শিশুর বিকাশে বিদ্যালয় কীরূপ ভূমিকা পালন করে

শিশুর বিকাশে বিদ্যালয় কীরূপ ভূমিকা পালন করে

বিদ্যালয় সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, যা শিশুর সর্বাঙ্গীণ বিকাশে সহায়তা করে। শিশুর বিকাশের ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের ভূমিকাগুলি হল-

(1) বৌদ্ধিক বিকাশ

শিশুর বৌদ্ধিক বিকাশের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত বিদ্যালয় পরিকাঠামো, উপযুক্ত শিক্ষক, উপযুক্ত গ্রন্থাগার ইত্যাদি। এক্ষেত্রে যে বিষয়গুলিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়, তা হল-

(1) বিদ্যালয় পরিকাঠামো: আলো-বাতাসপূর্ণ বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ, বসবার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা, চক, ব্ল্যাকবোর্ড (বর্তমানে হোয়াইটবোর্ড বা গ্রীনবোর্ড ও মার্কার পেন), উপযুক্ত সংখ্যক শৌচাগার, উপযুক্ত সংখ্যক চেয়ার, টেবিল, ফ্যান ইত্যাদি শিক্ষাসহায়ক উপকরণ, প্রয়োজনীয় সংখ্যক বই-সহ গ্রন্থাগার, প্রয়োজনীয় সংখ্যক ল্যাবরেটরি ইত্যাদি।

(2)  উপযুক্ত শিক্ষক: বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক থাকবেন। শিক্ষক উপযুক্ত শিক্ষণ পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় শিক্ষাসহায়ক উপকরণ ব্যবহার করে পাঠদান করবেন। বিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সময় তালিকা তৈরি করবেন এবং সেই অনুযায়ী শিক্ষকরা যথাযথ ক্লাস নিচ্ছেন কি না সে ব্যাপারে পর্যবেক্ষণ করবেন।

(3) উপযুক্ত প্রশাসন: উপযুক্ত প্রশাসন বিদ্যালয়ের বৌদ্ধিক বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলি সরবরাহ করবেন।

(4) মূল্যায়ন ব্যবস্থা: বৌদ্ধিক বিকাশ কতটা হয়েছে, তা পরিমাপ করার জন্য থাকবে উপযুক্ত মূল্যায়ন ব্যবস্থা। মূল্যায়ন করা হবে শিক্ষার্থীর পারদর্শিতা, মানসিক বিকাশ ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে।

(2) দৈহিক বিকাশ

সুস্থ মন ও সুস্থ দেহ ছাড়া উপযুক্তভাবে পাঠগ্রহণ সম্ভব নয়। তাই প্রয়োজন শিক্ষার্থীর যথাযথ দৈহিক বিকাশ। তাই বিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।

(3)  মানসিক বিকাশ

বিভিন্ন ধরনের মানসিক বিকাশ, যেমন- আগ্রহ, প্রবণতা, ব্যক্তিত্ব, সৃজনশীল চিন্তাভাবনা ইত্যাদি জাগ্রত করতে বিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি, সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি, শিক্ষকের পাঠক্রমিক আলোচনা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

(4) সামাজিক বিকাশ

বিদ্যালয় হল সমাজের ক্ষুদ্র সংস্করণ। বিদ্যালয়ে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, সহপাঠী, প্রধান শিক্ষক প্রমুখ ব্যক্তিদের কাছ থেকে তাদের আচার-আচরণ ব্যবহার, বিভিন্ন ধরনের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি; বিভিন্ন ধরনের বিদ্যালয়ের কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক বিকাশ, যেমন- সহযোগিতা, সহানুভূতি, দলবদ্ধতা, সহমর্মিতাবোধ ইত্যাদি জাগ্রত করা সম্ভব হয়।

(5) নৈতিক বিকাশ 

একজন শিক্ষার্থীর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের নৈতিকতাবোধ যেমন- সততা, দায়বদ্ধতা, পরিশ্রমী, দেশপ্রেম, অসাম্প্রদায়িক মনোভাব, কুসংস্কারমুক্ত মন ইত্যাদি ধরনের নৈতিকতাবোধ জাগ্রত করা বিদ্যালয়ের কর্তব্য। সুতরাং বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিকতাবোধ জাগ্রত করা যায়।

(6) মূল্যবোধের বিকাশ

বিভিন্ন ধরনের মূল্যবোধ যেমন- গণতান্ত্রিকতাবোধ, নাগরিকতাবোধ, ধর্মনিরপেক্ষতা ইত্যাদি মূল্যবোধের বিকাশ সম্ভব বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে।

আরও পড়ুন – মনোবিজ্ঞানে অনুসন্ধানের পদ্ধতিসমূহ প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment