আধুনিক বিজ্ঞানের উদ্ভব ও বিকাশে ইউরোপীয় বিজ্ঞানীদের অবদান আলোচনা করো

আধুনিক বিজ্ঞানের উদ্ভব ও বিকাশে ইউরোপীয় বিজ্ঞানীদের অবদান আলোচনা করো

আধুনিক বিজ্ঞানের উদ্ভব ও বিকাশে ইউরোপীয় বিজ্ঞানীদের অবদান আলোচনা করো
আধুনিক বিজ্ঞানের উদ্ভব ও বিকাশে ইউরোপীয় বিজ্ঞানীদের অবদান আলোচনা করো

ইউরোপীয় বিজ্ঞানীদের আধুনিক বিজ্ঞানের উদ্ভবে অবদান ছিল সর্বাধিক। তাঁরা প্রাকৃতিক ঘটনাবলি বোঝার জন্য বিভিন্ন পরীক্ষামূলক পদ্ধতি প্রবর্তন করেন, যা পরবর্তীকালে বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও সর্বোপরি বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের পথ প্রশস্ত করেছিল। তাঁরা প্রাচীন কাল থেকে প্রাপ্ত উত্তরাধিকার সূত্রের জ্ঞানকে নতুনভাবে বিশ্লেষণ করে জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রকে প্রসারিত করেছিলেন।

আধুনিক বিজ্ঞানের উদ্ভব ও বিকাশে ইউরোপীয় বিজ্ঞানীদের অবদান 

আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার (গণিত, পদার্থবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা) প্রথম পর্বের পথিকৃৎ হিসেবে কয়েকজন ইউরোপীয় বিজ্ঞানীদের প্রসঙ্গে নিম্নে আলোচনা করা হল-

(1) গণিত:

  • লুকা পাকিওলি: ফ্রান্সিসকান পাদরি লুকা পাকিওলি (Luca Pacioli) রচিত পাটিগণিত ও বীজগণিত সম্পর্কিত গ্রন্থ হল মূলত সর্বপ্রথম মুদ্রিত কয়েকটি গ্রন্থের মধ্যে অন্যতম। পাটিগণিতের মৌলিক নিয়ম, বর্গমূল নির্ণয়ের পদ্ধতি ও ব্যাবসাবাণিজ্য বিষয়ক আলোচনার উল্লেখ মেলে তাঁর গ্রন্থে।
  • সিপিয়ল দেল ফেরো : ইটালির গণিতজ্ঞ সিপিয়ন দেল ফেরো (Scipione del Ferro) ১৫১৯ খ্রিস্টাব্দে, x³+mx = n এই রূপ ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধান আবিষ্কার করার জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন।
  • মহিকেল স্টিফেল: ষোড়শ শতকের সর্বশ্রেষ্ঠ জার্মান বীজগণিতজ্ঞ হিসেবে মাইকেল স্টিফেল (Michael Stifel)-এর নাম বিশেষভাবে স্মরণীয়। Arithmetica Integra নামক তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থে বীজগণিতের নানান সমস্যার আলোচনার পাশাপাশি মূলদ ও অমূলদ রাশির কথা আলোচিত হয়েছে।
  • ফ্রান্সিস ভিয়েতা: বীজগণিত ও ত্রিকোণমিতির ইতিহাসে ফ্রান্সিস ভিয়েতা (Francois Viete)-এর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। মূলত তাঁর অমূল্য অবদানের সূত্রেই আধুনিক বীজগণিতের উদ্ভব সম্ভব হয়েছে বলে মনে করা হয়।

(2) পদার্থবিদ্যা:

  • বলবিদ্যা : আধুনিক বলবিদ্যার জন্মদাতা ছিলেন প্রকৃতপক্ষে ফ্লেমিশ স্টেভিনাস ও ইটালির গ্যালিলিও।
  • স্টেভিনাস: ফ্লেমিশ ইঞ্জিনিয়ার স্টেভিনাসের (Simon Stevin / Stevinus) বলবিদ্যা সম্পর্কিত গবেষণা গ্যালিলিও-র সমসাময়িককালে সম্পাদিত হয়েছিল। মাতৃভাষা ফ্লেমিশে তিনি বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করেছিলেন।
  • গ্যালিলিও: বলবিদ্যা সংক্রান্ত গবেষণার ক্ষেত্রে বিশেষত গতি, ত্বরণ ও বল সম্পর্কিত গ্যালিলিও (Galileo Galilei)-র আলোচনা ছিল যথেষ্ট সমৃদ্ধ ও যুগান্তকারী।
  • আলোকবিদ্যা: সপ্তদশ শতক নাগাদ আলোকবিদ্যার যুগান্তকারী গবেষণা সম্পাদিত হতে থাকে। প্রধানত, আধুনিক আলোকবিদ্যার সূচনা ঘটে দেকার্তে, হুক, হাইজেন্স ও নিউটনের গবেষণা থেকে। তবে আলোকবিদ্যায় এই নবযুগের সূচনার অব্যবহিত আগে দুজন বিজ্ঞানীর গবেষণার কথা বলা প্রয়োজন, এঁরা হলেন-কেপলার ও উইলব্রোর্ড স্নেল।
  • কেপলার: দূরত্বের সঙ্গে আলোর ঔজ্জ্বল্যের কমা-বাড়ার সম্পর্ক কেপলার (Johannes Kepler) প্রথম আবিষ্কার করেন। আলোর প্রতিসরাঙ্ক নিরূপণের জন্য কেপলার বেশকিছু পরীক্ষানিরীক্ষা করেন যা ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
  • স্নেল: কেপলারের সমসাময়িক উইলব্রোর্ড। ভিলব্রোর্ড স্নেলের (Willebrord Snellius / Snell) গবেষণা অনুযায়ী আলোক প্রতিসরণের সাইন-নিয়ম আবিষ্কৃত হয়।
  • চৌম্বকবিদ্যা: পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতক নাগাদ চৌম্বকবিদ্যায়ও বিশেষ উন্নতি পরিলক্ষিত হয়।
  • উইলিয়ম গিলবার্ট: চৌম্বকবিদ্যাকে এক গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞানের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি গবেষণামূলক কাজে উইলিয়ম গিলবার্টের (William Gilbert) ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

(3) জ্যোতির্বিদ্যা:

  • নিকোলাস অফ কুসা: পঞ্চদশ শতক থেকে ইউরোপে জ্যোতিষীয় গবেষণার ক্ষেত্রে এক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিতে থাকে। ক্রমে নবজাগরণ-সঞ্জাত বৈপ্লবিক চিন্তাধারার প্রভাবে জ্যোতির্বিদরা তাত্ত্বিক আলোচনার পরিবর্তে পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণে মনোনিবেশ করতে থাকেন। নিকোলাস অফ কুসা (Nicholas of Cusa) এসময় বলেন যে ব্রহ্মান্ডের ব্যাপ্তি অসীম, এর কেন্দ্র বলে কিছু থাকতে পারে না। তিনি পৃথিবীর আহ্নিক গতিতে বিশ্বাসী ছিলেন।
  • জর্জ পুরবাক: পঞ্চদশ শতকের জার্মানিতে পর্যবেক্ষণমূলক জ্যোতিষচর্চা উৎসাহ পেয়েছিল জর্জ পুরবাকের (Georg von Pauerbach) নেতৃত্বে। পরবর্তীতে কোপারনিকাস, টাইকো ব্রাহে, জোহানেস কেপলার, গ্যালিলিও গ্যালিলি প্রমুখ জ্যোতির্বিদ্যার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছিলেন। 

আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment