশাসনিক ব্যবস্থা: প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে ত্রুটিমুক্ত করে বিদ্যালয়গুলিকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা দরকার। এই ব্যাপারে তত্ত্বাবধান ও পরিদর্শন ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

(7) বৃত্তিমূলক শিক্ষা : প্রতিটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে বৃত্তিশিক্ষার  ব্যবস্থা করা দরকার এবং উপযুক্ত বৃত্তিমূলক বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। বৃত্তিমূলক শিক্ষা দেওয়ার জন্য পরিকাঠামোর উন্নয়ন প্রয়োজন।

(৪) বেসরকারি: বেসরকারি বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা খরচসাপেক্ষ। আমাদের দেশে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার সমস্যা কিছু রয়েছে, তবে এই সমস্যাগুলি সমাধান করতে পারলে আমাদের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয়ে যথাযথ দক্ষতা অর্জন করবে।

৪২। উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়নের জন্য কর্মসূচি

(1) বিভিন্ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

(2) বিভিন্ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানোর ব্যবস্থা চালু হচ্ছে।

(3) মূল্যায়নের ক্ষেত্রে প্রশ্নের ধরন পরিবর্তিত হয়েছে, যা বিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানসম্মত।

(4) উচ্চমাধ্যমিকের পর শিক্ষার্থীরা যাতে বিভিন্ন বৃত্তিমূলক কোর্সে ভরতি > হতে পারে, তার জন্য উচ্চ শিক্ষাস্তরে পরিবর্তন আনা হয়েছে।

(5) বেসরকারি বিদ্যালয়গুলির বেতন নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

(6) উচ্চমাধ্যমিক স্তরে পড়াশোনার জন্য বিভিন্ন বৃত্তির ব্যবস্থা রয়েছে। সুতরাং উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের প্রয়োজন আছে। যথাযথ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনে উন্নত নাগরিক, ভবিষ্যৎ জীবন উপযোগী হতে সাহায্য করে।

৪৩। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা কীভাবে ওই বয়সের শিক্ষার্থীদের চাহিদাপূরণে সহায়তা করে, তা আলোচনা করো

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের চাহিদাপূরণে বিদ্যালয়ের ভূমিকা

(1) দৈহিক চাহিদা : এর অন্তর্গত হল-

  • খাদ্যের চাহিদা: দৈহিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যের চাহিদা প্রবল হয়। এই স্তরে শিক্ষক-শিক্ষিকারা শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন ও এ বিষয়ে অভিভাবকদেরও সচেতন হতে বলেন।
  • যৌন চাহিদা: শিক্ষার্থীরা যাতে তাদের যৌন কৌতূহল মেটাতে পারে, তার জন্য মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠক্রমের মধ্যে জীবনশৈলীর শিক্ষা বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
  • সক্রিয়তার চাহিদা: এইসময় ছেলেমেয়েদের মধ্যে সক্রিয়তার চাহিদা প্রবল হয়, যার ফলে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে চায়। বিভিন্ন সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণ করানো হয় যার ফলে তারা সক্রিয় থাকতে পারে।

(2) মানসিক চাহিদা: এর অন্তর্গত হল-

  •  জ্ঞানের চাহিরা : মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে সাধারণজ্ঞানের ক্লাস দেওয়া হয়, তর্কবিতর্ক সভার আয়োজন করা হয়, গ্রন্থাগারে বই পড়ার ব্যবস্থা করা হয়, যা শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের চাহিদা পূরণ করে।
  • স্বাধীনতার চাহিদা: মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের এই স্বাধীনতার চাহিদা মেটানোর জন্য স্বাধীনভাবে বিভিন্ন কাজ করতে দেওয়া হয়। যেমন-সরস্বতী পুজোর অনুষ্ঠান পরিচালনা, বিদ্যালয়ের অন্য কোনো অনুষ্ঠান পরিচালনা ইত্যাদি। এর ফলে তাদের মধ্যে দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষমতাও যেমন বাড়ে আবার স্বাধীনতার চাহিদাও পরিতৃপ্ত হয়।
  • আত্মপ্রকাশের চাহিদা : কৈশোরে ছেলেমেয়েদের মধ্যে চিন্তা, ধ্যানধারণা, বিভিন্ন প্রকার অনুভূতি বাইরে প্রকাশ করার আকাঙ্ক্ষা দেখা যায়। যেমন-খেলাধুলা, অভিনয় ইত্যাদি। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আত্মপ্রকাশের চাহিদা বৃদ্ধির জন্য সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয় (নাচ, গান, আঁকা ইত্যাদি)।
  • আত্মনির্ভরতার চাহিদা: এই বয়সে ছেলেমেয়েদের মধ্যে আত্মনির্ভরতার চাহিদা লক্ষ করা যায়। যৌবনাগমের সঙ্গে তার নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রবল বাসনা জাগে। শিক্ষার্থীদের এই আত্মনির্ভরতার চাহিদাকে মেটানোর জন্য মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে বিভিন্ন বৃত্তিমূলক শিক্ষা (Vocational Education) দানের ব্যবস্থা করা হয়। যেমন-কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, সেলাইয়ের কাজ, আচার তৈরি ইত্যাদি। এই বিষয়গুলি শিখে শিক্ষার্থীরা পরবর্তীকালে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারবে।
  • জীবনাদর্শের চাহিদা : নৈতিক বিকাশের ফলে ছেলেমেয়েদের মধ্যে জীবনাদর্শের চাহিদা লক্ষ করা যায়। জীবন সম্পর্কে নানা জিজ্ঞাসা তৈরি হয়। তারা নিজেদের পছন্দের মানুষের জীবনকে অনুসরণ করে জীবন গড়ার চেষ্টা করে। শিক্ষার্থীদের জীবনাদর্শের চাহিদার পরিতৃপ্তি ঘটানোর জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিভিন্ন মহাপুরুষদের জীবনী ও পাঠের ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়াও বিদ্যালয়ে প্রার্থনাসভার সময় বিভিন্ন মহাপুরুষদের বাণী পাঠের ব্যবস্থা করা হয় তার সঙ্গে বিভিন্ন গুণী ও সফল ব্যক্তিদের কর্ম-অভিজ্ঞতার কথা শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরা হয়, যা শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করে তোলে।

(3) সামাজিক চাহিদা: এর অন্তর্গত হল-

  • দুঃসাহসিক অভিযানের চাহিদা: এইসময়ে শিশুদের মধ্যে দুঃসাহসিক অভিযানের আকাঙ্ক্ষা আসে। তারা দলের অন্যান্য সদস্যদের কাছে নিজেদের ক্ষমতা প্রকাশ করার জন্য বিভিন্ন ঝুঁকি গ্রহণ করে। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের এই ধরনের চাহিদা মেটানোর জন্য বিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন শিক্ষামূলক ভ্রমণের ব্যবস্থা করা হয়।

গণতান্ত্রিকতার চাহিদাপূরণ: এই সমাজে শিশুরা তাদের দায়িত্ব, কর্তব্য ও অধিকার সম্পর্কে অবগত হতে চায়। দেশের একজন আদর্শ নাগরিক হয়ে উঠতে চায়। দেশের উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণ করতে চায়। তাই রক্তদান-শিবিরের আয়োজন, সর্বশিক্ষা মিশনে যোগদান, NCC, স্কাউট ইত্যাদি বিষয়গুলিকে বিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

৪৪। সাধারণধর্মী শিক্ষা বলতে কী বোঝায়? সাধারণধর্মী শিক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো। এই শিক্ষার উপযোগিতা কী

সাধারণধমী শিক্ষ

যে শিক্ষা শিক্ষার্থীকে অতিপ্রয়োজনীয় কতকগুলি সাধারণ বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনে এবং সাধারণ বুদ্ধির বিকাশে সাহায্য করে, তাকে সাধারণধর্মী শিক্ষা বলে। এই শিক্ষা সমাজের সকল স্তরের মানুষের সঙ্গে সাধারণ যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে গড়ে ওঠায় এটিকে সাধারণধর্মী শিক্ষা বলা হয়ে থাকে। অন্যভাবে বলা যায়, যে শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তির চারিত্রিক, নৈতিক, সামাজিক, নান্দনিক, আধ্যাত্মিক ইত্যাদির সুষম বিকাশ ঘটে, তাকে সাধারণধর্মী শিক্ষা বলে।

বৈশিষ্ট্য

(1) মিথস্ক্রিয়ামূলক শিক্ষা: সাধারণধর্মী শিক্ষা মিথস্ক্রিয়ামূলক শিক্ষা। এই শিক্ষার দ্বারা সমাজে বসবাসকারী সমস্ত স্তরের মানুষ পারস্পরিক আদানপ্রদানের মধ্য দিয়ে ভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।

(2) সর্বজনীন: জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে সকল বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ তাদের নিজস্ব চাহিদা, সামর্থ্য অনুযায়ী এই শিক্ষার অধিকারী হতে পারে।

(3) সামাজিক বিকাশের শিক্ষা: এই শিক্ষা শিক্ষার্থীর মধ্যে সামাজিক মনোভাব গড়ে তোলে এবং বিভিন্ন ধরনের আদর্শ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে তোলে।

(4) বৌদ্ধিক বিকাশে সহায়ক: সাধারণধর্মী শিক্ষা শিক্ষার্থীর স্বাধীন বৌদ্ধিক বিকাশে সাহায্য করে। স্বাধীনভাবে চর্চার মধ্যে শিক্ষার্থীর জ্ঞান, বোধ, প্রয়োগ, সংশ্লেষণ, বিশ্লেষণ, মূল্যায়ন, সৃজনক্ষমতা প্রভৃতির বিকাশ ঘটে।

(5) ব্যস্তিত্ব বিকাশের শিক্ষা: এই শিক্ষা শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্বের সর্বাঙ্গীণ বিকাশ ঘটায়। শিক্ষার্থীর স্বকীয়তা, নৈতিকতা, আদর্শপরায়ণতা প্রভৃতির বিকাশ ঘটিয়ে তাকে আদর্শ নাগরিকরূপে গড়ে তোলে।

(6) অধিকার সম্পর্কে সচেতনভা: ব্যক্তিকে তার দায়িত্ব, কর্তব্য এবং অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলা সাধারণধর্মী শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।

(7) সংগতিবিধানের শিল্ডা: সাধারণধর্মী শিক্ষার অপর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল-এই শিক্ষা শিক্ষার্থীকে পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শেখায়। এই শিক্ষার দ্বারা সমাজে বসবাসকারী প্রতিটি সদস্য বিদ্বেষ ভুলে পরস্পর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়।

(৪) নৈতিক বিকাশ: এই শিক্ষা শিক্ষার্থীদের মধ্যে নীতিবোধ জাগ্রত করে।

সাধারণধমী শিক্ষার উপযোগিতা

(1) বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির জাগরণ: প্রতিটি শিক্ষার্থী যাতে নিজের পরিবেশকে সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারে এবং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা বিচার ও ব্যাখ্যা করতে পারে, সেই সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয় সাধারণধর্মী শিক্ষা।

(2) দৈহিক বিকাশে সহায়ক: সাধারণধর্মী শিক্ষা শিক্ষার্থীর মধ্যে সুস্বাস্থ্যাভ্যাস গড়ে তোলে, যা শিক্ষার্থীর দৈহিক বিকাশের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

(3) মানসিক বিকাশে সহায়ক : শিক্ষার্থীর মধ্যে চিন্তা, কল্পনা, অনুমান, আগ্রহ, স্মৃতিশক্তি বিশ্লেষণ, বিচার ক্ষমতা প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের মানসিক ক্ষমতার বিকাশে বিশেষভাবে সাহায্য করে এই ধরনের শিক্ষা।

(4) কৌতূহল ও আগ্রহের বিকাশে সহায়ক: সাধারণধর্মী শিক্ষা একদিকে যেমন শিক্ষার্থীকে জগৎ ও জীবন সম্পর্কে বাস্তবধর্মী জ্ঞান দান করে থাকে, তেমনই এই শিক্ষা শিক্ষার্থীর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের কৌতূহল ও আগ্রহের বিকাশ ঘটায় এবং নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে সাহায্য করে।

(5) সৃজনাত্মক বিকাশে সহায়ক: প্রতিটি শিশুর সৃজনাত্মক ক্ষমতার বিকাশে প্রশিক্ষণ দেয় সাধারণধর্মী শিক্ষা। অভিনয়, নাচ, গান, ছবি আঁকা প্রভৃতি সৃজনধর্মী কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশ ঘটে একমাত্র সাধারণ শিক্ষার মাধ্যমে। সুতরাং সাধারণধর্মী শিক্ষা হল এমন একধরনের শিক্ষা যা সকল শিক্ষার্থীর গ্রহণ করা দরকার। কারণ এই শিক্ষাই শিক্ষার্থীকে ভবিষ্যতে বাস্তব জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে চলতে সাহায্য করে।

বর্তমান 2024 শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রচলিত উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রম এবং মূল্যায়ন ব্যবস্থা সম্পর্কে লেখো

বর্তমান 2024 শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রচলিত উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রম : 2024 শিক্ষাবর্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গ কাউন্সিল অফ হায়ার সেকেন্ডারি এডুকেশন একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ক্ষেত্রে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

(1) একাদশ শ্রেণিতে দুটি সেমিস্টার (2) দ্বাদশ শ্রেণিতে দুটি সেমিস্টার অর্থাৎ একাদশ ও দ্বাদশ মিলিয়ে মোট চারটি সেমিস্টার।

(1)  উদ্দেশ্য: উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদের NEP-2020 অনুযায়ী পাঠক্রমের সঙ্গে পরিচিত করা, যাতে আমাদের রাজ্যের শিক্ষার্থীরাও অন্যান্য রাজ্যের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সফল হতে পারে। শিক্ষার্থীরা সাধারণ বিষয় ছাড়াও বৃত্তিমূলক বিষয় গ্রহণ করতে পারবে। HS শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

(2) সময়কাল: চারটি সেমিস্টারের মধ্যে সেমিস্টার। এবং III-মে মাস থেকে অক্টোবর, সেমিস্টার ।। এবং IV নভেম্বর থেকে এপ্রিল।

(3) পাঠক্রম:

ভাষা বিভাগ: দুটি ভাষা আবশ্যিক, প্রথম ভাষা ও দ্বিতীয় ভাষা। শিক্ষার্থীদের তিনটি আবশ্যিক ঐচ্ছিক বিষয় (Elective Subject) এবং একটি অতিরিক্ত বিষয় (Optional elective Subject) নিতে হবে নিম্নোক্ত তিনটি সেট থেকে, তবে শিক্ষার্থী যে-কোনো একটি সেট থেকে বিষয়গুলি পছন্দ করবে অর্থাৎ সেট-।/ সেট-।।/ সেট-III-এর যে-কোনো সেট থেকে বিষয় নির্বাচন করবে। সেট তিনটি মিলিয়ে বিষয় নির্বাচন করা চলবে না। যারা বৃত্তিমূলক বিষয় নিয়ে পড়তে ইচ্ছুক, তারা শারীরশিক্ষা (PHED)/ সংগীত (MUSC) / চারুশিল্প (VISA) / অর্থনীতি (ECON) ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে নিতে পারবে না।

আরও পড়ুন – আজব শহর কলকেতা প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment