ভারতীয় শিক্ষাক্ষেত্রে লর্ড কার্জনের অবদান কতটা?-তা আলোচনা করো

ভারতীয় শিক্ষাক্ষেত্রে লর্ড কার্জনের অবদান কতটা?-তা আলোচনা করো

ভারতীয় শিক্ষাক্ষেত্রে লর্ড কার্জনের অবদান কতটা?-তা আলোচনা করো
ভারতীয় শিক্ষাক্ষেত্রে লর্ড কার্জনের অবদান কতটা?-তা আলোচনা করো

‘সাম্রাজ্যবাদী কুটীল ভারত-বিরোধী কার্জন

বিভেদের তরে করল বঙ্গভঙ্গ গ্রহণ।’

বিংশ শতাব্দীর সূচনায় শিক্ষিত ভারতবাসীর জীবনে যখন নতুন চিন্তা ও নতুন উৎসাহ দেখা দিল, ঠিক সেই সময়ে ভারতে বড়োলাট হয়ে এলেন লর্ড কার্জন (1899 খ্রিস্টাব্দ)। তিনি এক বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের অধিকারী ও একজন দক্ষ প্রশাসক ছিলেন। কিন্তু উদ্ধত জবরদস্ত সাম্রাজ্যবাদী মনোভাবের জন্য তিনি তৎকালীন ভারতীয়দের নিকট খ্যাতি ও বিশ্বাস অর্জন করতে পারেননি। তাঁর সংস্কারের পেছনে যে মনোবৃত্তি ছিল, তা হল নবজাগ্রত জাতীয়তাবোধকে ধ্বংস করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত্তিকে সুদৃঢ় করা, ফলে চরমপন্থী নেতৃত্ববৃন্দের সঙ্গে তার সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে।

সিমলায় শিক্ষা সম্মেলন

1901 খ্রিস্টাব্দে সেপ্টেম্বর মাসে তিনি সিমলায় ভারতের শিক্ষা সমস্যা আলোচনার জন্য এক সম্মেলন ডাকেন, যেখানে যোগদান করেন প্রতিটি প্রদেশের শিক্ষা অধিকর্তা, কয়েকজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারী এবং মাদ্রাজ খ্রিস্টান কলেজের অধ্যক্ষ মিলার। তাঁর নেতৃত্বে প্রায় পনেরো দিন যাবৎ সেই সম্মেলন পরিচালিত হয় এবং এখানে ভারতের এক দুর্দশাগ্রস্থ চিত্র বর্ণনা করে বলা হয় যে এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় উচ্চস্তরের শিক্ষা যতটা গুরুত্ব পেয়েছে, নিম্নস্তরের শিক্ষা সে তুলনায় অবহেলিত।

ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন ও তার সুপারিশ

সিমলা সম্মেলনের পরিপ্রেক্ষিতে 1902 খ্রিস্টাব্দে 27 জানুয়ারিতে কার্জন এক শিক্ষা কমিশন নিয়োগ করেন। কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশিত হয় ওই সপ্তাহের জুন মাসে। এই কমিশনে ভারতীয়দের পক্ষ থেকে স্যার গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়কে সদস্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এই শিক্ষা কমিশন সুপারিশ করে যে-

(1) নতুন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা না করে পুরাতন বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অধীনস্থ এলাকা সুনির্দিষ্ট করে দেওয়ার প্রয়োজন।

(2) সিনেটের সদস্যসংখ্যা 50 জনের কম ও 200 জনের বেশি হতে পারে না।

(3) বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হবে সিন্ডিকেট।

(4) বিভিন্ন শিক্ষা বিষয়ের জন্য শিক্ষক প্রতিনিধিদের নিয়ে Board of Studies গঠন করতে হবে।

(5) বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠন ও পাঠন এবং শিক্ষাদানের ব্যবস্থা প্রচলন করতে হবে।

(6) নতুন কোনো কলেজ চালু করতে হলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকার উভয়ের অনুমোদন নিতে হবে।

(7) শিক্ষার মান বিশেষ করে ইংরেজি শিক্ষার মান উন্নত করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

(৪) প্রবেশিকা পরীক্ষার মান উন্নত করার কথা হল যাতে উন্নত মেধাবী ছাত্র ছাড়া আর কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশাধিকারের সুযোগ না পায়। কলেজের প্রেরিত ছাত্র ছাড়া আর কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় বসার সুযোগ পাবে না। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় যে, এই কমিশনের প্রথম দিকে কোনো ভারতীয় সদস্য ছিল না, পরে পরিস্থিতির চাপে স্যার গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও স্যার সৈয়দ হাসান বিলগ্রামীকে সদস্যভুক্ত করা হয়। রিপোর্ট দাখিলের সময় স্যার গুরুদাস একমত হতে না পারায় তিনি স্বতন্ত্র রিপোর্ট দাখিল করেন।

আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment