শিশুর জীবনবিকাশে বংশগতি না পরিবেশ, কোনটির ভূমিকা বেশি বলে তোমার মনে হয়? আলোচনা করো
“তুমি তখনই আলোর মর্ম বুঝতে পারবে যখন তুমি অন্ধকারকে বুঝবে।” পৃথিবী সৃষ্টির জন্য, রক্ষার জন্য যেমন- আলো এবং অন্ধকার দুইয়েরই প্রয়োজন, তেমনই শিশুর পূর্ণাঙ্গ বিকাশের জন্য বংশগতি ও পরিবেশ দুইয়েরই প্রয়োজন। বংশগতি তত্ত্বে বিশ্বাসীরা পরিবেশের ভূমিকাকে আমল দিতে চান না। তাঁদের মতে, বংশের মধ্যে জিনগত বিশেষত্ব না থাকলে বিকাশগত বিশেষত্বও পাওয়া যায় না। যেমন- গাধা পিটিয়ে ঘোড়া বানানো যায় না। পিতা-মাতা বা বংশের জিন শিশুর বিকাশে সবচেয়ে বড়ো ভূমিকা পালন করে। তাঁদের মতে, জিন নির্ধারণ করে দেয় শিশুর ভবিষ্যৎ বিকাশের পথ কোন্ দিকে অগ্রসর হবে। এক্ষেত্রে পরিবেশ যেমনই হোক-না- কেন বংশগতির ধারা একদিন বিকশিত হবেই।
অন্যদিকে পরিবেশ তত্ত্বের গুণগ্রাহীরা বংশগতিবিদদের মতামতকে মানতে পারেন না। তারাও উদাহরণ সহযোগে পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন যে, উপযুক্ত পরিবেশ রচিত না হলে, শিশুর পূর্ণাঙ্গ বিকাশ সম্ভব নয়। তা সে বংশগত জিন যতই উন্নত হোক-না-কেন। পাঁকে, নর্দমায় জন্ম নিলেও পঙ্কজ সুন্দর হয়ে ফুটে ওঠে ঠিকই, কিন্তু শক্ত মাটিতে রোপণ করা হলে বা বালিতে বসালে তার বিকাশ তো হবেই না, এক্ষেত্রে মৃত্যু অবধারিত। তাই পরিবেশবাদীরা বংশগতি তত্ত্ব মানতে নারাজ। তাঁদের মতে, শিশুকে সঠিকভাবে বিকশিত করে তুলতে যথাযথ পরিবেশ রচনা করা প্রয়োজন।
আমাদের মনে হয় মানুষের জীবনে পরিবেশ না বংশগতি-এই প্রশ্ন অবান্তর। কেন-না পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বা বংশগতির বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখিয়েছেন ঠিকই, তবে তা থেকে কোনো একটি সিদ্ধান্তে আসা যায় না। প্রকৃতপক্ষে বংশগতির জন্য পাওয়া ব্যক্তির নিজস্ব সত্ত্বা এবং সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে উপলব্ধ বিষয়সমূহের পারস্পরিক ক্রিয়ার উপর নির্ভর করে ব্যক্তির প্রকৃত বিকাশ।
গাণিতিকভাবে
জীবন বিকাশ = বংশগতি × পরিবেশ (অর্থাৎ- বংশগতি + পরিবেশ নয় কিন্তু)
শিশু যে জৈবিক গুণাবলি নিয়ে জন্মায়, সামাজিক পরিবেশে সেগুলির বিকাশ হয়। স্যান্ডিফোর্ড (Sandiford) বলেছেন-শিশু জৈবিক পরিবেশ নিয়ে জন্মায়, কিন্তু সামাজিক পরিবেশের মধ্যে জন্মগ্রহণ করে। (Child is born with a biological heritage, he is born into a social heritage.) তবে, এ কথা আমরা বলতে পারি, বংশগতি শিশুর জীবনবিকাশের প্রারম্ভিক পরিচয়মাত্র, কিন্তু উপযুক্ত পরিবেশ তার বিকাশের গতি নির্ধারণ করে দেয়।