আন্তর্জাতিক সম্পর্ক : মূল ধারণা এবং রাজনৈতিক মতবাদসমূহ প্রশ্ন উত্তর | ক্লাস 12 চতুর্থ সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক : মূল ধারণা এবং রাজনৈতিক মতবাদসমূহ প্রশ্ন উত্তর | ক্লাস 12 চতুর্থ সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় ছোটো প্রশ্ন উত্তর | International Relations short question answer | Class 12 4th Semester Political Science First Chapter Short question answer

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক : মূল ধারণা এবং রাজনৈতিক মতবাদসমূহ প্রশ্ন উত্তর
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক : মূল ধারণা এবং রাজনৈতিক মতবাদসমূহ প্রশ্ন উত্তর

১। কয়েকজন বাস্তববাদী তাত্ত্বিকের নাম উল্লেখ করো।

উঃ বাস্তববাদের প্রধান প্রবক্তা : বাস্তববাদের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী প্রবক্তা হলেন মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হ্যানস্ মরগেনথাউ। তিনি তাঁর ‘Poli-tics Among Nation’ গ্রন্থে অভিজ্ঞতাবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে বাস্তববাদকে ব্যাখ্যা করেছিলেন।

এ ছাড়া সি এইচ কার, জর্জ কেন্নান, কুইন্সি রাইট, হেনরি কিসিংগার প্রমুখের হাত ধরে বাস্তববাদী তত্ত্বের বিকাশ ঘটে।

২। বাস্তববাদী তত্ত্বের মূল প্রতিপাদ্য কী?

উঃ বাস্তববাদের মূল বক্তব্য: বাস্তববাদের মূল বক্তব্য হল আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ক্ষমতাই শেষ কথা। ক্ষমতার লড়াইকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক রাজনীতি চালিত হয়। এখানে নৈতিকতা বা আদর্শের কোনো জায়গা নেই। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এক রাষ্ট্রের সঙ্গে অন্য রাষ্ট্রের সম্পর্ক শুধুমাত্র জাতীয় স্বার্থের দ্বারা নির্ধারিত হয়, কোনো আদর্শ বা নীতির দ্বারা নয়। অর্থাৎ রাষ্ট্রগুলির পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রিত হয় ক্ষমতা বা শক্তি অর্জন ও তা সম্প্রসারণের ভিত্তিতে। জাতীয় লক্ষ্যপূরণের জন্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা, দ্বন্দ্ব এবং শেষপর্যন্ত যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে। এভাবেই ক্ষমতা দখল ও জাতীয় স্বার্থ রাষ্ট্রগুলির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে ওঠে।

৩। বাস্তববাদী তত্ত্বের দুটি প্রধান সমালোচনা উল্লেখ করো।

উঃ বাস্তববাদী তত্ত্বের বিরুদ্ধে সমালোচনাগুলি হল-
① সংকীর্ণতার দোষে দুষ্ট: বাস্তববাদ জাতীয় স্বার্থের ধারণাকে ক্ষমতার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্লেষণ > করেছে, যা সংকীর্ণতা দোষে দুষ্ট। কারণ, জাতীয় স্বার্থ হল ব্যাপক ধারণা যেখানে বিশ্বশান্তি ও – নিরাপত্তা, পরিবেশ সংরক্ষণ, মহামারি প্রতিরোধ, আর্থিক উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়গুলি যুক্ত থাকে।
② গণতান্ত্রিক বিশ্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়: সমালোচকদের মতে, নিজের ইচ্ছেমতন ক্ষমতার রাজনীতি অনুসরণ করা বর্তমান গণতান্ত্রিক বিশ্বে কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে এই তত্ত্ব ভ্রান্ত এবং গণতান্ত্রিক বিশ্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

৪। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলোচনায় উদারনীতিবাদ বলতে কী বোঝো?

উঃ উদারনীতিবাদের সংজ্ঞা: ১৯৬০-এর দশকের শেষ দিকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলোচনায় উদারনীতিবাদী আলোচনা ধারার আবির্ভাব ঘটে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলোচনায় উদারনীতিবাদী তত্ত্ব বলতে এমন এক তত্ত্বকে বোঝায় যা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রগুলির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও নির্ভরশীলতার মাধ্যমে এক শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল আন্তর্জাতিক পরিবেশ গড়ে তোলে এবং সকল রাষ্ট্রকে নিয়ে এক বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়।

৫। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলোচনায় উদারনীতিবাদী তত্ত্ব কবে গড়ে ওঠে? এই তত্ত্বের প্রধান প্রবক্তাদের নাম লেখো।

উঃ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলোচনায় উদারনীতিবাদী তত্ত্বের উদ্ভব: ১৯৭০-এর দশকের প্রথমভাগ থেকে বাস্তববাদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে উদারবাদী তত্ত্বের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলোচনায় রাষ্ট্রের পাশাপাশি অরাষ্ট্রীয় কারকগুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে গুরুত্ব দিয়েই এই তত্ত্ব গড়ে উঠেছে।

প্রধান প্রবক্তা: ১৯৭০-এর দশকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলোচনায় মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রবার্ট কেওহান এবং জোসেফ নাই-এর লেখনীর উপর ভিত্তি করে উদারবাদী আলোচনা তাত্ত্বিক রূপ লাভকরে। জন বার্টন, চার্লস মেরিয়াম প্রমুখরা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলোচনার উদারনীতিবাদী ধারণার প্রসারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন।

৬। আন্তর্জাতিক সম্পর্কে উদারবাদী তত্ত্বের দুটি সমালোচনা লেখো।

উঃ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উদারনীতিবাদী তত্ত্বের বিরুদ্ধে সমালোচনাগুলি হল-
① একপেশে দৃষ্টিভঙ্গি: এই দৃষ্টিভঙ্গি কেবল পাশ্চাত্যের উদারনৈতিক ব্যবস্থাকেই আদর্শ ও শ্রেষ্ঠ ব্যবস্থা বলে মনে করেছে। ফলে এই তত্ত্বের আলোচনা পাশ্চাত্যের আলোচনা দ্বারা সীমাবদ্ধ। এজন্য এই দৃষ্টিভঙ্গি একপেশে বলে সমালোচিত হয়েছে।

② অবাস্তব ও নীতিধর্মী : সমালোচকগণ মনে করেন, আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে নীতি বা আদর্শের কোনো গুরুত্ব নেই। আধুনিক বিশ্বে জাতীয় রাষ্ট্রগুলির কাছে মুখ্য বিচার্য বিষয় হল ক্ষমতা এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা। জাতীয় স্বার্থই প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রগুলিকে চালনা করে কিন্তু উদারনীতিবাদের তাত্ত্বিকরা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নির্ধারণের ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থের গুরুত্বকে বুঝে উঠতে পারেননি।

7. মার্কস ও এঙ্গেলস-এর কোন্ রচনার মধ্য দিয়ে বিশ্ব পুঁজিবাদী ব্যবস্থা ও তার প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়?

উঃ মার্কস ও এঙ্গেলস এর রচনা: ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ‘কমিউনিস্ট পার্টির ইস্তেহার’-এ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিশ্ব পুঁজিবাদী ব্যবস্থা ও তার প্রকৃতি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। মার্কসের বক্তব্য ছিল পুঁজিপতি বা বুর্জোয়া শ্রেণি আন্তর্জাতিক বাজারকে নিজেদের কুক্ষিগত করে শোষণের মাধ্যমে পৃথিবীর প্রতিটি দেশে উৎপাদন ও ভোগ্যপণ্যের একটা বিশ্বজনীন চরিত্র গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। পৃথিবীর সকল দেশকে পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য করেছে। এই পুস্তিকাতেই তিনি লেখেন “দুনিয়ার মজদুর এক হও”। এই উক্তি থেকেই বলা যায় মার্কস বিশ্বের সকল দেশের শ্রমিকশ্রেণিকে একত্রিত করে পুঁজিবাদকে পরাজিত করার ডাক দিয়েছিলেন।

৮। কার হাত ধরে মার্কসীয় তত্ত্ব আন্তর্জাতিক স্তরে সংগঠিত রূপ লাভ করে?

উঃ উদ্ভব: ১৯৬০-এর দশকের শেষদিকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের তত্ত্বগত আলোচনায় মার্কসীয় ধারার উদ্ভব দেখা যায়। যদিও এর তত্ত্বগত ভিত্তি ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত লেনিনের রচনা ‘ইম্পেরিয়ালিজম: দ্য হাইয়েস্ট স্টেজ অফ ক্যাপিটালিজম শীর্ষক পুস্তিকার মাধ্যমে হয়েছিল। লেনিন দেখান প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে একচেটিয়া পুঁজির আধিপত্য বিস্তার সাম্রাজ্যবাদকে ডেকে আনে এবং আর্থিক পুঁজির মালিকরা নতুন বাজার খুঁজতে গিয়ে একে অপরের অধিকৃত এলাকা দখলে উদ্যত হলে অনিবার্য পরিণতি হিসেবে যুদ্ধকে ডেকে আনে। এই কারণে প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে তিনি সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ বলে অভিহিত করেন। এইভাবে ইউরোপে উদ্ভূত পুঁজিবাদী ব্যবস্থা পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে আন্তর্জাতিক স্তরে এক কর্তৃত্ববাদী আর্থরাজনৈতিক ব্যবস্থা সূচিত হয়। এভাবে লেনিনের ব্যাখ্যার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলোচনায় তত্ত্বগতভাবে মার্কসীয় মতবাদ উঠে আসে।

৯। আন্তর্জাতিক স্তরের মার্কসীয় তত্ত্বের প্রধান প্রবক্তাদের নাম লেখো।

মার্কসীয় তত্ত্বের প্রধান প্রবক্তাগণ : উঃ লেনিনের হাত ধরে মার্কসীয় তত্ত্ব আন্তর্জাতিক স্তরে রূপরেখা পেলেও ১৯৬০-এর দশকে তত্ত্বটি সংগঠিত আকারে আন্তর্জাতিক তত্ত্ব হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এই সময় আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আধুনিক চর্চায় মার্কসীয় তত্ত্বের ধারাকে যাঁরা এগিয়ে নিয়ে গেছেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন-অন্দ্রে গুণ্ডার ফ্রাঙ্ক, সামির আমিন, ইমান্যুয়েল ওয়ালারস্টাইন, রউল প্রবিশ প্রমুখ। মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আন্তর্জাতিক স্তরে ধনতান্ত্রিক বৈষম্যমূলক যে ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে এই ধারার উদ্ভব হয়।

১০। মার্কসীয় তত্ত্ব অনুযায়ী সর্বহারার আন্তর্জাতিকতাবাদ বলতে কী বোঝো?

উঃ সর্বহারার আন্তর্জাতিকতাবাদ: ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট সম্মেলনে লেনিন জাতীয়তাবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের প্রশ্নে সর্বহারার আন্তর্জাতিকতাবাদ-এর ধারণাটি ব্যক্ত করেছিলেন। যদিও ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে মার্কস লিখিত ‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’-তেই শ্রমজীবী শ্রেণির ঐক্য গড়ে তোলার ডাক দিয়েছিলেন। মার্কসবাদী দর্শন অনুসারে, সর্বহারাদের কোনো দেশ নেই, সর্বত্রই এই শ্রেণি শোষিত ও অবদমিত। তাই পুঁজিবাদী শোষণের হাত থেকে মুক্তি পেতে হলে বিশ্বের সকল শ্রমিককে তথা সর্বহারা শ্রেণিকে বিপ্লবের ডাক দিতে হবে। বিশ্ববিপ্লব সম্পাদনের মাধ্যমে শ্রমজীবী শ্রেণির মুক্তি ঘটবে বলে এই তত্ত্বের তাত্ত্বিকরা মনে করেছিলেন।

১১। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মার্কসীয় তত্ত্বের কটি নতুন তাত্ত্বিক ধারা গড়ে উঠেছে ও কী কী?

উঃ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মার্কসবাদী তত্ত্বের নতুন তাত্ত্বিক ধারা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে বিশেষত ১৯৬০-এর দশকের শেষার্ধে এবং ১৯৭০-এর দশকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি তিনটি উল্লেখযোগ্য ধারায় বিকশিত হয়। এগুলি হল যথাক্রমে-অনুন্নয়নের কাঠামোবাদী তত্ত্ব, তত্ত্ব এবং বিশ্বব্যবস্থা তত্ত্ব। নির্ভরশীলতার

১২। অনুন্নয়নের কাঠামোবাদী তত্ত্বের প্রধান প্রবক্তাদের নাম উল্লেখ করো।

উঃ অনুন্নয়ন তত্ত্বের প্রবক্তা : অনুন্নয়ন তত্ত্বের প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায় গুনার মিরডাল, ডেভিড সিঙ্গার প্রমুখের লেখায়। তবে দক্ষিণ আমেরিকার অনুন্নয়নের কারণ অনুসন্ধানের জন্য জাতিপুঞ্জ কর্তৃক গঠিত দক্ষিণ আমেরিকার জন্য অর্থনৈতিক কমিশন (Economic Commission for Latin America – ECLA)-এর প্রতিবেদনে রউল প্রবিশ প্রথম অনুন্নয়নের কারণ নির্ণয়ের প্রশ্নে কাঠামোবাদী তত্ত্বের ধারণা দেন। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে প্রবিশ তাঁর প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন যে, ধনী রাষ্ট্রগুলি বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং সুপরিকল্পিতভাবে অনুন্নত দেশগুলির অর্থনীতিকে আরও দুর্বল ও পরনির্ভরশীল করে তোলে। তাই বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থা উন্নত রাষ্ট্রগুলির সপক্ষে এবং তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির বিপক্ষে কাজ করে।

১৩। কেন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলোচনায় নির্ভরশীলতার তত্ত্ব গড়ে ওঠে? এই তত্ত্বের মুখ্য প্রবক্তাদের নাম লেখো।

উঃ নির্ভরশীলতার তত্ত্ব: ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে রউল প্রবিশ কর্তৃক প্রদত্ত প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করেই আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলোচনায় নির্ভরশীলতার তত্ত্ব (Dependency Theory) গড়ে ওঠে। মূলত কাঠামোবাদীরা অনুন্নয়নের যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হলে এই তত্ত্বের উদ্ভব হয়। এই তত্ত্বের প্রধান তাত্ত্বিক হলেন অঁন্দ্রে গুন্ডার ফ্রাঙ্ক, সামির আমিন প্রমুখ। এঁনাদের মতে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির অনুন্নয়নের প্রধান কারণ হল বিশ্ব ধনতান্ত্রিক কাঠামো।

১৪। অঁন্দ্রে গুন্ডার ফ্রাঙ্ক কোন্ দেশের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তাঁর বিখ্যাত তত্ত্বটি গড়ে তুলেছিলেন? তাঁর তত্ত্বের মূল কথা কী ছিল?

উঃ অঁন্দ্রে গুণ্ডার ফ্রাঙ্ক-এর তত্ত্ব: ফ্রাঙ্ক দক্ষিণ আমেরিকার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে Development of Underdevelopment গ্রন্থে তাঁর তত্ত্ব গঠন করেছিলেন। তাঁর তত্ত্বের কেন্দ্রীয় বিষয় ছিল, ‘বিশ্ব পুঁজিবাদ’ তথা অসম ক্ষমতা কাঠামো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির অনুন্নয়নের জন্য দায়ী। তাঁর মতে, বিশ্ব পুঁজিবাদের মধ্যে থেকে কোনো দেশের পক্ষে উন্নতি করা সম্ভব নয়। তাই অনুন্নত দেশগুলির উন্নয়নের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন এই বিশাল শোষণশৃঙ্খল ছিন্ন করে পশ্চিমি উন্নত দেশগুলির থেকে মুক্ত হওয়া এবং উন্নয়নের জন্য সমাজতান্ত্রিক পথ অনুসরণ করা।

১৫। বিখ্যাত মিশরীয় অর্থনীতিবিদ সামির আমিন কোন্ দেশের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে তাঁর তত্ত্ব প্রদান করেছিলেন? এই সম্পর্কে তাঁর দুটি গ্রন্থের নাম লেখো।

উঃ নির্ভরশীলতা তত্ত্বের অপর এক উল্লেখযোগ্য তাত্ত্বিক হলেন মিশরীয় অর্থনীতিবিদ সামির আমিন। পশ্চিম আফ্রিকার অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে তিনি তাঁর তত্ত্ব গড়ে তোলেন। এই সম্পর্কিত তাঁর বিখ্যাত দুটি গ্রন্থ হল ‘অ্যাক্যিউমুলেশন অফ দ্য ওয়ার্ল্ড স্কেল’ এবং ডেভেলপমেন্ট’। ‘আনইক্যুয়াল

১৬। বিশ্বব্যবস্থা তত্ত্বের প্রধান প্রবক্তা কে? তাঁর তত্ত্বে বিশ্বব্যবস্থাকে তিনি কয়ভাগে ভাগ করেছিলেন?

উঃ বিশ্বব্যবস্থা তত্ত্ব: মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা প্রভাবিত অপর তাত্ত্বিক ইমান্যুয়েল ওয়ালারস্টাইন ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে রচিত ‘দ্য মডার্ন ওয়ার্ল্ড সিস্টেম’ (The Modern World System) গ্রন্থের মার্কসীয় ধারণা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ‘বিশ্বব্যবস্থা তত্ত্ব’ প্রদান করেন।

এই তত্ত্বের মাধ্যমে তিনি বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বা বিশ্ব পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় উন্নত ও অনুন্নত দেশগুলির মধ্যেকার সম্পর্কের একটা ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি সমগ্র বিশ্বব্যবস্থাকে কেন্দ্র (Centre), প্রান্তীয় অঞ্চল (Periphery) এবং আধা-প্রান্তীয় অঞ্চল (Semi-periphery)-তে ভাগ করেছেন।

১৭। ওয়ালারস্টাইন তাঁর বিশ্বব্যবস্থা তত্ত্বে কেন্দ্র, প্রান্ত ও আধা-প্রান্তীয় দেশ বলতে কী বুঝিয়েছেন?

উঃ বিশ্ব অর্থনীতিতে ‘কেন্দ্র’ হল পাশ্চাত্যের উন্নত ধনী দেশসমূহ, দেশগুলি প্রান্তীয় ও আধা-প্রান্তীয় দেশগুলিকে শোষণ করে থাকে। অন্যদিকে প্রান্তীয় অঞ্চল হল অনুন্নত দরিদ্র দেশসমূহ এবং আধা-প্রান্তীয় অঞ্চল হল সদ্য উন্নত দেশ, যেমন-ভারত, আর্জেন্টিনা, দক্ষিণ কোরিয়া ইত্যাদি। এই – দেশগুলি প্রাকৃতিক সম্পদে পূর্ণ, উৎকর্ষ মানবসম্পদে সমৃদ্ধ, দেশগুলিতে পুঁজিবাদী ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রচলিত এবং জাতীয় নেতৃত্ব জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণে সক্ষম। এই দেশগুলি একদিকে কেন্দ্রস্থ ধনতান্ত্রিক দেশগুলির দ্বারা শোষিত হয়। অন্যদিকে প্রান্তীয় দেশগুলিকে শোষণ করে। অর্থাৎ ওয়ালারস্টাইনের মতে আধা-প্রান্তীয় অঞ্চলগুলির মধ্যে কেন্দ্রীয় অঞ্চল ও প্রান্তীয় অঞ্চল উভয়-এর বৈশিষ্ট্যই বর্তমান।

১৮। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মার্কসীয় তত্ত্বের দুটি প্রধান সমালোচনা উল্লেখ করো।

উঃ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যয়নের ক্ষেত্রে মার্কসীয় তত্ত্বটি বিভিন্ন সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। এর মধ্যে দুটি হল-
① মাত্রাতিরিক্ত শ্রেণি ধারণায় প্রাধান্য: আন্তর্জাতিক সম্পর্কের চর্চায় মার্কসীয় ধারা শ্রেণিকে মূল একক হিসেবে অধিক গুরুত্ব দিয়ে রাষ্ট্রের ভূমিকাকে হীন করে দেখেছে। অথচ আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রধান কারক রাষ্ট্র।

② বিশ্বসমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি: মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি যে বিশ্বসমাজতন্ত্র এবং সর্বহারার আন্তর্জাতিকতাবাদ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিল তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। বর্তমানে ধনতন্ত্র অপ্রতিরোধ্য গতিতে এমনকি চিন, রাশিয়ার মতো সমাজতান্ত্রিক দেশগুলিও ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে গ্রহণ করেছে। তাই মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

আরো পড়ুন : উচ্চমাধ্যমিক চতুর্থ সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment