বৌদ্ধদের অষ্টাঙ্গিক মার্গের ধারণা প্রশ্ন উত্তর Class 11 Second Semester WBCHSE

বৌদ্ধদের অষ্টাঙ্গিক মার্গের ধারণা প্রশ্ন উত্তর

বৌদ্ধদের অষ্টাঙ্গিক মার্গের ধারণা প্রশ্ন উত্তর
বৌদ্ধদের অষ্টাঙ্গিক মার্গের ধারণা প্রশ্ন উত্তর

১। বৌদ্ধ দর্শনে অষ্টাঙ্গিক মার্গের অন্তর্গত প্রতিটি মার্গের প্রয়োজনীয়তা লেখো।

অষ্টাঙ্গিক মার্গের প্রয়োজনীয়তা 

দুঃখের মূল কারণ হল অবিদ্যা। সুতরাং দুঃখের বিনাশ ঘটাতে গেলে আগে দুঃখের কারণ অবিদ্যার বিনাশ করতে হবে। আর সেই উদ্দেশ্যেই সম্যক দৃষ্টিকে অষ্টাঙ্গিক মার্গের অন্তর্গত মার্গগুলির মধ্যে প্রথমে স্থান দেওয়া হয়েছে। সম্যক দৃষ্টির সাহায্যে আর্যসত্য চতুষ্টয়ের যথার্থ জ্ঞান প্রথমে লাভ করতে হবে।

সূচিপত্র

(1) সম্যক দৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা: সম্যক জ্ঞান লাভ করলেই হবে না দুঃখ থেকে মুক্তি পেতে গেলে সম্যক দৃষ্টির আলোকে জীবনকে নিয়ন্ত্রিত করতে হবে ও তার জন্য দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করতে হবে। দ্বিতীয় স্তরে তাই সম্যক সংকল্পের নির্দেশ দেওয়া হয়।

(2) সম্যক সংকল্পের প্রয়োজনীয়তা: শুধুমাত্র সম্যক দৃষ্টির অনুশীলনের দ্বারাই দৃঢ় সংকল্প গঠন করা সম্ভব হবে না। সম্যক সংকল্পের জন্য প্রয়োজন বাক্ সংযম। কেন-না বাক সংযম না হলে মানসিক সংযম হবে না। মানসিক সংযমের মাধ্যমেই মন শান্ত ও শুদ্ধ হবে। সম্যক সংকল্প অনুশীলনের দ্বারাই মন বিশুদ্ধ মুক্তির দিকে ত্বরান্বিত হতে পারবে। দৃঢ় সংকল্প গঠন করে ব্যক্তিকে মুক্তির পথে এগিয়ে যেতে হবে। তাই সম্যক সংকল্পের পর সম্যক বাক্-এর উল্লেখ করা হয়।

(3) সম্যক বাক্ -এর প্রয়োজনীয়তা: বাক্ সংযম না ঘটলে দৃঢ় সংকল্প গঠন সম্ভব নয়। বাক্ সংযমের মাধ্যমেই ব্যক্তি মিথ্যা কথা, পরনিন্দা ও কটুভাষা থেকে নিজেকে মুক্ত করে সর্বদা সত্য কথা বলতে নিয়োজিত থাকতে পারবে। এরফলেই ব্যক্তি নৈতিক আদর্শের দিকে এগিয়ে যাবে, যা নির্বাণের পথকে সুগম করে।

(4) সদ্যক কর্মান্তের প্রয়োজনীয়তা: শুধুমাত্র বাক্ সংযম করলেই হবে না নিষ্কামভাবে কর্ম সম্পাদন করতে হবে। কামনা-বাসনা যতক্ষণ না পুরোপুরি মন থেকে নির্বাসিত হচ্ছে ততক্ষণ সকাম কর্মের ফল উৎপন্ন হবে এবং সেই ফলভোগ করার জন্য আবারও জন্মগ্রহণ করতে হবে। আর জন্মালে দুঃখভোগ অবশ্যম্ভাবী। তাই সম্যক কর্মান্তে নিষ্কাম কর্মের অনুষ্ঠানের কথা বলা হয়। যার সাহায্যে মন থেকে কামনা-বাসনা দূর হবে।

(5) সম্যক আজীবের প্রয়োজনীয়তা: সৎ পথে জীবিকা নির্বাহ করতে হবে তা না হলে দেহ নির্মল ও চিত্তশুদ্ধ হবে না। তাই সম্যক কর্মান্তের পর সম্যক আজীবের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যায় বা অসৎ পথে জীবিকা নির্বাহ করা যাবে না। সৎ উপায়ে উপার্জনের মাধ্যমেই ব্যক্তি নৈতিকতার দিকে অগ্রসর হবে। চিত্তশুদ্ধ হলে তবেই নির্বাণের পথ মসৃণ হয়। মন থেকে কুচিন্তা দূর করার জন্য সম্যক ব্যায়ামের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

(6) সম্যক ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা: সম্যক ব্যায়ামের মাধ্যমে কুচিন্তা দূর করে মন পবিত্র ও নির্মল হয়। কুচিন্তা আমাদের নৈতিক জীবনের প্রতি বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সম্যক ব্যায়ামের মাধ্যমে মানসিক সংযম আসে এবং চিত্তশুদ্ধি হয়।

(7) সম্যক স্মৃতির প্রয়োজনীয়তা: অনাসক্তি সৃষ্টি করে নির্বাণের পথে পরিচালিত করার জন্য আর্যসত্য চতুষ্টয়ের সম্যক জ্ঞান সর্বদা স্মরণে রাখার কথা বলা হয়েছে সম্যক স্মৃতিতে।

(8) সম্যক সমাধির প্রয়োজনীয়তা: মন ও দেহ পরিশুদ্ধ হয়ে সমাধির ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। 

সুতরাং নির্বাণ লাভের জন্য অষ্টাঙ্গিক মার্গের অন্তর্গত প্রতিটি মার্গের প্রয়োজনীয়তা আছে।

২। বুদ্ধদের নির্দেশিত অষ্টাঙ্গিক মার্গের ব্যাখ্যামূলক বিচার করো।

বুদ্ধদেব জরা-ব্যাধি ও মৃত্যুর কবলে জর্জরিত জীবন থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উদ্দেশ্যে যোগ সাধনায় লিপ্ত হন। যোগ সাধনায় লিপ্ত হয়ে তিনি যে সত্য উপলব্ধি করেছিলেন তা পরবর্তীকালে চারটি সত্যের আকারে প্রকাশ পায়, যেগুলি আর্যসত্য নামে পরিচিত।

অষ্টাঙ্গিক মার্গ 

বুদ্ধদেব প্রথম আর্যসত্যে দুঃখের অনিবার্য অস্তিত্ব, দ্বিতীয় আর্যসত্যে দুঃখের কারণ পরম্পরা, তৃতীয় আর্যসত্যে দুঃখ নিরোধের সম্ভাবনার কথা ও চতুর্থ আর্যসত্যে অবশ্যম্ভাবী দুঃখের হাত থেকে মুক্তিলাভের পথ বা মার্গের নির্দেশ দিয়েছেন। দুঃখ থেকে মুক্তির এই পথ বা মার্গ আটটি অঙ্গ বা অংশে বিভক্ত হওয়ায় চতুর্থ আর্যসত্যকে অষ্টাঙ্গিক মার্গ আখ্যা দেওয়া হয়।

(1) সম্যক দৃষ্টি: অষ্টাঙ্গিক মার্গের অন্তর্গত প্রথম মার্গ হল সম্যক দৃষ্টি। এতে বলা হয়েছে যে অবিদ্যাই দুঃখের কারণ। তাই অবিদ্যা থেকে মুক্তি পেতে গেলে চারটি আর্যসত্য সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করতে হবে।

(2) সম্যক সংকল্প: অষ্টাঙ্গিক মার্গের অন্তর্গত দ্বিতীয় মার্গ বা পথ হল সম্যক সংকল্প। সম্যক দৃষ্টির আলোকে জীবনকে নিয়ন্ত্রিত করার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণই হল সম্যক সংকল্প।

(3) সম্যক বাক্: অষ্টাঙ্গিক মার্গের অন্তর্গত তৃতীয় অঙ্গ হল সম্যক বাক্। সম্যক সংকল্পের জন্য প্রয়োজন সম্যক বাক্। সম্যক বাক্ মানে বাক্ সংযম। বাক্ সংযমের মাধ্যমেই মানসিক সংযম সম্ভব।

(4) সম্যক কর্মান্ত: নিষ্কাম কর্মের সম্পাদনকেই বলা হয় সম্যক কর্মান্ত। সম্যক কর্মান্তের ফলে কামনা-বাসনা দূরীভূত হয়। অষ্টাঙ্গিক মার্গের অন্তর্গত চতুর্থ মার্গ হল সম্যক কর্মান্ত।

(5) সম্যক আজীব:  দেহ নির্মল ও চিত্তশুদ্ধিকরণের জন্য অষ্টাঙ্গিক মার্গের অন্তর্গত পঞ্চম মার্গে সম্যক আজীবের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সৎ পথে জীবিকা নির্বাহ তথা সৎভাবে জীবনযাপনই হল সম্যক আজীব।

(6) সম্যক ব্যায়াম: মন থেকে সর্বপ্রকার কুচিন্তা দূরীকরণের জন্য অষ্টাঙ্গিক মার্গের অন্তর্গত ষষ্ঠ মার্গে সম্যক ব্যায়ামের কথা বলা হয়েছে। সৎ চিন্তা, সৎ প্রবৃত্তির অনুশীলনই হল সম্যক ব্যায়াম।

(7) সম্যক স্মৃতি: অনাসক্তি সৃষ্টি করে নির্বাণের পথে পরিচালিত করার উদ্দেশ্যে অষ্টাঙ্গিক মার্গের অন্তর্গত সপ্তম মার্গে সম্যক স্মৃতির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর্যসত্য চতুষ্টয়ের সম্যক জ্ঞান সর্বদা স্মরণে রাখাই হল সম্যক স্মৃতি। যার ফলে জগৎ ও জীবনের অসারত্ববোধ জন্মায় ও ভোগ সুখে বৈরাগ্য দেখা দেয় ফলে নির্বাণ লাভের পথ সুগম হয়।

(8) সম্যক সমাধি: পূর্বোক্ত সাতটি অঙ্গ যথাযথভাবে অনুষ্ঠিত হলে সাধকের চিত্ত শান্ত হয় এবং সে সমাধি লাভে নিরবচ্ছিন্ন ধ্যানের মাধ্যমে সমর্থ হয়ে ওঠে।

বিচার

গৌতম বুদ্ধের চিন্তাধারায় নীতিধর্মই প্রাধান্য পেয়েছে। তিনি বাস্তব পটভূমিতে বাস্তব সমস্যার সমাধান খুঁজেছেন। বাস্তব সমস্যা হিসেবে অনিবার্য ও অবশ্যম্ভাবী দুঃখ তাঁকে নিরন্তর চিন্তিত করে তুলেছিল। আর তা থেকে পরিত্রাণ পাবার উপায় অন্বেষণ করতে গিয়েই তাঁর গৃহত্যাগ, সাধনা ও সিদ্ধিলাভ। কাজেই বুদ্ধদেবের সাধনালব্ধ সত্য দুঃখী মানুষের মুক্তির কথা বলে।

বুদ্ধদেব উপলব্ধি করেছিলেন যে, নির্বাণ লাভের জন্য বিশুদ্ধ নৈতিক জীবনযাপনের প্রয়োজন আর বিশুদ্ধ নৈতিক জীবনের জন্য নৈতিক আচরণের প্রয়োজন। অষ্টাঙ্গিক মার্গে আটটি নৈতিক নিয়মকে প্রকাশ করা হয়েছে। অষ্টাঙ্গিক মার্গের মধ্যে দিয়ে বুদ্ধদেব মধ্যমপন্থা তথা মধ্যম মার্গের নির্দেশ দিয়েছেন। চূড়ান্ত সম্ভোগ যেমন দুঃখময় তেমনি কঠোর আত্মনিগ্রহও দুঃখময়। মধ্যমপন্থাই দুঃখমুক্তির পথ। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই এই পথ অনুসরণ করে মুক্তিলাভ করতে সক্ষম হবে। তবে দুঃখ থেকে মুক্তি পেতে গেলে ব্যক্তিকে সচেষ্ট হতে হবে। ব্যক্তির নিজের সচেষ্ট প্রয়াসের দ্বারাই নির্বাণ লাভ সম্ভব হবে। সুতরাং দুঃখ থেকে চিরতরে মুক্তিলাভ সম্ভব।

৩। সমাধির কয়টি স্তর ও কী কী? ব্যাখ্যা করো।

সমাধির স্তর

সম্যক সমাধি হল শুদ্ধ ধ্যান বা মনঃসংযোগ। অষ্টাঙ্গিক মার্গের অন্তর্গত প্রথম সাতটি অঙ্গের সাধনা সম্পূর্ণ হলে মন থেকে অসৎ চিন্তা দূরীভূত হবে এবং ধ্যান বা মনঃসংযোগের ক্ষমতা জাগ্রত হবে। এই ধ্যানের দ্বারা ঊর্ধ্বগতি লাভ করে সাধক জগৎ ও জীবনের রহস্য ভেদ করতে সক্ষম হবেন। তৃয়া দূর করে দুঃখের উৎপত্তি রোধের মাধ্যমে নির্বাণ লাভ করতে সক্ষম হবেন। এই ধ্যান বা সমাধির চারটি স্তর, সেগুলি হল-

(1) প্রথম স্তর: সমাধির প্রথম স্তর হল ধ্যান সমাধি। সমাধির এই স্তরে নির্বাণকামী ব্যক্তি চারটি আর্যসত্য সম্বন্ধে মনকে নিবদ্ধ করেন। তিনি পরিশীলিত মনকে সত্য সংক্রান্ত বিতর্ক ও বিচারে নিযুক্ত রেখে সকল প্রকার আসক্তি মুক্ত হয়ে এক ধরনের আনন্দ অনুভব করেন। এই স্তর সফল হলে আর্যসত্য চতুষ্টয় সম্পর্কে নির্বাণকামীর বিশ্বাস দৃঢ় হয় এবং সকল প্রকার সংশয় দূর হয়।

(2) দ্বিতীয় স্তর: প্রথম পর্যায়ের সমাধি লাভ হলে আসে দ্বিতীয় স্তরের ধ্যান সমাধি। এই পর্যায়ে সমস্ত সন্দেহের অবসান ঘটে, ফলে বিচার- বিতর্কের কোনো অবকাশ থাকে না। সমাধির এই দ্বিতীয় স্তরে অচঞ্চল ও স্থির ধ্যানের ফলে নির্বাণকামীর ব্যক্তি মনে সহজ শান্তি ও আনন্দ বিরাজ করে।

(3) তৃতীয় স্তর: তৃতীয় স্তরের ধ্যান সমাধিতে নির্বাণকামী আনন্দের বোধকে অতিক্রম করেন। সমাধির দ্বিতীয় স্তরে যেহেতু শান্তি ও আনন্দবোধ বা চেতনা বর্তমান থাকে, নির্বাণকামী তাই সমাধির পরবর্তীস্তরে এই বোধ চেতনা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য ধ্যানে মগ্ন হন। এর ফলে সমাধির তৃতীয় স্তরে নির্বাণকামীর মনে এক নিস্পৃহতা বা উদাসীনতার ভাব জাগে।

(4) চতুর্থ স্তর: ধ্যান সমাধির শেষ স্তরে সর্বপ্রকার আসক্তি বা তৃয়া থেকে মুক্ত হয়ে, সুখ-দুঃখের প্রতি উদাসীন হয়ে নির্বাণকামী যথার্থ প্রজ্ঞা লাভ করেন। এটি হল দুঃখের আত্যন্তিক নিবৃত্তির অবস্থা। প্রজ্ঞার মাধ্যমেই নির্বাণকামী ব্যক্তি নির্বাণ লাভ করেন এবং তখন তিনি ‘অর্হৎ’-রূপে বিবেচিত হন।

সম্যক সমাধির চারটি স্তরের মাধ্যমে ব্যক্তি জীবনের প্রকৃত সত্য উপলব্ধি করতে পারে। ব্যক্তি নিজেকে আধ্যাত্মিক স্তরে উন্নীত করে সমস্ত প্রকার কামনা-বাসনার বিলোপ সাধন ঘটিয়ে মুক্ত আত্মায় বিরাজ করে।

৪। শীল কী? এই প্রসঙ্গে বৌদ্ধ মতে পঞ্চশীল ব্যাখ্যা করো।

শীল

বৌদ্ধ দর্শনে নির্বাণ লাভের উপায় হিসেবে যে অষ্টাঙ্গিক মার্গের কথা বলা হয়েছে সেই আধ্যাত্মিক পথ তিনটি পর্যায় বা স্কন্ধে বিভক্ত। যথা- প্রজ্ঞা, শীল ও সমাধি। অষ্টাঙ্গিক মার্গের অন্তর্গত সম্যক বাক্, সম্যক কর্মান্ত ও সম্যক আজীব শীলের অন্তর্ভুক্ত। শীল হল কতকগুলি নৈতিক বিধি ও শৃঙ্খলা। যেগুলি পালনের মাধ্যমে তারা উদ্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে।

(1) শীলের সংজ্ঞা: শীল বলতে বৌদ্ধ দর্শনে মানসিক শুদ্ধতা ও চারিত্রিক শুদ্ধতাকে বোঝানো হয়েছে। এটি হল ‘শীল’-এর সদর্থক বা ইতিবাচক অর্থ। অর্থাৎ সদর্থক অর্থে ‘শীল’ হল সেইসকল কর্ম বা আচরণ যা মানুষের পালনীয় বলে বিবেচিত হয়। যেমন-সদাচার মেনে চলা, সত্য কথা বলা ইত্যাদি। আবার বৌদ্ধ নীতিদর্শনে ‘শীল’ বলতে সবরকম পাপকর্ম থেকে বিরত থাকাকে বোঝায়। এ কারণে শীলের অপর নাম ‘বিরতি’। এস এন দাসগুপ্ত তাঁর ‘A History of Philosophy’ গ্রন্থে বলেছেন- শীল হল সেইসব বিশেষ ইচ্ছা ও মানসিক অবস্থাসমূহ যার দ্বারা কোনো মানুষ পাপ কর্ম থেকে নিজেকে বিরত রাখে। এটি হল ‘শীল’-এর নঞর্থক বা নেতিবাচক অর্থ।

(2) শীলের প্রকারভেদ: শীলের এই সদর্থক ও নঞর্থক অর্থকে কেন্দ্র করে শীলকে দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়। যথা- বারিত্রশীল ও • চারিত্রশীল। বুদ্ধদেব যেসকল কর্মকে আচরণ বা পালন করতে নিষেধ করেছেন অর্থাৎ যেসকল কর্ম করা উচিত নয় সেগুলিকে বলা হয় বারিত্রশীল। আর যেসকল কর্মকে আচরণ বা পালন করতে নির্দেশ দিয়েছেন অর্থাৎ যা উচিত কর্ম বলে বিবেচিত হয় সেগুলিকে বলা হয় চারিত্রশীল।

পঞ্চশীল

অষ্টাঙ্গিক মার্গে তিনটি শীলের উল্লেখ থাকলেও বৌদ্ধ দর্শনে আরও বহু সংখ্যক শীলের উল্লেখ আছে। শ্রমণ বা ভিক্ষুদের জন্য যেসব শীলের কথা বলা হয়েছে সাধারণ গৃহস্থ মানুষদের ক্ষেত্রে সেগুলি প্রযোজ্য নয়। গৃহস্থদের জন্য বুদ্ধদেব পঞ্চশীল বা পাঁচটি শীল পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। এগুলি হল অহিংসা বা প্রাণাতিপাত-বিরতি, অস্তেয় বা অদত্তাদান-বিরতি, সত্যকথন বা মৃষাবাদ-বিরতি, ব্রহ্মচর্য পালন বা অব্রহ্মচর্য-বিরতি ও মাদকদ্রব্য বর্জন বা মদ্যমাদকার্থ-বিরতি। এগুলি সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল-

(1) অহিংসা: সর্বজীবের প্রতি হিংসা থেকে বিরত থাকা হল অহিংসা। মানুষ, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ ইত্যাদি কোনো প্রকার প্রাণীহত্যা করা উচিত নয়।

(2) আস্তয়: চৌর্যবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখা হল অস্তেয়। লোভবশত পরধন গ্রহণ করা যাবে না। চৌর্যবৃত্তি থেকে গৃহীব্যক্তি নিজে যেমন বিরত থাকবেন তেমনি অন্য ব্যক্তিকেও চৌর্যে প্রবৃত্ত করা থেকে বিরত রাখবেন।

(3) সত্যকথন: মিথ্যা কথা বলা থেকে বিরত থাকা হল সত্যকথন। নির্বাণকামী ব্যক্তি সর্বদা সত্য কথা বলেন। তিনি নিজে যেমন মিথ্যা বাক্য বলবেন না তেমনি কোনো ব্যক্তিকে মিথ্যা বাক্য বলতে প্রবৃত্ত করবেন না।

(4) ব্রহ্মচর্য পালন: কোনো প্রকার ব্যভিচারে লিপ্ত না হওয়া হল ব্রহ্মচর্য পালন। সর্বদা নির্বাণকামী ব্যক্তিকে ইন্দ্রিয় সংযমের মাধ্যমে ব্রহ্মচর্য অনুশীলন করতে হবে। 

(5) মাদকদ্রব্য বর্জন :  মাদকজাত দ্রব্য গ্রহণ না করা হল মাদকদ্রব্য বর্জন। চিত্তশুদ্ধি রক্ষার্থে কোনো প্রকার মাদকদ্রব্য বা নেশাকর বস্তু গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

গৃহস্থের জন্য পালনীয় বলে এগুলিকে ‘গৃহস্থশীল’ও বলা হয়। এই পঞ্চশীল পালনের মধ্য দিয়ে শুধুমাত্র নিজের আচরণকে সংযত করার কথা বলা হয় না, অন্যান্য ব্যক্তিও যাতে ওই জাতীয় কর্ম থেকে বিরত থাকে সে কথা বলাও শীলের উদ্দেশ্য। শীলসমূহ পালন করলে চিত্তশুদ্ধ হয়। তাই বৌদ্ধ মতে, প্রতিদিন পঞ্চশীল পালন করা কর্তব্য।

৫। অহিংসা কী? বৌদ্ধ নীতিদর্শনে অহিংসার ভূমিকা কী?

অহিংসা শব্দের অর্থ

‘অহিংসা’ শব্দটির অর্থ ‘অ-ক্ষতি’ বা অ-আঘাত। বৌদ্ধ চিন্তাধারায় অহিংসা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। বৌদ্ধ ধর্মের প্রথম উপদেশই হল সকল জীবের প্রতি হিংসা বর্জন করা। বৌদ্ধ নীতিদর্শনে অহিংসা পঞ্চশীলের অন্তর্গত প্রথম শীল। শুধুমাত্র বৌদ্ধ ভিক্ষু বা সন্ন্যাসী নয় প্রত্যেক গৃহস্থের কর্তব্য অহিংসা নীতিকে অনুসরণ করে চলা। কোনো প্রাণীর হত্যা না করাকে অহিংসা বলা হয়। এটি অহিংসার সংকীর্ণ অর্থ। ব্যাপক অর্থে অহিংসা হল সকল জীবের প্রতি মৈত্রীভাবাপন্ন হওয়া ও সকলের কল্যাণ কামনা করা।

(1) অহিংসার মূলকথা: অহিংসার মূলকথা হল সবল ও দুর্বল কোনো প্রাণীকেই আঘাত বা হত্যা না করা। বুদ্ধদেব প্রাণী বলতে শুধুমাত্র মানুষ ও পশুপাখি নয়, কীটপতঙ্গ, অতিক্ষুদ্র প্রাণী, গাছপালা সম্পর্কেও অহিংসক হতে উপদেশ দিয়েছেন। তাঁর মতে, যিনি প্রকৃত অহিংসক তিনি ক্ষুদ্র প্রাণী, গাছ, গুল্মলতা এমনকি তৃণাদিকেও পদদলিত করেন না। বৌদ্ধ সন্ন্যাসী বা গৃহস্থ ব্যক্তির প্রাণীহত্যা যেমন অনুচিত কর্ম তেমনি অপরের দ্বারা হত্যা করানোও অনুচিত কর্ম বলে বিবেচিত।

বৌদ্ধ দর্শনে অহিংসা

বুদ্ধদেব তার উপলব্ধ আর্যসত্য চতুষ্টয়ের অন্তর্গত চতুর্থ আর্যসত্যে দুঃখ নিরোধের উপায় হিসেবে যে আটটি অঙ্গবিশিষ্ট পথের সন্ধান দিয়েছেন সেই আটটি অঙ্গের অন্তর্গত দ্বিতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম অঙ্গে তিনি অহিংসার নির্দেশ দিয়েছেন। সেগুলি হল- • বুদ্ধদেব নির্দেশিত অষ্টাঙ্গিক মার্গের অন্তর্গত দ্বিতীয় মার্গ অর্থাৎ সম্যক সংকল্পে সম্যক জ্ঞানানুসারে মনকে কলুষতামুক্ত করার জন্য হিংসা, বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা ইত্যাদিকে পরিত্যাগ করার ঐকান্তিক ইচ্ছা তথা সংকল্পের কথা বলা হয়েছে। অষ্টাঙ্গিক মার্গের অন্তর্গত চতুর্থ মার্গ সম্যক কর্মান্তে বুদ্ধ নির্দেশিত পঞ্চশীল অনুসরণের মাধ্যমে কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্যের দ্বারা পরিচালিত না হয়ে অহিংসা, মৈত্রী ও করুণার দ্বারা পরিচালিত হয়ে নিষ্কামভাবে কর্ম সম্পাদনের কথা বলা হয়েছে। আবার পঞ্চম মার্গ সম্যক আজীবে হিংসা, প্রবঞ্চনা, মিথ্যার আশ্রয় পরিহার করে সৎপথে জীবিকা নির্বাহ করার কথা বলা হয়েছে।

সুতরাং সামগ্রিক বৌদ্ধ নীতিদর্শন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে অহিংসা বৌদ্ধ নীতিদর্শনে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। আর এ কথা বললেও অত্যুক্তি করা হবে না যে অহিংসার মূল মন্ত্রের উপরই সমগ্র বৌদ্ধ নীতিদর্শন দাঁড়িয়ে আছে।

৬। ব্রহ্মবিহার সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।

ব্রহ্মবিহার

বুদ্ধদেব নির্দেশিত সম্যক সমাধির স্বরূপের মধ্যেই ব্রহ্মবিহারের ভাবনা নিহিত আছে।

(1) সমাধির চারটি ভাব: সম্যক সমাধির মধ্যে চারটি ভাব পরিলক্ষিত হয়  মৈত্রী, করুণা, মুদিতা এবং উপেক্ষা।

  • মৈত্রী: নিয়ত জীবের কল্যাণ চিন্তায় নিজেকে নিয়োজিত রাখাই হল মৈত্রীভাবনা। প্রেম-ভালোবাসা-করুণার বন্ধনে আবদ্ধ করার ভাবনাকে বলে মৈত্রী।
  • করুণা: মৈত্রীভাবের মধ্যেই করুণার ভাব নিহিত থাকে। জীবের দুঃখ দূর করার নিয়ত ও আন্তরিক বাসনাই হল করুণা।
  • মুদিতা: নিজের সংকীর্ণ স্বার্থচিন্তা ত্যাগ করে অপরের সুখে তৃপ্তি লাভ করাই হল মুদিতা।
  • উপেক্ষা: নিজের সুখ-দুঃখ, ভালো-মন্দ, লাভ-ক্ষতি ইত্যাদি সবকিছুকে সমত্বভাবে গ্রহণ করে অর্থাৎ তাদের প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীন থেকে বিশ্বমানবের কল্যাণ চিন্তা করাই হল উপেক্ষা।

এই চারটি ভাবনাকে নিয়েই গড়ে উঠেছে বুদ্ধসম্মত ব্রহ্মবিহার, যাদের মধ্যে মৈত্রীভাবই প্রধান।

(2) ব্রহ্মবিহারে প্রধান মৈত্রী ভাবনা: সকল জীবের প্রতি প্রীতিভাব যথাসম্ভব প্রসারিত করে তাদের প্রেম-ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করার ভাবনাই হল মৈত্রী ভাবনা। মৈত্রী ভাবনা প্রসঙ্গে বুদ্ধদেব বলেন যে, মা যেমন তার সবকিছুকে উপেক্ষা করে নিজের সন্তানের প্রতি কল্যাণ কামনায় জীবনপাত করেন তেমনি নিজের স্বার্থচিন্তা ত্যাগ করে প্রেম-ভালোবাসাকে আশ্রয় করে মৈত্রী ভাবনায় বিশ্বের সকল জীবের কল্যাণ কামনা করতে হবে। আর এইপ্রকার মৈত্রী ভাবনায় বিভোর থাকাই হল ব্রহ্মবিহার অবস্থা।

মৈত্রীর মধ্যেই করুণাভাব নিহিত। তাই মৈত্রী ও করুণাকে বিশ্বব্যাপী পরিব্যাপ্ত করে জানাই হল আনন্দের আস্বাদন। আর এটিই হল বুদ্ধ মতে নির্বাণ বা মুক্তি। নির্বাণ বাসনার বিলোপ বা সর্বশূন্যতা নয়, নির্বাণ হল কলুষতামুক্ত আনন্দময় পরিপূর্ণতা এবং এমন অবস্থাই হল ব্রহ্মবিহার।

(3) নির্বাণ লাভ: বুদ্ধদেবের মতে মৈত্রী এবং করুণার মাধ্যমেই মুক্তিলাভ সম্ভব। বিশ্বমানবের দুঃখ অনুভব করা এবং সেই দুঃখ থেকে মুক্তির পথ নির্ধারণ করে মৈত্রী এবং করুণাভাবের মধ্যে দিয়ে দুঃখকে চিরতরে নিরোধ করা সম্ভব। শুধু তাই নয় জগৎকে হিংসা, দ্বেষ ইত্যাদি কলুষতা থেকে মুক্ত করতে হলেও একমাত্র মৈত্রীভাবনা অর্থাৎ প্রেম ও করুণার মাধ্যমেই তা করতে হবে।

বৌদ্ধ মতে ব্রহ্মের স্বরূপ উপলব্ধি করা হল দুঃখ থেকে চিরতরে মুক্তিলাভ। ব্রহ্মবিহারের অর্থ হল ব্রহ্মে বিচরণ বা বিহার। বুদ্ধ মতে, ব্রহ্মই হল চরম সত্য, চিৎ ও আনন্দস্বরূপ। এই আনন্দস্বরূপ ব্রহ্মে বিচরণ বা বিহারই হল ব্রহ্মবিহার। এরূপ অবস্থায় পার্থিব সকল কিছুর প্রতি আসক্তি ও ষড়রিপুর প্রতি আকর্ষণ দূরীভূত হয়ে কেবল একটিমাত্র সত্তাই অবশিষ্ট থাকে আর সেই সত্তাই হল আনন্দস্বরূপ ব্রহ্মের সত্তা।

৭। অষ্টাঙ্গিক মার্গের সঙ্গে বৌদ্ধ নীতিতত্ত্বের সম্পর্ক কী?

নৈতিক পথনির্দেশকরূপে অষ্টাঙ্গিক মার্গ

বৌদ্ধ দর্শনে নির্বাণকে মানবজীবনের পরম কাম্যবস্তু তথা পরমপুরুষার্থ বলে মানা হয়। এই নির্বাণ লাভ করা সম্ভব হবে কী উপায়ে তার অনুসন্ধান করে বুদ্ধদেব অষ্টাঙ্গিক মার্গের নির্দেশ দিয়েছেন। যোগ সাধনায় লিপ্ত হয়ে জগৎ ও জীবন সম্পর্কে যে চারটি সত্য তিনি উপলব্ধি করেছিলেন তার প্রথমটিতে তিনি দুঃখের অবশ্যম্ভাবী অস্তিত্ব স্বীকার করেন। দ্বিতীয়টিতে দুঃখের কারণ নির্দেশ করেন। তৃতীয়টিতে দুঃখের নিরোধ সম্ভব তা উপলব্ধি করেন। চতুর্থ আর্যসত্যে দুঃখ নিরোধের উপায়ের নির্দেশ দেন।

আটটি অঙ্গ বা অংশবিশিষ্ট এই পথ অবলম্বন করে বুদ্ধদেব নিজে বুদ্ধত্বলাভ করেছিলেন এবং গৃহী, সন্ন্যাসী থেকে শুরু করে সমাজের সকল স্তরের দুঃখ জর্জরিত মানুষের পক্ষেই এই পথ অবলম্বন করে নির্বাণ লাভ সম্ভব বলে তিনি মনে করতেন। বুদ্ধদেবের মতে নির্বাণ লাভের জন্য বিশুদ্ধ নৈতিক জীবনের প্রয়োজন। বিশুদ্ধ নৈতিক জীবনের জন্য নৈতিক নিয়মের আচরণ প্রয়োজন। অষ্টাঙ্গিক মার্গের সাহায্যে সেই সমস্ত নৈতিক নিয়মকে প্রকাশ করা হয়, যা অবলম্বন করলে নির্বাণ লাভের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়।

আমরা যদি অষ্টাঙ্গিক মার্গের অন্তর্গত প্রতিটি মার্গের প্রতি স্বতন্ত্রভাবে আলোকপাত করি তাহলে বিষয়টি স্পষ্টতর হবে। আটটি মার্গ বা পথের সঙ্গে বৌদ্ধ নীতিতত্ত্বের সম্পর্ককে নিম্নে আলোচনা করা হল-

(1) নৈতিকতার আলোকে সম্যক দৃষ্টি: বৌদ্ধ মতে চারটি আর্যসত্য সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞানলাভ হল সম্যক দৃষ্টি। সম্যক দৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের নৈতিক জ্ঞানের ভিত্তি স্থাপিত হয়। নৈতিক জ্ঞান মানুষের মনকে প্রশস্ত করে এবং সঠিক সত্যকে অনুধাবন করতে সাহায্য করে।

(2) নৈতিক মানাভান গঠান সম্যক সংকল্প: বৌদ্ধ মতে আত্মসংশোধন ও সদাচার গড়ে ওঠে সম্যক সংকল্পের মাধ্যমে, যা ব্যক্তির নৈতিক মনোভাব গঠন করে। বৌদ্ধ মতে দৃঢ় সংকল্পের দ্বারা নৈতিকতার ভিত্তি সুদৃঢ় হয়ে ওঠে।

(3) নৈতিক বাক্য গঠনে সম্যক’ বাক্: সম্যক বাক্-এর মাধ্যমে মিথ্যাভাষণ, কটুভাষণ ও চিত্তহীন কথা থেকে বিরত থাকার কথা বলা হয়। এর ফলে ব্যক্তি নৈতিক জীবনে সদাচারী হয়ে ওঠেন।

(4) নৈতিক আচরণে সম্যক কর্মান্ত: সর্বপ্রকার অসৎ কর্ম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ বৌদ্ধ দর্শনে দেওয়া হয়েছে। সম্যক কর্মান্তের মাধ্যমে সৎ উপায়ে কর্ম করার কথা বলা হয়। এর মাধ্যমে ব্যক্তির নৈতিক আচরণের পথ প্রশস্ত হয়। হিংসাবৃত্তি, চৌর্যবৃত্তি, মাদকদ্রব্য বর্জন এই ধরনের অসৎ কর্ম থেকে বিরত হয়ে ব্যক্তি নৈতিক সদাচারের দিকে অগ্রসর হয়।

(5) নৈতিক জীবনযাপনে সম্যক আজীব: বৌদ্ধ মতে সৎ উপায়ে উপার্জনের কথা হলা হয়েছে। ব্যক্তি সঠিক পেশাকে নির্বাচন করে ন্যায়ের পথে এগিয়ে যেতে পারে। অপরের ক্ষতি না করে সঠিক উপায়ে জীবিকা নির্বাহের মাধ্যমে নৈতিক জীবনযাপনের পথকে নির্দেশ করে এই মার্গ।

(6) নৈতিক প্রাচস্টার ক্ষেত্রে সম্যক ব্যায়াম: বৌদ্ধ মতে সম্যক ব্যায়ামের মাধ্যমে সুস্থ মানসিক চিন্তাধারা গড়ে ওঠে, যা ব্যক্তিকে মন্দ চিন্তা ও আচরণ থেকে মুক্তি দেয়। শারীরিক ও মানসিক ব্যায়ামের দ্বারা অনৈতিক চিন্তা-ভাবনা মন থেকে দূরীভূত হয় এবং ব্যক্তি মুক্ত চিন্তাধারায় সক্ষম হয়।

(7) নৈতিক সাচনতার ক্ষেত্রে সম্যক স্মৃতি: সম্যক স্মৃতির মাধ্যমে ব্যক্তির নৈতিক চেতনা দৃঢ় হয় এবং নৈতিক সদাচরণের ক্ষেত্র সূদৃঢ় হয়। ব্যক্তি নৈতিকতার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়।

(8) লৈভিক ধ্যানের ক্ষেতে সম্যক সমাধি: গভীর ধ্যান ও কঠোর তপস্যার মাধ্যমেই সম্যক সমাধি সম্পূর্ণ হয়। গভীর মনোযোগের মাধ্যমেই ব্যক্তির মানসিক শান্তি স্থাপিত হয়। ফলে ব্যক্তির পরম মুক্তি বা নির্বাণের পথ প্রশস্ত হয় এবং নৈতিকতার পরম আদর্শে উপনীত হয়।

আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment