পরীক্ষামূলক পদ্ধতির অসুবিধাগুলি লেখো
পরীক্ষামূলক পদ্ধতির অসুবিধা
পরীক্ষণ পদ্ধতি সর্বোত্তম পদ্ধতি হলেও এর কতকগুলি অসুবিধা রয়েছে। সেগুলি নিম্নে উল্লেখ করা হল-
(1) গবেষণা বাইরের ঘটনার ক্ষেত্র অপ্রযোজ্য: মনোবিজ্ঞানের গবেষণায় পরীক্ষণ পদ্ধতির ব্যবহার সীমিত। যেসব ঘটনা গবেষণাগারে সৃষ্টি করা যায় না, বরং এর জন্য অপেক্ষা করতে হয়-সেসব ক্ষেত্রে পরীক্ষা পদ্ধতি অচল।
(2) সামাজিক অবস্থায় সৃষ্ট আচরণের ক্ষেত্রে অপ্রযোজ্য: সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে কিছু আচরণের সৃষ্টি হয়, যেমন-জনমত, মনোভাব, বিশ্বাস ইত্যাদি। এইসব ক্ষেত্রে পরীক্ষণ পদ্ধতির ব্যবহার খুবই অসুবিধাজনক।
(3) পরীক্ষণ পদ্ধতি প্রয়োগে অসুবিধা: বেশকিছু বিষয় বা সমস্যা রয়েছে যেগুলিকে পরীক্ষণ পদ্ধতির আওতায় আনা সম্ভব হয় না। যেমন- কোনো বিশেষ প্রথার কারণ, বিভিন্ন সামাজিক প্রথা, রীতিনীতি ইত্যাদি।
(4) বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির বিচ্যুতি: বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি পরীক্ষণে কঠোরভাবে মেনে চলা হয়, তাই এক্ষেত্রে সামান্য বিচ্যুতি ঘটলে পরীক্ষণের ফলাফলে ত্রুটি আসে।
(5) নিয়ন্ত্রণ অযোগ্য উপাদান: পরীক্ষণের ক্ষেত্রে অনেক উপাদান রয়েছে যেগুলি নিয়ন্ত্রণের যোগ্য নয়। যেমন-বংশগতি, চরিত্র ইত্যাদি। এইসব ক্ষেত্রে ওই ধরনের উপাদান নিয়ে পরীক্ষণ করা যায় না।
(6) কৃত্রিম পদ্ধতি: কিছু কিছু পরীক্ষণের ক্ষেত্রে কৃত্রিম পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। যেমন-শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাবিজ্ঞানের কোনো বিষয়ে পাঠদানের ক্ষেত্রে মূর্ত জিনিস ব্যবহার করে পাঠদান করলে শিক্ষার্থীরা যতটা মনোযোগী হবে, তার পরিবর্তে এই পাঠদানকালে যদি চার্ট বা ব্ল্যাকবোর্ড ইত্যাদি অর্থাৎ কৃত্রিম পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তবে, শিক্ষার্থীদের বিষয়ের প্রতি মনোযোগের মধ্যে পার্থক্য দেখা যাবে।
(7) পরীক্ষণের ত্রুটি: পরীক্ষণ ত্রুটিপূর্ণ হলে সিদ্ধান্ত ত্রুটিপূর্ণ হয়। যেমন- শিক্ষাক্ষেত্রে নমুনা নির্বাচন ত্রুটিপূর্ণ হলে পরীক্ষণে ত্রুটি আসে এবং এর ফলে সিদ্ধান্ত ত্রুটিপূর্ণ হয়।
(৪) যন্ত্রপাতির দুষ্প্রাপ্যতা: উপযুক্ত যন্ত্রপাতির দুষ্প্রাপ্যতার কারণে অনেকসময় গবেষককে নতুন যন্ত্রপাতি ও নকশা নির্মাণ করতে হয়, যা খুবই ব্যয়বহুল।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, কিছু অসুবিধা থাকলেও পরীক্ষণ – পদ্ধতিটি মনোবিজ্ঞানের গবেষণায় একটি বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি। আধুনিক বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, সংখ্যাতত্ত্বের উন্নতিসাধন ও ব্যাপক প্রচলন এবং সর্বোপরি গবেষণার নতুন নতুন উপকরণ আবিষ্কারের ফলে পরীক্ষণ পদ্ধতির ব্যাপক প্রসার লাভ ঘটেছে।
(9) পুররাবৃত্তির অভাব: কিছু কিছু শিক্ষা ও মনোবৈজ্ঞানিক ঘটনা যেগুলির পুনরাবৃত্তি করা। সম্ভব নয় সেগুলিকে একবার পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্তে আসতে হয়, সেক্ষেত্রে। পরীক্ষণ দ্বারা সাধারণ সিদ্ধান্তে আসা কঠিন।
(10) ব্যয়সাপেক্ষ: শিক্ষাবিজ্ঞানের বিভিন্ন পরীক্ষণের ক্ষেত্রে অনেক দামী। যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হতে পারে, সেখানে পরীক্ষণ পদ্ধতি ব্যয়সাপেক্ষ হয়ে পড়ে।
(11) কৃত্তিম পরিবেশ: পরীক্ষণ পদ্ধতির একটি অন্যতম প্রধান ত্রুটি হল কৃত্রিম। পরিবেশ। কৃত্রিম পরিবেশ সৃষ্টি করে এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা চালানো হয়। গবেষণাগারের নতুন এবং নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে এসে জীবের আচরণ স্বাভাবিক না হয়ে কৃত্রিম হতে পারে।
(12) নিয়মকানুনের কাঠারতা: পরীক্ষণ পদ্ধতির একটি বিশেষ অসুবিধা হল। নিয়মকানুনের কঠোরতা। পরীক্ষককে বৈজ্ঞানিক নিয়মকানুন কঠোরভাবে। মেনে চলতে হয়।
(13) শিশু ও প্রাণীর ক্ষোভ প্রায়াগের সীমাবদ্ধভা: শিশু ও প্রাণীদের ক্ষেত্রে। পরীক্ষণ পদ্ধতি প্রয়োগের অবকাশ অত্যন্ত সীমিত।
আরও পড়ুন –
১। অনুসন্ধান পদ্ধতি কী? মনোবৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান পদ্ধতির লক্ষ্যগুলি কী কী?
২। অনুসন্ধানের পর্যায়গুলি আলোচনা করো।
৪। পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।
৫। পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির প্রকারভেদ সংক্ষেপে আলোচনা করো।
৬। অংশগ্রহণকারী পর্যবেক্ষণের সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা করো।
৭। অংশগ্রহণকারী নয় পর্যবেক্ষণের সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা করো।
৮। পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিকে উন্নত করার জন্য কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন?
৯। একটি আদর্শ পর্যবেক্ষণের বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলি সম্পর্কে লেখো।
১০। পর্যবেক্ষণের তথ্য সংগ্রহকারী উপকরণগুলি (Tools of Observation) উল্লেখ করো।
১১। পর্যবেক্ষণমূলক অনুসন্ধানের গুরুত্ব সংক্ষেপে আলোচনা করো।
১২। পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধাগুলি বর্ণনা করো।
১৩। পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি কাকে বলে? পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির ব্যবহার লেখো।
১৪। পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহের কৌশলগুলি সংক্ষেপে ‘আলোচনা করো।
১৫। নিজস্ব মতামত প্রকাশের পদ্ধতি কী? নিজস্ব মতামত প্রকাশের পদ্ধতিতে তথ্যসংগ্রহের কৌশলগুলি আলোচনা করো।
১৬। সাক্ষাৎকার পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধাগুলি লেখো।
১৭। নিজস্ব মতামত প্রকাশের পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা করো।
১৮। পরীক্ষামূলক পদ্ধতি কাকে বলে? এই পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য লেখো।
১৯। পরীক্ষণের স্তরগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।