এথেনীয় গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে বর্ণনা করো
এথেনীয় গণতন্ত্র বলতে বোঝাত জনগণের শাসন। ইংরেজি ডেমোক্রেসি (Democracy) কথাটি এসেছে গ্রিক শব্দ ডেমোস (Demos) এবং ক্রেটোস (Kratos) শব্দ দুটি থেকে। ডেমোস কথার অর্থ হল জনগণ এবং ক্রেটোস-এর অর্থ হল শাসন। এথেনীয় জনগণের অধিকাংশই ছিলেন দরিদ্র, তাই এই গণতন্ত্র ছিল দরিদ্র জনগণের শাসন।
এথেনীয় গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যসমূহ
আধুনিক গণতন্ত্রের দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচারবিশ্লেষণ করলে এথেনীয় গণতন্ত্রকে হয়তো পূর্ণ গণতন্ত্র বলা যাবে না। তথাপি বিভিন্ন সংস্কারকের সংস্কারকার্যের মধ্য দিয়ে এথেন্সে যে গণতন্ত্র বিকশিত হয়েছিল, তা পৃথিবীর প্রাচীনতম গণতন্ত্র। সার্বিক পর্যালোচনায় এর কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়, যা নিম্নরূপ-
(i) প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র
প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র ছিল এথেনীয় গণতন্ত্রের প্রথম এবং প্রধান বৈশিষ্ট্য। কারণ, নাগরিকরা একটি নির্দিষ্ট স্থানে মিলিত হয়ে সরাসরি রাষ্ট্রপরিচালনায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন। তাছাড়া একলেসিয়া ও গণ আদালতে নাগরিকদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের মাধ্যমে যাবতীয় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হত। বস্তুতপক্ষে নাগরিকগণই ছিলেন রাষ্ট্রের বিবিধ নীতি তথা কর্মসূচির প্রকৃত নির্ধারক।
(ii) লটারির মাধ্যমে নির্বাচন
এথেনীয় গণতন্ত্রের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হিসেবে লটারির মাধ্যমে নির্বাচনের বিষয়টির উল্লেখ করা যায়। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শাসনকর্তাদের লটারির মাধ্যমে বেছে নেওয়া হত। ফলস্বরূপ, প্রত্যেকেই কখনো না কখনো রাষ্ট্রপরিচালনার কাজে অংশগ্রহণ করতে পারতেন।
(iii) ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা
দরিদ্র নাগরিকরা যাতে রাষ্ট্রপরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে পারে, সে কারণে তাদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
(iv) রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত শ্রেণি
এথেনীয় গণতন্ত্রের একটি নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য হল এখানে মহিলা ও বিদেশিদের রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছিল।
(v) স্বাধীনতা
স্বাধীনতা এইপ্রকার গণতন্ত্রের অপর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। প্লেটো এথেনীয় গণতন্ত্র সম্পর্কে ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে বলেছিলেন, নাগরিক, বিদেশি, ক্রীতদাস, নারী, এমনকি জীবজন্তুরা পর্যন্ত পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করেছিল। এই উক্তি থেকে একথা স্পষ্ট যে, প্রতিটি মানুষের বাকস্বাধীনতা ছিল।
(vi) গণবিতর্ক
রাষ্ট্রের যাবতীয় নীতি নির্ধারণের জন্য এথেন্সের একলেসিয়ার অধিবেশনে বিতর্ক চলত। কোনও একটি প্রস্তাবের পক্ষে বা বিপক্ষে বিতর্কের পর সেখানে উপস্থিত নাগরিকদের সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে উক্ত প্রস্তাব গৃহীত হত।
(vii) নির্বাসন প্রথা
এথেনীয় গণতন্ত্রের আর-একটি বৈশিষ্ট্য হল নির্বাসন প্রথা বা Ostracism. ক্লিসথিনিস এথেন্সের গণতন্ত্রের নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে এর প্রবর্তন করেছিলেন। কোনও দুর্নীতিপরায়ণ নেতার বিরুদ্ধে এই ধরনের বাধ্যতামূলক নির্বাসন প্রথাটি ছিল নাগরিকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ এক হাতিয়ার।
আরও পড়ুন – শিক্ষাশ্রয়ী মনোবিজ্ঞানের অর্থ প্রশ্ন উত্তর