আগুন নাটকের চরিত্রচিত্রণে নাট্যকারের দক্ষতার পরিচয় দাও
ভূমিকা
বিজন ভট্টাচার্য রচিত ‘আগুন’ নাটকের মূল চরিত্র প্রকৃতপক্ষে মন্বন্তরগ্রস্ত সময় এবং অনাহারক্লিষ্ট জনতা। এই গণসমষ্টি বা জনগোষ্ঠী আপাতভাবে জীবিকার অবস্থানে ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণিনামে চিহ্নিত। কয়েক জনের ব্যক্তিনাম নাট্যকার উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে ‘পুরুষ’, ‘১ম পুরুষ’, ‘২য় পুরুষ’, ‘৩য় পুরুষ’, ‘৪র্থ পুরুষ’ নামে অনাহারী জনতাকে চিহ্নিত করেছেন। আবার জীবিকা অনুসারে নামাঙ্কিত ‘কৃষাণ-কৃষাণি’, ‘সিভিক গার্ড’, ‘দোকানি’-কে পাই। বয়সচিহ্নিত নামে ‘যুবক’ চরিত্রটি স্বল্পমেয়াদি, ধর্মচিহ্নিত নামে ‘মুসলমান ভাই’ এবং প্রদেশ বা ভাষাভিত্তিক নামে ‘ওড়িয়া’ চরিত্রটি নাটকের ঘটনাপ্রবাহে নিজস্ব ভূমিকা পালন করেছে।
চরিত্রের স্বরূপ
জীবিকাকেন্দ্রিক চরিত্রগুলিতে তাদের আচরণ ও কথাবার্তায় পেশাগত স্বরূপ প্রকাশিত। সিভিক গার্ড চালের লাইনে নিরীহ লোকের উপর হম্বিতম্বি, দুর্ব্যবহার করেছে। দোকানি তার দোকান, ব্যাবসা নিয়েই ভাবিত-“ব্যবসার সুখ এই গেল।” কৃষক ও শ্রমিক পরিবারের চরিত্রচিত্রণে তাদের উপযুক্ত করেই নির্মাণ করেছেন নাট্যকার।
চরিত্রচিত্রণে দক্ষতার পরিচয়
নাট্যকার ওড়িয়া চরিত্রটির মুখে ওড়িয়া ভাষার সংলাপ প্রয়োগ করে চরিত্রটিকে আলাদাভাবে বিশিষ্ট করে তুলেছেন। তার কথায় সমসময়ের জীবনদর্শন প্রকাশ পেয়েছে।
নেত্যর মা, ক্ষিরি, মনোরমা ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানের পারিবারিক বধূরূপে যথাযথ ভূমিকা পালন করেছে।
সতীশ, জুড়োন, বিশেষত হরেকৃয় চরিত্রটি নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল। মুসলমান ভাই চরিত্রটি ভদ্র-নম্র-প্রতিবাদী। আবার কিছু চরিত্র একই গোত্রের বলেই হয়তো নাট্যকার তাদের ব্যক্তিনাম বা বৃত্তিনাম দেননি।
‘যুবক’ স্বল্পমেয়াদি চরিত্র হলেও সে জনতার বিবেককে জাগায় ও নবীন প্রজন্মের চিন্তা-চেতনার বাহক হয়ে ওঠে।
আলোচ্য নাটকের চরিত্রচিত্রণে এভাবেই নাট্যকার অতুলনীয় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।
আরও পড়ুন – আগুন নাটকের প্রশ্ন উত্তর