শিক্ষার্থী হল বংশগতি ও পরিবেশের মিথস্ক্রিয়ার ফল’-ব্যাখ্যা করো
অথবা, ব্যক্তিজীবন বংশগতি ও পরিবেশের পারস্পরিক ক্রিয়ার ফল- আলোচনা করো
ব্যক্তিজীবনের বিকাশ হল বংশগতি (Heredity) এবং পরিবেশ (Environment)-এই দুই উপাদানের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার (Interactions) ফসল। তাই মনোবিদ স্যান্ডিফোর্ড-এর মতে, “Heredity and environment are correlative factors.” অর্থাৎ বংশগতি এবং পরিবেশ পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত উপাদান। প্রতিটি শিশু জন্মসূত্রে যেসকল বৈশিষ্ট্য তার পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে অর্জন করে, তাদের সমাহার হল বংশগতি। অপরপক্ষে মানবজীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আর একটি উপাদান তা হল পরিবেশ। পরিবেশ হল সমস্ত বাহ্যিক শক্তি, প্রভাব ও অবস্থার সমাহার, যেগুলি জীবের প্রকৃতি, আচরণ, বৃদ্ধি, বিকাশ এবং পরিণমনকে প্রভাবিত করে বংশগতির উপাদানগুলির সঙ্গে জীবন পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের সক্রিয় প্রতিক্রিয়া ঘটায়। শিশুর জীবনবিকাশে বংশগতি ও পরিবেশের মিথস্ক্রিয়ার ফল সম্পর্কে চিন্তাবিদগণের সমীক্ষার ফলগুলি হল-
(1) ড. পরিশ্চা (Dr Parischa)-এর সমীক্ষা ও অভিমত
(1) কোনো পরীক্ষা যদি দুই বিপরীতমুখী সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বিচার করা হয়, তাহলে দেখা যাবে পরীক্ষাটি দুই বিপরীত সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করা যায়।
(2) এই দুই উপাদানের মধ্যে সম্পর্ক এত গভীর যে, কোনো নির্দিষ্ট একটি উপাদানের প্রভাব শুধু বেশি এটি নয়, পৃথকভাবে কোনো একটির পরিমাপ করা সম্ভব নয়।
(3) বংশধারা সূত্রে প্রাপ্ত গুণাবলি পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে বিকশিত হয়।
(4) পরিবেশ যথাযথ না হলে, বিকাশ ব্যাহত হয়। অনুকূল পরিবেশ এককভাবে কিছু করতে পারে না। বংশধারা ব্যতীত পরিবেশ অর্থহীন। বংশধারা বা সহজাতভাবে প্রাপ্ত শিশুর গুণাবলি পরিবেশের সাহচর্যে প্রকাশ পায়।
(1) ম্যাকাইভার ও পেজ (Mclver and Page)-এর অভিমত
(1) জীবনের প্রতিটি বিষয়ই উভয়ের গুণফল, কোনোটিকেই বাতিল করা যায় না এবং কোনোটিকেই বিচ্ছিন্ন করা যায় না।
(2) গাছের চারা যেমন বীজ বা মাটি ছাড়া বেড়ে উঠতে পারে না, তেমনই কোনো শিক্ষার্থী বংশধারা এবং পরিবেশ ছাড়া বিকশিত হতে পারে না। বংশধারা ও পরিবেশ উভয়ই সমগুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য। একে অপরের বিপরীত নয়, পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক।
(3) গ্যারেট (Garrett)-এর অভিমত
(1) বংশধারা এবং পরিবেশ পরস্পরের সহায়ক-এর থেকে অধিক কিছু হতে পারে না।
(2) বংশধারা ও পরিবেশের মধ্যে সম্পর্ক বিচারে ‘বংশধারা বা পরিবেশ’ এইভাবে উল্লেখ করা ঠিক নয়। দুই-এর মধ্যে ‘অথবা’ বা ‘নতুবা’ সম্পর্ক নেই। বলা উচিত বংশধারা এবং পরিবেশ।
(4) উডওয়ার্থ ও মার্কুইস (Woodworth and Merquis)-এর অভিমত
উডওয়ার্থ এবং মার্কুইস-এর মতে, শিশুর বিকাশ বংশধারা এবং পরিবেশের মধ্যে সমষ্টির সম্পর্ক নয় বরং তা হল গুণফলের। অর্থাৎ ব্যক্তির বিকাশ = বংশধারা পরিবেশ নয়, বংশধারা পরিবেশ।
স্যান্ডিফোর্ড (Sandiford)-এর অভিমত
(1) স্যান্ডিফোর্ড-এর মতে, বংশগতি ও পরিবেশ হল পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত উপাদান। এই দুটি উপাদানের পারস্পরিক ক্রিয়ার ফলে শিশুর বিকাশ নির্ধারিত হয়।
(2) এই দুটি উপাদান ছাড়াও তিনি আরও একটি উপাদানের কথা বলেছেন। তা হল- প্রেষণা বা তাগিদ (Motivation)। তাঁর মতে, পরিবেশ ও বংশগতির সঙ্গে প্রেষণা সংযুক্ত হলে, তবেই শিশুর জীবনবিকাশ সার্থকভাবে সম্পন্ন হয়। উপরের আলোচনা এবং যুক্তির প্রেক্ষিতে এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, শিক্ষার্থী হল মনো-সামাজিক সত্তা যাকে বংশধারা এবং পরিবেশের মিথস্ক্রিয়ার গুণফল হিসেবে উল্লেখ করা যায়।