শিক্ষায় বংশগতি ও পরিবেশের প্রভাব আলোচনা করো

শিক্ষায় বংশগতি ও পরিবেশের প্রভাব আলোচনা করো

শিক্ষার উদ্দেশ্য শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশে সহায়তা করা। এই পরিপূর্ণ বিকাশের মূলে রয়েছে শিশুর বংশগতি ও পরিবেশ। তাই শিক্ষাক্ষেত্রে বংশগতি ও পরিবেশের গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না।

বংশগতি ও পরিবেশের প্রভাব

শিক্ষার যেসকল ক্ষেত্রে বংশগতি ও পরিবেশের প্রভাব রয়েছে, সেগুলি হল-

(1) বংশগতির অনুশীলন: বংশগতির কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যক্তিগত বৈষম্য থাকে। তাই শিক্ষকের দায়িত্ব হবে শিক্ষা পরিকল্পনা রচনার পূর্বে বংশগতির অনুশীলন করা।

(2)  শিক্ষা পরিকল্পনা রচনা: বংশগতির ধারা অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যক্তিবৈষম্য লক্ষ করা যায়। অর্থাৎ তারা বিভিন্ন ধরনের সম্ভাবনা নিয়ে জন্মায়। শিক্ষাকে সার্থক করে তুলতে তাদের সম্ভাবনাগুলিকে অনুশীলন করে শিক্ষা পরিকল্পনা রচনা করতে হবে।

(3) পরিবেশের উন্নতিসাধন: শিক্ষার্থীর জীবনবিকাশের জন্য বিদ্যালয়ের মধ্যে যাতে শিক্ষার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। যেমন- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, আলো-বাতাসের ব্যবস্থা, বসার ব্যবস্থা, গ্রন্থাগারের ব্যবস্থা ইত্যাদি।

(4) মানবীয় সম্পর্ক স্থাপন : আদর্শ শিক্ষা পরিবেশ গড়ে তোলার অপরিহার্য অঙ্গ হল মানবীয় সম্পর্ক স্থাপন। এই সম্পর্ক শিক্ষার্থীর জীবনকে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত করে। তাই বিদ্যালয়ে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আদর্শ মানবীয় সম্পর্ক গড়ে তুলবেন।

(5) জ্ঞান আহরাণ সহায়তা: শিক্ষার্থীর অর্জিত জ্ঞান পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং শিক্ষার্থীর জ্ঞানার্জন নির্ভর করে, শিক্ষক কী ধরনের বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীর সামনে উপস্থাপন করছেন, তার উপর। তাই শিক্ষকের দায়িত্ব হবে, বিভিন্ন বিষয়ে সর্বাধুনিক জ্ঞান আহরণে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করা।

(6) অবসরযাপনের শিক্ষা : শিক্ষার্থীরা তাদের অবসর সময় যাতে সুস্থভাবে শিক্ষামূলক কাজের মাধ্যমে কাটাতে পারে, সেদিকে শিক্ষককে নজর দিতে হবে। শিক্ষামূলক কাজ করলে শিক্ষার্থীরা যেমন বিভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে, তেমনই বিদ্যালয়ের একঘেয়েমি থেকে তারা মুক্তি পায়।

(7)  শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা দান: বিদ্যালয়ে সুপরিবেশ গড়ে তুলতে হলে, শিক্ষার্থীদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। এই সুযোগ পেলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত সক্রিয়তা আসে, যা জীবনবিকাশের সহায়ক।

(৪) বিষয়বস্তু নির্বাচন : শিক্ষকের দায়িত্ব হবে শিক্ষার্থীর সামাজিক দিক, বংশগতি ও পরিবেশের দিকে লক্ষ রেখে পাঠক্রমের বিষয়বস্তু নির্বাচন করা।

(9) সুনির্দেশনা দান: শিক্ষার্থীদের পরিপূর্ণ জীবনবিকাশের জন্য তার বংশগতির ধারা অনুশীলন করে তাকে যথাযোগ্য নির্দেশনা দিতে হবে। শিক্ষার ক্ষেত্রে ও বৃত্তি নির্বাচনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর সম্ভাবনা ও পরিবেশের চাহিদা বিবেচনা করে তাকে সুনির্দেশনা দিতে পারলেই তার জীবন সুন্দর হয়ে গড়ে উঠবে।

(10) বংশগতি ও পরিবেশের সমন্বয়সাধন: শিক্ষাকে সার্থক করতে হলে শিক্ষার্থীর জীবনবিকাশ প্রয়োজন। আর শিক্ষার্থীর জীবনবিকাশের জন্য বংশগতি ও পরিবেশের মধ্যে সমন্বয়সাধন প্রয়োজন। তাই পরিবেশকে সার্থকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে শিক্ষার্থীর বংশগতিকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে।

পরিশেষে বলা যায় যে, শিশুর জীবনবিকাশে পরিবেশ ও বংশগতি যখন একত্রে কাজ করে, তখন শিক্ষাক্ষেত্রেও তাদের সমন্বিত প্রয়োগ করতে হবে। তাই বিদ্যালয়ের দায়িত্ব হবে পরিবেশ ও বংশগতির মধ্যে সমন্বয় সাধন করে শিশুর জীবনবিকাশের প্রক্রিয়াকে পরিপূর্ণতা দান করা।

আরও পড়ুন – মনোবিজ্ঞানে অনুসন্ধানের পদ্ধতিসমূহ প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment