শিশুর বিকাশে শিক্ষকের ভূমিকাগুলি আলোচনা করো
শিক্ষক শিশুর বংশগতির ধারাকে বদলাতে পারেন না, এ কথা সত্য। তবে বংশগতির ধারাকে পূর্ণমাত্রায় বিকশিত করাটা বহুলাংশে তাঁর উপর নির্ভর করে। শিক্ষক উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে শিশুর জন্মগত সম্ভাবনাগুলিকে পূর্ণভাবে বিকশিত করতে পারেন।
শিক্ষকের ভূমিকা
শিশুর বিকাশে শিক্ষকের ভূমিকাগুলি হল-
(1) ব্যক্তিবৈষম্যের নীতি অনুসরণ: শিক্ষকের কাজ হবে ব্যক্তিবৈষম্যের নীতির উপর শিশুর শিক্ষাকে প্রতিষ্ঠা করা। শিক্ষার্থীদের বুদ্ধি ও সামর্থ্য অনুযায়ী, তাদের শ্রেণি বিভাজন করে শিক্ষাদান করা।
(2) চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষাদান: আধুনিক শিক্ষা হল শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক। তাই শিক্ষকের কাজ হবে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর চাহিদা ও সামর্থ্য পর্যবেক্ষণ করা এবং সেই অনুযায়ী শিক্ষার বিষয়বস্তুকে শিক্ষার্থীর উপযোগী করে তোলা। এ ছাড়াও শিক্ষক শিক্ষাদানকালে প্রয়োজনীয় শিক্ষাসহায়ক উপকরণের ব্যবস্থা করবেন।
(3) আধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগ: শিক্ষকের কাজ হবে শিক্ষণ পদ্ধতিকে মনোবিজ্ঞান ও বিজ্ঞানসম্মত করে তোলা, যাতে শিক্ষার্থীরা সার্থক ও কার্যকর শিখন লাভ করতে পারে। সুতরাং শিক্ষক প্রয়োজনীয় শিক্ষণ পদ্ধতি যেমন- প্রতিপাদন, প্রোজেক্ট, পরীক্ষামূলক সমস্যাসমাধান, আলোচনা ইত্যাদি শ্রেণিকক্ষে প্রয়োগ করবেন প্রয়োজন অনুযায়ী।
(4) শিক্ষণ সহায়ক উপকরণ ব্যবহার: শিক্ষকের কাজ হবে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষণ সহায়ক উপকরণগুলির বহুল ব্যবহার করা। শিক্ষাসহায়ক উপকরণ হিসেবে চার্ট, মডেল, মূর্ত বস্তু, প্রজেক্টর, কম্পিউটার ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে মাল্টিমিডিয়াকে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়েছে।
(5) আচরণগত সমস্যাসমাধান: শিক্ষকের কাজ হবে মনোবিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের আচরণগত সমস্যাগুলির পর্যবেক্ষণ করা এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া। প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে অভিভাবককে পরামর্শ দেবেন।
(6) স্বাস্থ্যকর পরিবেশ গঠন: শিক্ষকের কাজ হবে বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ গড়ে তোলা। শ্রেণিকক্ষগুলিকে প্রশস্ত ও আলো-বাতাসময় করা, খেলাধুলা ও অন্যান্য সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা।
(7) শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত নির্ধারণ: শিক্ষকের কাজ হবে সুষ্ঠু শিক্ষাদানের জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত বিজ্ঞানসম্মত করে তোলা। সাধারণত শিক্ষার্থী-শিক্ষক অনুপাত হওয়া উচিৎ 40: 1।
(8) নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: শিক্ষকের কাজ হবে শিক্ষার্থীর দৈহিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য সুষম খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অভিভাবকদের ওয়াকিবহাল করা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা এবং স্বাস্থ্যরক্ষার বিধিনিষেধ সম্বন্ধে শিক্ষার্থীদের সচেতন করা। বিদ্যালয়গুলিতে মিড-ডে মিল-এর ব্যবস্থা করা যা প্রচলিত রয়েছে, সেগুলি যথাযথ স্বাস্থ্যসম্মত কি-না তা পর্যবেক্ষণ করা।
(9) অগ্রগতির পরিমাপ করা : শিক্ষকের কাজ হবে মনোবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের অগ্রগতির পরিমাপ করা। শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হলে তার কারণ নির্ণয় করা এবং সেগুলি দূরীকরণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া। অগ্রগতি পরিমাপ দ্বারা শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক বিকাশ কতটা হয়েছে তা পরিমাপ করা যায়। আবার দৈহিক, মানসিক বিকাশ কতটা হয়েছে তা পরিমাপ করা প্রয়োজন। বিভিন্ন ধরনের কৌশল ব্যবহার করে অগ্রগতি পরিমাপের পর নির্ধারিত মানগুলিকে কিউম্যুলেটিভ রেকর্ড কার্ডের মাধ্যমে অভিভাবকদেরকে জানানো এবং সেই রেকর্ড বিদ্যালয়ে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা।
(10) সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি : বিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি যেমন গান, নাচ, খেলাধুলা, অঙ্কন, অভিনয় ইত্যাদির ব্যবস্থা করা, যা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিকাশে সাহায্য করে।
(11) উপযুক্ত কর্মসূচি অনুসরণ: শিক্ষকের কাজ হবে সুপরিচালনার সাহায্যে শিক্ষার্থীদের উপযোগী কর্মসূচি নির্ধারণ করা ও তার বাস্তবায়ন করা। বিভিন্ন ধরনের কার্যাবলি যেমন প্রার্থনা, -বিভিন্ন মনীষীদের জীবনী সংক্রান্ত আলোচনা করা, – পরিবেশ দিবস পালন,- স্বাস্থ্য, – সচেতনতা শিবির – স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস পালন – স্কুলের – প্রতিষ্ঠা দিবস পালন ইত্যাদি।