সমাজসংস্কারে বেগম রোকেয়ার অবদান লেখো

সমাজসংস্কারে বেগম রোকেয়ার অবদান লেখো

সমাজসংস্কারে বেগম রোকেয়ার অবদান লেখো
সমাজসংস্কারে বেগম রোকেয়ার অবদান লেখো

সমাজসংস্কারে বেগম রোকেয়ার অবদান

শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে সমাজ সংস্কারেও বেগম রোকেয়ার অবদান ছিল অনস্বীকার্য। সমাজ সংস্কারে তাঁর উল্লেখযোগ্য আবদানগুলি হল-

(1) অঞ্জুমান-এ খাওয়াতিন-ই-ইসলাম প্রতিষ্ঠা: বেগম রোকেয়া মুসলিম সমাজের অবর্ণনীয় পীড়ণের অবস্থা প্রত্যক্ষ করেছিলেন এবং তিনি ভীষণভাবে ব্যথিত হয়েছিলেন। তিনি মুসলমান মহিলাদের জন্য অঞ্জুমান-এ খাওয়াতিন-ই-ইসলাম নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।

(2) বিতর্কসভা ও সম্মেলন: অঞ্জুমান-এ খাওয়াতিন-ই-ইসলাম সংগঠনটি প্রধানত মহিলাদের শিক্ষা ও সম্ভ্রম নিয়ে বিতর্কসভা ও সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা আনার চেষ্টা করত।

(3) সমাজসংস্কারমূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং প্রকল্প গঠন: বেগম রোকেয়াই ছিলেন প্রথম মুসলিম নারীবাদী ব্যক্তিত্ব, যিনি ছিলেন উদারমনস্ক, সংস্কারধর্মী, বিজ্ঞানমনস্ক এবং দূরদর্শী। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, অত্যন্ত সংরক্ষণকামিতা ও সংকীর্ণ মনোভাবই ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষে মুসলমানদের অত্যন্ত ধীর অগ্রগতির অন্যতম প্রধান কারণ। তিনি সমাজসংস্কারমূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন ও প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর গঠিত সংগঠন ব্যাপকভাবে মুসলিম মেয়েদের শিক্ষার স্বপক্ষে প্রচার ও আন্দোলনকে সংগঠিত করেছিল।

(4) সামাজিক কুসংস্কার ও নিপীড়ণ থেকে মুক্তির প্রাচষ্টা: সমসাময়িক সমাজ সংস্কারকদের মতো তিনিও নারীদের সামাজিক কুসংস্কার ও নিপীড়ণ থেকে মুক্ত করার জন্য নিরলস সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন।

(5) নারী ও পুরুষের সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠা: সমাজে নারীর স্থান, সামাজিক অনুষ্ঠানে নারীর অংশগ্রহণ, বৃত্তি বা পেশা যাই হোক-না-কেন, যে-কোনো প্রকার বৈষম্যেরই তিনি তীব্র বিরোধিতা করে নারীদের পুরুষের সমমর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য লড়াই করেছেন।

(6) বেঙ্গল মহিলা শিক্ষা কনফারেন্সের সভাপতি : বেগম রোকেয়া সকলপ্রকার বাধা বিপত্তিকে দূরে ঠেলে নিরলস কাজ করে গেছেন। 1926 খ্রিস্টাব্দে তিনি Bengal Women’s Education Conference অর্থাৎ বেঙ্গল মহিলা শিক্ষা কনফারেন্স-এর সভাপতির আসন গ্রহণ করেন এবং বিভিন্ন সংস্কারমূলক কাজের কথা ঘোষণা করেন। 

(7) লেখার মধ্য দিয়ে প্রতিবাদ: বেগম রোকেয়া তাঁর রচনার মধ্যে দিয়ে তৎকালীন সমাজে মুসলিম নারীদের অবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। 1924 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ‘পদ্মরাগ’ গ্রন্থে তিনি লিখেছিলেন যে, বিবাহ করাই মেয়েদের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। এইরকম দুঃসাহসিক উক্তি তৎকালীন সমাজব্যবস্থায় ব্যক্ত করা যথেষ্টই সাহসিকতার পরিচয় বহন করে।

(৪) সমাজে প্রচলিত রক্ষণশীল রীতিনীতির বিরোধিতা: রোকেয়া ইসলাম ধর্মের নামে নারীদের উপর নানারূপ সামাজিক পীড়াদায়ক রীতিনীতির আরোপকে তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি নারীদের অবদমিত করে রাখার তীব্র বিরোধী ছিলেন। তিনি স্ত্রী ও পুরুষের সমানাধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন এবং তাঁর এই অভিমত সমাজের সর্বস্তরে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন।

আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment