হার্টগ কমিটি উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত কোন্ কোন্ সুপারিশগুলি করেছিল তা আলোচনা করো

উচ্চশিক্ষা
হার্টগ কমিটির রিপোর্টে মাধ্যমিক শিক্ষার সার্বিক উন্নতির পাশাপাশি ইন্টারমিডিয়েট ও তার পরবর্তী স্তর অর্থাৎ উচ্চশিক্ষার স্তরের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু সুপারিশ করে।
(1) উচ্চশিক্ষার ত্রুটি: কমিটি উচ্চশিক্ষার জন্য বিভিন্ন সুপারিশ করে। তবে সুপারিশের আগে উচ্চশিক্ষার কয়েকটি ত্রুটির কথা উল্লেখ করে। ত্রুটিগুলি হল –
- অনুন্নত মান: কলেজগুলি যথাযথ মানের না হওয়ায় পড়াশোনার মান উন্নত নয় যদিও যথেষ্ট সংখ্যক কলেজ রয়েছে। এ ছাড়া কমিটি মনে করেন ভরতি প্রক্রিয়া যথোপযুক্ত নয় এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলির মান উন্নত নয়।
- লক্ষ্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে অসফলতা: উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমাজের বিভিন্ন মঙ্গলযুক্ত কাজের জন্য শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করা এবং শিক্ষার্থীদের বৈচিত্র্যমূলক পঠন-পাঠনের ব্যবস্থা করা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার মাধ্যমে সমাজের মানোন্নয়নের জন্য উপযুক্ত নেতা তৈরি হচ্ছে না।
- অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী: বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী রয়েছে, যারা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার জন্য উপযুক্ত নয়।
- অনার্স কোর্সের সময় সম্বন্ধে ধারণার অভাব: বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স কোর্সের জন্য যতটা সময় দেওয়া উচিত ততটা সময় দেয় না। অনার্স কোর্সসমূহ সুশৃঙ্খল নয়। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে অসমতা সৃষ্টি হচ্ছে।
- অনুপযুক্ত গ্রন্থাগার: গ্রন্থাগারসমূহ যথোপযুক্ত নয় অর্থাৎ সেখানে যে ধরনের বই বা যতগুলি সংখ্যক বই থাকা উচিত তা নেই। গ্রন্থাগারে কোনো শিক্ষাসহায়ক উপকরণ নেই যেগুলি উচ্চশিক্ষার জন্য জরুরি।
- অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা: বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মধ্যে অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব দেয় কিন্তু মানোন্নয়নের প্রতি নজর দেয় না।
(2) উচ্চশিক্ষা সম্পর্কিত সুপারিশ :
- বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন: হার্টগ কমিটি একক ও আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি অনুমোদনধর্মী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছিলেন। কারণ ভারতবর্ষের মতো সুবিশাল দেশের উচ্চশিক্ষার চাহিদা পূরণ কেবল ঐকিক বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে সম্ভব নয়।
- পরিকাঠামোগত উন্নয়ন: পরিকাঠামোগত উন্নতির প্রশ্নে কমিটি প্রতিটি মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো গ্রন্থ, গ্রন্থাগার, পরীক্ষাগার প্রভৃতির আয়োজনের জন্য সুপারিশ করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে স্নাতক স্তর খোলা, গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি করা এবং যোগ্যতা অনুযায়ী ছাত্র ভরতি করার পরামর্শ দিয়েছিলেন এই কমিটি।
- উদার মনের সৃষ্টি: উক্ত কমিটি মনে করেন উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্য হবে বুদ্ধিমান এবং উদার মনের মানুষ গড়ে তোলা কারণ তারা দায়িত্ব সামলাতে পটু হবে।
- পাস এবং অনার্স কোর্স বিচ্ছিন্নকরণ: পাস কোর্স থেকে অনার্স কোর্সকে বিচ্ছিন্ন করা প্রয়োজন বলে কমিটি মনে করেছিল। সমস্ত কলেজকে অনার্স পড়ার অনুমতি না দিয়ে কেবল নির্ধারিত কিছু কলেজকেই অনার্স পড়ানোর অধিকার দেওয়া উচিত বলে কমিটি মনে করেন।
- কর্মসংস্থান দপ্তর: প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসংস্থান দপ্তর বা Employment Bureau থাকা দরকার বলে কমিটি মনে করে। দপ্তরের কাজ হবে চাকুরিপ্রার্থীদের কর্ম সংস্থানের সন্ধান দেওয়া।
- জনশিক্ষা বিস্তার: এই কমিটিতে বলা হয়, জনশিক্ষার উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে এক্সটেনশন বক্তৃতার ব্যবস্থা করা দরকার।
- শিক্ষক নিয়োগ: কমিটি মনে করেন অনুমোদনধর্মী কলেজসমূহে শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্বে থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ।
- মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন: উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য প্রয়োজন মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন।
- ভরতির ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ: শিক্ষার্থীদের প্রবণতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভরতি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন রয়েছে।
- বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মে নিয়োগ: বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজের জন্য চাই উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তির এই কারণে স্নাতক পাশ করা ব্যক্তিদের পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ করতে হবে প্রশাসনিক কাজের জন্য।
- বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের উন্নয়ন: বিশ্ববিদ্যালয়ের যথাযথ কাজের পরিবেশ তৈরি করার জন্য চাই উপযুক্ত মানের শিক্ষক, প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ। শিক্ষার্থীদের উচ্চমানের শিক্ষা দেওয়ার জন্যও শিক্ষার্থীরা যাতে সেই ধরনের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা দরকার। কমিটি মনে করেন সামাজিক মান উন্নয়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলি হবে উপযুক্ত এজেন্সি।
আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর