শিক্ষাশ্রয়ী মনোবিজ্ঞানের অর্থ প্রশ্ন উত্তর (S.A.Q) Class 11

শিক্ষাশ্রয়ী মনোবিজ্ঞানের অর্থ প্রশ্ন উত্তর

শিক্ষাশ্রয়ী মনোবিজ্ঞানের অর্থ প্রশ্ন উত্তর
শিক্ষাশ্রয়ী মনোবিজ্ঞানের অর্থ প্রশ্ন উত্তর

১। যান্ত্রিক সংবেদন বা দৈহিক সংবেদন (Organic sensation) বলতে কী বোঝো? যান্ত্রিক সংবেদনের উদাহরণ দাও।

দেহযন্ত্রের ভিতরে ক্রিয়াশীল বিভিন্ন অঙ্গগুলির মাধ্যমে যে সংবেদন ঘটে, তাকে যান্ত্রিক সংবেদন বলা হয়। পাকস্থলী, ফুসফুস, যকৃৎ, হৃদযন্ত্র প্রভৃতির ক্রিয়ার ফলে যান্ত্রিক সংবেদন হয়।

হৃদযন্ত্র, ফুসফুস, পাকস্থলীর ক্রিয়া যান্ত্রিক সংবেদনের উদাহরণ।

২। বিশেষ সংবেদন (Special sensation) বা ইন্দ্রিয় সংবেদন বলতে কী বোঝো? ইন্দ্রিয় সংবেদনের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা ও ত্বক এই পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে যে সংবেদন হয়, তাকে ইন্দ্রিয় সংবেদন বলা হয়।

ইন্দ্রিয় সংবেদনের দুটি বৈশিষ্ট্য হল-

  • বাহ্য উদ্দীপক নির্ভর: ইন্দ্রিয় সংবেদন বাহ্য উদ্দীপকের দ্বারা উৎপন্ন হয়। বিভিন্ন উদ্দীপক বিভিন্ন বাহ্য ইন্দ্রিয়কে উদ্দীপিত করে। যেমন- আলো চোখকে উদ্দীপিত করে।
  • ইন্দ্রিয় নির্ভর: এই জাতীয় সংবেদন ইন্দ্রিয়ের ওপর নির্ভরশীল। ইন্দ্রিয়গুলি বাইরের জগৎ থেকে উদ্দীপনা গ্রহণ করে।

৩। ইন্দ্রিয় সংবেদনে কতপ্রকার সংবেদন সৃষ্টি হয়? সেগুলি কী কী?

ইন্দ্রিয় সংবেদনে পাঁচ প্রকার সংবেদন সৃষ্টি হয়। যথা- দর্শন সংবেদন, শ্রবণ সংবেদন, ঘ্রাণ সংবেদন, স্বাদ সংবেদন এবং স্পর্শ সংবেদন।

৪। পেশিগত সংবেদন (Muscular Sensation) বলতে কী বোঝো ? পেশি সংবেদনের উপাদানগুলি উল্লেখ করো।

দেহের বিভিন্ন ধরনের পেশি, স্নায়ু, গ্রন্থি ইত্যাদির সঞ্চালনমূলক পরিবর্তনের ফলে যে সংবেদনের সৃষ্টি হয়, তাকে বলা হয় পেশিগত সংবেদন। এই ধরনের সংবেদন আমরা হাতের, পায়ের, শরীরের বিভিন্ন পেশির সংকোচনে অনুভব করি।

পেশি সংবেদনের প্রধান উপাদানগুলি হল-পেশির সংকোচন- প্রসারণ, অস্থিসন্ধি এবং টেনডন।

৫। পেশি সংবেদনের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

পেশি সংবেদনের দুটি বৈশিষ্ট্য হল-

  • পেশি সংবেদনের গুণ কত জোড়া পেশি কাজে লাগানো হচ্ছে, তার উপর নির্ভর করে।
  • পেশি সংবেদনের তীব্রতা নির্ভর করে পেশিগুলিকে সঞ্চালিত করতে কী পরিমাণ শক্তি ব্যয় হচ্ছে, তার অনুভূতির উপর।

৬। পেশি সংবেদনকে বিশ্লেষণ করলে কয়টি দিকের সন্ধান পাওয়া যায় এবং সেগুলি কী কী? জৈব সংবেদন বলতে কী বোঝো?

পেশি সংবেদনকে বিশ্লেষণ করলে তিনটি দিকের সন্ধান পাওয়া যায়। যথা- শক্তি প্রয়োগঘটিত সংবেদন, চেষ্টীয় সংবেদন এবং পার্শ্বীয় সংবেদন।

ক্ষুধা, তৃষ্ণা ইত্যাদির মাধ্যমে যে সংবেদনের সৃষ্টি হয়, তাকে বলা হয় জৈব সংবেদন।

৭। সঞ্চালনমূলক সংবেদন বলতে কী বোঝো? সংবেদনের কয়েকটি উপাদানের নাম লেখো।

পেশি, স্নায়ু, গ্রন্থি ইত্যাদির সঞ্চালনের ফলে যে সংবেদনের সৃষ্টি হয়, তাকে বলা হয় সঞ্চালনমূলক সংবেদন।

সংবেদনের উল্লেখযোগ্য উপাদান হল-উদ্দীপক, স্নায়ু এবং মন।

৮। উদ্দীপক (Stimulus) বলতে কী বোঝো। কয়েকটি দৈহিক যান্ত্রিক সংবেদনের উদাহরণ দাও।

বাহ্যিক পরিবেশের যে পরিবর্তনের জন্য ইন্দ্রিয়সংলগ্ন অন্তর্মুখী স্নায়ুর মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়, তাকে উদ্দীপক বলা হয়। অর্থাৎ যা কিছু প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে তাই হল উদ্দীপক। এই উদ্দীপকের সংস্পর্শেই সংবেদনের সৃষ্টি হয়।

ক্ষুধা, তৃষ্ণা , বেদনা প্রভৃতি হল দৈহিক যান্ত্রিক সংবেদনের উদাহরণ।

৯। সংবেদন ঘটার সময় আমাদের মন কীরূপ থাকে? জ্ঞানার্জনের সরলতম প্রক্রিয়াটির নাম কী?

সংবেদন ঘটার সময় আমাদের মন থাকে নিষ্ক্রিয় বা নিরপেক্ষ। জ্ঞানার্জনের সরলতম প্রক্রিয়াটি হল সংবেদন।

১০। দৈহিক বা যান্ত্রিক সংবেদনগুলি কীভাবে বিশেষ সংবেদন সৃষ্টি করে?

দৈহিক বা যান্ত্রিক সংবেদনগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, পাকস্থলী, যকৃৎ ইত্যাদি। দেহের এই সমস্ত অভ্যন্তরীণ যন্ত্রগুলি উত্তেজিত হয়ে, সেই উত্তেজনা অন্তর্বাহী স্নায়ু দ্বারা চালিত হয়ে মস্তিষ্কে এসে বিশেষ ধরনের সংবেদন সৃষ্টি করে।

১১। দৈহিক বা যান্ত্রিক সংবেদনের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

দৈহিক বা যান্ত্রিক সংবেদনের প্রধান দুটি বৈশিষ্ট্য হল-

  • এই সংবেদন দেহের অভাব ও প্রয়োজন নির্দেশ করে। 
  • এটি একটি জটিল প্রকৃতির সংবেদন।

১২। আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয় থেকে প্রাপ্ত উদ্দীপনা মস্তিষ্কে কয় ধরনের সংবেদন সৃষ্টি করে? প্রকারভেদগুলির নাম লেখো।

আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয় থেকে প্রাপ্ত উদ্দীপনা মস্তিষ্কে পাঁচ ধরনের সংবেদন সৃষ্টি করে। সেগুলি হল- দৃষ্টিগত সংবেদন (Visual Sensation), শ্রবণগত সংবেদন (Auditory Sensation), ঘ্রাণগত সংবেদন (Olfactory Sensation), স্বাদগত সংবেদন (Gustatory Sensation), স্পর্শগত সংবেদন (Tactual Sensation)।

১৩। শক্তি প্রয়োগজনিত সংবেদন এবং চেষ্টীয় সংবেদন (Kinaesthetic sensation) বলতে কী বোঝো?

কোনো কাজ করার সময় বাহ্যিক বস্তুর উপর শক্তি প্রয়োগের ফলে যে সংবেদন সৃষ্টি হয়, তাকে বলা হয় শক্তি প্রয়োগজনিত সংবেদন।

মানবদেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বা পেশি চালনার ফলে যে পরিবর্তন হয়, তার জন্য যে সংবেদন সৃষ্টি হয়, তাকে বলা হয় চেষ্টীয় সংবেদন।

১৪। পার্শ্ব সংবেদন বলতে কী বোঝো? সংবেদন কোন্ কোন্ ধর্মের উপর নির্ভরশীল? 

বাহ্যিক জগতে কাজ করার সময় আমাদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সঙ্গে বাহ্যিক বস্তুর সংস্পর্শের ফলে যে সংবেদনের সৃষ্টি হয়, তাকে বলা হয় পার্শ্ব সংবেদন।

সংবেদন গুণ, তীব্রতা, বিস্তৃতি, স্থায়িত্ব, অবস্থান ইত্যাদি ধর্মের উপর নির্ভরশীল।

১৫। ইংরেজিতে Special sense organ বলা হয় কাকে? অথবা, সংবেদন সৃষ্টিকারী ইন্দ্রিয়গুলি সংখ্যায় কত?

চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা এবং ত্বক এই পাঁচটি ইন্দ্রিয়কে একত্রে বলা হয় ‘Special sense organ’।

১৬। সংবেদনের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো। 

  • সরল প্রক্রিয়া: সংবেদন হল একটি সরল প্রক্রিয়া।
  • নিষ্ক্রিয় মন: সংবেদন গ্রহণ করার সময় মন নিষ্ক্রিয় থাকে।

১৭। সংবেদনের দুটি ধর্ম লেখো।

  • বিস্তৃতি: বিস্তৃতি হল সংবেদনের এমন একটি ধর্ম যা উদ্দীপকের দ্বারা উদ্দীপিত সংবেদন স্তরের উপর নির্ভরশীল।
  • সুখ-দুঃখের সুর: প্রতিটি সংবেদনের সঙ্গে প্রীতিকর অনুভূতি ও অপ্রীতিকর অনুভূতি জড়িত থাকে।

১৮। সংবেদনের গুণগত লক্ষণ বা ধর্ম ও জাতিগত বা শ্রেণিগত ধর্ম বলতে কী বোঝো?

একটি সংবেদনের যে বৈশিষ্ট্য থাকার জন্য তাকে অন্য সংবেদন থেকে পৃথক করা হয়, সেই বৈশিষ্ট্যকে সংবেদনের লক্ষণ বা ধর্ম বলা হয়।

যে ধর্মের দ্বারা একজাতীয় সংবেদনকে অন্য জাতীয় সংবেদন থেকে পৃথক করা হয়, তাকে সংবেদনের জাতিগত ধর্ম বলা হয়। যেমন-শ্রবণ সংবেদনের মধ্যে স্বাদগত সংবেদনের পার্থক্য হল জাতিগত পার্থক্য।

১৯। সংবেদনের পরিমাণগত ধর্ম বলতে কী বোঝো? সংবেদনের ব্যাপ্তি কী?

একই গুণবিশিষ্ট দুটি সংবেদনের মধ্যে যে পার্থক্য তাকে সংবেদনের পরিমাণগত ধর্ম বলা হয়। যেমন- আলোক সংবেদন তীব্র বা ক্ষীণ হতে পারে।

সংবেদন যতখানি স্থান জুড়ে অবস্থান করে, সেটাকেই তার ব্যাপ্তি বলা হয়।

২০। সংবেদনের স্থায়িত্ব বলতে কী বোঝো?

সংবেদন যতক্ষণ সময় ধরে স্থায়ী হয়, সেই সময়কে সংবেদনের স্থায়িত্ব বলা হয়। সংবেদনের স্থিতিকাল অনেকসময় উদ্দীপকের অবস্থানের সময়কালের উপর নির্ভর করে। যেমন- বিদ্যুতের ঝলক একবার হয়েই বন্ধ হয়ে যাওয়া, বাজ পড়ার কড় কড় শব্দ একবার হয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া, সূর্যের আলো অনেকক্ষণ সময় ধরে স্থায়ী হওয়া ইত্যাদি।

২১। সংবেদনের স্থানীয় ধর্ম বলতে কী বোঝো? সংবেদনের একটি জাতিগত ধর্ম লেখো।

দেহের বিভিন্ন অংশের নিজ নিজ স্পর্শকাতরতার বৈশিষ্ট্যের ফলে যে সংবেদন ঘটে, তাকে বলা হয় সংবেদনের স্থানীয় ধর্ম।

সংবেদনের একটি জাতিগত ধর্ম হল গুণ।

২২। সংবেদনের তীব্রতা বলতে কী বোঝো? শিশুর সংবেদন সৃষ্টির জন্য ফ্রয়েবেল কী ব্যবস্থা করেছিলেন?

সংবেদনের পরিমাণ বা মাত্রাই হল সংবেদনের তীব্রতা। এটি উদ্দীপকের শক্তি অনুসারেও হতে পারে। যেমন- প্রখর সূর্যের আলো, তীব্র বৈদ্যুতিক আলো, প্রচন্ড জোরে বজ্রপাতের শব্দ ইত্যাদি।

শিশুর সংবেদন সৃষ্টির জন্য ফ্রয়েবেল বিভিন্ন ধরনের কাজের ব্যবস্থা করেন। যেমন- বাগান করা, খেলনা তৈরি প্রভৃতি।

২৩। শিশুর সংবেদন সৃষ্টির জন্য মন্তেসরি কী ব্যবস্থা করেন? ইন্দ্রিয় পরিমার্জনার জন্য ফ্রয়েবেল তাঁর শিক্ষণ পদ্ধতিতে কী ব্যবস্থা করেন?

শিশুর সংবেদন সৃষ্টির জন্য মন্তেসরি বিভিন্ন ধরনের খেলনার ব্যবস্থা করেন। যেমন- বিভিন্ন রঙের দণ্ড, রঙিন কাঠের টুকরো, গোলক, পিরামিড ইত্যাদি। এই ধরনের উপকরণগুলির মন্তেসরি নাম দিয়েছেন ডাইড্যাকটিক অ্যাপারেটাস।

ইন্দ্রিয় পরিমার্জনার জন্য ফ্রয়েবেল তাঁর শিক্ষণ পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের উপহারের (Gift) ব্যবস্থা করেন। যেমন-বিভিন্ন রঙের উলের বল, বিভিন্ন আকারের কাঠের টুকরো প্রভৃতি।

২৪। গুণ বলতে কী বোঝো?

সংবেদনের একটি অন্যতম ধর্ম হল গুণ। যেমন- ঘ্রাণজ সংবেদনের একটি গুণ হল অম্লত্ব, স্বাদজ সংবেদনের একটি গুণ হল মিষ্টত্ব, স্পর্শজ সংবেদনের একটি গুণ হল উন্নতা। আবার গুণগত দিক থেকে বিভিন্ন সংবেদনের মধ্যে বৈসাদৃশ্য দেখা যায়। বর্ণ, শব্দ, স্বাদ, গন্ধ, তাপ এবং ঠান্ডার সংবেদন গুণগত দিক থেকে একটি অপরটির থেকে আলাদা।

২৫। ইন্দ্রিয় প্রশিক্ষণের সুযোগ বৃদ্ধি করার জন্য গান্ধিজি তাঁর শিক্ষণ পদ্ধতিতে কী ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছিলেন? মন্তেসরি তাঁর শিক্ষণ পদ্ধতিতে পেশীয় সংবেদন (Muscular Sensation) সৃষ্টির জন্য কী ব্যবস্থা করেন?

ইন্দ্রিয় প্রশিক্ষণের সুযোগ বৃদ্ধি করার জন্য গান্ধিজি তাঁর বুনিয়াদি শিক্ষাপদ্ধতিতে ব্র্যাফ্ট ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেছিলেন। এই ব্র্যাফ্ট শিখনের মধ্য দিয়ে ইন্দ্রিয় প্রশিক্ষণের সুযোগ বৃদ্ধি করা যাবে।

মন্তেসরি তাঁর শিক্ষণ পদ্ধতিতে পেশীয় সংবেদন (Muscular Sensation) সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজের ব্যবস্থা করেন। যেমন- ঘরের জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখা, শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার রাখা ইত্যাদি।

২৬। শিক্ষাক্ষেত্রে সংবেদন প্রক্রিয়াকে কার্যকরী করে তোলার জন্য শিক্ষকগণ কর্তৃক গৃহীত যে-কোনো দুটি ব্যবস্থার উল্লেখ করো। গুণগত দিক থেকে সংবেদন কয় প্রকার ও কী কী?

শিক্ষাক্ষেত্রে সংবেদন প্রক্রিয়াকে কার্যকরী করে তোলার জন্য শিক্ষকগণ কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থাগুলি হল- শিক্ষাদানের সময় উপযুক্ত শিখন সহায়ক প্রদীপনের ব্যবহার। শিক্ষার্থীদের সামনে জোরে ও স্পষ্টভাবে বিষয়বস্তুর উপস্থাপন।

গুণগত দিক থেকে সংবেদন দুই প্রকার। যথা- জাতিগত সংবেদন এবং উপজাতিগত সংবেদন।

২৭। উপজাতিগত সংবেদন কাকে বলে? সংবেদনের পরিমাণগত ধর্ম কয় প্রকার ও কী কী?

একই জাতির অন্তর্ভুক্ত দুটি সংবেদনের যে পার্থক্য, তা উপজাতিগত সংবেদন নামে পরিচিত।

সংবেদনের পরিমাণগত ধর্ম চার প্রকার যথা তীব্রতা (Intensity), স্থায়িত্ব (Duration), বিস্তৃতি (Extent), স্পষ্টতা (Clarity) ।

২৮। সংবেদনের ধর্মগুলি কয় প্রকার ও কী কী? সংবেদনের পরিসর (Extent) বলতে কী বোঝো?

সংবেদনের ধর্মগুলি তিন প্রকার গুণগত ধর্ম (Qualitative Character), পরিমাণগত ধর্ম (Quantitative Character) এবং স্থানীয় ধর্ম (Local Character)। সংবেদনের নিম্নসীমা এবং উচ্চতর সীমার মধ্যবর্তী অবস্থাকে সংবেদনের পরিসর বলে।

২৯। বিশুদ্ধ সংবেদন কি সম্ভব? সংবেদনের বহিঃকারণ কী?

পরিণত বয়সে বিশুদ্ধ সংবেদন সম্ভব নয়। নবজাতকের পক্ষে বিশুদ্ধ সংবেদন লাভ করা সম্ভব। তবে এটি বিতর্কিত।

বহির্জগতের কোনো বস্তু যা উদ্দীপকরূপে কাজ করে, তাকে সংবেদনের বহিঃকারণ বলা হয়। যেমন- লাল টকটকে ফুল, ময়ূরের সুন্দর পেখম ইত্যাদি।

৩০। ‘Law of Psychophysics’ সূত্রটি কী?

মনোবিদ ওয়েবার ও ফেচনার উদ্দীপকের তীব্রতার হ্রাসবৃদ্ধির সঙ্গে সংবেদনের তীব্রতার হ্রাসবৃদ্ধির সম্পর্ক বিষয়ে যে সূত্র উপস্থাপন করেন, তা মানস দৈহিক সম্বন্ধীয় সূত্র বা Law of Psychophysics নামে পরিচিত।

৩১। ইন্দ্রিয় প্রশিক্ষণ কাকে বলে?

ইন্দ্রিয় প্রশিক্ষণ বলতে বোঝায়, ইন্দ্রিয়ের তীক্ষ্ণতা ও কার্যকারিতা বাড়ানো। হাতেকলমে কাজের মাধ্যমে বিভিন্ন ইন্দ্রিয়কে সক্রিয় রেখে বিষয়বস্তুকে জানা হল ইন্দ্রিয় প্রশিক্ষণ। এই ইন্দ্রিয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ইন্দ্রিয়গুলি আরও বেশি করে সচল হয়। শিক্ষাবিদ মন্তেসরি ও ফ্রয়েবেল শিশুর শিক্ষায় ইন্দ্রিয় প্রশিক্ষণের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।

৩২। কারক বা ইফেক্টর বলতে কী বোঝো? ইফেক্টর বা কারকের উদাহরণ দাও?

নাভীয় স্পন্দন দ্বারা উত্তেজিত হয়ে প্রাণীদেহের যেসকল অঙ্গ সাড়া প্রদান করে, তাদের কারক বা ইফেক্টর বলে।

ইফেক্টর বা কারকের উদাহরণ হল বিভিন্ন গ্রন্থি এবং পেশি।

৩৩। গ্রাহক (Receptor) এবং বাহক (Conductor) বলতে কী বোঝো?

প্রাণীদেহে অবস্থিত সংজ্ঞাবহ স্নায়তন্ত্রের যে অংশ পরিবেশের নির্দিষ্ট পরিবর্তনের ফলে সক্রিয় হয় এবং সংজ্ঞাবহ স্নায়ুতন্ত্রতে স্পন্দনের সৃষ্টি করে, তাকে গ্রাহক বলা হয়।

প্রাণীদেহে গ্রাহক থেকে উদ্দীপনা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে সাড়া বা উদ্দীপনা প্রতিবেদন অঙ্গে যেগুলির মাধ্যমে পৌঁছোয়, সেগুলিকে বাহক বলা হয়। যেমন-স্নায়ু।

৩৪। আমরা কোন্ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে দর্শন সংবেদন লাভ করি? দর্শন ইন্দ্রিয়ের উদ্দীপক কী?

আমরা চক্ষু ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে দর্শন সংবেদন লাভ করি।

দর্শন ইন্দ্রিয়ের উদ্দীপক হল আলোকরশ্মি।

৩৫। অন্ধবিন্দু (Blind Spot) কী? অথবা, অন্ধবিন্দু কোথায় অবস্থিত? কর্নিয়া কী?

রেটিনায় অবস্থিত অন্ধবিন্দু হল সেই বিন্দু যা কোনো আলোর উত্তেজনার মাধ্যমে সংবেদিত হয় না। এই বিন্দুতে চক্ষু স্নায়ু অক্ষিগোলকে প্রবেশ করে এবং এই বিন্দুতে কোনো প্রতিবিম্ব গঠিত হয় না।

কর্নিয়া হল চোখের স্বচ্ছ আবরণ। কোনো বস্তু থেকে প্রতিফলিত আলোকরশ্মি প্রথম এর মধ্যে এসে পড়ে।

৩৬। তারারন্দ্র (Pupil) কী? চোখের ত্রুটিজনিত কয়েকটি রোগের নাম লেখো।

তারারম্ভ: যে ছিদ্রের মধ্য দিয়ে আলোকবর্ণ চোখের মধ্যে প্রবেশ করে। তাকে তারার বলা হয়। এটি থাকে চোখের কৃষ্ণমণ্ডল (Choroid) অংশের কণীনিকার (Iris) একেবারে মধ্যভাগে।

চোখের ত্রুটিজনিত রোগগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- কনজাংটিভাইটিস, মায়োপিয়া, গ্লুকোমা প্রভৃতি।

৩৭। বর্ণান্ধতা (Colour Blindness) বলতে কী বোঝো? লেন্স’ কাকে বলে?

বর্ণান্ধতা: রেটিনায় অবস্থিত ‘কোণ’ কোশ আমাদের নানারকম বর্ণ দেখতে সাহায্য করে। কিন্তু কোনো কোনো ব্যক্তি বিভিন্ন বর্ণের পার্থক্য বুঝতে পারে না। ওই কোশের ত্রুটির কারণে। এটিকেই বর্ণান্ধতা বলা হয়।

লেন্স: চোখের কৃষ্ণমণ্ডল (Choroid) অংশের কণীনিকার (Iris) পিছনে একরকম তরল পদার্থ জমাট বেঁধে স্বচ্ছ কাচের আকারে থাকে, একে লেন্স বলা হয়।

৩৮। রেটিনা কাকে বলে? এর কাজ কী?

রেটিনা: কৃরমণ্ডলের আবরণের পরবর্তী স্তরে ভিতরের দিকে যে আবরণটি আছে, সেটিকে বলা হয় রেটিনা।

রেটিনার সঙ্গে যুক্ত চক্ষু স্নায়ু দর্শন উত্তেজনা গ্রহণ করে। এ ছাড়া রেটিনায় অবস্থিত দণ্ড কোশ আলো এবং শঙ্কু কোশ বর্ণ দেখতে আমাদের সাহায্য করে। বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠনে এই রেটিনার যথেষ্ট ভূমিকা আছে।

৩৯। রেটিনায় কয় ধরনের গ্রাহক কোশ থাকে এবং কী কী? দন্ড কোশ ও শঙ্কু কোশের প্রধান কাজ কী?

রেটিনায় দুই ধরনের গ্রাহক কোশ থাকে। এগুলি হল-

দণ্ডকোশ (Rod cell) এবং শঙ্কু কোশ (Cone cell) ।

দণ্ডকোশ (Rod cell) আমাদের আলো এবং (Cone cell) আমাদের বর্ণ দেখতে সাহায্য করে। শঙ্কু কোশ

৪০। চোখের সবচেয়ে সংবেদনশীল স্তর কোন্টি? সেখানে বস্তুর কীরূপ প্রতিবিম্ব গঠিত হয়?

চোখের সবচেয়ে সংবেদনশীল স্তর হল রেটিনা। রেটিনায় বস্তুর উলটো প্রতিবিম্ব গঠিত হয়।

৪১। প্রতিরূপ পরবর্তী বেশ (After Image Effect) কাকে বলে? অপটিক নার্ভ কোথায় অবস্থিত? 

প্রতিরূপ পরবর্তী স্তর: অনেকসময় বাহ্যিক উদ্দীপক চোখের সামনে থেকে সরে যাওয়ার পরেও দর্শন সংবেদনগত অভিজ্ঞতার রেশ তখনও থেকে যায়। একেই প্রতিরূপ পরবর্তী রেশ বলে।

অপটিক নার্ভ চোখের ভিতরে রেটিনায় অবস্থিত অন্ধবিন্দু থেকে মস্তিষ্কের দর্শনকেন্দ্র পর্যন্ত বিস্তৃত।

৪২। আমাদের শ্রবণেন্দ্রিয়ের নাম কী? এর প্রধান ভাগ কয়টি ও কী কী?

আমাদের শ্রবণেন্দ্রিয়ের নাম কর্ণ বা কান।

কানের তিনটি প্রধান ভাগ রয়েছে। এগুলি হল- বাহ্য কর্ণ, মধ্যকর্ণ এবং অন্তঃকর্ণ।

৪৩। বাহ্যকর্ণ কয়টি অংশ নিয়ে গঠিত এবং কী কী? মধ্যকর্ণে কয়টি অস্থি আছে এবং এগুলির নাম কী কী? অথবা, কানের কোন্ অংশে অস্থি থাকে এবং এগুলির নাম কী কী?

বাহ্যকর্ণ তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত। এগুলি হল- কর্ণছত্র, কর্ণকুহর এবং কর্ণপটহ।

মধ্যকর্ণে তিনটি অস্থি থাকে। এগুলি হল- মেলিয়াস, ইনকাস এবং স্টেপিস।

৪৪। কর্ণছত্র কী? কানের কোন্ অংশকে বাতাসপূর্ণ গহ্বর বলে?

কর্ণের যে অংশ বাইরে থেকে দেখা যায়, তাকে কর্ণছত্র বলা হয়।

মধ্যকর্ণকে বলা হয় বাতাসপূর্ণ গহ্বর।

৪৫। অন্তঃকর্ণের কয়টি অংশ ও কী কী? কক্লিয়ার মধ্যে যে শ্রবণগ্রাহক যন্ত্রটি থাকে, সেটির নাম কী?

অন্তঃকর্ণের তিনটি অংশ। এগুলি হল- অলিন্দ স্নায়ু (Vestibular nerve), কর্ণশঙ্কু (Cochlea) এবং অডিটরি নার্ভাস (Auditory nerve) I

কক্লিয়ার মধ্যে যে শ্রবণগ্রাহক যন্ত্রটি থাকে, সেটির নাম কর্টি যন্ত্র (Organ of corti) |

৪৬। মানবদেহে ভারসাম্য রক্ষাকারী অঙ্গ বা ইন্দ্রিয়ের নাম কী? শব্দ সংবেদনের উদ্দীপক কোন্টিকে বলা হয়?

মানবদেহে ভারসাম্য রক্ষাকারী অঙ্গ বা ইন্দ্রিয়ের নাম হল কান। শব্দ সংবেদনের উদ্দীপক হল কোনো বস্তুর কম্পন।

৪৭। শব্দ সংবেদন কোন্ কোন্ বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে?

শব্দ সংবেদন সাধারণত তিনটি বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে। যথা-

  • লাউডনেস: এটি প্রতিটি শব্দতরঙ্গের বিস্তৃতির উপর নির্ভর করে।
  • ফ্রিকোয়েন্সি: এটি প্রতি সেকেন্ডে আন্দোলনের সংখ্যার উপর নির্ভর করে।
  • ট্রিম্বে: এটি শব্দের গুণগত মানের উপর নির্ভর করে।

৪৮। আমরা যে-সমস্ত শব্দ শুনি, তাদের কয়টি গুণ থাকে? মানবদেহের কোন্ ইন্দ্রিয়কে ঘ্রাণের জ্ঞানেন্দ্রিয় বলা হয়?

আমরা যে-সমস্ত শব্দ শুনি, তাদের তিনটি গুণ থাকে।

যথা- স্বনতীক্ষ্ণতা (Pitch), স্বনগভীরতা (Loudness) ও উপস্বনতা (Timbra) I

মানবদেহের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মধ্যে নাককে বলা হয় ঘ্রাণের জ্ঞানেন্দ্রিয়।

৪৯। মনোবিদ হ্যানিং কয়টি ঘ্রাণের কথা বলেছেন ও কী কী?

মনোবিদ হ্যানিং ছয়টি ঘ্রাণের কথা বলেছেন। এগুলি হল- সুগন্ধি ফুলের গন্ধ, মশলা জাতীয়-দারুচিনি, লবঙ্গ ইত্যাদি, ফল জাতীয়-আঙুর, কমলালেবু ইত্যাদি, ধূপধুনা, তারপিন তেল, পোড়া জাতীয় দ্রব্য-আলকাতরা, পচা জাতীয় দ্রব্য-পচা মাছের গন্ধ ইত্যাদি।

৫০। বহিঃনাসারন্দ্র বলতে কী বোঝো? নাসাগহ্বর কাকে বলে?

বহিঃনাসারন্দ্র: নাকের প্রসারিত অগ্রাংশে অবস্থিত দুটি ছিদ্রকে বলা হয় বহিঃনাসারন্দ্র। এর মাধ্যমেই আমরা নিশ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ে থাকি। নাসাগহ্বরের মধ্য দিয়ে শরীরের ভিতরের বায়ু বাইরে আসে আর বাইরের বায়ু শরীরের ভিতরে প্রবেশ করে।

নাসাগহ্বর: বহিঃনাসারন্ধ্রের ভিতর একটি প্রসারিত উন্মুক্ত গহ্বর থাকে, যাকে নাসাগহ্বর বলা হয়।

৫১। নাকের দুটি কাজ লেখো। সমগ্র নাসাপথটি কী দিয়ে আবৃত থাকে?

নাকের দুটি কাজ হল- নাকের সাহায্যে আমরা নিশ্বাসপ্রশ্বাস নিই, পারি। নাকের সাহায্যে আমরা বিভিন্ন বস্তুর ঘ্রাণ বা গন্ধ গ্রহণ করতে সমগ্র নাসাপথটি মিউকাস পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে এবং এর প্রথম অংশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লোম থাকে।

৫২। মানবদেহে স্বাদেন্দ্রিয় বলা হয় কোন্ ইন্দ্রিয়কে? এটি কী দিয়ে গঠিত?

মানবদেহে স্বাদেন্দ্রিয় বলা হয় জিহ্বাকে।

এটি ঐচ্ছিক পেশি দিয়ে গঠিত একটি মাংসল অঙ্গ।

৫৩। প্রতিটি স্বাদকোরকের ক-টি অংশ থাকে ও কী কী? প্যাপিলা বা পিড়কা কাকে বলে?

প্রতিটি স্বাদকোরকের দুটি অংশ থাকে। এগুলি হল- স্বাদকোশ এবং ধারক কোশ।

প্যাপিলা: জিহ্বার উপরিভাগে অনেক দানার মতো অংশ দেখতে পাওয়া যায়। এই দানাগুলিকে পিড়কা বা প্যাপিলা বলা হয়। জিহ্বার অগ্রভাগের দানাগুলি বেশ ছোটো হয় কিন্তু জিহ্বার পিছনের দিকের দানাগুলি সামনের দানাগুলির থেকে অপেক্ষাকৃত বড়ো হয়। এই দানাগুলির মধ্যেই থাকে স্বাদকোরক।

৫৪। স্বাদকোরক (Taste buds) কাকে বলে? জিহ্বার দুটি কাজ লেখো। 

স্বাদকোরক: জিহ্বার উপরিভাগে প্যাপিলা বা পিড়কার মধ্যে অবস্থিত বিভিন্ন প্রকার স্বাদগ্রাহক কোশগুলিকে বলা হয় স্বাদকোরক।

জিহ্বার দুটি কাজ হল- জিহ্বা কথা বলতে সাহায্য করে, বিভিন্ন বস্তুর স্বাদগ্রহণ করতে সাহায্য করে।

৫৫। জিহ্বায় কয় ধরনের স্বাদ সংবেদক আছে ও কী কী? জিহ্বার কোন্ অংশে কী ধরনের স্বাদকোরক আছে?

জিহ্বায় মূলত চার ধরনের স্বাদ সংবেদক আছে। যথা- মিষ্ট, অম্ল, তিক্ত এবং লবণাক্ত।

জিহ্বার একেবারে সামনের দিকে থাকে মিষ্টি স্বাদ গ্রহণের কেন্দ্র, পিছনের দিকে থাকে তেতো স্বাদ গ্রহণের কেন্দ্র আর জিহ্বার দু-পাশে থাকে নোনতা স্বাদ গ্রহণের কেন্দ্র, জিহ্বার উপরিতলে মধ্যভাগের দু-পাশে থাকে অম্ল স্বাদ গ্রহণের কেন্দ্র। 

৫৬। আমরা কী ধরনের পদার্থের স্বাদগ্রহণ করতে পারি? জিহ্বার উপরিভাগে কতগুলি স্বাদকোরক (Taste buds) আছে?

আমরা শুধুমাত্র তরল পদার্থের স্বাদ গ্রহণ করতে পারি। জিহ্বার উপরিভাগে প্রায় 10,000 স্বাদকোরক আছে।

৫৭। কোন্ ইন্দ্রিয়কে স্পর্শগত সংবেদনের ইন্দ্রিয় বলা হয়? এর কয়টি স্তর ও কী কী?

স্পর্শগত সংবেদনের ইন্দ্রিয় বলা হয় ত্বককে।

ত্বকের দুটি স্তর, এগুলি হল- এপিডারমিস বা উপত্বক এবং ডারমিস। 

৫৮। ত্বকের প্রধান কাজ কী?

ত্বক বা চর্ম হল স্পর্শ সংবেদনের অঙ্গ। আমাদের সমস্ত দেহ জুড়ে এটি অবস্থান করে আছে। আমাদের ত্বকে কয়েকরকমের বিন্দু আছে, সেগুলি হল- তাপ বিন্দু, শৈত্য বিন্দু, ব্যথা বিন্দু ও চাপ বিন্দু। সংবেদনের অঙ্গ হিসেবে ত্বকের প্রধান কাজ হল- প্রধানত স্পর্শ অনুভবে সাহায্য করা এবং গরম, ঠান্ডা ইত্যাদি অনুভবে বিশেষ ভূমিকা পালন করা।

৫৯। স্পর্শ সংবেদন প্রক্রিয়া কী? স্পর্শগত সংবেদন কয় প্রকার ও কী কী?

স্পর্শ সংবেদন: ত্বকের যে-কোনো স্পর্শজনিত সংবেদন স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে এসে পৌঁছায়। মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চাপ, তাপ, শৈত্য, বেদনা ইত্যাদি হল স্পর্শজনিত বিভিন্ন সংবেদন। তবে, শরীরের সমস্ত অংশে স্পর্শজনিত সংবেদন গ্রহণ করার ক্ষমতা এক নয়। পায়ের পাতা এবং হাতের তালুতে এই ক্ষমতা অনেক কম থাকে।

স্পর্শগত সংবেদন চার প্রকার। এগুলি হল- শৈত্য সংবেদন, উষ্ণতা সংবেদন, বেদনা সংবেদন এবং চাপ সংবেদন।

৬০। “নিখুঁত সংবেদন একটি মানসিক কল্পনা মাত্র”-এ কথা কে বলেছেন? মানবদেহের ত্বকে অবস্থিত যে-কোনো দুই প্রকার গ্রন্থির নাম লেখো।

‘নিখুঁত সংবেদন একটি মানসিক কল্পনা মাত্র’-এ কথা বলেছেন- জেম্স ওয়ার্ড।

মানবদেহের ত্বকে অবস্থিত দুই প্রকার গ্রন্থি হল- ঘর্মগ্রন্থি এবং সেবেসিয়াস গ্রন্থি। 

৬১। শিক্ষাক্ষেত্রে সংবেদনের দুটি গুরুত্ব লেখো।

শিক্ষাক্ষেত্রে সংবেদনের দুটি গুরুত্ব হল-

[1] ইন্দ্রিয় প্রশিক্ষণ: আধুনিক শিক্ষাদান কৌশলে শিক্ষার্থীর ইন্দ্রিয়গুলিকে ব্যবহার করে শিক্ষাদানের রীতি প্রচলিত হয়েছে। তাই চার্ট, মডেল, প্রোজেক্ট প্রভৃতিকে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।

[2] শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশের ক্ষেত্রে সংবেদন: বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষাবিজ্ঞানীরা শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশের ক্ষেত্রে সঠিক ও শক্তিশালী সংবেদনের গুরুত্ব উপলবিধ করেছেন। শিক্ষার্থীর দৈহিক, মানসিক, প্রক্ষোভিক, সামাজিক, নৈতিক প্রভৃতি বিকাশের জন্য সঠিক সংবেদন প্রয়োজন।

৬২। মনোবিদ স্টাউট-এর মতে, প্রত্যক্ষণ কী? সমগ্রতাবাদীরা প্রত্যক্ষণ বলতে কী বুঝিয়েছেন?

মনোবিদ স্টাউট-এর মতে, প্রত্যক্ষণ হল একাধিক সংবেদনের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রক্রিয়া।

সমগ্রতাবাদীদের মতে, প্রত্যক্ষণ কতকগুলি সংবেদনের সমন্বয় নয়। লব্ধ অভিজ্ঞতা সুসংবদ্ধ করাই হল প্রত্যক্ষণ।

৬৩। টমাস রিড এবং জেম্স ওয়ার্ড-এর মতে, প্রত্যক্ষণ কী?

টমাস রিড-এর মতে, প্রত্যক্ষণ হল শরীর ও মনের পরস্পরের মধ্যে আন্তঃক্রিয়া বা পারস্পরিক ক্রিয়ার ফল।

জ্ঞানেন্দ্রিয়ের গুণের সঙ্গে বস্তুর জ্ঞান যুক্ত হওয়াকেই জেম্স ওয়ার্ড প্রত্যক্ষণ বলেছেন।

৬৪। মনোবিদ মরগ্যান ও কিং-এর মতে, প্রত্যক্ষণ কী? মনোবিদ উইটিং (A F Witing)-এর মতে, প্রত্যক্ষণ কী?

মনোবিদ মরগ্যান ও কিং-এর মতে, পৃথিবীকে যেভাবে দেখা যায়, শোনা যায়, অনুভব করা যায়, স্বাদ বা গন্ধ নেওয়া যায়, তাকেই প্রত্যক্ষণ বলা হয়।

মনোবিদ উইটিং প্রত্যক্ষণ সম্পর্কে বলেছেন, “It is the set of mental experiences arising when the brain processes sensory data.” অর্থাৎ, সংবেদনজাত তথ্য মস্তিষ্কে প্রক্রিয়াকরণের ফলে যে মানসিক অভিজ্ঞতা সৃষ্টি হয়, তাই-ই হল প্রত্যক্ষণ (Perception)।

Read More – The Garden Party Question Answer

Leave a Comment