প্রাক-স্বাধীনতা যুগের ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থা প্রশ্ন উত্তর Class 11 Second Semester

৩। 1813 সালের সনদ আইনের মূল সুপারিশগুলি ব্যক্ত করো।
৫। চার্টার অ্যাক্টের গুরুত্ব লেখো।
৭। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষার দ্বন্দ্বের কারণগুলি আলোচনা করো
৮। উডের ডেসপ্যাচ- কে কি ম্যাগনা কার্টার সঙ্গে তুলনা করা যায়? ব্যাখ্যা করো।
১২। হান্টার কমিশনের ইতিবাচক সুপারিশগুলি লেখো।
১৩। হান্টার কমিশনের সুপারিশের সীমাবদ্ধতাগুলি লেখো।
১৪। লর্ড কার্জনের শিক্ষানীতি বলতে কী বোঝো? লর্ড কার্জনের প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কিত নীতিগুলি লেখো।
১৫। লর্ড কার্জনের সঙ্গে জাতীয় নেতাদের বিরোধের কারণগুলি কী কী?
১৬। ভারতীয় শিক্ষাক্ষেত্রে লর্ড কার্জনের অবদান কতটা?-তা আলোচনা করো।
১৭। লর্ড কার্জনের শিক্ষা সংক্রান্ত সুপারিশগুলি ব্যক্ত করো।
১৮। মাধ্যমিক শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা বিষয়ে লর্ড কার্জনের শিক্ষানীতিগুলি আলোচনা করো।
২০। জাতীয় শিক্ষা’ বলতে কী বোঝায়? ভারতে জাতীয় শিক্ষা ‘আন্দোলনের পটভূমিটি ব্যাখ্যা করো।
২১। বিংশ শতকের প্রথমার্ধে ভারতে জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের কারণগুলি আলোচনা করো।
২২। জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের উদ্দেশ্যাবলি আলোচনা করো।
২৩। জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ের ঘটনাবলির বিবরণ দাও।
২৪। আশুতোষ মুখোপাধ্যায় কীভাবে জাতীয় শিক্ষায় সহায়তা করেছিলেন?
২৫। ডন সোসাইটি কে প্রতিষ্ঠা করেন এবং সোসাইটির কী উদ্দেশ্য ছিল?
২৬। জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা স্থাপনে, জাতীয় শিক্ষা পরিষদের ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করো।
২৮। জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের স্তর বা পর্যায়গুলি আলোচনা করো এবং এর ব্যর্থতার কারণগুলি উল্লেখ করো।
২৯। 1905 সালের জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের গুরুত্ব আলোচনা করো।
৩০। জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ের ফলশ্রুতি কী ছিল?
৩১। পরবর্তীকালে ভারতের শিক্ষাব্যবস্থার বিকাশে জাতীয় আন্দোলনের প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো।
৩২। ভারতে জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।
৩৪। খের কমিটির রিপোের্ট দুটিতে কী কী সুপারিশ করা হয়েছিল, তা ‘আলোচনা করো।
৩৬। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের (1917-1919 সাল) সুপারিশগুলি আলোচনা করো।
৩৭। জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের কারণগুলি আলোচনা করো।
৪০। স্যাডলার কমিশনের মূল্যায়ন করো
৪১। প্রাথমিক শিক্ষাসংক্রান্ত হার্টগ কমিটির সুপারিশগুলি আলোচনা করো।
৪২। মাধ্যমিক শিক্ষা সংক্রান্ত হার্টগ কমিটির সুপারিশগুলি লেখো।
৪৩। হার্টগ কমিটি উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত কোন্ কোন্ সুপারিশগুলি করেছিল তা আলোচনা করো।
৪৪। কার নেতৃত্বে কত সালে হার্টগ কমিটি গঠিত হয়? নারীশিক্ষা সম্পর্কে হার্টগ কমিটির সুপারিশগুলি আলোচনা করো।
৪৫। হার্টগ কমিটির শিক্ষা সংক্রান্ত অন্যান্য সুপারিশগুলি আলোচনা করো।
৪৬। সার্জেন্ট পরিকল্পনা কত সালে হয়? এই পরিকল্পনায় শিক্ষার বিভিন্ন দিকের সুপারিশগুলি সংক্ষেপে উল্লেখ করো।
অথবা, সার্জেন্ট রিপোর্টটির সুপারিশগুলি উল্লেখ করো।
অথবা, 1944 সালে CABE যে শিক্ষা পরিকল্পনা গ্রহণ করে সেটির নাম কী? এই পরিকল্পনার নেতৃত্ব কে দেন? এই পরিকল্পনার সুপারিশগুলি লেখো
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ভারতবর্ষে শিক্ষার অবস্থা পর্যালোচনা তথা পরামর্শ দানের উদ্দেশ্যে ভারত সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা সভা স্যার জন সার্জেন্টের সভাপতিত্বে একটি শিক্ষা কমিটি গঠন করে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা সমিতি সার্জেন্টের সক্রিয় ভূমিকা ও উদ্যোগে 1944 সালের জানুয়ারি মাসে একটি খসড়া পরিকল্পনা প্রকাশ করেন। এটি ‘সার্জেন্ট পরিকল্পনা’ নামে অধিক পরিচিত।
সার্জেন্ট পরিকল্পনায় উল্লিখিত সুপারিশসমূহ
(1) প্রাথমিক শিক্ষা:
(a) এই পরিকল্পনায় বলা হয় যে প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষায় 3-6 বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য পৃথক নার্সারি বিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে তোলার পাশাপাশি নার্সারি শ্রেণি গঠনের কথাও বলা হয়।
(b) প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে বলা হয় যে, এটি হবে বুনিয়াদি শিক্ষার অনুরূপ, এটি দুটি ভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগটি হবে 6-12 বছর বয়সের ছেলেমেয়েদের জন্য নিম্নবুনিয়াদি শিক্ষার ব্যবস্থা ও অন্যদিকে দ্বিতীয় ভাগটি হল 11-14 বছর বয়সের ছেলেমেয়েদের জন্য উচ্চবুনিয়াদি শিক্ষা।
(c) এই স্তর সম্পর্কে আরও বলা হয় যে, এখানে শিক্ষার নীতি গৃহীত হলেও শিশুর শিক্ষার ব্যয়ভার বহনের নীতি স্বীকৃত হয়নি।
(d) মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা প্রদানের নীতি গ্রহণের কথা এই পরিকল্পনায় বলা হয়েছে। এ ছাড়া বলা হয়, শিক্ষার লক্ষ্য হবে স্বাভাবিক উপায়ে সামাজিক আচরণবিধির সঙ্গে পরিচিত হওয়া।
(2) মাধ্যমিক শিক্ষা :
(a) সার্জেন্ট পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয় যে, মাধ্যমিক শিক্ষার সময়ের ব্যাপ্তি হবে 6 বছর। এই সামগ্রিক সময়কালে শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা নির্ধারণ করে তবে তাকে উচ্চবিদ্যালয়ে ভরতি করা হবে।
(b) এই পরিকল্পনার অন্যতম সুপারিশ হিসেবে বলা হয় যে, শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষা ব্যবহৃত হবে এবং ইংরেজি ভাষাকে বাধ্যতামূলক দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে অধ্যয়ন করতে হবে।
(c) মাধ্যমিক শিক্ষার স্তর দুটি ভাগে বিভক্ত হবে। যথা-কলা ও বিজ্ঞান। এই শিক্ষা প্রদানের জন্য জ্ঞানমুখী উচ্চবিদ্যালয় স্থাপিত হবে। অপরটি হল- ফলিত বিজ্ঞান। প্রধানত শিল্প ও বাণিজ্য শিক্ষার জন্য শিল্পমুখী উচ্চবিদ্যালয় গঠনের কথা বলা হয়। তবে এখানে বলা হয় যে, দু-ধরনের বিদ্যালয়েই কয়েকটি সাধারণ পাঠ্য বিষয় থাকবে যা সকল শিক্ষার্থীকে অধ্যয়ন করতে হবে।
(d) এ ছাড়া এই পরিকল্পনায় মেয়েদের জন্য গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বা Domestic Science শিক্ষাদানের সুপারিশও করা হয়।
(3) উচ্চশিক্ষা:
(a) সার্জেন্ট পরিকল্পনার সুপারিশ অনুযায়ী বলা হয় যেসকল শিক্ষার্থীরা মেধাবী ও যোগ্য বলে বিবেচিত হবে তারাই উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবে।
(b) কলেজগুলিতে স্নাতক স্তরে তিন বছরের ডিগ্রি কোর্স ও স্নাতকোত্তর স্তরে উচ্চস্তরের গবেষণাধর্মী শিক্ষা প্রদান করা হবে।
(c) বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ ও সমন্বয়সাধনের জন্য ইংল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিটি বা UGC-এর আদর্শে ভারতেও এইরূপ একটি কমিটি স্থাপন করতে হবে।
(4) বৃত্তি ও কারিগরি শিক্ষা : সার্জেন্ট পরিকল্পনায় বৃত্তি ও কারিগরি শিক্ষা সম্পর্কেও বিভিন্ন সুপারিশ করা হয়। এই শিক্ষাকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যথা- (a) কারিগরি ও শিল্প বাণিজ্য স্তরে স্নাতকোত্তর,(b) হায়ার টেকনিক্যাল স্কুল, (c) ছয় বছরের টেকনিক্যাল হাই স্কুল, (d) নিম্নকারিগরি ট্রেড স্কুল।
- কারিগরি ও শিল্প বাণিজ্য স্তরে স্নাতকোত্তর: এখানে ভারতীয় প্রতিনিধিস্থানীয় পদে নিযুক্ত হওয়ার জন্য মেধাবী শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষালাভ করবে বলে উল্লেখ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় বা উচ্চশিক্ষার কারিগরি কলেজে এই ব্যবস্থা চালু থাকবে।
- হায়ার টেকনিক্যাল স্কুল: এখানে ফোরম্যান, চার্জম্যান ও অনান্য অফিসাররা পড়াশোনা করে বিশেষ ডিপ্লোমা লাভ করবেন।
- ছয় বছরের টেকনিক্যাল হাই স্কুল: নিম্নবুনিয়াদি স্তরের পর শিক্ষার্থীরা এখানে ভরতি হতে পারবে।
- নিম্নকারিগরি ট্রেড স্কুল: এখানে দু-বছরের কোর্সে উচ্চবুনিয়াদি শিক্ষা সমাপ্তকারী শিক্ষার্থীরা ভরতি হতে পারবে।
(5) বয়স্ক শিক্ষা : সার্জেন্ট পরিকল্পনার সুপারিশে 10 থেকে 40 বছর পর্যন্ত বয়স্ক ব্যক্তিরা শিক্ষার সুযোগ পাবে বলে উল্লেখ করা হয়। এই শিক্ষাকে আরও আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলার জন্য ম্যাজিক লণ্ঠন, গ্রামোফোন, লোকসংগীত, রেডিয়ো ইত্যাদির সাহায্যে পাঠ গ্রহণ ও পরিবেশন পরিচালিত হবে।
(6) প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা: সার্জেন্ট পরিকল্পনার রিপোর্টে মূক, বধির, শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকারি শিক্ষা বিভাগের দায়িত্বে বিশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনার সুপারিশ করা হয়।
(7) কর্মসংস্থান : শিক্ষা সমাপ্ত হওয়ার পরে যাতে শিক্ষার্থীরা কর্মসংস্থানের সুযোগ লাভ করে, তার জন্য ‘এমপ্লয়মেন্ট ব্যুরো’ স্থাপনের সুপারিশ করা হয়।
(8) স্বাস্থ্য শিক্ষা : প্রতিটি শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির বিষয়েও সার্জেন্ট পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করা হয়। এর জন্য ক্লিনিক খোলারও সুপারিশ করা হয়।
৪৭। সার্জেন্ট পরিকল্পনায় মাধ্যমিক শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে কী কী সুপারিশ করা হয়
1944 সালের জানুয়ারি মাসে ভারতের শিক্ষা উপদেষ্টা স্যার জন সার্জেন্ট ভারতীয় শিক্ষার মান উন্নয়নকল্পে একটি রিপোর্ট পেশ করেন, যা সার্জেন্ট রিপোর্ট নামে খ্যাত। এই রিপোর্টটি ‘Report on Post-War Educational Development in India’- নামে বিশেষভাবে পরিচিত। এই রিপোর্টের মূল উদ্দেশ্য ছিল পরবর্তী 40 বছরের মধ্যে কঠোর প্রচেষ্টার মাধ্যমে ভারতীয় শিক্ষার মানকে সমসাময়িক ইংল্যান্ডের শিক্ষার মানের সমতুল্য করা।
মাধ্যমিক শিক্ষা সংক্রান্ত সুপারিশ
(1) মাধ্যমিক শিক্ষার সময়কাল হবে 6 বছর তবে শিক্ষার্থীর ভরতির জন্য ন্যূনতম বয়স 11 বছর হতে হবে।
(2) শিক্ষার মাধ্যম হবে মাতৃভাষা তবে ইংরেজিকে বাধ্যতামূলক দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে গণ্য করা যাবে।
(3) মাধ্যমিক শিক্ষা হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ। অর্থাৎ এই শিক্ষা শুধুমাত্র উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের জন্য ডিগ্রি লাভই হবে না, এই শিক্ষালাভের ফলে শিক্ষার্থীরা নিজস্ব জীবনপোযোগী জীবিকা অর্জন করতে পারবে।
(4) মাধ্যমিক শিক্ষা হবে দু-ধরনের। বিশুদ্ধ কলা ও বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য Academic এবং ফলিত বিজ্ঞান, শিল্প ও বাণিজ্য শিক্ষার জন্য Technical বিভাগ।
(5) সার্জেন্ট পরিকল্পনায় বলা হয় যে, মাধ্যমিক স্তরের সাধারণ শিক্ষার্থীদের তুলনায় যেসব শিক্ষার্থী উচ্চমানের ফলাফল করবে তারাই উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভরতির সুযোগ পাবে। এক্ষেত্রে শতকরা 20 জন নিম্নমাধ্যমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভরতির সুযোগ পাবে।
(6) এই রিপোর্টে বলা হয় যে, যেসব উচ্চ মেধাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা বুনিয়াদি থেকে উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভরতি হবে তাদের জন্য শিক্ষা প্রশাসনকে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
(7) মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে পঠন-পাঠনের জন্য একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক বেতন শিক্ষার্থীদের দিতে হবে, যা সকল শিক্ষার্থীর সামর্থ্যের মধ্যে পড়বে।
(৪) সার্জেন্ট কমিটির রিপোর্টে সুপারিশ করা হয় যে, দেশের দরিদ্র্য শিক্ষার্থীদের জন্য অবৈতনিক শিক্ষাক্ষেত্রে প্রত্যেক বিদ্যালয়ে 50 শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে।
(9) উচ্চমাধ্যমিক স্তরে পাঠক্রম হবে। ‘বৈচিত্র্যময়। অর্থাৎ এখানে কলাভিত্তিক বিষয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন বিজ্ঞানভিত্তিক বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। আবার বাণিজ্যিক বিষয়ের মধ্যে বুক কিপিং, টাইপিং, শর্টহ্যান্ড ইত্যাদি শেখানোর জন্যও যথাযথ ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া, এই পরিকল্পনায় মেয়েদের জন্য গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বা Domestic Science শিক্ষাদানের সুপারিশও করা হয়।
(10) সার্জেন্ট রিপোর্টের একটি অন্যতম সুপারিশ হল দরিদ্র ও উচ্চমেধাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তিদানের ব্যবস্থা করা।
উচ্চশিক্ষা সম্পর্কিত সুপারিশসমূহ
উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সার্জেন্ট পরিকল্পনায় যে সুপারিশগুলি করা হয়েছে, তা নিম্নরূপ-
(1) বিদ্যালয়ে ভরতির ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপিত হবে। মাধ্যমিক স্তরের পাঠ শেষ হওয়া 10% থেকে 15% মেধাবী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবে।
(2) ইন্টারমিডিয়েটের অবলুপ্তি ঘটিয়ে স্নাতক স্তরের শিক্ষাকাল ন্যূনতম 3 বছর করতে হবে। এর পাশাপাশি ইন্টারমিডিয়েট স্তরের 1 বছর উচ্চমাধ্যমিক স্তরে এবং পরবর্তী 1 বছর স্নাতক স্তরের সঙ্গে যুক্ত হবে।
(3) স্নাতকোত্তর শিক্ষা ও গবেষণাকে উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে।
(4) দরিদ্র্য ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত করতে হবে।
(5) ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে মধুর সম্পর্ক স্থাপনের জন্য টিউটোরিয়াল ব্যবস্থার উপর বিশেষ জোর দিতে হবে।
(6) মাধ্যমিক শিক্ষার শেষে অধিকাংশ শিক্ষার্থী যাতে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে তার জন্য বৃত্তি ও কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা থাকবে।
(7) বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কাজের মধ্যে সমন্বয় সাধনের উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডের University-এর Grants committee-এর অনুকরণে একটি সর্বভারতীয় সংস্থা প্রতিষ্ঠিত করা প্রয়োজন।
(৪) সার্জেন্ট রিপোর্টে বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রতি বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক পঠন-পাঠনের ক্ষেত্রে আসন সংখ্যাও বৃদ্ধি হবে।
(9) অধ্যাপনা পদে যেসব প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা নিযুক্ত থাকবেন তাদের জন্য বেতন বৃদ্ধি করার পাশাপাশি চাকরির ক্ষেত্রেও নানা। সুযোগসুবিধা দান করতে হবে।
(10) বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠন-পাঠন সামাজিক চাহিদাভিত্তিক হবে এবং। পরীক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন সাধন প্রয়োজন।
৪৮। Grant-in-aids সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে এর সমালোচনা লেখো
Grant-in-aids প্রথা
ভারতের শিক্ষাব্যবস্থার ইতিহাসে Grant-in-aids বা সরকারি অনুদান প্রথা নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। দেশের সর্বত্র শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালনার ক্ষেত্রে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তার দায়িত্ব অস্বীকার করেনি। কিন্তু সমগ্র দেশজুড়ে যে সুগঠিত স্তরবিন্যস্ত শিক্ষাব্যবস্থা স্থাপিত হয়েছিল, সরকারের পক্ষে তা এককভাবে পরিচালনা করা দুরূহ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এমতাবস্থায় 1854 সালে উডের ডেসপ্যাচে বেসরকারি বিদ্যালয়গুলিকে উৎসাহিত করতে Grant-in-aid প্রথা প্রবর্তনের সুপারিশ করা হয়। বলা হয়, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে এই সরকারি অনুদান দেওয়া হবে মূলত বিদ্যালয় নির্মাণ, শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন খাতে।
(1) Grant-in-aid প্রথার বিভিন্ন শর্তাবলি:
(1) Grant-in-aid বা সরকারি অনুদান পেতে গেলে বিদ্যালয়গুলিতে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা প্রবর্তনের ব্যবস্থা করতে হবে। এখানে ধর্মশিক্ষা প্রদান আবশ্যিক হবে না।
(2) এই প্রথা অনুযায়ী বলা হয়, সরকারি অনুদান পেতে গেলে সরকারিভাবে অনুমোদিত প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে সরকারি পরিদর্শনের অধিকার স্বীকার করতে হবে এবং এই নির্দেশের যথাযথ মান্যতা দিতে হবে।
(3) স্থানীয় উদ্যোগে বিদ্যালয়গুলির পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করতে হবে। শুধু তাই-ই নয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারকে বিশেষভাবে সন্তুষ্ট করতে হবে।
(4) সরকারি অনুমোদন গ্রহণে সম্মত বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা হত। এ ছাড়া বিদ্যালয়গুলিতে সুব্যবস্থা পরিচালনা, মানোন্নয়ন ও আর্থিক ব্যয়ভার যাতে কিছুটা লাঘব করা যায়, তার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সামান্য কিছু বেতন নেওয়া হত।
(5) শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, শিক্ষার মান, ফলাফল উন্নত করতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি সাহায্য প্রদানের এই নীতি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিকে শিক্ষাবিস্তারে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করেছিল।
(2) Grant-in-aid নীতির সমালোচনা :
(1) প্রকৃতপক্ষে অনুদান প্রথার সুপারিশের মাধ্যমে বেসরকারি প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। কিন্তু সরকারি দায়িত্বভার এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
(2) অর্থসাহায্যের ক্ষমতা সরকারের হাতে থাকায় শিক্ষার দায়িত্ব না নিয়েও তা নিয়ন্ত্রণের অধিকার সরকার পেয়েছিল।
(3) অনুদান পাওয়ার ক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষতা একটি অন্যতম শর্ত হলেও মিশনারি স্কুলগুলির ক্ষেত্রে শিক্ষা পরিদর্শকদের চোখ বুজে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
(4) এই প্রথায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনুযায়ী সরকারি অনুদান বরাদ্দ করা হত। ফলে কম শিক্ষার্থীবিশিষ্ট বিদ্যালয়গুলিতে এই ব্যবস্থা খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি।
৪৯। উডের ডেসপ্যাচ কী? এর মূল সুপারিশগুলি আলোচনা করো
উডের ডেসপ্যাচ
1813 সালে সনদ আইন বা চার্টার অ্যাক্টের প্রবর্তনের পর ভারতের পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের ইতিহাসে ‘উডের ডেসপ্যাচ বা উডের প্রতিবেদন’ হল একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। 1854 সালের 19 জুলাই বোর্ড অফ কন্ট্রোলের সভাপতি চার্লস উড ভারতে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার জন্য এক পরিকল্পনার সুপারিশ করেন, যা উডের প্রতিবেদন বা উডের ডেসপ্যাচ (Wood’s despatch) নামে পরিচিত। এটি ছিল নিঃসন্দেহে ভারতের ইতিহাসে শিক্ষা সংক্রান্ত এক মূল্যবান দলিল।
উডের ডেসপ্যাচের সুপারিশ
(1) শিক্ষার উদ্দেশ্য: ডেসপ্যাচে শিক্ষার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়- ভারতবাসীর মধ্যে প্রয়োজনীয় পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার ঘটানো, 2 দক্ষ কর্মচারী তৈরি করা, ও নৈতিক চরিত্রের গঠনের উপর গুরুত্ব দেওয়া, 4 ভারতের বাজারে পণ্যের চাহিদা সৃষ্টি করা।
(2) বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন: উডের প্রতিবেদনে ভারতবর্ষে এই শিক্ষা সম্পর্কে ভারতবাসীর প্রবল আগ্রহের উপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়। এই সুপারিশ অনুযায়ী, কলকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজে মোট তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ কথাও উল্লেখ করা হয়, একজন আচার্য, একজন উপাচার্য এবং সরকার মনোনীত কয়েকজন সদস্য নিয়ে গঠিত সিনেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করবে।
(3) শিক্ষার বিষয়বস্তু: উডের ডেসপ্যাচে শিক্ষার বিষয়বস্তু হিসেবে কলাবিদ্যা, যথা- সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস প্রভৃতি এবং আইন, চিকিৎসা ও ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি বৃত্তিশিক্ষার কথা বলা হয়েছে।
(4) শিক্ষার মাধ্যম: এই প্রতিবেদনে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে প্রাথমিক পর্বে ইংরেজি ভাষাকে স্বীকৃতি দিলেও এর পাশাপাশি সুষম শিক্ষাব্যবস্থার স্বার্থে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ভারতীয় ও ইংরেজি ভাষার সম্মিলিত প্রচেষ্টার উপর গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়। এ ছাড়া এই প্রতিবেদনে মাধ্যমিক স্তরে ইংরেজি ও মাতৃভাষা এবং প্রাথমিক ও দেশীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাতৃভাষাকে শিক্ষার মাধ্যমরূপে গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।
(5) শিক্ষাবিভাগ প্রতিষ্ঠা: ভারতে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি ও বিদ্যালয়গুলির সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য একটি পৃথক শিক্ষা দফতর গঠনের কথা বলা হয়। উডের ডেসপ্যাচে বাংলা, মাদ্রাজ, বোম্বাই, পাঞ্জাব এবং উত্তর প্রদেশ-অর্থাৎ তৎকালীন কোম্পানির এক্তিয়ারভুক্ত পাঁচটি প্রদেশে শিক্ষা বিভাগ স্থাপনের কথা বলা হয়। এক্ষেত্রে বিভাগগুলির ভারপ্রাপ্ত হবেন একজন করে জনশিক্ষা আধিকারিক বা DPI (Director of Public Instruction) I
(6) জনুদান প্রথা (Grant-in-aid): উডের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশব্যাপী শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তন করা এককভাবে সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই বেসরকারি ক্ষেত্রে আর্থিক সাহায্য নিয়ে শিক্ষাপ্রসারের সুপারিশ করা হয়। এই অনুদান দেওয়ার জন্য সরকার থেকে কতকগুলি সুপারিশ করা হয়, যা বিদ্যালয়গুলিকে মেনে চলতে হবে- বেসরকারি বিদ্যালয়গুলিতে স্থানীয় ব্যবস্থা থাকতে হবে, শিক্ষা প্রদান করতে হবে, নির্দেশ মেনে চলতে হবে। বিদ্যালয়গুলিকে ধর্মনিরপেক্ষভাবে বিদ্যালয়গুলিকে সরকারি পরিদর্শকের
(7) স্তরবিন্যস্ত শিক্ষাব্যবস্থা স্থাপন: ভারতবর্ষে সুবিন্যস্ত স্তরভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষেত্রে বলা হয় এই শিক্ষা কাঠামোর সর্বোচ্চ স্তরে বিশ্ববিদ্যালয় ও তার অধীনস্থ মহাবিদ্যালয়গুলির মাধ্যমে উচ্চশিক্ষাদানের সামগ্রিক ব্যবস্থা করা হবে। এর নীচে থাকবে মাধ্যমিক শিক্ষার প্রতিষ্ঠানসমূহ ও সর্বনিম্নে প্রাথমিক শিক্ষা থাকার কথা বলা হয়।
(8) নারীশিক্ষা: নারীশিক্ষা প্রসারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। এ ছাড়া মুসলিম সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ উভয়েরই শিক্ষা প্রদানের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
(9) বৃত্তিমূলক শিক্ষা: এই শিক্ষা দলিলে বৃত্তিশিক্ষার উপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে আইন, চিকিৎসা, ইঞ্জিনিয়ারিং প্রভৃতি শিক্ষার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
(10) ধর্মনিরপেক্ষ শিল্ডা: ধর্ম নিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন করার কথা বলা হয়, যদিও প্রতিটি স্কুলে একটি করে বাইবেল রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল।
(11) জনশিক্ষা ব্যবস্থা (Mass Education System): উডের সুপারিশে জনশিক্ষার সু- ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে স্বীকারও করা হয়েছে যে, ‘চুঁইয়ে নামা নীতি’-র জন্য উচ্চশ্রেণিভুক্ত কতিপয় ব্যক্তি শিক্ষার সরাসরি সুযোগ পেতেন। উচ্চশ্রেণির প্রাপ্ত শিক্ষা নিম্নগামী হয়ে সাধারণের নিকট পৌঁছোবে-এ-ধারণা ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে। জনশিক্ষার জন্য বেসরকারি প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয়, এর জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিটি জেলায় প্রয়োজনীয় মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে হবে। মাতৃভাষা হবে শিক্ষার বাহন, যাতে দ্রুতগতিতে জনশিক্ষার প্রসার ঘটবে।
(12) মুসলিম শিক্ষা (Muslim Education) : উড সাহেব বুঝেছিলেন যে। ভারতবর্ষে জনসংখ্যার ভিত্তিতে মুসলমানদের স্থান অবহেলার নয়। অতএব | মুসলমানদের জন্য এক বিশেষ ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করা প্রয়োজন। মুসলিমদের পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে এবং সরকারি অনুদান দেওয়ারও ব্যবস্থা করতে হবে।
(13) পাঠ্যপুস্তক রচনা: উডের ডেসপ্যাচে পাশ্চাত্য দর্শন ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন পুস্তকগুলিকে দেশীয় ভাষায় অনুবাদের কথা বলা হয়। যাতে ভারতীয় শিক্ষার বিষয়বস্তু হিসেবে পাশ্চাত্য দর্শন ও বিজ্ঞানের বিষয়গুলি অতি সহজে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। উডের ডেসপ্যাচ সকল প্রকার দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে ভারতীয় শিক্ষাকে বলিষ্ঠ নীতির উপর প্রতিষ্ঠা করেছিল।
৫০। বৃত্তি ও কারিগরি শিক্ষা এবং বয়স্কশিক্ষা সম্পর্কে সার্জেন্ট কমিটির সুপারিশগুলি লেখো
বৃত্তি ও কারিগরি শিক্ষা সম্পর্কে সার্জেন্ট কমিটির সুপারিশসমূহ
(1) কারিগরি ও শিল্প বাণিজ্য স্তরে স্নাতকোত্তর কোর্স: এই স্তরে মূলত জাতীয় প্রতিনিধি স্থানীয় পদে নিযুক্ত হওয়ার জন্য মেধাবী শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে বলে উল্লেখ করা হয় সার্জেন্ট কমিটির সুপারিশে।
(2) হায়ার টেকনিক্যাল স্কুল: এই প্রকার কারিগরি স্কুলে ফোরম্যান, চার্জম্যান ও অন্যান্য অফিসাররা শিক্ষালাভ করে বিশেষ ডিপ্লোমা লাভ করতে পারবে বলে সুপারিশে বলা হয়।
(3) ছয় বছারর টেকনিক্যাল ঘহি স্কুল : নিম্নবুনিয়াদি স্তরের শিক্ষা সমাপ্ত করার পর শিক্ষার্থীরা এই বিদ্যালয়ে ভরতি হতে পারবে বলে উল্লেখ করা হয়।
(4) নিম্ন কারিগরি বা ট্রেড স্কুল: এখানে দুবছরের কোর্সে উচ্চবুনিয়াদি শিক্ষা সমাপ্ত করার পর শিক্ষার্থীরা ভরতি হতে পারবে বলে উল্লেখ করা হয়।
(5) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন: স্নাতকোত্তর পর্যায়ে কারিগরি ও বৃত্তিশিক্ষার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে হবে। এই সকল প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি গবেষণার ব্যবস্থাও থাকবে।
(6) জীবিকা অর্জলের সুযোগদান: সার্জেন্ট কমিটির রিপোর্টে বলা হয় যে, যেসকল প্রশিক্ষিত ব্যক্তি উচ্চ কারিগরি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে তাদের জন্য উপযুক্ত জীবিকা অর্জনের সুযোগদান করতে হবে।
(7) আংশিক সময়ের জন্য শিক্ষা: যে ব্যক্তিগণ শিল্পকর্মে নিযুক্ত থাকে তাদের জন্য আংশিক সময়ের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে বলে সুপারিশ করা হয় সার্জেন্ট পরিকল্পনায়।
বয়স্কশিক্ষা সম্পর্কিত সুপারিশসমূহ
সার্জেন্ট কমিটি বিভিন্ন প্রাদেশিক সরকারের সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে অনুমান করেন যে দেশে তখন 9 কোটির মতো নিরক্ষর জনসংখ্যা ছিল। দেশের জনগণকে সুনাগরিক করে তুলতে প্রথাগত শিক্ষার বাইরে একটি শিক্ষা প্রকল্প গড়ে তোলার প্রয়োজন অনুভব করেন কমিটি। কমিটির রিপোর্টে বলা হয় যে-
(1) সকলকে সুনাগরিক করে তোলার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। ভারতের প্রত্যেক নাগরিক যাতে সুযোগ্য ও শিক্ষিত হয়ে গড়ে ওঠে তা দেখাই হল বয়স্কশিক্ষার প্রধান লক্ষ্য।
(2) এই কমিশনে 10-40 বছর বয়স্কদের শিক্ষার সুযোগ প্রদানের কথা বলা হয়।
(3) যাদের বয়স 10-16 বছরের মধ্যে তাদের জন্য দিনের বেলায় শিক্ষাদানের পৃথক ব্যবস্থা থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়।
(4) বয়স্কশিক্ষার ক্ষেত্রে তাদের শিক্ষার পরিবেশ যাতে বৈচিত্র্যময় ও আনন্দপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে তার জন্য চলচ্চিত্র, লোকসংগীত, ছবি, চার্ট গ্রামোফোন প্রভৃতির সাহায্যে শিক্ষণীয় বিষয়গুলিকে তুলে ধরার চেষ্টা করা প্রয়োজন।
(5) Adult Education বা বয়স্ক শিক্ষাদানের প্রক্রিয়াকে সম্প্রসারিত করার জন্য বিভিন্ন সমাজসেবামূলক সংস্থাগুলিকে এ কাজে এগিয়ে আসার বিষয়ে উৎসাহ প্রদানের কথা বলা হয়।
(6) এ ছাড়া সার্জেন্ট পরিকল্পনায় শিক্ষার প্রসার ঘটানো এবং নিরক্ষরতা দূরীকরণের জন্য বহু পুস্তক সংবলিত গ্রন্থাগার স্থাপনের কথা উল্লেখ করা হয়। ভারতবর্ষের শিক্ষার প্রসার তথা তার বাস্তব রূপায়ণে সার্জেন্ট পরিকল্পনার গুরুত্ব অনস্বীকার্য, যদিও তা সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত ছিল না। লক্ষ্যে পৌঁছোনোর কোনো বিস্তৃত কর্মসূচি এখানে ছিল না। তা সত্ত্বেও ভারতীয় শিক্ষার ক্ষেত্রে সার্জেন্ট পরিকল্পনা একটি মূল্যবান দলিল হিসেবে স্বীকৃত।
৫১। শিক্ষক-শিক্ষণ প্রসঙ্গে এবং সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি ও কর্মসংস্থান ব্যবস্থার বিষয়ে সার্জেন্ট কমিটির সুপারিশ কী ছিল
শিক্ষক-শিক্ষণ প্রসঙ্গে সার্জেন্ট কমিটির সুপারিশ
(1) শিক্ষক-শিক্ষণ সম্পর্কে এই পরিকল্পনায় বিশেষ শিক্ষণ বিভাগ গঠনের কথা বলা হয়। স্নাতক স্তরের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষণ বিভাগ, একাধিক শিক্ষক-শিক্ষণ মহাবিদ্যালয় গঠনের প্রস্তাব করা হয়।
(2) যারা স্নাতক স্তরের শিক্ষক নন তাদের জন্য মূলত তিন প্রকার শিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের কথা এই পরিকল্পনায় বলা হয়। এগুলি হল প্রাক্-প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা, বুনিয়াদি বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও হাই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য।
(3) ট্রেনিং কলেজে পড়াকালীন শিক্ষকদের কোনো বেতন দিতে হবে না, এর জন্য সরকারই প্রয়োজনীয় আর্থিক সাহায্য করবে। দরিদ্র্য ছাত্রছাত্রীদের যথাসম্ভব সাহায্য দান করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয় এই পরিকল্পনায়।
(4) শিক্ষাব্যবস্থার আর্থিক ও গুণগত মান উন্নয়নের জন্য প্রতিটি স্তরের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন বৃদ্ধি করতে হবে বলে সার্জেন্ট পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়।
(5) বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য রিফ্রেশার কোর্সের প্রবর্তন করে তাদের গুণগত উৎকর্ষ বৃদ্ধির কথাও বলা হয়।
(6) কমিটির মতে, শিক্ষক-শিক্ষণ ব্যবস্থার মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে সারা দেশব্যাপী বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি বিষয়ে সুপারিশ
(1) সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির মধ্যে বিভিন্ন সামাজিক কাজ, অবসর বিনোদনের ব্যবস্থা রাখার কথা এই পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়।
(2) গঠনমূলক যুব আন্দোলন গড়ে তোলার উপর এই পরিকল্পনায় গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিভিন্ন সহপাঠক্রমিক কার্য, যথা-বিতর্কসভা, খেলাধুলা, শিক্ষামূলক ভ্রমণ প্রভৃতি বিষয় যুব আন্দোলনের অঙ্গ হিসেবে পরিচালিত হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
কর্মসংস্থান বিষয়ে সার্জেন্ট কমিটির সুপারিশ
(1) শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সমাপ্ত হওয়ার পর কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়ার কথা বলা হয়। এর জন্য এমপ্লয়মেন্ট ব্যুরো স্থাপনের সুপারিশ করা হয়।
(2) কারিগরি ও বৃত্তিশিক্ষার শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন উৎপাদনমূলক সংস্থার কাজের সঙ্গে যুক্ত করার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এর মাধ্যমে তারা হাতেকলমে শেখা ও বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করবে।
(3) প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা ও কর্মক্ষেত্রে আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থার কথাও সার্জেন্ট পরিকল্পনায় বলা হয়।
৫২। শারীরশিক্ষা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা বিষয়ে সার্জেন্ট কমিটির সুপারিশগুলি উল্লেখ করো
শারীরশিক্ষা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা বিষয়ে সার্জেন্ট কমিটির সুপারিশ
(1) শিক্ষার্থীদের শরীর ও স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার কথা সার্জেন্ট পরিকল্পনায় বলা হয়। তাদের শিক্ষা শুরু হওয়ার প্রথমেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নেওয়ার সুপারিশও করা হয় এই পরিকল্পনায়।
(2) স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত নির্দিষ্ট নিয়মাবলি পালন করা, এ ছাড়া স্বাস্থ্য সচেতনতা তথা রোগমুক্তির জন্য ক্লিনিক খোলার সুপারিশও এখানে করা হয়।
(3) স্কুলের ছেলেমেয়েরা বিনা খরচে যাতে সুচিকিৎসা পায় সে বিষয়েও সতর্ক দৃষ্টিদানের বিষয়ে এই পরিকল্পনায় বিশেষ সুপারিশ করা হয়।
(4) শিক্ষার্থীদের মধ্যাহ্নভোজন, দুধ সরবরাহের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে ও বলা হয়, যাতে শিক্ষার্থীরা অপুষ্টিতে না ভোগে ও তাদের শরীর সুস্থ- সবল থাকে।
(5) শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য নিয়মিত পরীক্ষা করে তার স্বাস্থ্যের অগ্রগতি সংক্রান্ত রিপোর্ট ‘Cumulative Record Card’-এ লিপিবদ্ধ করে রাখতে হবে।
(6) সমগ্র স্বাস্থ্য কর্মসূচি যাতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় তার জন্য একটি কমিটি গঠন করার সুপারিশ করা হয় সার্জেন্ট পরিকল্পনায়।
(7) কমিটির রিপোর্টে আরও বলা হয় যে, বিদ্যালয় শিক্ষার প্রতিটি স্তরে শারীরশিক্ষাকে আবশ্যিক করা প্রয়োজন।
প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা বিষয়ে সার্জেন্ট কমিটির সুপারিশ
(1) মূক, বধির প্রভৃতি শারীরিক ও মানসিকভাবে যারা প্রতিবন্ধী তাদের জন্য সার্জেন্ট পরিকল্পনায় সরকারি শিক্ষা বিভাগের দায়িত্বে বিশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনার সুপারিশ করা হয়েছে।
(2) এই পরিকল্পনায় আরও বলা হয় যে, সাধারণ ও শারীরিক জড়তাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের থেকে আলাদা না করে একই বিদ্যালয়ে তাদের শিক্ষাদানের বিশেষ ব্যবস্থা করা উচিত। এই শিশুদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার কথাও বলা হয়।
(3) সার্জেন্ট পরিকল্পনায় শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য শিক্ষার বিশেষ ব্যবস্থার পাশাপাশি সরকারকে তাদের উপযুক্ত চিকিৎসার দায়িত্বভার গ্রহণও একান্ত আবশ্যিক বলে উল্লেখ করা হয়।
(4) এ ছাড়া প্রতিবন্ধী শিশুরা শিক্ষা সমাপ্ত করার পর যাতে চাকরির সুযোগসুবিধা লাভ করতে পারে, তার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও সার্জেন্ট পরিকল্পনায় বলা হয়।
৫৩। শিক্ষা প্রশাসন সম্পর্কে সার্জেন্ট কমিটির সুপারিশসমূহ উল্লেখ করো
শিক্ষা প্রশাসন সম্পর্কে সার্জেন্ট কমিশনের সুপারিশসমূহ
শিক্ষা প্রশাসন সম্পর্কে সার্জেন্ট পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করা হয়। এগুলি হল –
(1) শিক্ষা সংক্রান্ত এই পরিকল্পনাকে কার্যকর করার জন্য কেন্দ্রে একটি সুসংগঠিত শিক্ষা বিভাগ খোলার সুপারিশ করা হয়।
(2) জাতীয় শিক্ষার সুষ্ঠু রূপায়ণে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে অধিকতর সহযোগিতা সৃষ্টির উপর এই পরিকল্পনায় গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
(3) প্রদেশগুলিতে স্বতন্ত্র শিক্ষা বিভাগ গঠন করে শিক্ষা পরিচালনার সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করার কথাও বলা হয়।
(4) প্রতিটি Regional ও Volentary School-এর জন্য কয়েকজন ম্যানেজারের এক সংস্থা গঠন করতে হবে। এদের কাজ হবে স্কুলগুলি ঠিকমতো পরিচালিত হচ্ছে কি না তা তদারকি করা।
(5) দেশের জনগণকে শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করে তোলার জন্য বেশ কিছু সংখ্যক স্কুল কমিটি এবং স্কুল বোর্ড গঠন করতে হবে বলে সার্জেন্ট পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়।
(6) সার্জেন্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী সর্বভারতীয় শিক্ষা সার্ভিস প্রবর্তনের মাধ্যমে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নেরও ব্যবস্থা করার কথা সুপারিশ করা হয়।
(7) কেন্দ্রীয় শিক্ষা উপদেষ্টা পর্ষদ বা Central Advisory Board of Education গঠন করে শিক্ষা সংক্রান্ত বিবিধ দায়িত্ব অর্পণের কথা বলা হয়।
(8) সার্জেন্ট পরিকল্পনায় শিক্ষা বিভাগের উচ্চপদগুলিতে উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন দক্ষ প্রশাসক নিয়োগ করতে হবে এই সুপারিশও করা হয়।
(9) কমিটির মতে, কেন্দ্রীয় সরকারের উপর উচ্চশিক্ষা ও উচ্চকারিগরি শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলির দায়িত্ব থাকবে এবং মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের দায়িত্ব থাকবে প্রাদেশিক সরকারের উপর। কমিটিতে আরো বলা হয়, উচ্চশিক্ষা ব্যতীত অন্যান্য শিক্ষাস্তরগুলি পরিচালনার দায়িত্ব থাকবে রাজ্য শিক্ষা অধিকর্তার উপর। সুতরাং, শিক্ষাব্যবস্থাকে যথাযথ রূপ দিতে হলে প্রয়োজন উপযুক্ত শিক্ষা প্রশাসন। শিক্ষাপ্রশাসনের জন্য সার্জেন্ট কমিটির সুপারিশগুলি পরবর্তী কমিশন, কমিটি ও জাতীয় শিক্ষানীতিতেও প্রয়োগ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর