মুসলিম যুগের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে মক্তবের ভূমিকা আলোচনা করো

মুসলিম যুগের শিক্ষাব্যবস্থা প্রধানত পরিচালিত হত মক্তব ও মাদ্রাসা নামক দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। মক্তব সম্পর্কে নিম্নলিখিতভাবে আলোচনা করা হল।
মুসলিম যুগের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে মক্তবের ভূমিকা
ইসলামীয় ব্যবস্থায় প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হল মক্তব। এই মক্তব শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ কুতুব থেকে। এর অর্থ হল যেখানে লেখাপড়া শেখানো হয় (a place where writing is taught)। এই শিক্ষাকেন্দ্রগুলি মসজিদ-সংলগ্ন ছিল। প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে মক্তবের শিক্ষার বিভিন্ন দিকগুলি সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল-
(1) উদ্দেশ্য: মক্তবে শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল একজন শিক্ষার্থীকে বাস্তবজীবনের উপযোগী সৎ, চরিত্রবান, আদর্শপরায়ণ ও ধার্মিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।
(2) শিক্ষারম্ভ: ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থার ন্যায় বিদ্যারম্ভ অনুষ্ঠানের মতো একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মুসলিম শিশুদের শিক্ষাদানের পর্ব শুরু হত। এই অনুষ্ঠানটি বিসমিল্লাহ্ নামে পরিচিত। সাধারণত শিশুর বয়স চার বছর চার মাস চার দিন হলে তাকে নতুন পোশাক পরিয়ে আখেনজি অর্থাৎ শিক্ষক- এর সামনে বসানো হত। শিক্ষার্থীর হাতে থাকত একটি রৌপ্যনির্মিত ফলক এবং তার উপর লেখা থাকত কোরানের একটি পঙ্ক্তিক্ত। আখেনজি শিক্ষার্থীকে বারংবার এটি মুখস্থ করাতে সাহায্য করতেন। এরপর সাত বছর বয়সে কলমা পাঠ-এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীর প্রকৃত শিক্ষা শুরু হত।
(3) শিক্ষার মাধ্যম ও পাঠক্রন: আরবি ও ফারসি ভাষা ছিল মক্তবগুলির পঠনপাঠনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এখানে ইসলামিক ধর্মতত্ত্ব, কলমা, কাব্যাংশ, নীতি কাহিনি, পঠন, লিখন, গণিত ও কোরান পাঠের ব্যবস্থা, পত্রলিখন, আবেদনপত্র লিখন প্রভৃতি ব্যবস্থা ছিল। মক্তবে হাতের লেখা সুন্দর করার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হত।
(4) শিক্ষণ পদ্ধতি: মক্তবে সাধারণত সহজ-সরল পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করা হত। কলমা সম্পর্কে না বুঝেই শিশুকে দিয়ে তা মুখস্থ করানো হত। এরপর তার বয়স সাত বছর হলে পবিত্র কোরান পাঠের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর ধর্মশিক্ষার সূচনা হত। প্রথমে ছোটো থেকে বড়ো অক্ষর শেখানো ও তারপর পড়ানো হত। তবে এই পদ্ধতিটি ছিল জটিল ও অবৈজ্ঞানিক। পরবর্তীকালে মুঘল সম্রাট আকবর এই পদ্ধতির সংস্কারসাধন করেন এবং আগে লেখা ও পরে পড়া-র সূচনা করেন।
(5) মূল্যায়ন: মক্তবে কোনো পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল না। সারাবছর ধরেই শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হত।
(6) শৃঙ্খলা : মক্তব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল কঠোর নিয়মশৃঙ্খলায় আবদ্ধ। অপরাধের জন্য শিক্ষার্থীদের শাস্তি এবং কৃতিত্বের জন্য পুরস্কার দেওয়া হত।
(7) শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সম্পর্ক: মক্তবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিল পিতা-পুত্রের মতো সম্পর্ক। প্রকৃতপক্ষে তাদের মধ্যে খুবই মধুর ও আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
(8) শিক্ষার স্থান : কোনো মসজিদ সংলগ্ন জায়গায় অথবা কোনো অভিজাত ব্যক্তির বাড়িতে এই বিদ্যালয় বসত।
আরও পড়ুন – বিকাশের স্তরসমূহ প্রশ্ন উত্তর