সাবিত্রীবাই ফুলে ভারতে নারীশিক্ষার পথিকৃৎ”- উক্তিটি ব্যাখ্যা করো
অথবা, সাবিত্রীবাই ফুলেকে ভারতের নারীশিক্ষার অগ্রদূত বলা হয় কেন

আজ ভারতে মহিলারা কোনো ক্ষেত্রে পুরুষদের থেকে পিছিয়ে নেই। শিক্ষা, শাসন, রাজনীতি, বিজ্ঞান, বিচার বিভাগ, খেলাধুলা এবং প্রায় সব ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। সরোজিনী নাইডু, সুচেতা কৃপালিনি, কল্পনা চাওলা আরও অনেকের বড়ো নাম রয়েছে যারা তাদের শিক্ষা এবং প্রজ্ঞার কারণে ইতিহাসে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ভারতের নারীশিক্ষার ইতিহাসে এমনই এক মহীয়সী নারী হলেন- সাবিত্রীবাই ফুলে। যাঁকে ভারতে নারীশিক্ষার পথিকৃৎ বা অগ্রদূত বলা হয়। কারণ-
(1) একজন মহিলা যিনি ভারতে নারীশিক্ষার ভিত্তি রেখেছিলেন। তিনি প্রথম মহিলা যিনি ভারতের প্রথম মহিলা স্কুল চালু করেছিলেন, বিশেষভাবে যখন কেউ মেয়েদের শিক্ষিত করার কথা ভাবতে সাহস পেত না। সমাজের প্রতিটি নারী আজ তার কাছে ঋণী।
(2) গোঁড়া সমাজ নারী ও দলিতদের শিক্ষিত করার জন্য গৃহীত এই বিপ্লবী এবং সাহসী পদক্ষেপগুলিকে সহ্য করতে পারেননি সেকালের কঠোর হিন্দু সমাজ। তারা সাবিত্রীবাইকে অপমান করেছিল, গালাগালি দিয়েছিল, হুমকি দিয়েছিল, তার উপর কাদা এবং গোবর নিক্ষেপ করা হয়েছিল, কিন্তু তিনি এই সব সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করেছিলেন।
(3) জ্যোতিরাও ফুলে তখন 21 বছর বয়সি এবং সাবিত্রীবাই তখন 17 বছর বয়সি। 1848 সালে পুনের ভিদেওয়াদায় নিজেরা একটি মহিলা স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ছিল দেশের প্রথম মহিলা স্কুল, যা ভারতীয়দের দ্বারা পরিচালিত হত। তিনি এই স্কুলের মহিলা শিক্ষক হয়েছিলেন।
(4) সাবিত্রীবাই ফুলে 1848 সালে ভারতের মহিলা শিক্ষাবিদ হন। সাবিত্রীবাই, জ্যোতিরাও ফুলের সঙ্গে 1851 সালের শেষের দিকে পুনেতে 150 জন ছাত্রী নিয়ে ও টি মেয়েদের বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এই বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষার পদ্ধতি, সরকারি স্কুলের তুলনায় অনেক উচ্চতর বলে মনে করা হয়। পরবর্তীকালে ছাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল। 1849 সালে ফুলে দম্পতিকে তাদের পরিবার ত্যাগ করতে হয়েছিল, কারণ পরিবার তাদের শিক্ষা প্রসারের বিরোধিতা করেছিল। কারণ শিক্ষার ক্ষেত্রে তাদের এই কর্মকাণ্ডকে সমাজবিরোধী বলে মনে করত। কিন্তু ভাড়া বাড়িতে তাদের শিক্ষার কর্মকাণ্ড আরো বেশি করে চালিয়ে গেছেন।
(5) 1850 সালে জ্যোতিবা রাও এবং সাবিত্রীবাই ফুলে মিলে কয়েকটি শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন, এগুলি ছিল নেটিভ ফিমেল স্কুল এবং দ্য সোসাইটি ফর প্রমোটিং, দ্য এডুকেশন অফ মহারাষ্ট্র, মঙ্গ এবং মাহার। ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষে সাবিত্রীবাই ফুলের এই অফুরন্ত শিক্ষার কর্মকাণ্ডের জন্যই তাকে নারীশিক্ষার অগ্রদূত বলা হয়।
আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর