মিথস্ক্রিয়া কী? শিশুর জীবনবিকাশে মিথস্ক্রিয়ার গুরুত্ব লেখো মিথস্ক্রিয়া

মিথস্ক্রিয়া কী? শিশুর জীবনবিকাশে মিথস্ক্রিয়ার গুরুত্ব লেখো

মিথস্ক্রিয়া

“থাকবো নাকো বন্ধ ঘরে, দেখবো এবার জগৎটাকে।” মানুষের মধ্যে রয়েছে এই বিশ্বজগৎকে দেখার, জানার তাগিদ। আর তা থেকেই বিশ্বভুবনে পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে অবিরত আমাদের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া চলতে থাকে। পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে আমাদের এই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াই মিথস্ক্রিয়া (Interaction) পারস্পরিক ক্রিয়া বা মিথস্ক্রিয়া দ্বিমুখী (Bipolar)। এটি একটি জৈব- মানসিক প্রক্রিয়া (Psycho-physical Process)। সমগ্র জীবন ধরেই এটি চলমান প্রক্রিয়া (Continuous Process)। পারস্পরিক ক্রিয়ার কারণে শিশু এবং পরিবেশের উভয়েরই পরিবর্তন ঘটে। অর্থাৎ “দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে, যাবে না ফিরে।” সুতরাং সমাজের সঙ্গে আমাদের মিথস্ক্রিয়া অপরিহার্য এবং প্রতিনিয়ত, আজীবন চলতে থাকা একটি প্রক্রিয়া।

(1) মিথস্ক্রিয়ার গুরুত্ব:

(1) পরিবেশের সঙ্গে শিশু বিভিন্ন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে শেখে, তার বৃদ্ধি ও বিকাশ হয়।

(2) পরিবেশের সঙ্গে শিশুর মিথস্ক্রিয়া যথোপযুক্ত হলে, তার পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করার ক্ষমতা অর্জিত হয়। অর্থাৎ বলা যায়, শিশু অভিযোজন করতে শেখে।

(3) পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার ফলে শিশুর দৈহিক গঠন সুদৃঢ় হয়, চারিত্রিক গঠন বিকাশ লাভ করে এবং মানসিক গঠন সম্পূর্ণতা পায়।

(4) পরিবেশের সঙ্গে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার জন্য শিশু শেখে, জানে, বোঝে, অনুভব ক্ষমতা বিকশিত হয়। তার বৌদ্ধিক শক্তির বিকাশসাধন হয়।

(5) মিথস্ক্রিয়ার কারণে শিশুর প্রাক্ষোভিক বিকাশ ঘটে। যে শিশু যত বেশি সামাজিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করে, সে তত পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশী, সহপাঠী সবার সঙ্গে যথাযথ আচরণ করতে শেখে।

(6) পরিবেশের উপাদানগুলির সঙ্গে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় সেই সকল উপাদানের কর্ম-ধর্ম সম্পর্কে শিশু সম্পূর্ণরূপে সচেতন হতে পারে।

(7) মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে শিশুর বিবিধ চাহিদার নিবৃত্তি ঘটে। সমাজের বিভিন্ন ধরনের মানুষের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার ফলে শিশুর মধ্যে সহযোগিতা, সহমর্মিতা, সহানুভূতির মতো সামাজিক গুণ বিকশিত হয়।

(9) সমাজের সকলের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার ফলে শিশুর মধ্যে সামাজিক জীব হিসেবে ঐক্যবদ্ধতার ভাব জাগরিত হয়। কানি জাতী লেজার তৈয়া।

(10)  মিথস্ক্রিয়ার ফলে শিশুর মধ্যে যে আত্মশক্তি জাগরিত হয়, তার দ্বারা ভবিষ্যৎ যোগ্য নাগরিক সত্তার বিকাশ হয় এবং ব্যক্তিসত্তার বিকাশ হয়। নিজের প্রতি বিশ্বাস, আস্থা জন্মায়, সমাজের সর্বক্ষেত্রে সফলতা প্রাপ্ত হয় এবং শিশু পূর্ণাঙ্গ মানুষ হয়ে উঠতে পারে। তাই সুতরাং বলাই বাহুল্য, সমাজের সঙ্গে শিশুর মিথস্ক্রিয়া এক অতি গুরুত্বপূর্ণ আবশ্যকীয় আচরণ। শিশু দাঁড়াতে গিয়ে পড়বে আবার উঠবে, আবার পড়বে তবুও উঠবে। এভাবে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে একদিন সে সমাজের উন্নত জীবেদের উদ্যানে এক যোগ্যতম সুন্দর ফুল হিসেবে বিকশিত হয়ে উঠবে।

আরও পড়ুন – মনোবিজ্ঞানে অনুসন্ধানের পদ্ধতিসমূহ প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment