প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষার দ্বন্দ্বের কারণগুলি আলোচনা করো

1757 সালে পলাশির যুদ্ধের পর ভারতে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রাধান্য সুদৃঢ় হয়। এরপর 1813 সালের চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইন দ্বারা কোম্পানি ভারতে শিক্ষার প্রসারের জন্য বার্ষিক এক লক্ষ টাকা সরকারি শিক্ষাখাতে ব্যয় করতে রাজি হয়। কিন্তু এই অর্থ কীভাবে অর্থাৎ প্রাচ্য না পাশ্চাত্য কোন্ খাতে ব্যয় করা হবে তা সুস্পষ্টভাবে বলা হয়নি। এসময় দুটি দলের সৃষ্টি হয়। একদল যারা সংস্কৃত ও অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় সাহিত্যের পুনরুজ্জীবন ও শিক্ষাদানের পক্ষপাতী ছিলেন। এরা প্রাচ্যবাদী নামে পরিচিত।
অন্যদিকে অপর একটি দল আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক পাঠক্রম ও শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের পক্ষপাতী ছিলেন। এরা পাশ্চাত্যবাদী নামে পরিচিত হয়। প্রাচ্যবাদীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন এইচ টি প্রিন্সেপ, কোলব্রুক, উইলসন প্রমুখ। এইচ টি প্রিন্সেপ প্রাচ্যবাদীদের নেতৃত্ব দেন। অন্যদিকে পাশ্চাত্যবাদীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ট্রেভেলিয়ান, আলেকজান্ডার ডাফ, স্যান্ডার্স প্রমুখ। পাশ্চাত্যবাদীদের নেতৃত্ব দেন সি ই ট্রেভেলিয়ন।
প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষার দ্বন্দ্বের কারণসমূহ
(1) আদর্শগত বিরোধ :
(1) প্রাচ্যবাদীদের মতে, সংস্কৃত, আরবি, ফারসি ভাষায় প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রয়োজন আছে।
(2) অন্যদিকে পাশ্চাত্যবাদীদের মতে, পাশ্চাত্য ভাষা, সাহিত্যের মাধ্যমে ভারতবাসীর নৈতিক পুনরুজ্জীবন সম্ভব। এই আদর্শগত বিরোধ ছিল প্রাচ্য- পাশ্চাত্য দ্বন্দ্বের অন্যতম কারণ।
(2) শিক্ষার উদ্দেশ্য:
(1) প্রাচ্যবাদীরা প্রাচীন শিক্ষার কথা কেবলমাত্র অভিজাত হিন্দু ও মুসলিম ছাত্রদের জন্যই বলেছেন, সাধারণ জনগণের জন্য বলেননি।
(2) পাশ্চাত্যবাদীরা বলেন, সীমিত আর্থিক সাহায্যের দ্বারা দেশের বিপুল অংশের জনগণের শিক্ষার ব্যবস্থা করা সম্ভবপর নয়। ফলে শিক্ষায় সমাজের উন্নত অংশের গ্রহণ এবং এর মাধ্যমে শিক্ষার সামাজিকীকরণ তথা গণপ্রসার ঘটানোই হল শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য।
(3) শিক্ষার বিষয়বস্তু:
(1) প্রাচ্যবাদীদের মতানুযায়ী, প্রাচীন সাহিত্য, ধর্ম, দর্শন এগুলি হবে শিক্ষার প্রধান বিষয়বস্তু।
(2) অন্যদিকে পাশ্চাত্যবাদীদের মতে, পাশ্চাত্য সাহিত্য, ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞান প্রভৃতি হবে শিক্ষার কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু। তাদের কাছে প্রাচ্যজ্ঞান ছিল সম্পূর্ণ অবাঞ্ছনীয়।
(4) শিক্ষার মাধ্যম:
(1) প্রাচ্যবাদীরা শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে সংস্কৃত, আরবি, ফারসি ভাষার উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
(2) অন্যদিকে পাশ্চাত্যবাদীরা ইংরেজি ভাষাকেই শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর