বাংলার নবজাগরণের বৈশিষ্ট্য কী ছিল

মধ্যযুগে ভারতে এক সামন্ততান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল। মোঘল যুগের শেষে ও ইংরেজ রাজত্বের শুরুতে এই সামন্ততান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাটি ক্ষয়িষুতার চরমে গিয়ে পৌঁছেছিল। জমিদার ও জায়গিরদারদের সীমাহীন শোষণের ফলে কৃষকদের দুর্দশা চরমে পৌঁছায়। সামাজিক রীতিনীতি, যেমন- সতীদাহ, কৌলীন্য প্রথা, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, গঙ্গায় সন্তান বিসর্জন, অভিজাত সম্প্রদায়ের বিলাস, এ সব ছাড়াও ধর্মের নামে ছিল কতকগুলি অর্থহীন আচার-অনুষ্ঠান। জাতির পুরোনো ঐতিহ্য সম্পর্কে অজ্ঞ, দেশপ্রেম বর্ণিত ব্যক্তিরাই ছিল সমাজের শাসক।
এই সামন্ততান্ত্রিক অচলায়তনে আঘাত হানল পাশ্চাত্যশিক্ষায় শিক্ষিত একটি সম্প্রদায়। উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণের প্রধান পুরুষ ছিলেন রামমোহন রায়। আর ছিলেন ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠীর নেতৃবৃন্দ। নবজাগরণের বৈশিষ্ট্য হল ব্যক্তি-চেতনার উন্মেষ ও চিন্তার মুক্তি। যুক্তির পরীক্ষায়, বিজ্ঞানের পরীক্ষায় যা সিদ্ধ, শুধু তাকেই গ্রহণ করার আকাঙ্ক্ষা। জাতিভেদ প্রথা, কৌলীন্য প্রথা, পৌত্তলিকতা, আচারসর্বস্ব ধর্মীয় প্রথা প্রভৃতি ছিল এঁদের আক্রমণের প্রধান লক্ষ্যবস্তু। আধুনিক চিন্তার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে রামমোহন সতীদাহ ও জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে সংগ্রাম পরিচালনা করেন। অন্ধ কুসংস্কার বন্ধনমুক্ত হয়ে মানবিকতা, যুক্তিবাদ ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে সমাজকে এক নতুন পথে যাত্রা করানোই হল নবজাগরণের বৈশিষ্ট্য।
আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর