সাবিত্রীবাই ফুলের সমাজ সংস্কারমূলক কাজগুলি উল্লেখ করো

সাবিত্রীবাই ফুলের সমাজ সংস্কারমূলক কাজগুলি উল্লেখ করো

সাবিত্রীবাই ফুলের সমাজ সংস্কারমূলক কাজগুলি উল্লেখ করো
সাবিত্রীবাই ফুলের সমাজ সংস্কারমূলক কাজগুলি উল্লেখ করো

সাবিত্রীবাই ফুলের সমাজ সংস্কারমূলক কাজ 

সাবিত্রীবাই ফুলে শিক্ষাক্ষেত্রে যেমন নানাবিধ সংস্কারমূলক কাজ করেছিলেন, তেমনই সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রেও তাঁর যথেষ্টই অবদান রয়েছে। যেমন-

(1) সাম্প্রদায়িক বৈষম্যের বিরোধিতা: তৎকালীন সমাজে সম্প্রদায়গত যে  বিভেদ ছিল, সেই বিভেদ দূর করার জন্য তিনি সংগ্রাম করেছিলেন।  শুধুমাত্র বিভেদই নয়, নিম্ন সম্প্রদায়ের মানুষদের পড়াশোনার ব্যবস্থা তো  ছিলই না তাদের বিভিন্নভাবে মানসিক ও শারীরিক হেনস্থার স্বীকার হতে – হত। এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে তিনি সারাজীবন প্রতিবাদ করেছেন।

(2) দলিত মানুষদের জন্য আন্দোলন: দলিত মানুষদের জন্য লড়াই এবং তাদের যথাযথ সম্মান আদায়ের জন্য সাবিত্রীবাই ফুলে ও তাঁর স্বামীরঅবদান তাদেরকে সমাজসংস্কারকের সম্মানে ভূষিত করেছে।

(3) ভারতের প্রথম মহিলা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা: তৎকালীন সমাজে নারীদের শিক্ষার ব্যাপারে ভারতে প্রথম নারীদের জন্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন 1848 খ্রিস্টাব্দে। 

(4) মহিলাদের অধিকার রজ্জা: মহিলাদের অধিকার রক্ষার স্বার্থে তাদের জন্য বিপ্লবাত্মক চিন্তাভাবনা করেছিলেন ফুলে।

(5) মহিলা সেবা মন্ডল গঠন: নারীদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার জন্য সাবিত্রীবাই ফুলে 1852 সালে মহিলা সেবা মণ্ডল গঠন করেন। এই সেবা মণ্ডল গঠনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মহিলাদের তাদের অধিকার এবং সামাজিক সমস্যাগুলি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। 

(6) নাপিত ধর্মঘট-এর আয়োজন: সাবিত্রীবাই ফুলে মহারাষ্ট্রে একটি নাপিত ধর্মঘটের আয়োজন করেছিলেন। এই ধর্মঘটের কারণ ছিল মহিলাদের স্বামীর মৃত্যুর পর মস্তক মুন্ডনের প্রথার বিরোধিতা করা। এই ধর্মঘটটি সফল হয়েছিল।

(7) সত্যশোধক সমাজ প্রতিষ্ঠা: সাবিত্রীবাই এবং জ্যোতিরাও ফুলের মিলিত প্রচেষ্টায় 1873 সালে মহারাষ্ট্রের পুনেতে সত্যশোধক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সত্যশোধক সমাজের অর্থ হল-সত্য সন্ধানী সমাজ (Truth Seeker’s Society)। এই সংগঠনটি মহারাষ্ট্রের সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠীগুলির জন্য শিক্ষাগত সুযোগের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার বৃদ্ধির পক্ষে কথা বলে। এটি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন কাজ করত। এই সংগঠনের প্রধান কাজ ছিল নারী, ক্ষুদ্র ও দলিতদের উন্নতি ঘটানো। সাবিত্রীবাই সত্যশোধক সমাজের মহিলা শাখার নেত্রী হয়েছিলেন।

(8) জাতিভেদ প্রথার বিরোধিতা: সাবিত্রীবাই ও তাঁর স্বামী জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে সারাজীবন প্রতিবাদ করেছেন এবং নিম্নশ্রেণির মানুষদের উন্নয়নের জন্য সারাজীবন বিভিন্ন কাজকর্ম করেছেন। জাতিগত। ভেদাভেদ দূর করতে সাবিত্রীবাই ফুলে মহিলাদের একসঙ্গে একই চাদরে বসতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি যে সাম্প্রদায়িকতার বিরোধী ছিলেন, তার প্রমাণ পাওয়া। যায়। তিনি তাঁর পালিত পুত্র যশওয়ান্তের সঙ্গে সত্যশোধক সমাজের একটি মেয়ের 1873 সালে বিবাহ দেন।

(9) ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা: 1897 সালে সাবিত্রীবাই ফুলে তাঁর পালিত পুত্র যশওয়ান্তের প্রচেষ্টায় একটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেন। যখন গোটা। বিশ্বব্যাপী প্লেগ মহামারী আকারে দেখা দেয় সেই সময় পুনের বাইরের। দিকে নালাসোপাড়াতে (Nallaspora) একটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেন।। সেখানেই 1897 সালে 66 বছর বয়সে প্লেগে আক্রান্ত হয়ে তিনি পরলোক গমন করেন।

(10) বালহত্যা প্রতিবন্ধক গৃহ: 1853 সালে সাবিত্রীবাই ফুলে গর্ভবতী বিধবাদের নিরাপদ প্রসবের জন্য এবং সামাজিক কুসংস্কারের কারণে শিশু হত্যার প্রথা বন্ধ করার জন্য একটি Care Center খোলেন।। তাঁদের নিজেদের বাড়ি, 395, গঞ্জ পেঠ, পুনেতে।

(11) নৈশ বিদ্যালয়: 1855 সালে সাবিত্রীবাই ফুলে একটি নৈশ। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কৃষক এবং শ্রমিকদের জন্য। এখানে। মহিলা শ্রমিকরাও পড়াশোনা করতে পারত। তারা যাতে দিনের বেলা। কাজ করতে পারে এবং রাতে পড়াশোনা করতে পারে তাই এই। ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment