পরীক্ষামূলক পদ্ধতির সুবিধাগুলি লেখো
পরীক্ষামূলক পদ্ধতির সুবিধা
মনোবিজ্ঞানের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য পদ্ধতি হিসেবে পরীক্ষণ পদ্ধতির অনেক সুবিধা রয়েছে। নিম্নে পরীক্ষণ পদ্ধতির সুবিধাসমূহ আলোচনা করা হল-
(1) বৈজ্ঞানিক নিয়ম অনুসরণ: পরীক্ষণ পদ্ধতিতে বৈজ্ঞানিক নিয়মনীতি সবচেয়ে বেশি মেনে চলা হয়। এর ফলাফল অনেক বেশি নির্ভরশীল হয়।
(2) চলের নিয়ন্ত্রণ: এই পদ্ধতির প্রধান সুবিধা হল এর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে অনুসন্ধান কার্য-পরিচালনা করা হয় বলে কোনো অবাঞ্ছিত ফল পরীক্ষণে প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।
(3) চলের পরিবর্তন: পরীক্ষণ পরিবেশ পরীক্ষকের নিয়ন্ত্রণে থাকে বলে পরীক্ষক ইচ্ছামতো চলের পরিবর্তন করতে পারেন।
(4) সংক্ষিপ্ত ও সঠিক ফলাফল : পরীক্ষণ পদ্ধতির সাহায্যে ফলাফল সংক্ষিপ্ত ও সঠিকভাবে প্রকাশ করা যায়। এই পদ্ধতিতে ফলাফল ব্যক্তিদোষে দুষ্ট হতে পারে না। তাই ফলাফল অধিক নির্ভরযোগ্য হয়।
(5) যথার্থ, নির্ভরযোগ্য ও নৈর্ব্যক্তিক : পরীক্ষণ পদ্ধতির ফলাফল যথার্থ, নির্ভরযোগ্য ও নৈর্ব্যক্তিক। যথার্থ কথার অর্থ হল, যে উদ্দেশ্যে পদ্ধতিটি প্রয়োগ করা হয় সেই উদ্দেশ্য যথাযথ হয়। নির্ভরযোগ্যতার অর্থ হল, যে সময়ই পরীক্ষণ করা হোক না কেন একই ফল পাওয়া যায়। নৈর্ব্যক্তিক কথার অর্থ হল, যে ব্যক্তিই পরীক্ষা করুন না কেন একই ফল পাওয়া যায়।
(6) শর্তের প্রভাব: নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পরীক্ষণ পদ্ধতি সম্পন্ন করলে একটি শর্তের প্রভাব অন্যান্য শর্তের প্রভাব থেকে আলাদাভাবে চেনা সম্ভব। যেমন-প্যাভলভের কুকুরের পরীক্ষায় ঘন্টাধ্বনির সঙ্গে লালাক্ষরণের অনুবন্ধন ঘটানোর পর কিছুদিন পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়ে পুনরায় পরীক্ষা শুরু করলে দেখা যায়, ঘন্টা বাজালে কুকুরের লালাক্ষরণ হয় না। বেশকিছু দিন অনুশীলনের পরে তা আবার শুরু হয়। সুতরাং একটি শর্তের প্রভাব থেকে অন্য শর্তের প্রভাব চেনা যায়।
(7) কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয় : পরীক্ষণের ক্ষেত্রে কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয় করা যায়। অর্থাৎ কী কারণে পরীক্ষাটি করতে হবে তা স্থিরীকরণের পর পরীক্ষাটি করা হয় এবং পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত করা হয় অর্থাৎ কার্যকারণ সম্পর্ক রয়েছে।
(৪) মানসিক ও দেহগত প্রক্রিয়ার সম্বন্ধ : মানসিক প্রক্রিয়া ও দেহগত প্রক্রিয়ার যে পরিমাণগত সম্পর্ক রয়েছে তা পরীক্ষণের মাধ্যমে নির্ধারণ করা যায়।
(9) মানসিক প্রক্রিয়ার বিভিন্ন দিক : পরীক্ষণ পদ্ধতির সাহায্যে মানসিক প্রক্রিয়ার অন্তর্দর্শন ও পর্যবেক্ষণ অর্থাৎ এর অন্তরঙ্গ ও বহিরঙ্গ উভয় দিকই জানা যায়। ফলে মানসিক প্রক্রিয়ার পূর্ণরূপের পরিচয় পাওয়া যায়।
(10) সাধারণীকরণ: পরীক্ষণ পদ্ধতির একটি বিশেষ সুবিধা হল ফলাফলের সাধারণীকরণ। এর অর্থ হল অল্পসংখ্যক দৃষ্টান্ত থেকে সাধারণ সত্যে উপনীত হওয়া।
(11) পরীক্ষণের ফলাফল প্রকাশ: পরীক্ষণের। ‘নিয়মাবলি ও ফলাফল বস্তুনিষ্ঠভাবে অন্যান্য বৈজ্ঞানিক অবগতির জন্য প্রকাশ করা যায়।
(12) পরীক্ষণের পুনরাবৃত্তি : পরীক্ষণ পদ্ধতির অপর একটি সুবিধা হল। পুনরাবৃত্তি। দৃষ্টান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি করে এই পদ্ধতিতে কোনো বিষয়ের উপর। বারবার পরীক্ষণকার্য পরিচালনা করা যায়।
আরও পড়ুন –
১। অনুসন্ধান পদ্ধতি কী? মনোবৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান পদ্ধতির লক্ষ্যগুলি কী কী?
২। অনুসন্ধানের পর্যায়গুলি আলোচনা করো।
৪। পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।
৫। পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির প্রকারভেদ সংক্ষেপে আলোচনা করো।
৬। অংশগ্রহণকারী পর্যবেক্ষণের সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা করো।
৭। অংশগ্রহণকারী নয় পর্যবেক্ষণের সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা করো।
৮। পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিকে উন্নত করার জন্য কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন?
৯। একটি আদর্শ পর্যবেক্ষণের বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলি সম্পর্কে লেখো।
১০। পর্যবেক্ষণের তথ্য সংগ্রহকারী উপকরণগুলি (Tools of Observation) উল্লেখ করো।
১১। পর্যবেক্ষণমূলক অনুসন্ধানের গুরুত্ব সংক্ষেপে আলোচনা করো।
১২। পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধাগুলি বর্ণনা করো।
১৩। পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি কাকে বলে? পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির ব্যবহার লেখো।
১৪। পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহের কৌশলগুলি সংক্ষেপে ‘আলোচনা করো।
১৫। নিজস্ব মতামত প্রকাশের পদ্ধতি কী? নিজস্ব মতামত প্রকাশের পদ্ধতিতে তথ্যসংগ্রহের কৌশলগুলি আলোচনা করো।
১৬। সাক্ষাৎকার পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধাগুলি লেখো।
১৭। নিজস্ব মতামত প্রকাশের পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা করো।
১৮। পরীক্ষামূলক পদ্ধতি কাকে বলে? এই পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য লেখো।