দ্রব্য সম্পর্কে দেকার্তের মত

দ্রব্য সম্পর্কে দেকার্তের মত

দ্রব্য সম্পর্কে দেকার্তের মত
দ্রব্য সম্পর্কে দেকার্তের মত

ফরাসি দার্শনিক রেনে দেকার্ত তাঁর অধিবিদ্যায় দ্রব্য সম্পর্কিত মত ব্যক্ত করেছেন। তিনি ‘Meditations on First Philosophy’ এবং ‘Principles of Philosophy’ গ্রন্থে তাঁর দ্রব্যতত্ত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

দ্রব্যের লক্ষণ

দেকার্ত একজন বুদ্ধিবাদী দার্শনিক। দ্রব্য সম্পর্কে দেকার্তের অভিমতকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে, আধার এবং দ্রব্য হল স্বনির্ভর। দেকার্ত দ্রব্য সম্পর্কে দুটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন-

(i) দ্রব্য হল গুণের আধার

দেকার্ত তাঁর’ Principles of Philosophy’ গ্রন্থে দ্রব্য বলতে গুণের আধারকে বুঝিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তাকেই আমরা দ্রব্য বলি যার মধ্যে কোনো গুণ বা ধর্ম আশ্রিত হয়ে থাকে। এই প্রত্যক্ষযোগ্য গুণের আধার বা আশ্রয় ভিন্ন অন্য কোনো অর্থে ‘দ্রব্য’ কথাটি ব্যবহৃত হতে পারে না। বুদ্ধির আলোকে আমরা জানতে পারি যে, প্রকৃত গুণমাত্রই কোনো কিছুর গুণ হতে বাধ্য। কারণ গুণ তো আর শূন্যে ভেসে বেড়াতে পারে না।

দেকার্তের মতে যার সঙ্গে আমরা সাক্ষাৎভাবে পরিচিত হই তা দ্রব্য নয়; তা দ্রব্যে আশ্রিত গুণ। কিন্তু গুণমাত্রই কোনো কিছুকে আশ্রয় করে থাকে এবং তা আমরা জানতে পারি বুদ্ধির স্বচ্ছ আলোকে। এই জ্ঞানকে দেকার্ত স্বতঃসিদ্ধ জ্ঞান বলেছেন। গুণ নির্ভর যে-কোনো কিছুকে আমরা দ্রব্য বলে আখ্যা দিয়ে থাকি। বুদ্ধি বা মননের সাহায্যে অর্থাৎ অনুমানের দ্বারা দ্রব্যের জ্ঞান হয়। এই দ্রব্যের সত্তা বা অস্তিত্ব প্রত্যক্ষযোগ্য না হলেও তা অবশ্য স্বীকার্য। কারণ যার অস্তিত্ব নেই তার কোনো গুণ বা ধর্ম থাকতে পারে না। অথচ গুণ বা ধর্ম প্রত্যক্ষসিদ্ধ। অতএব, এই ধর্ম বা গুণের আশ্রয়ও স্বীকার্য। তাই বলা যায় দ্রব্য হল গুণের আধার।

দেকার্ত দু-ধরনের দ্রব্য স্বীকার করেছেন। যথা-ক ঈশ্বররূপ নিরপেক্ষ দ্রব্য এবং খ দেহ ও মন বা জড় ও চেতনরূপ সাপেক্ষ দ্রব্য। ঈশ্বরকে নিরপেক্ষ দ্রব্য বলার পিছনে দেকার্তের যুক্তি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে, দেকার্ত দ্রব্য সম্পর্কে অন্য আর একটি বিকল্প লক্ষণ উপস্থাপন করেছেন।

(ii) দ্রব্য হল স্বনির্ভর

দেকার্ত তাঁর ‘Principles of Philosophy’ গ্রন্থে দ্রব্যের এই লক্ষণটি প্রকাশ করে বলেছেন, দ্রব্য হল এমন এক সত্তাবান পদার্থ যার অস্তিত্ব নিজের বাইরে অন্য কিছুর উপর নির্ভর করে না। অর্থাৎ তাঁর লক্ষণ।৩ দ্রব্য হল স্বনির্ভর ও স্বাধীন। ইন্দ্রিয়ানুভবের দ্বারা দ্রব্যকে জানা যায় না- একমাত্র বুদ্ধির স্বাভাবিক আলোকে দ্রব্যকে উপলব্ধি করা যায়। দেকার্ত মনে করেন দ্রব্যের ধারণা হল সহজাত ধারণা। গুণের মাধ্যমে দ্রব্যকে জানা যায় বা বুদ্ধির মাধ্যমে দ্রব্যকে উপলব্ধি করা যায়।

দ্রব্যের শ্রেণিবিভাগ

দেকার্ত প্রদত্ত দ্রব্যের সংজ্ঞাটি মেনে নিলে কেবলমাত্র একটি দ্রব্যই অস্তিত্বশীল হতে পারে, তা হল ঈশ্বর (God)। তাঁর মতে, ঈশ্বর হলেন একমাত্র পরম ও নিরপেক্ষ দ্রব্য (Absolute Substance)। কেন-না কেবল ঈশ্বর সম্পূর্ণভাবে আত্ম-নির্ভরশীল এবং অন্য-নিরপেক্ষ। ঈশ্বর সবকিছুর কারণ হলেও নিজে অকারণ। ঈশ্বর অসীম, অনন্ত, পরিপূর্ণ সত্তা। ঈশ্বরের সত্তা কোনো কিছুর উপর নির্ভর করে না।

তবে ঈশ্বর ছাড়া তিনি আরও দুটি দ্রব্য স্বীকার করেছেন-জড় (Matter) এবং মন (Mind)। কিন্তু এই দ্রব্য দুটি একদিকে যেমন সংখ্যায় বহু, অপরদিকে তেমনই একে অন্যের উপর নির্ভরশীল। আত্মা নামক দ্রব্যটির আশ্রয় হল দেহরূপ জড়। সেই অর্থে আত্মা জড়ের উপর নির্ভরশীল। তেমনই আত্মা বা মন ছাড়া জড় দেহ অচেতন। তাই চৈতন্যের বিষয়ে জড় দেহ আত্মার উপর নির্ভরশীল। এখন প্রশ্ন হল তাহলে কি স্বনির্ভর না হওয়ায় ‘জড়’ ও ‘আত্মা’ বা ‘মন’-কে দ্রব্য বলা যাবে না?

এই প্রশ্নের উত্তরে দেকার্ত বলেন, আত্মা ও জড় হল গৌণ বা সাপেক্ষ দ্রব্য, কেন-না এরা উভয়ই ঈশ্বর সৃষ্ট এবং সেজন্য ঈশ্বরের উপর নির্ভরশীল। এই অর্থে আত্মা ও জড় অন্য-নির্ভর দ্রব্য। কিন্তু আসলে আত্মা ও জড় পরস্পর স্বাধীন সত্তা, কারণ এগুলির কোনোটিই তার অস্তিত্বের জন্য অন্যের উপর নির্ভর করে না। প্রতিটি আত্মা ও জড়দ্রব্যের সংজ্ঞা দেওয়া যায় তাদের পৃথক পৃথক ধর্মের সাহায্যে। জড়ের ধর্ম হল বিস্তৃতি এবং মনের ধর্ম হল চেতনা।

জড়দ্রব্য যেমন নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য মনের উপর নির্ভর করে না, তেমনই মনও নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য জড়ের উপর নির্ভর করে না। অর্থাৎ জড় ও মন পরস্পর নিরপেক্ষ স্বাধীন সত্তা। সুতরাং, প্রাথমিক অর্থে দেকার্ত ঈশ্বরকে পরম দ্রব্য এবং গৌণ অর্থে ঈশ্বরসৃষ্ট জড় ও মনকে সাপেক্ষ দ্রব্য বলেছেন। কাজেই, দেকার্তের মতে ঈশ্বর = পরমদ্রব্য ও স্বনির্ভর, মন বা আত্মা ঈশ্বরনির্ভর, জড় = ঈশ্বরনির্ভর জগৎ।

যা গুণের আধার তাই দ্রব্য

দেকার্তের মতে আমরা দ্রব্যকে গুণযুক্তরূপে দেখি বটে, কিন্তু দ্রব্য ও গুণ এক নয়। দ্রব্যের অতি প্রয়োজনীয় ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য যা অনিবার্যভাবে দ্রব্যে নিহিত থাকে, তাকেই গুণ বলে। তিনি দ্রব্যের মুখ্য বা প্রকৃতিগত গুণকেই ধর্ম নামে অভিহিত করেছেন। গুণের মাধ্যমেই দ্রব্যকে জানা যায় এবং গুণ ছাড়া দ্রব্য থাকতে পারে না। এই অর্থে বলা যায়, দ্রব্য হল গুণের আধার।

গুণ দ্রব্যনির্ভর, কিন্তু দ্রব্য গুণনির্ভর নয়। ঈশ্বর অনন্ত গুণের অধিকারী। যেমন- অসীমতা, নিত্যতা, পূর্ণতা, সত্যনিষ্ঠা, সর্বজ্ঞতা ইত্যাদি। কিন্তু আত্মা ও জড়ের কেবল একটি করে গুণ আছে। চেতনা হল আত্মার গুণ। চেতনা ছাড়া আত্মা থাকতে পারে না। অপরপক্ষে, বিস্তৃতি হল জড়ের ধর্ম। বিস্তৃতি ছাড়া জড়দ্রব্যের অস্তিত্বের ধারণা করা যায় না। কাজেই, আত্মা ও জড় স্বরূপত ভিন্ন। কেন-না আত্মা হল বিস্তৃতিহীন চৈতন্য আর জড় হল চৈতন্যহীন বিস্তৃতি। তাই দেকার্তের মতে মন ও জড় দ্রব্য দুটি পরস্পর বিপরীতধর্মী। মন ও জড় দ্রব্যকে দুটি স্বতন্ত্র ও পরস্পর বিরোধী দ্রব্য বলার কারণেই দেকার্তকে দ্বৈতবাদী দার্শনিক বলা হয়।

বৈশিষ্ট্য

এই আলোচনা থেকে দ্রব্য সম্পর্কে দেকার্তের মূল বক্তব্যকে এইভাবে প্রকাশ করা যায়-

  • দ্রব্য বলতে দেকার্ত কখনও গুণের আধারকে বুঝিয়েছেন, কখনও বা স্বাধীন বা স্বতন্ত্র সত্তাকে বুঝিয়েছেন।
  • গুণের প্রত্যক্ষ হয়; কিন্তু দ্রব্যের প্রত্যক্ষ হয় না। গুণের আশ্রয়রূপে দ্রব্য অনুমিত হয়। বুদ্ধির স্বচ্ছ আলোকে দ্রব্য সম্পর্কে আমরা জ্ঞান লাভ করি।
  • দেহের ধর্ম বিস্তৃতি; মনের ধর্ম চেতনা। দেহ হল চেতনাহীন বিস্তৃতি এবং মন হল বিস্তৃতিহীন চেতনা। মন ও দেহ বা চেতনা ও বিস্তৃতি পরস্পর বিপরীতধর্মী।
  • দেকার্ত প্রকৃতপক্ষে তাঁর দ্রব্যতত্ত্বে তিনটি দ্রব্যের অস্তিত্ব স্বীকার করেছেন- নিরপেক্ষ দ্রব্যরূপে ঈশ্বর এবং সাপেক্ষ দ্রব্যরূপে জড় ও মন।

ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াবাদ

পরস্পর বিপরীতধর্মী হওয়া সত্ত্বেও মন ও দেহ পরস্পর পরস্পরের উপর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া করে। দেকার্তের মতে আমাদের মস্তিষ্কে অবস্থিত পিনিয়াল গ্রন্থির মাধ্যমে এদের মধ্যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সংগঠিত হয়। দেকার্তের দেহ ও মন সম্পর্কিত মতবাদ ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াবাদ (Interactionism) নামে পরিচিত।

আকস্মিক গুণ বা রূপান্তর

দেকার্ত আরও বলেন যে, দ্রব্যের প্রকৃতিগত গুণ ছাড়া কতকগুলি গৌণগুণ বা বৈশিষ্ট্য আছে, যেগুলি দ্রব্যে সবসময় উপস্থিত থাকে না। তিনি এই গুণগুলিকে আকস্মিক গুণ বা প্রত্যংশ বা রূপান্তর বা বিকার (Modes) নামে অভিহিত করেছেন। যেমন- ইচ্ছা, অনুভূতি, কামনা প্রভৃতি হল আত্মার রূপান্তর এবং অবস্থান, গতি প্রভৃতি হল জড়দ্রব্যের রূপান্তর। গুণ নানা রূপান্তরের মধ্যে নিজেকে প্রকাশ করতে পারে। রূপান্তর ছাড়া দ্রব্য ও গুণের ধারণা করা যায়, কিন্তু দ্রব্য ও গুণ ছাড়া রূপান্তরের ধারণা করা যায় না। তবে মনে রাখতে হবে, কেবলমাত্র সাপেক্ষ দ্রব্যেরই রূপান্তর আছে। ঈশ্বরের কোনো রূপান্তর নেই, কেন-না তিনি নিত্য ও অপরিবর্তনীয়।

সমালোচনা

দেকার্তের দ্রব্যসম্বন্ধীয় মতবাদ দোষমুক্ত নয়। তাঁর দ্রব্যতত্ত্বের সমালোচনাগুলি নিম্নরূপ —

দ্রব্যের সংজ্ঞা অসামঞ্জস্যপূর্ণ

দেকার্ত দ্রব্যের যে সংজ্ঞা দিয়েছেন, তাতে একমাত্র ঈশ্বরই দ্রব্য হতে পারেন; কিন্তু তিনি তিনটি দ্রব্যের অস্তিত্ব স্বীকার করেছেন। দেকার্ত বলেন যা স্বনির্ভর, তা-ই দ্রব্য। দ্রব্য বলতে যদি তাই বোঝায়, তাহলে আত্মা ও জড় কখনোই দ্রব্য হতে পারে না। কারণ এরা ঈশ্বরের উপর নির্ভরশীল। কাজেই, দেকার্তের স্বনির্ভরতার সূত্রকে স্বীকার করলে দেহ ও মনকে দ্রব্য বলা যায় না।

দ্রব্য ও গুণের সম্বন্ধ স্পষ্ট নয়

দ্রব্য ও গুণের সম্পর্ক বিষয়ে দেকার্ত কোনো আলোচনা করেননি। তিনি ঈশ্বর, আত্মা ও জড়ের গুণগুলি কীভাবে একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত তার ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম নন। অর্থাৎ তিনি গুণের ব্যাখ্যার সঙ্গে দ্রব্যত্বের ধারণাকে যুক্ত করতে পারেননি।

যুক্তিহীন দ্বৈতবাদ ব্যাখ্যা

দেকার্ত আত্মা ও জড়ের পৃথক অস্তিত্ব স্বীকার করে যে দ্বৈতবাদ সৃষ্টি করেছেন, তা নিরপেক্ষ দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে গ্রহণযোগ্য নয়। মন বা আত্মা এবং দেহ বা জড় দুটি স্বতন্ত্র এবং পরস্পর বিরোধী দ্রব্য হলে তাদের মধ্যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বা কার্যকারণ সম্পর্ক থাকতে পারে না। কিন্তু দেকার্ত বলেছেন, দৈহিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া আমাদের মানসিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। আবার মানসিক ক্রিয়া আমাদের দৈহিক ক্রিয়ার উপর প্রভাব বিস্তার করে। কিন্তু কীভাবে দুটি পরস্পর বিরোধী দ্রব্যের মিথস্ক্রিয়া সম্ভব? -এই প্রশ্নের উত্তর দেকার্ত দিতে পারেননি।

ঈশ্বরের বাস্তব অস্তিত্ব প্রমাণসাপেক্ষ নয়

দেকার্তের মতে ঈশ্বরের ধারণা হল সহজাত ধারণা। এই ধারণা থেকে ঈশ্বরের অস্তিত্বকে প্রমাণ করা যায়। কিন্তু রাসেল, কান্ট প্রমুখ দার্শনিকগণ দেকার্তের এই বক্তব্যটির সমালোচনা করে বলেছেন যে, ঈশ্বরের ধারণা থেকে কখনোই তাঁর বাস্তব অস্তিত্বকে প্রমাণ করা সম্ভব নয়।

ঈশ্বরের স্বরূপের অসংগতিপূর্ণ ব্যাখ্যা

দেকার্তের বক্তব্য এই যে, ঈশ্বরের কোনো রূপান্তর বা বিকার নেই। অর্থাৎ ঈশ্বরের কোনো পরিবর্তন হয় না, তিনি হলেন পরমসত্তা। কিন্তু দেকার্ত ঈশ্বরকে জড়দ্রব্যের গতির মূল কারণ বলেছেন। তাই প্রশ্ন ওঠে যে, ঈশ্বর জড়দ্রব্যের গতির (পরিবর্তনের) মূল কারণ হয়েও কীভাবে নিজে অপরিবর্তনীয় সত্তারূপে অবস্থান করেন? এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দেকার্ত দিতে পারেননি।

জড়দ্রব্য ও বিস্তৃতির অসন্তোষজনক ব্যাখ্যা

দেকার্ত জড়দ্রব্যের সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। তিনি জড়দ্রব্যকে বিস্তৃতি বা দেশ (Space)-এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত বলে মনে করেন। কিন্তু দেশ বা বিস্তৃতি কীভাবে এবং কেন বিভিন্ন জড়দ্রব্যে বিভক্ত হয়, তার কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা তাঁর মতবাদে পাওয়া যায় না।

আরও পড়ুন : পর্যটকদের দৃষ্টিতে ভারত MCQ

Leave a Comment