মাধ্যমিক শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা বিষয়ে লর্ড কার্জনের শিক্ষানীতিগুলি আলোচনা করো

মাধ্যমিক শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা বিষয়ে লর্ড কার্জনের শিক্ষানীতিগুলি আলোচনা করো

মাধ্যমিক শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা বিষয়ে লর্ড কার্জনের শিক্ষানীতিগুলি আলোচনা করো
মাধ্যমিক শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা বিষয়ে লর্ড কার্জনের শিক্ষানীতিগুলি আলোচনা করো

মাধ্যমিক শিক্ষানীতিসমূহ

(1) সরকারের অনুমোদন: মাধ্যমিক শিক্ষার মানকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিকে সরকারি অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়।

(2) আর্থিক অনুদান প্রদানের নীতি: সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিকে প্রয়োজনীয় আর্থিক অনুদান প্রদান করা হবে, তা কার্জনের শিক্ষানীতিতে উল্লেখ করা হয়।

(3) শিক্ষার মাধ্যম: শিক্ষার প্রধান মাধ্যম হিসেবে মাধ্যমিক স্তরেও মাতৃভাষায় শিক্ষাদান করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া ইংরেজি ভাষাচর্চারও ব্যবস্থা থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়।

(4) পাঠক্রমের সংস্কার: মাধ্যমিক স্তরের গতানুগতিক বিষয়গুলির সঙ্গে অতিরিক্ত কিছু প্রয়োজনীয় বিষয় অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে পাঠক্রমকে বাস্তবধর্মী এবং সময়োপযোগী করে তুলতে হবে।

(5) সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা: মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলির গুণগত মান ও উৎকর্ষ বৃদ্ধির জন্য সেগুলির উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার কথা বলা হয়। এ ছাড়া সেখানে ঘন ঘন পরিদর্শনের ব্যবস্থার কথাও বলা হয়। 

উচ্চশিক্ষার বিষয়ে লর্ড কার্জনের শিক্ষানীতি

উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে লর্ড কার্জন ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন গঠনের পাশাপাশি 1904 সালে ইম্পিরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিল-এ প্রথম ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিলও উপস্থাপন করেছিলেন। উচ্চশিক্ষা বিষয়ে সুপারিশগুলি হল-

(1) পঠনপাঠনের ব্যবস্থা করা: পরীক্ষা গ্রহণ ও ডিগ্রি প্রদানের পাশাপাশি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে পঠনপাঠন এবং গবেষণারও ব্যবস্থা করা বিশেষ প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়।

(2) পরিদর্শনের ব্যবস্থা : লর্ড কার্জনের শিক্ষানীতিতে কলেজগুলির শিক্ষাগত মান উন্নত করা ও তা যাচাই করার উদ্দেশ্যে পরিদর্শন ব্যবস্থা চালু করার কথাও বলা হয়।

(3) আঞ্চলিক সীমা নির্দিষ্টকরণ: বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্চলিক সীমা নির্দিষ্ট করার কথাও এই শিক্ষানীতিতে উল্লেখ করা হয়। এই সীমানা নির্ধারণের দায়িত্ব মূলত সপারিষদ গভর্নর জেনারেলের উপর অর্পণ করা হয়।

(4) প্রতিনিধিত্বের সংখ্যাবৃদ্ধি: সিনেটে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যাপকদের প্রতিনিধিত্বের সংখ্যাবৃদ্ধির কথাও কার্জনের শিক্ষানীতিতে উল্লেখ করা হয়।

(5) মেধাবী ছাত্রদের প্রবেশাধিকার: কার্জনের শিক্ষানীতিতে আরও বলা হয়, প্রবেশিকা পরীক্ষার মানের উন্নতি এমনভাবে ঘটাতে হবে, যাতে শুধুমাত্র মেধাবী ছাত্ররাই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশাধিকারের সুযোগ পায়।

লর্ড কার্জন তাঁর শিক্ষা সংক্রান্ত সুপারিশে আরও বিবিধ বিষয় উল্লেখ করেন, সেগুলি হল-

(1) বৃত্তিশিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে বৃত্তিশিক্ষা দানের ব্যবস্থা করা।

(2) বিদেশে উচ্চতর কারিগরি শিক্ষার জন্য বৃত্তিদানের উপযুক্ত ব্যবস্থা করা।

(3) চারুশিল্প প্রতিষ্ঠানগুলির পরিবর্তন ও উন্নতিসাধন করা।

(4) নারীশিক্ষা প্রসারের জন্য পৃথক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা।

(5) দেশের প্রাচীন স্মৃতিসৌধগুলি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা।

পরিশেষে বলা যায়, সুদক্ষ প্রশাসক হলেও লর্ড কার্জন ছিলেন ঘোরতর সাম্রাজ্যবাদী। এদেশের প্রতি সহানুভূতির পরিবর্তে অসহিষ্ণুতা নিয়ে তিনি শিক্ষাসংস্কারের চেষ্টা করায় ভারতীয় শিক্ষিত সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারেননি। শিক্ষার মূল আদর্শ ও শিক্ষার কাঠামোর মধ্যে মৌলিক সংস্কারসাধন না করলেও, তাঁর শিক্ষানীতির পরবর্তী ফলাফল অতীব প্রশংসার দাবি রাখে। শিক্ষাক্ষেত্রে গঠনমূলক সংস্কারের জন্য তিনি আজও স্মরণীয় হয়ে আছেন।

আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment