জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের কারণগুলি আলোচনা করো

যে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয় লক্ষ্যগুলিতে উপনীত হতে পারে তাকেই বলে জাতীয় শিক্ষা। ইংরেজ শাসিত ভারতে বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে যে সংঘবদ্ধ জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, তার মূল কারণ হল- শিক্ষা সম্পর্ক গতানুগতিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। 1835 সালে যে শিক্ষা শুরু হয়েছিল তার সঙ্গে জাতীয় লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের কোনো সম্পর্ক ছিল না। শিক্ষা ছিল ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদী ও আমলা নিয়ন্ত্রিত। নিম্নে জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের কারণগুলি আলোচনা করা হল-
জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের কারণসমূহ
জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন বিভিন্ন কারণে সংঘটিত হয়েছিল। এর মূল কারণগুলি হল-
(1) ভারতবিরোধী শিক্ষা : ইংরেজি শিক্ষা ছিল ভারতবিরোধী ও অগণতান্ত্রিক। তাই জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল।
(2) ইংরেজি শিক্ষার জুটি: সেই সময়ে ইংরেজি শিক্ষা মুষ্টিমেয় মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তাই ইংরেজি শিক্ষা যে শুধু ইংরেজদের স্বার্থের দেওয়া হচ্ছে তা জনসাধারণ বুঝতেও পেরেছিল।
(3) সাধারণ মানুষ বঞ্চিত শিক্ষা: এই ইংরেজি শিক্ষার সঙ্গে সাধারণ মানুষের কোনো যোগাযোগ ছিল না। তাই সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ তৈরি হয়।
(4) শিক্ষা প্রশাসন: এই শিক্ষা প্রশাসন ছিল পুরোপুরি আমলাদের হাতে। আমলারাই শিক্ষা নিয়ন্ত্রণ করত। তাই সাধারণ মানুষ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়।
(5) ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বিরোধী: এই শিক্ষার সঙ্গে ভারতীয় শিক্ষার কোনো ঐতিহ্য ও মিল ছিল না। তাই এই শিক্ষা অবহেলিত হয়েছিল।
(6) শিক্ষার বিষয়বস্তু: এই শিক্ষার বিষয়বস্তু ছিল সংকীর্ণ, তাত্ত্বিক, পুস্তককেন্দ্রিক এবং অনেক ক্ষেত্রে অবাস্তব।
(7) চাহিদা: ইংরেজি শিক্ষা ভারতবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষা ও চাহিদা, প্রয়োজন কিছুই মেটাতে পারেনি, তাই বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল।
(৪) লর্ড কার্জনের শিক্ষানীতি: লর্ড কার্জনের বিজাতীয় শিক্ষানীতি ভারতীয়দের সহযোগিতা ও সহানুভূতি অর্জন করতে পারেনি এবং ফলস্বরূপ ধীরে ধীরে জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের দিকে পরিস্থিতি অগ্রসর হয়।
(9) কংগ্রেস নীতি: কংগ্রেসের চারিত্রিক পরিবর্তন অর্থাৎ নরমপন্থী থেকে চরমপন্থীতে পরিবর্তনের ফলে আন্দোলনকে নতুন মাত্রা দিয়েছিল।
(10) শিক্ষার মাধ্যম: শিক্ষার মাধ্যম ইংরেজি হওয়ায় মাতৃভাষার কোনো গুরুত্ব ছিল না। মাতৃভাষা অবহেলিত হওয়ার কারণে জনগণের মনে ক্ষোভ জন্মায়।
আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর