আজব শহর কলকেতা প্রশ্ন উত্তর Class 11 Second Semester WBCHSE

আজব শহর কলকেতা প্রশ্ন উত্তর Class 11 Second Semester WBCHSE

আজব শহর কলকেতা প্রশ্ন উত্তর
আজব শহর কলকেতা প্রশ্ন উত্তর

১। ‘তবু সমস্যাটা একই!’-লেখক কখন সমস্যার মধ্যে পড়েছেন? তখন তাঁর মানসিক অবস্থার পরিচয় দাও।

উত্তর: প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘আজব শহর কলকেতা’ প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। উক্তিটির বক্তা লেখক স্বয়ং। লেখক ছেলেবেলা থেকেই শুনে আসছিলেন যে, কলকাতা এক ‘আজব শহর’। শুনেছেন এ কথা কিন্তু তার উপযুক্ত প্রমাণ তিনি কখনোই পাননি। অর্থাৎ শোনা কথা আর বাস্তবে দেখা কলকাতার মধ্যে মিল খুঁজে পাচ্ছিলেন না লেখক। এই বিষয়ে প্রামাণিক একটি প্রবন্ধ লিখবেন বলে তিনি ভাবছিলেন, তখনই নেমেছিল প্রবল বৃষ্টি। এই অবস্থায় তিনি সমস্যায় পড়েছিলেন।

সূচিপত্র

সমস্যাটি হল সমীরণে পথ হারানোর সমস্যা। সরস ভাষায় লেখক বলেছেন-“সমীরণে পথ হারানোর বেদনা বেজে উঠল কারণ যদিও পথ হারাইনি তবু সমস্যাটা একই।” ‘সমীরণ’ কথার অর্থ হল বায়ু বা বাতাস। এখানে লেখক হয়তো ঝড়-বাতাসকেই বোঝাতে চেয়েছেন। কারণ ঝড়-বাতাসে মানুষের পথভ্রষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ঝড় অনেক ক্ষেত্রেই পরিস্থিতিকে এলোমেলো করে দেয়। তাই এমন অবস্থায় পথ হারাবার ভয় অমূলক নয়। এখানে ঝড়ের কথা না-বললেও প্রবল বৃষ্টির কথা বলেছেন লেখক। তখন লেখকের কাছে কোনো ছাতা বা বর্ষাতিও ছিল না। ট্রামে চড়ার মতো তাগদ তাঁর ছিল না-তাই বাস তো দূরের কথা ট্যাক্সি চড়তেও তাঁর বুক খচখচ করছিল। এইসময় বাড়ি ফেরার চিন্তায় তিনি ব্যাকুল হয়ে পড়েছিলেন। পথ তিনি হারাননি কিন্তু পরিস্থিতি যা হয়েছিল তাতে সমস্যাটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল পথ হারানোর মতোই বেদনাদায়ক। তখন লেখক অদ্ভুত মানসিক অস্থিরতায় পড়েছিলেন।

২। ‘সামনে দেখি বড় বড় হরফে লেখা ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ”-এমন লেখা দেখে লেখক কী ভেবেছিলেন, তা পাঠ্য প্রবন্ধ অবলম্বনে লেখো।

উত্তর: সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘আজব শহর কলকেতা’ নামক প্রবন্ধে দেখা যায় প্রবল বৃষ্টিতে লেখক যখন পথ হারানোর বেদনায় আক্রান্ত, তখনই তাঁর চোখে পড়ে বড়ো বড়ো হরফে লেখা ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’ লেখাটি। খাস কলকাতার বুকে ফরাসি বইয়ের দোকান দেখে লেখক বেশ বিস্মিত হন। এই অবস্থায় লেখকের মনে দুইপ্রকার ভাবনার উদয় হয়।

প্রথমত, লেখক ভাবেন নিশ্চয়ই কোনো ফরাসি ভুল করে পথ হারিয়ে কলকাতায় এসে পড়েছেন, আর ট্যাকের পয়সা খোয়াবার জন্যই তিনি এখানে ফরাসি বইয়ের দোকান খুলেছেন। কারণ বাঙালি ট্যাকের পয়সা খরচ করে বাংলা বই-ই কিনতে চায় না তো এখানে ফরাসি বই কেই-বা কিনবে। তাই রসিকতার সুরেই লেখক ফরাসি বইয়ের দোকানদারের উদ্দেশ্যে উক্ত কথাটি বলেছেন।

দ্বিতীয়ত, লেখক বাঙালি প্রকাশকদের কাছে শুনেছেন-“শুধু ভালো বই ছাপিয়ে পয়সা কামানো যায় না, রদ্দি উপন্যাসও গাদাগাদা ছাড়তে হয়।” তাই লেখক ভাবলেন শুধু ফরাসি বই ছেপে দোকানে মুনাফা হবে না, ভিতরে অন্য ধরনের বইও হয়তো আছে। অর্থাৎ ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’ হয়তো হাতির দাঁতের মতোই-শুধু দেখার জন্য; চিবোবার দাঁত রয়েছে ভিতরে লুকানো। অর্থাৎ বাইরে ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’-এর আড়ালে ভিতরে গিয়ে পাবেন ‘খুশবাই’, ‘সাঁঝের পীর’, ‘ওষ্ট-রাগ’ শ্রেণির কিছু বইপত্র। ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’ লেখাটি দেখে লেখকের মনে এই ধারণাগুলিই হয়েছিল।

৩। ‘সেই ভরসায় ঢুকলুম।’-বক্তা কোন্ ভরসায় কোথায় গেলেন? সেখানে গিয়ে তিনি কী দেখলেন?

উত্তর: সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘আজব শহর কলকেতা’ প্রবন্ধের বক্তা-লেখক কলকাতার বুকে ফরাসি বুক শপ দেখে খুব অবাক হয়ে যান। বিস্ময়ের ঘোর কাটতে তিনি ভাবলেন বাইরে ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’ লেখা থাকলেও ভিতরে গিয়ে তিনি অবশ্যই পাবেন- ‘খুশবাই’, ‘সাঁঝের পীর’, ‘লোরেণু’, ‘ওষ্ট-রাগ’ ধরনের বইপত্র। কারণ ফরাসি বই বিক্রি করে দোকানদারের মুনাফা হবে না, তাই মুনাফার জন্য ফরাসি বইয়ের দোকানদার হয়তো উক্ত ‘রদ্দি’ শ্রেণির বইপত্রও তাঁর দোকানে রাখবেন। এই ভরসাতেই লেখক ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’-এ ঢুকেছিলেন।

একদিকে বৃষ্টিও হচ্ছিল প্রবলভাবে, অন্যদিকে ‘রদ্দি’ কিছু পাওয়ার আশায় লেখক তো ফরাসি বইয়ের দোকানে গিয়ে পড়েন কিন্তু সেখানে গিয়ে লেখকের আর বিস্ময়ের সীমা-পরিসীমা রইল না। লেখক বুঝতে পারলেন যে, শুধুমাত্র ফরাসি বই বিক্রি করেই দোকানদার পয়সা উপার্জন করতে চাইছেন, তাই দোকানে নানা প্রকারের ফরাসি বই তিনি রেখেছেন। লেখক দেখতে পান গাদাগাদা হলদে আর সাদা মলাটওয়ালা ফরাসি বই দোকানে রয়েছে। কিছু বইকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখা হয়েছে আবার কিছু বই যত্রতত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। লেখকের মনে হয় কলকাতায় এসে ফরাসি দোকানদার বাঙালি হয়ে গেছেন। বাঙালি দোকানদারদের মতোই বইগুলিকে সাজিয়েছেন টাইপরাইটারের হরফ সাজানোর মতো করে। অর্থাৎ ‘সিজিল’-টা জানা থাকলে চোখ বন্ধ করেই ইচ্ছামতো বই বের করে নেওয়া যাবে। ফুটফুটে এক মেমসাহেবকে লেখক সেখানে দেখতে পান। ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’-এ গিয়ে লেখক এমন দৃশ্যই দেখেন।

৪। ‘ফুটফুটে এক মেমসাহেব এসে ইতিমধ্যে ফরাসি হাসি হেসে দাঁড়িয়েছেন।’-মেমসাহেব কখন এসে দাঁড়িয়েছিলেন? মেমসাহেবের পরিচয় দাও।

উত্তর: ‘আজব শহর কলকেতা’ নামক প্রবন্ধে দেখা যায় শহর কলকাতার বুকে ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’ দেখে বিস্মিত লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী সেখানে প্রবেশ করেন। তিনি ভেবেছিলেন বাইরে ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’ লেখা থাকলেও ভিতরে দেখতে পাবেন ‘খুশবাই’, ‘সাঁঝের পীর’ জাতীয় বিষয়। কিন্তু ভিতরে প্রবেশ করে তিনি দেখলেন দোকানদার তাঁর দোকানে কেবল ফরাসি বই-ই রেখেছেন। বই সাজানোর পদ্ধতি দেখে লেখকের অনুমান হয়-ফরাসি দোকানদার কলকাতায় এসে বাঙালি হয়ে গেছেন। এর মধ্যেই মেমসাহেব দোকানে এসে দাঁড়িয়েছিলেন।

লেখক ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’-এ প্রবেশ করে এক ফুটফুটে ফরাসি মেমসাহেবকে দেখতে পেলেন। গল্প অনুযায়ী মেমসাহেবের যে সংক্ষিপ্ত পরিচয় ফুটে উঠেছে তা হল-মেমসাহেব মুখে ‘ইয়ের ইয়েস’ বললেও তাঁর চোখ দেখে স্পষ্ট বোঝা যায় তিনি ইংরেজি ভাষায় ততটা দক্ষ নন। ফরাসি ভাষাতেও তাঁর পারদর্শিতা কম বলেই কথকের ‘টুটিফুটি’ ফরাসি ভাষা শুনেও তাঁর প্রশংসা করেছিলেন। শুধু তাই নয় অতি সযত্নে কথকের বইয়ের ফর্দ টুকে নিয়ে বই আসামাত্র কথককে খবর দেবেন বলে ভরসাও যুগিয়েছিলেন।

কথকের কাছে তিনি তাঁর পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন মাত্র তিন মাস হল তিনি কলকাতায় এসেছেন। তাই ইংরেজি যথেষ্ট জানেন না, তবে কাজ চালিয়ে নিতে পারেন। বইয়ের দোকানটি তাঁর নয়, তাঁর এক বান্ধবীর। বান্ধবীর অনুপস্থিতিতে শুধুমাত্র ফরাসি ভাষা ও সাহিত্যের প্রচার লাভের জন্য তিনি দোকানে বসেছেন।

৫। ‘মেমসাহেব আদেশ দিলেন, ‘মসিয়ো, ফরাসীতে কথা বললেই পারেন’-মেমসাহেব কখন এমন আদেশ দিয়েছিলেন? তখন উদ্দিষ্ট ব্যক্তির মনোভাব কেমন হয়েছিল লেখো।

উত্তর: ‘আজব শহর কলকেতা’ নামক প্রবন্ধে আমরা দেখি প্রবন্ধকার সৈয়দ মুজতবা আলী ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’-এ প্রবেশ করলে দোকানের ফরাসি মেমসাহেব ফরাসি ভাষায় লেখকের কাছে জানতে চান যে লেখকের ‘কি চাই’। এরপর মেমসাহেবের সঙ্গে লেখকের কথোপকথন চলতে থাকে। মেমসাহেব ফরাসি ভাষায় কথা বললেও, লেখক ইংরেজিতেই কথা বলতে থাকেন। হঠাৎ করেই ফরাসি রাজদূত মসিয়ো ফ্রাঁসোয়া পঁসে-র নাম উচ্চারণ করতে গিয়ে লেখকের মুখ দিয়ে কিছুটা ফরাসি ভাষা বেরিয়ে পড়েছিল। এইসময় সুযোগ পেয়ে মেমসাহেব লেখককে প্রশ্নোদ্ভূত আদেশটি দিয়েছিলেন।

মেমসাহেবের আদেশে লেখকের মনে হল এই আদেশ যেন বাঙালির জাত্যভিমানে আঘাত করার সমতুল্য। কারণ, কেনই-বা তিনি একজন মেমসাহেবের কথায় নিজের ভাষা ছেড়ে মেমের ভাষায় কথা বলতে যাবেন। ফরাসি ভাষার চর্চা একসময় তিনি করেছেন। লেখকের কথামতো বলা যায় এখনও চেষ্টা করলে কেঁদেকুকিয়ে তিনি ফরাসি ভাষায় কথা বলতে পারবেন, তবু তাঁর মন যেন মেমসাহেবের কথার প্রতিবাদ করে ওঠে। আবার তিনি এমনও ভাবেন যে মেমসাহেব যদি কলকাতার বুকের ওপর বসে বাংলা-এমনকি ইংরেজিও না বলতে পারেন, তবে লেখক ফ্রান্স থেকে হাজার মাইল দূরে দাঁড়িয়ে ‘টুটিফুটি’ ফরাসি বললে কোনো দোষই হবে না। অর্থাৎ মেমসাহেবের আদেশ (অনুরোধ) শুনে লেখকের মনে দ্বিধাদ্বন্দুময় অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছিল।

৬। ‘আমাকে আর পায় কে?’- কোন্ প্রসঙ্গে বক্তার এই উক্তি? উক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা ‘আজব শহর কলকেতা’ নামক প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। কলকাতার বুকে দেখতে পাওয়া ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’-এ গিয়ে লেখক দোকানের মেমসাহেবের সঙ্গে কথোপকথনের সময় হঠাৎ করেই কিছুটা ফরাসি ভাষায় কথা বলে ফেলেন। তখন উক্ত মেমসাহেব লেখককে ফরাসিতেই কথা বলতে অনুরোধ করেন। লেখকের মুখে ফরাসি শুনে মেমসাহেব খুব খুশি হয়ে বাহবা দিতে থাকেন। ভালো কিছুর প্রশংসা করতে ফরাসিরা যে পিছিয়ে আসে না, সেই প্রসঙ্গেই লেখক তথা বক্তা প্রশ্নের উক্তিটি করেছেন।

মেমসাহেবের অনুরোধে লেখকের বাঙালি জাত্যভিমানে আঘাত লাগলেও দ্বিধাদ্বন্দু কাটিয়ে লেখক ফরাসি ভাষায় কথা বলতে শুরু করেন। বহুদিনের পুরানো মরচে পড়া অনভ্যাসটাকে নতুন করে শুরু করার মধ্যে যে আনন্দ, তা অনুভব করেন তিনি। মেমসাহেব যতই শোনেন ততই লেখকের প্রশংসা করতে থাকেন এবং বলতে থাকেন- ‘বাহবা বাহবা বাহবা।’ কখনও বলেন- ‘গলা ছাড়িয়া গান গাহো।’ ফরাসিদের এটাই একটা বড়ো গুণ যে, তারা গুণীর এবং গুণের সর্বদা প্রশংসা করতে জানে, এটা তাদের জাতীয় বৈশিষ্ট্য। মেমসাহেবের প্রশংসায় লেখক আরও উৎসাহিত হন এবং তিনি ব্যাকরণ বা প্রকৃত ফরাসি উচ্চারণের তোয়াক্কা না-করেই অনর্গল ফরাসি ভাষায় কথা বলে গেলেন। লেখকের কথা থেকেই বোঝা যায় যে, তিনি কতটা সঠিক ফরাসি উচ্চারণ করেছেন তা নিয়ে নিজেই নিঃসন্দেহ ছিলেন না; তবে মেমসাহেব খুব খুশি হয়েছেন বোঝা যায়। তাই রসিকতার সুরেই তিনি প্রশ্নোদ্ভূত কথাটি বলেছেন।

৭। ‘অতি সযত্নে তিনি আমার বইয়ের ফর্দ টুকে নিলেন,’ -‘তিনি’ কোন্ পরিস্থিতিতে বক্তার বইয়ের ফর্দ টুকে নিয়েছিলেন? এর পরে ‘তিনি’ বক্তাকে কী বলেছিলেন?

উত্তর: প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘আজব শহর কলকেতা’ নামক প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে ‘তিনি’ হলেন ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’-এর ফরাসি মেমসাহেব। ফ্রেঞ্চ বুক শপ-এ প্রবেশ করে মেমসাহেবের সঙ্গে বক্তা অর্থাৎ লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী ফরাসি রাজদূত মসিয়ো ফ্রাঁসোয়া পঁসে-র কথা বলতে গিয়ে কিছুটা ফরাসি ভাষা উচ্চারণ করে ফেলেন। তখন সুযোগ পেয়ে মেমসাহেব লেখককে ফরাসিতে কথা বলার অনুরোধ করেন। কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দু থাকলেও লেখক ফরাসি ভাষায় কথা বলা শুরু করেন। লেখকের মুখে ফরাসি ভাষা শুনে মেমসাহেব খুব খুশি হন এবং লেখকের প্রশংসা করেন। প্রশংসা শুনে লেখক আরও উৎসাহিত হয়ে ফরাসি ভাষার ব্যাকরণের তোয়াক্কা না-করেই অনর্গল ফরাসি ভাষায় কথা বলতে থাকেন। এইরকম পরিস্থিতিতে খুব খুশি হয়ে, মেমসাহেব অতি যত্নসহকারে লেখকের বইয়ের ফর্দ টুকে নেন।

ফর্দটি লিখে নেওয়ার পর মেমসাহেব লেখককে জানান ফর্দমতো বই আসার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি সেই খবর লেখককে জানাবেন বলে ভরসা দেন। সেইসঙ্গে সাত সমুদ্র তেরো নদীর এপারে বিদেশির সঙ্গে মাতৃভাষায় (ফরাসি ভাষায়) কথা বলতে পারার আনন্দে সুখ-দুঃখের দু-চারটি কথাও তিনি লেখককে বলে ফেলেন। তিনি আরও বলেন যে, তিনি এদেশে এসেছেন মাত্র তিন মাস হয়েছে। তাই ইংরেজিতে স্বচ্ছন্দ নন, তবে কাজ চালিয়ে নিতে পারেন। তা ছাড়া বইয়ের দোকান তাঁর নয়, তাঁর এক বান্ধবীর। সেই বান্ধবীর অনুপস্থিতিতে শুধুমাত্র ফরাসি ভাষা ও সাহিত্যের প্রচারের উদ্দেশ্যেই তিনি উক্ত দোকানে বসেছেন।

৮। ‘আমার মনে বড় আনন্দ হল’-বক্তার আনন্দের কারণ কী? ‘আজব শহর কলকেতা’-র শেষাংশে লেখক ‘আরেক দিন হবে’ বলেছেন কেন?

উত্তর: ‘আজব শহর কলকেতা’ প্রবন্ধের লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী একদিন কলকাতার বুকে অবস্থিত এক ফ্রেঞ্চ বুক শপ-এ প্রবেশ করে দোকানের মেমসাহেবের সঙ্গে আলাপচারিতা শুরু করেন। একসময় লেখক অনুভব করেন যে, একদা পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষ প্যারিসে জড়ো হত ফরাসি বই বেচবার জন্য। সেইসময় এক ‘বাঙাল ছোকরা’ দোকানে এসে কমার্শিয়াল আর্টের বই-এর খোঁজ করে। এই ঘটনায় লেখকের মনে খুব আনন্দ হয়েছিল। বক্তা আনন্দ পেয়েছেন এই ভেবে যে-বাঙালিরা তাহলে বই কিনছে, এমনকি বিদেশি ভাষার বইয়ের প্রতিও তারা আগ্রহ প্রকাশ করছে। বাঙালিরা গাঁটের পয়সা খরচ করে বই কেনে না বলে অপবাদ রয়েছে, আবার সেই বাঙালিই ফরাসি বই কেনার জন্য সচেষ্ট হয়েছে। অর্থাৎ শিল্প-সংস্কৃতির জগতে বাঙালির অবদান রয়েছে-এটাই বক্তার আনন্দের কারণ।

আলোচ্য রচনার শেষাংশে দেখা গেল লেখক একটি খাসা বই পেয়েছেন। তা হল-ন্যুরনবর্গের মোকদ্দমায় প্রাপ্ত দলিল-দস্তাবেজের সাহায্যে গড়ে তোলা • হিটলারের চরিত্রবর্ণন। হিটলার সম্পর্কে তাঁর শত্রু ফরাসিরা কী ভাবতেন, তার পরিচয় রয়েছে বইটিতে। বইটি সম্পর্কে লিখবেন বলে যেই গৌরচন্দ্রিকা • শেষ করেছেন, তখনই ভোরের কাক ‘কা-কা’ করে লেখককে মনে করিয়ে দেন তার কলম ফুরিয়ে গেছে। অর্থাৎ লেখাটা আর শেষ করা হল না। তাই লেখক বলেছেন-‘আরেক দিন হবে’।

৯। ‘আজব শহর কলকেতা’ প্রবন্ধের নামকরণের সার্থকতা আলোচনা করো।

উত্তর: সাহিত্যের একটি প্রধান অঙ্গ নামকরণ। নামকরণ নানা প্রকারের হতে পারে। যেমন-চরিত্রপ্রধান, বিষয়কেন্দ্রিক, ব্যঞ্জনাধর্মী ইত্যাদি।

লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী ছেলেবেলা থেকেই শুনে আসছেন কলকাতা এক আজব শহর, তবে এমন কথা যে সত্যি তার কোনো প্রমাণ তিনি পাননি। এই বিষয়ে একখানা প্রবন্ধ লিখবেন ভাবছেন, এমন সময়েই নামল প্রবল বৃষ্টি। ছাতা নেই, বর্ষাতি নেই, ট্রামে-বাসে চাপার মতো তাগদও (শক্তি) শরীরে নেই। এমন সময়ই তিনি প্রমাণ পেলেন কলকাতা এক আজব শহর। সামনেই দেখলেন বড়ো বড়ো হরফে লেখা ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’।

কলকাতার বুকে ফ্রেঞ্চ বুক শপ দেখে লেখক অবাক হন। প্রথমে ভাবেন ভুল করেই কোনো ফরাসি এখানে ফরাসি বই-এর দোকান খুলেছেন। আবার তিনি এ কথাও ভাবেন যে, ফরাসি বই বিক্রির আড়ালে অন্যান্য দ্রব্যও হয়তো এখানে বিক্রির ব্যবস্থা থাকবে। দোকানের ভিতরে ঢুকে লেখকের বিস্ময়ের সীমা রইল না। সত্যিই সেখানে ফরাসি বই বিক্রয়ের সুব্যবস্থা রয়েছে। দোকানে গাদাগাদা ফরাসি বই। শহর কলকাতার বুকে এত সুন্দর ফরাসি বইয়ের দোকান দেখে লেখক বিস্মিত হয়েছেন। আবার একইসঙ্গে তাঁর মনে হয়েছে শহর কলকাতাতেই এটা সম্ভব, তাই কলকাতা আজব শহর।

দোকানে রয়েছে ফুটফুটে এক মেমসাহেব। তিনি ইংরেজিতে দক্ষ নন, তাই লেখককে তিনি ফরাসিতে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেন। লেখকও সেই অনুরোধ রক্ষা করেন এবং মেমসাহেবের সঙ্গে ফরাসিতে কথোপকথনের মাধ্যমে মেমসাহেবের কুর্নিশ লাভ করেন। আবার যে বাঙালি বই কেনায় কার্পণ্য করে, সেই বাঙালি এক ছোকরা দোকানে ফরাসি ভাষায় কমার্শিয়াল আর্টের বই-এর খোঁজ করে। এক্ষেত্রেও লেখকের মনে হয়েছে, কলকাতা শহরের পক্ষেই এমনটা সম্ভব, তাই আজব এই শহর কলকাতা।

আর একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, লেখক প্রবন্ধের নামকরণে ‘কলকেতা’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন, ‘কলকাতা’ ব্যবহার করেননি। এক্ষেত্রে সম্ভবত লেখক রসিকতার আশ্রয় নিয়েছেন। অর্থাৎ লেখক ‘আজব’ কথাটি ‘কলকেতা’ শব্দের মধ্যেও প্রয়োগ ঘটিয়েছেন।

পূর্বোক্ত কারণগুলির জন্যই বলা যায় যে, আলোচ্য প্রবন্ধটির ব্যঞ্জনাধর্মী নামকরণ হয়েছে এবং তা সার্থক হয়ে উঠেছে।


১। ‘তাই নিয়ে একখানা প্রামাণিক প্রবন্ধ লিখব ভাবছি’ -‘তাই  নিয়ে’ বলতে লেখক কী নিয়ে ভাবছিলেন আর তখন কোন্ ঘটনা ঘটল?

উত্তর: প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটি সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘আজব শহর কলকেতা’ নামক প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। লেখক ছোটোবেলা থেকে। শুনেছেন যে কলকাতা আজব শহর, অথচ তার প্রমাণ তিনি পাননি। ‘তাই নিয়ে’ বলতে লেখক এ কথাই ভাবছিলেন।

এই ব্যাপারে তিনি যখন একটি প্রবন্ধ লিখবেন ভাবছেন এমন সময় জোরে বৃষ্টি নামল। লেখকের কাছে কোনো বর্ষাতি বা ছাতা ছিল না। বাস তো দূরের কথা ট্রামে চড়ার শক্তিও ছিল না। এদিকে ট্যাক্সিতে চড়তেও বুক কচ কচ করছিল তাঁর। বাড়ি ফেরার চিন্তাটা ‘পথহারানোর’ মতোই বেদনাদায়ক মনে হচ্ছিল লেখকের। এমন সময় সামনে একটি ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’ তাঁর চোখে পড়ে।

২। ‘যদিও পথ হারাইনি তবু সমস্যাটা একই।’-প্রসঙ্গসহ উক্তিটির তাৎপর্য আলোচনা করো।

উত্তর: প্রশ্নের উদ্ধৃত অংশটি সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘আজব শহর কলকেতা’ নামক প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। লেখক ছোটোবেলা থেকেই শুনেছেন কলকাতা আজব শহর কিন্তু তার প্রমাণ তিনি পাননি। এই বিষয়ে একটি প্রবন্ধ লিখবেন ভাবছেন, এমন সময়েই নামল প্রবল বৃষ্টি। সেই প্রসঙ্গেই তিনি উক্তিটি করেছেন।

‘সমীরণ’ অর্থাৎ বায়ু বা বাতাস। এখানে লেখক হয়তো ঝড়-বাতাসকে বোঝাতে চেয়েচেন। কারণ ঝড়-বাতাসে মানুষের পথভ্রষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। ঝড় অনেক সময় পরিস্থিতিকে এলোমেলো করে দিতে পারে, তাই পথ হারানোর ভয় অমূলক নয়। এখানে ঝড় না-হলেও বৃষ্টি নেমেছিল প্রবল। আর লেখকের কাছে ছিল না কোনো ছাতা বা ছিল না কোনো বর্ষাতি। – তা ছাড়া বাস বা ট্রামে চড়ার শক্তিও অনুপস্থিত। কাজেই পথ না-হারালেও • সমস্যাটা ছিল পথ হারানোর বেদনার মতোই গভীর। উদ্ধৃতাংশের মাধ্যমে ৪ লেখক এ কথাই বলতে চেয়েছেন।

৩। ‘বোধ হয় হাতীর দাঁতের মত-শুধু দেখাবার জন্য,’ -কোন্ প্রসঙ্গে কেন বক্তা এরূপ উক্তি করেছেন?

উত্তর : প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘আজব শহর কলকেতা’ নামক প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। কলকাতার বুকে অবস্থিত ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’ প্রসঙ্গে লেখক উক্তিটি করেছেন।

প্রবল বৃষ্টিতে লেখক যখন পথ হারানোর বেদনায় আক্রান্ত, তখনই তাঁর চোখে পড়ে বড়ো বড়ো হরফে লেখা ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’ লেখাটি। এই ঘটনাকে রসিকতার সুরে লেখক বলেছেন-নিশ্চই কোনো ফরাসি পথ হারিয়ে কলকাতায় এসে পড়েছেন, আর ট্যাঁকে যে দুটি পয়সা আছে তা নষ্ট করার জন্য ফরাসি বইয়ের দোকান খুলেছেন। কারণ বাঙালিরা পকেটের পয়সা খরচ করে বাংলা বই-ই কেনে না তো ফরাসি বই কেনা দূরস্ত। আবার হাতির দাঁত যেমন চিবোবার কাজে লাগে না, শুধু বাইরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এক্ষেত্রেও তেমন হতে পারে; ফরাসি বইয়ের আড়ালে ভিতরে অন্য কিছু পাওয়া যেতে পারে-এমন ধারণা থেকেই লেখক প্রশ্নোদ্ভূত উক্তিটি করেছেন।

৪। ‘ফরাসী দোকানদার কলকাতায় এসে বাঙালী হয়ে গিয়েছে।’ বক্তার এমন অনুভূতির কারণ লেখো।

উত্তর: প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটির বক্তা হলেন ‘আজব শহর কলকেতা’ প্রবন্ধের লেখক রম্যরচনাকার সৈয়দ মুজতবা আলী। লেখক ভেবেছিলেন ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’ বাইরে লেখা থাকলেও ভিতরে গিয়ে ‘খুশবাই’, ‘সাঁঝের পীর’-এর মতন অন্যান্য উপকরণও পাবেন। কারণ কলকাতার বুকে শুধু ফরাসি বই বিক্রি করে পয়সা কামানো অসম্ভব বলেই লেখকের ধারণা ছিল। কিন্তু ভিতরে গিয়ে লেখকের অনুভূতি হল। সেখানে গাদাগাদা হলদে আর সাদা মলাটওয়ালা প্রচুর ফরাসি বই রয়েছে- কিছু সাজানো-গোছানো আবার কিছু ছড়ানো-ছিটানো। বাঙালি দোকানদারের মতোই দোকানের মালিক টাইপরাইটারের হরফ সাজানোর মতন করে বইগুলি সাজিয়ে রেখেছেন। এসব দেখেই লেখক অনুভব করেন ফরাসি দোকানদার কলকাতায় এসে বাঙালি হয়ে গিয়েছেন।

৫। ‘তাঁর চোখে স্পষ্ট লেখা রয়েছে ‘না’, ‘নো”-প্রসঙ্গসহ উক্তিটির ব্যাখ্যা দাও।

উত্তর: প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটি সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘আজব শহর কলকেতা’ নামক প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’-এর জনৈক মেমসাহেব লেখকের মুখের ইংরেজি শব্দের অর্থ বুঝতে পারছেন না- এই প্রসঙ্গেই উক্তিটি করা হয়েছে।

‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’-এ লেখক প্রবেশ করলে দোকানের মেমসাহেব লেখকের কাছে ফরাসি ভাষায় জানতে চান যে, লেখকের কী চাই। প্রথম যৌবনে ফরাসি ভাষায় দখল থাকলেও বর্তমানে তাঁর সেই দক্ষতা নেই। তাই ফরাসিতে কথা বলার ইচ্ছে থাকলেও লেখক ইংরেজিতে কথা বলতে থাকেন। এদিকে দোকানের মেমসাহেব ইংরেজি বুঝতে না-পারলেও মুখে স্বীকার করেন না এবং ‘ইয়েস ইয়েস’ বলে এমন ভাব দেখান যেন সব বুঝতে পারছেন। লেখক তাঁর চোখ দেখেই তা অনুভব করতে পারেন প্রশ্নোদ্ভূত অংশের মাধ্যমে লেখক এ কথাই বোঝাতে চেয়েছেন।

৬। ‘ভাবলুম, দুগ্‌গা বলে ঝুলে পড়ি।’-কে, কখন এমন ভেবেছিলেন?

উত্তর: প্রশ্নোদ্ভূত ভাবনাটি ভেবেছিলেন ‘আজব শহর কলকেতা’ প্রবন্ধের লেখক রম্যরচনাকার সৈয়দ মুজতবা আলী।

ফ্রেঞ্চ বুক শপ-এ প্রবেশ করে দোকানের মেমসাহেবের সঙ্গে কথোপকথনের সময় হঠাৎই ফরাসি রাজদূত মসিয়ো ফ্রাঁসোয়া পঁসে-র নাম উচ্চারণ করতে গিয়ে লেখকের মুখ দিয়ে কিছুটা ফরাসি ভাষা বেরিয়ে পড়ে। তখনই মেমসাহেব লেখককে ফরাসি ভাষায় কথা বলতে অনুরোধ করেন। মেমসাহেবের কথায় লেখকের জাত্যভিমানে আঘাত লাগে। কারণ কেন তিনি মেমের কথামতো ফরাসি বলতে যাবেন! কেঁদেকুকিয়ে ফরাসি বলতে পারলেও তাঁর মন প্রতিবাদ করে ওঠে। আবার তিনি এ কথাও ভাবেন যে, মেমসাহেব যদি কলকাতার বুকের ওপর বসেও বাংলা এমনকি ইংরেজিও না বলতে পারেন, তখন লেখক ফ্রান্স থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরে দাঁড়িয়ে কিছুটা ফরাসি বলতে তেমন কোনো অসুবিধে হবে না। এমন সময়েই লেখক প্রশ্নোদ্ভূত ভাবনাটি ভেবেছিলেন।

৭। ‘একটা কিছু ভালো দেখতে পেলেই প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ওঠে।’-কাদের সম্পর্কে কেন লেখক এমন কথা বলেছেন?

উত্তর: ‘আজব শহর কলকেতা’-র লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী ফরাসিদের সম্পর্কে প্রশ্নোদ্ভূত কথাটি বলেছেন।

বহুদিন ফরাসি ভাষার চর্চায় না-থাকা সত্ত্বেও লেখকের মুখের ফরাসি ভাষা শুনে ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’-এর জনৈক মেমসাহেব লেখকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন। মেমসাহেব লেখকের তারিফ করে কখনও ‘বাহাবা বাহাবা’ বলেন, আবার কখনও বলেন ‘গলা ছাড়িয়া গান গাহো’। ফরাসিরা গুণীর এবং গুণের সর্বদাই প্রশংসা করেন; এটা তাদের জাতীয় বৈশিষ্ট্য। এখানেও ফরাসি মেমসাহেব লেখকের ফরাসি বলতে পারার গুণেরই প্রশংসা করেছেন। তাই লেখক প্রশ্নোদ্ভূত কথাটি বলেছেন।

৮। ‘বই আসা মাত্র আমায় খবর দেবেন সে ভরসাও দিলেন,’ -কে, কাকে, কোন্ পরিস্থিতিতে এমন ভরসা দিয়েছিলেন?

উত্তর: সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘আজব শহর কলকেতা’ প্রবন্ধে উল্লেখিত ফরাসি মেমসাহেব লেখককে ভরসা দিয়েছিলেন।

ফ্রেঞ্চ বুক শপ-এ প্রবেশ করে মেমসাহেবের সঙ্গে কথা বলতে একসময় লেখক ফরাসিতে কথোপকথন শুরু করে দেন। লেখকের ফরাসি ভাষা শুনে মেমসাহেব লেখকের প্রশংসা করলে লেখক ফরাসি ভাষার ব্যাকরণের তোয়াক্কা না-করেই অনর্গল ফরাসি ভাষায় কথা বলতে থাকেন। মেমসাহেব এতে খুব খুশি হন এবং যত্নসহকারে লেখকের বইয়ের নাম টুকে নেন। এই সময়েই মেমসাহেব লেখককে ভরসা দেন যে, লেখকের বইগুলি আসার সঙ্গে সঙ্গে লেখককে সেই সংবাদ দেওয়া হবে।

৯। ‘বইয়ের দোকান তাঁর নয়,’-এখানে ‘তাঁর’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে এবং পাঠ্যাংশ থেকে তাঁর সম্পর্কে তোমার কী ধারণা হয়েছে?

উত্তর: এখানে ‘তাঁর’ বলতে ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’-এর মেমসাহেবকে বোঝানো হয়েছে।

সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘আজব শহর কলকেতা’ প্রবন্ধে ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’-এর মেমসাহেব সম্পর্কে কিছু বিষয় জানা যায়, যা থেকে তাঁর সম্পর্কে অল্প ধারণাও করা যায়। লেখকের কথায় জানতে পারি মেমসাহেব ‘ফুটফুটে’ এবং তাঁর মুখে হাসি লেগে থাকে। তিনি ইংরেজি ভাষায় তেমন দক্ষ নন এবং মাতৃভাষা ফরাসিতেই স্বাচ্ছন্দ্য প্রকাশ করেন। মেমসাহেব কথা বলতে বড়ো ভালোবাসেন এবং গুণীর কদর বা সম্মান করতে কুণ্ঠা প্রকাশ করেন না। তিনি অকপট অর্থাৎ সহজসরল, তাই স্বীকার করতে দ্বিধা করেননি যে, তিনি যথেষ্ট ইংরেজি জানেন না এবং বইয়ের দোকানটিও তাঁর নয়। তিনি কেবল বান্ধবীর অনুপস্থিতিতে ফরাসি ভাষা ও সাহিত্যের প্রচারের উদ্দেশ্যে দোকানে বসেছেন। এ থেকেই বলতে পারি যে, ফরাসি মেমসাহেব সুন্দরী, সহজসরল অকপট, সুচিস্থিত ও বিনয়ী।

১০। ‘বাঙালী তাহলে বেশ খানিকটা এগিয়ে গিয়েছে।’ -কে, কখন এমন কথা বলেছেন এবং এতে তাঁর কোন্ মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে?

উত্তর: প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটির বক্তা হলেন ‘আজব শহর কলকেতা’ প্রবন্ধের লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী।

লেখক একদিন কলকাতার বুকে অবস্থিত এক ফ্রেঞ্চ বুক শপ-এ প্রবেশ করে সেখানে উপস্থিত মেমসাহেবকে দোকানদার মনে করে তাঁর সঙ্গে আলাপচারিতা শুরু করেন। একসময় লেখক অনুভব করেন যে, একদিন পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষ প্যারিসে জড়ো হত ফরাসি বই বেচবার জন্য। এমন সময় এক ‘বাঙ্গাল ছোকরা’ এসে দোকানে কমার্শিয়াল আর্টের বই খোঁজ করে। তখন লেখক মনে মনে আনন্দিত হয় প্রশ্নোদ্ভূত কথাটি বলেন।

উক্তিটির মধ্যে বক্তার আনন্দের প্রকাশ ঘটেছে এই ভেবে যে, বাঙালিরা তাহলে বই কিনছে বা বিদেশি ভাষার বইয়ের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করছে। অর্থাৎ শিল্পজগতের প্রসার ঘটছে বাঙালিদের মধ্যে। তাই লেখক প্রসন্ন হয়েছেন বলা যায়।

১১। ‘আরেক দিন হবে।’-বিষয়টি প্রসঙ্গসহ ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘আজব শহর কলকেতা’ নামক প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। নাৎসি জার্মানির প্রধান হিটলারের চরিত্রবর্ণন সম্পর্কিত একটি বইয়ের পরিচয় প্রসঙ্গে লেখক উক্তিটি করেছেন।

লেখক ফ্রেঞ্চ বুক শপ-এ প্রবেশ করে একসময় পছন্দমতো একটি বইয়ের সন্ধান পান। সেটি ছিল ন্যুরনবর্গের মোকদ্দমায় প্রাপ্ত দলিল-দস্তাবেজের সাহায্যে গড়ে তোলা হিটলারের চরিত্রবর্ণন। হিটলার সম্পর্কে তার শত্রু অর্থাৎ ফরাসিরা কী ভাবতেন, তার পরিচয় রয়েছে বইটিতে। এই বইটি সম্পর্কে লিখবেন বলে লেখক কলম ধরে কেবল গৌরচন্দ্রিকা করেছেন, এমন সময় লেখক অনুভব করেন ‘কলম ফুরিয়ে গিয়েছে’। এই অবস্থায় তো আর লেখা সম্ভব নয়, তাই লেখক ভাবলেন, অন্য একসময় উক্ত বিষয়ে আবার কলম ধরবেন। উদ্ধৃতাংশের মাধ্যমে লেখক এ কথাই বোঝাতে চেয়েছেন।


১। ‘এমন সময় নামল জোর বৃষ্টি।’-কখন বৃষ্টি নেমেছিল?

উত্তর: ‘আজব শহর কলকেতা’ প্রবন্ধের লেখক রম্যরচনাকার সৈয়দ মুজতবা আলী মনে মনে ভাবছিলেন যে, তিনি ছোটোবেলা থেকেই লোকমুখে শুনে আসছেন যে, কলকাতা এক আজব শহর কিন্তু এই শোনা কথামতো কলকাতাকে তো আজব বলে মনে হয়নি তার। বুড়ো হতে চলেছেন কিন্তু কলকাতাকে আজব শহর ভাবতে চাননি তিনি। এই বিষয়ে যখন একটি প্রবন্ধ লিখবেন বলে ভাবছেন তিনি, তখনই জোর বৃষ্টি নেমেছিল।

২। ‘বাড়ি ফেরার চিন্তার বেদনাটা ‘পথহারানোর’ মতই হল।’- কার, কেন এমন হয়েছিল? 

উত্তর: ‘আজব শহর কলকেতা’ রচনার লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর এমন হয়েছিল।

একদা লেখক যখন কলকাতার এক পথে, তখন খুব জোর বৃষ্টি নামে। লেখকের কাছে কোনো ছাতা বা বর্ষাতি ছিল না। বাস তো দূরের কথা ট্রামে চড়বার তাগদ বা শক্তিও সেই অবস্থায় ছিল না লেখকের। আবার ট্যাক্সি চড়তে বুক কচ কচ করে তাঁর। ফলে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারটা ক্রমে জটিল হয়ে দেখা দেয়। পথ হারালে যেমন নিজেকে অসহায় মনে হয়, এমন অবস্থায় লেখকের মনের অবস্থা ঠিক তেমনই হয়েছিল। ফলে বাড়ি ফেরার চিন্তার বেদনা পথ হারানোর মতোই হয়েছিল।

৩। ‘সপ্রমাণ হয়ে গেল,’- কখন, কী প্রমাণ হয়ে গেল?

উত্তর: ‘আজব শহর কলকেতা’-র লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী একদা যখন কলকাতার রাজপথে ছিলেন, তখন বৃষ্টি নামে। লেখকের কাছে ছাতা, বর্ষাতি কিছুই না-থাকায় ঠিক করতে পারছেন না কী করবেন। পথ হারানোর বেদনা তাঁকে গ্রাস করছিল। সেইসময় তিনি সামনে দেখতে পান বড়ো বড়ো হরফে লেখা ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’। কলকাতার বুকে আজব এই বইয়ের দোকান দেখে লেখক অবাক হয়ে যান। তখনই লেখকের সামনে প্রমাণিত হল ‘কলকেতা আজব শহর’।

8। ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’ দেখে লেখকের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া কী হয়েছিল? 

উত্তর: কলকাতার বুকে ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’ লেখাটি দেখে লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর বিস্ময়ের সীমা ছিল না। এখানে ফরাসি বইয়ের দোকান থাকতে পারে বলে লেখকের বিশ্বাসই হচ্ছিল না। লেখকের প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছিল নিশ্চয়ই কোনো ফরাসি পথ ভুলে কলকাতায় এসে পড়েছেন আর তাঁর ট্যাঁকে কিছু পয়সা আছে বলে তা খোয়াবার জন্য ফরাসি বইয়ের দোকান খুলেছেন।

৫। ‘বাঙালি প্রকাশকরা বলেন,’-উক্তিটির উৎস উল্লেখ করে বাঙালি প্রকাশকরা কী বলেন লেখো।

উত্তর: প্রশ্নে উদ্ধৃত উক্তিটির উৎস সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা প্রবন্ধ ‘আজব শহর কলকেতা’।

লেখকের কথা অনুসারে বাঙালি প্রকাশকগণ বলেন যে “শুধু ভালো বই ছাপিয়ে পয়সা কামানো যায় না, রদ্দি উপন্যাসও গাদা গাদা ছাড়তে হয়।”

৬। ‘কথাটা যদি সত্যি হয় তবে’-কার, কোন্ কথাটার প্রতি সংশয়? 

উত্তর: প্রশ্নে উক্ত উক্তিটির বক্তা হলেন ‘আজব শহর কলকেতা’ রচনার লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী।

বই বিক্রি করে বা বই ছাপিয়ে উপার্জন করা প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বাঙালি প্রকাশকগণ বলেন-‘শুধু ভালো বই ছাপিয়ে পয়সা কামানো যায় না, রদ্দি উপন্যাসও গাদা গাদা ছাড়তে হয়।’ এই কথাটির প্রতিই বক্তা তথা লেখক সংশয় প্রকাশ করেছেন।

৭। ‘সেই ভরসায় ঢুকলুম।’-লেখক কোন্ ভরসায় কোথায় ঢুকেছিলেন?

উত্তর: ‘আজব শহর কলকেতা’-র লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’ সম্পর্কে ভেবেছিলেন হয়তো বিষয়টা হাতির দাঁতের মতন হবে-শুধু দেখার জন্য। দোকানের বাইরে ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’ লেখা কিন্তু ভিতরে হয়তো পাওয়া যাবে-‘খুশবাই’, ‘সাঁঝের পার’, ‘লোধরেণু’, ‘ওষ্ট-রাগ’-এর মতো বিষয়। এসবের ভরসাতেই লেখক ফ্রেঞ্চ বুক শপ-এ ঢুকেছিলেন।

৮। ‘ফরাসি দোকানদার কলকাতায় এসে বাঙালি হয়ে গিয়েছে।’-বক্তার এরূপ মন্তব্যের কারণ কী?

উত্তর: উক্তিটির বক্তা হলেন ‘আজব শহর কলকেতা’ প্রবন্ধের লেখক সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী। লেখক কলকাতার বুকে এক ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’-এ প্রবেশ করে দেখেন ফরাসি দোকানদার দোকানের বইগুলি সাজিয়েছেন টাইপরাইটারের হরফ সাজানোর মতো করে। অর্থাৎ সিজিলটা যার জানা আছে সে চোখ বন্ধ করে ইচ্ছেমতো বই বের করে নিতে পারবে। বাঙালিরাও ঠিক এমন ভাবেই বইগুলি দোকানে সাজিয়ে রাখেন। বাঙালি দোকানদারের সঙ্গে ফরাসি দোকানদারের বই সাজানোর পদ্ধতির এরূপ সাদৃশ্য থাকায় লেখক প্রশ্নোদ্ভূত মন্তব্যটি করেছেন।

৯। ‘সেলাম মেমসাহেব।’-কে, কাকে উদ্দেশ্য করে সেলাম জানিয়েছেন?

উত্তর: ‘আজব শহর কলকেতা’ প্রবন্ধের লেখক রম্যরচনাকার সৈয়দ মুজতবা আলী একদা কলকাতার বুকে গড়ে ওঠা একটি ফ্রেঞ্চ বুক শপে প্রবেশ করেন। সেখানে ফুটফুটে এক মেমসাহেব ফরাসি হাসি হেসে তাঁর সামনে উপস্থিত হলেন। লেখক তাঁকে উদ্দেশ্য করেই সেলাম জানিয়েছেন।

১০। ‘গোটা ভাষাটার কথা বাদ দিন।’-বক্তা কোন্ প্রসঙ্গে কথাটি বলেছেন?

উত্তর: ‘আজব শহর কলকেতা’-র লেখক সৈয়দ মুজতবা আলি একদা • একটি ফ্রেঞ্চ বুক শপে প্রবেশ করেন। সেই দোকানের বই বিক্রেতা এক • মেমসাহেব ফরাসি ভাষায় লেখকের কাছে জানতে চান ‘আপনার আনন্দ কিসে?’ অর্থাৎ লেখক কী চাইছেন। মেমসাহেবের মুখে ফরাসি ভাষা শুনে • লেখক একটু অপ্রস্তুত হন। কারণ তিনি যৌবনে ফরাসি ভাষায় কথা বললেও বর্তমানে সেই চর্চা নেই বা ফরাসি ভাষা স্মরণে নেই। সেই প্রসঙ্গেই তিনি উদ্ধৃত উক্তিটি করেছেন।

১১। ‘জর্মন ভাষায় একটি প্রেমের গান আছে’-উদ্ধৃতাংশের উৎস লিখে প্রেমের গানটি চিহ্নিত করো। ২

উত্তর: প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটির উৎস হল সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘আজব শহর কলকেতা’ নামক প্রবন্ধটি।

আলোচ্য প্রবন্ধে কথা প্রসঙ্গে লেখক ‘জর্মন ভাষায়’ রচিত যে গানটির কথা বলেছেন, তা হল- ‘Dein Mund sagt “Nein” Aber Deine Augen Sagen “Ja”. অর্থাৎ তোমার মুখ বলছে ‘না, নো’, কিন্তু তোমার চোখ দুটি বলছে ‘হাঁ হাঁ’।’

১২। ‘মসিয়ো, ফরাসীতে কথা বললেই পারেন।’-কে, কখন এই কথাটি বলেন? 

উত্তর: একদা সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী একটি ফ্রেঞ্চ বুক শপ-এ প্রবেশ করেছিলেন, সেই শপ-এর মেমসাহেব লেখককে প্রশ্নোদ্ভূত কথাটি বলেন অর্থাৎ বক্তা হলেন মেমসাহেব।

ফ্রেঞ্চ বুক শপ-এ প্রবেশ করে সেখানকার জনৈক মেমসাহেবের সঙ্গে কথোপকথনের সময় হঠাৎই লেখকের মুখ দিয়ে ফরাসি রাজদূত ‘মসিয়ো ফ্রাঁসোয়া পঁসে’-র নাম উচ্চারণের সময় কিছুটা ফরাসি ভাষা বেরিয়ে পড়েছিল। তখনই বক্তা লেখকের উদ্দেশে প্রশ্নোদ্ভূত কথাটি বলেন।

১৩। ‘বাঙালীর জাত্যভিমানে বড়ই আঘাত লাগলো।’-কোন্ ঘটনার প্রেক্ষাপটে বক্তার এমন মনে হয়েছিল? 

উত্তর: ফ্রেঞ্চ বুক শপ-এ ঢুকে দোকানের এক মেমসাহেবের সঙ্গে কথা বলার সময় মেমসাহেব সৈয়দ মুজতবা আলীকে ফরাসিতে কথা বলার অনুরোধ করেন। এই ঘটনায় লেখকের জাত্যভিমানে আঘাত লাগে। কারণ নিজের মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার তাতে খর্ব করা হয়। মেমসাহেব কলকাতার বুকে ব্যাবসা করেও বাংলা ভাষা বলতে পারেন না, তাহলে লেখককেই-বা কেন ফরাসিতে কথা বলতে হবে, এটাই ছিল জাত্যভিমানে আঘাত লাগার কারণ।

১৪। ‘তাই ইংরেজি যথেষ্ট জানেন না,’-কার সম্পর্কে কেন এ কথা বলা হয়েছে? 

উত্তর: সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘আজব শহর কলকেতা’ প্রবন্ধে ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’-এর বই বিক্রেতা মেমসাহেব সম্পর্কে কথাটি বলা হয়েছে।

মেমসাহেবের মাত্র তিন মাস হয়েছে এদেশে অর্থাৎ ভারতে এসেছেন, তাই ইংরেজিটা তিনি যথেষ্ট জেনে উঠতে পারেননি। তবে কাজ চালিয়ে নিতে পারেন মাত্র। এই কারণেই লেখক উক্ত কথাটি বলেছেন।

১৫। ‘এই হল ফরাসী জাতটার গুণ।’-ফরাসিদের কোন্ গুণের কথা এখানে বলা হয়েছে? ২

উত্তর: লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী ‘আজব শহর কলকেতা’ নামক প্রবন্ধে আলোচনা প্রসঙ্গে ফরাসি জাতির একটি গুণের কথা উচ্চারণ করেন। লেখকের মুখের ফরাসি ভাষা শুনে মুগ্ধ ফ্রেঞ্চ বুক শপের মেমসাহেব বাহবা দিতে থাকেন। তখন লেখক ফরাসিদের একটি গুণের উল্লেখ করেন। তিনি বলেন-ভালো কিছু দেখতে পেলেই ফরাসিরা তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ওঠেন। এটাই ফরাসিদের মস্ত বড়ো গুণ।

১৬। ‘দোকানে বসেছেন।’-কে, কেন দোকানে বসেছেন?

উত্তর: এখানে ফ্রেঞ্চ বুক শপ-এর মেমসাহেবের কথা বলা হয়েছে।

মেমসাহেব মাত্র তিন মাস হল এদেশে (ভারতে) এসেছেন, তাই ইংরেজিটা এখনও ভালোভাবে আয়ত্বে আসেনি। বইয়ের দোকানটা তাঁর নয়, এক বান্ধবীর। বান্ধবীর অনুপস্থিতিতে শুধুমাত্র ফরাসি ভাষা ও সাহিত্যের ভালোভাবে প্রচার করার উদ্দেশ্যেই মেমসাহেব দোকানে বসেছেন।

১৭। ‘তুলসীদাস বলেছেন-‘- তুসলীদাস কী বলেছেন?

উত্তর: তুসলীদাস বলেছেন যে পৃথিবীর রীতি বড়োই অদ্ভুত; শুঁড়ি জেঁকে বসে থাকে দোকানে আর দুনিয়ার লোক তার দোকানে গিয়ে মদ কেনে। অন্যদিকে দুধওয়ালাকে দুধ বিক্রি করার জন্য ঘরে ঘরে ধর্না দিতে হয়।

১৮। ‘আমার মনে বড় আনন্দ হল।’-বক্তার আনন্দের কারণ কী?

উত্তর: প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটির বক্তা হলেন ‘আজব শহর কলকেতা’ প্রবন্ধের লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী। একদিন লেখক যখন শহরের বুকে অবস্থিত এক ফ্রেঞ্চ বুক শপ-এ প্রবেশ করে সেখানে উপস্থিত একজন ফরাসি মেমসাহেবের সঙ্গে কথোপকথনে ব্যাস্ত ছিলেন, তখন সেই দোকানে এক বাঙালি ‘ছোকরা’ ঢুকে ফরাসি ভাষায় কমার্শিয়াল আর্ট-এর বইয়ের খোঁজ করেন। এই ঘটনাই বক্তার আনন্দের কারণ।

১৯। ‘ততক্ষণে আমি একটা খাসা বই পেয়ে গেছি।’-বক্তা কে এবং তিনি কোন্ বইটি পেয়েছেন? 

উত্তর: প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটির বক্তা হলেন ‘আজব শহর কলকেতা’ প্রবন্ধের লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী। ন্যুরনবর্গের মোকদ্দমায় প্রাপ্ত দলিল-দস্তাবেজ দিয়ে গড়া ‘হিটলার চরিত্রবর্ণন’ বইটি লেখক পেয়েছেন।

২০। ‘কলম ফুরিয়ে গিয়েছে।’- কখন লেখকের এমন ধারণা হয়েছিল? 

উত্তর: ‘আজব শহর কলকেতা’ প্রবন্ধের লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী যখন ‘হিটলার চরিত্রবর্ণন’ বইটির পরিচয় পাঠকের কাছে প্রকাশ করতে লেখাটা শুরু করেছেন; সবেমাত্র গৌরচন্দ্রিকা শেষ হয়েছে, এমন সময় ভোরের কাক কা-কা করে ওঠে। তখনই লেখকের ধারণা হয়- ‘কলম ফুরিয়ে গিয়েছে’।

আরও পড়ুন – মনোবিজ্ঞানে অনুসন্ধানের পদ্ধতিসমূহ প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment