মানবশিশুর জীবনবিকাশের পর্যায় বা স্তর বলতে কী বোঝো? এই পর্যায়ের গুরুত্ব বা তাৎপর্য লেখো
জীবনবিকাশের পর্যায়
মানবশিশুর জীবনবিকাশ শুরু হয় মাতৃগর্ভে থাকাকালীন ভূণ অবস্থা থেকে। মানবজীবন বিকাশের এই ধারা ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের ভিত্তিতে নিরবচ্ছিন্ন গতিতে এগিয়ে চলে। নিজস্ব বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বিকাশের হার কখনও হ্রাস আবার কখনও বৃদ্ধি পায়। বিকাশধারার এই হারকে পর্যবেক্ষণ করে শিশুর জীবনবিকাশের বৈশিষ্ট্যগুলি সঠিকভাবে অনুশীলন করার জন্য রুশো, জোন্স, পিকুনাস, এরিকসন প্রমুখ শিক্ষাবিদ এবং মনোবিদগণ মানবজীবন বিকাশের ধারাকে কয়েকটি স্তরে ভাগ করেছেন। এই এক-একটি স্তরকে জীবনবিকাশের পর্যায় বলে। বাট। হান
জীবনবিকাশের পর্যায়ের গুরুত্ব বা তাৎপর্য
জীবনবিকাশের পর্যায়ের গুরুত্ব বা তাৎপর্য হল-
(1) সার্থক শিক্ষা: শিক্ষার্থী বা শিশুকে সার্থকভাবে শিক্ষা দিতে হলে জীবনবিকাশের পর্যায় সম্পর্কে জানতে হবে।
(2) বিকাশ স্তর উপলব্ধি: বিকাশ একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। একটি স্তরের অভিজ্ঞতা ও আচরণ পরবর্তী স্তরকে প্রভাবিত করে। তাই বিকাশের ক্ষেত্রে বিচিত্র পর্যায় সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন।
(3) দৈহিক বিকাশ: বিকাশের পর্যায়ে কোন্ স্তরে দৈহিক বিকাশের হার কেমন, সেই সম্পর্কে যদি ধারণা থাকে, তবে পিতা-মাতা বা শিক্ষকের বিশেষ সুবিধা হয়।
(4) মানসিক বিকাশ : শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশ কোন্ বয়সে কেমন হয়, তা জীবনের পর্যায়গুলির মাধ্যমে জানা যায়। আবার শারীরিক বিকাশের সঙ্গে মানসিক বিকাশের নিবিড় সম্পর্ক আছে, তা এর মাধ্যমে জানা যায়।
(5) ভাষার বিকাশ: শিক্ষার্থীর ভাষা কীভাবে বিকাশ ঘটে, কোন্ বয়সে কতগুলি করে শব্দ আয়ত্ত করতে পারে, তা বিকাশের পর্যায়গুলি জানা থাকলে বোঝা যায়।
(6) বৌদ্ধিক বিকাশ: জীবনবিকাশের বিভিন্ন পর্যায়ে বৌদ্ধিক বিকাশের যে পার্থক্য বা তারতম্য থাকে, তা বিকাশের পর্যায়ের মাধ্যমে জানা যায়। এর মাধ্যমে আমরা বৌদ্ধিক বিকাশের তুলনা করতে পারি।
(7) সামাজিক বিকাশ: সামাজিক বিকাশ জীবনের স্তর অনুযায়ী পৃথক হয়। যেমন-শৈশব, বাল্য, কৈশোর ও প্রাপ্তবয়স্ক ইত্যাদিতে সামাজিক বিকাশ বিভিন্ন প্রকার হয়।
(8) শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়োগ: শিক্ষার ক্ষেত্রে বিকাশের পর্যায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার লক্ষ্যকে সার্থক করে তুলতে বিকাশের প্রত্যেক পর্যায়ের বিজ্ঞানভিত্তিক অধ্যয়ন প্রয়োজন।
(9) চাহিদা অনুধাবন : জীবনবিকাশের প্রতিটি পর্যায়ে ব্যক্তির চাহিদার পরিবর্তন হয়। এই চাহিদাপূরণ না হলে শিশুর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তাই জীবনবিকাশের স্তরগুলি জানা থাকলে সেই অনুযায়ী শিশুদের চাহিদাপূরণ করা যায়।
(10) শিক্ষার বিভিন্ন স্তর নির্ধারণ: শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ, পাঠক্রম প্রণয়ন, শিক্ষণ পদ্ধতি নির্দিষ্ট করা, মূল্যায়ন কৌশল নির্বাচনে বিকাশের পর্যায়গুলির গুরুত্ব অপরিসীম। বিকাশের স্তর অনুযায়ী শিক্ষাদান করতে না পারলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাগ্রহণে অনাগ্রহী হয়ে পড়বে।